মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

মৎস্যকন্যা // নির্মল হালদার

মৎস্যকন্যা // নির্মল হালদার




একটা গল্পের খোঁজে এসে স্বাগত কে দেখতে পেলাম। সে পুকুরে ছিপ ফেলে মাছ ধরছে। আমি জানতে চাইলাম, কি মাছ পেলে?
সে জানালো----একটাও মাছ পায়নি। বরং দেখতে পেয়েছে এক মৎস্যকন্যাকে। সে বারবার জল থেকে লাফ দিয়ে উঠছে। আর ডুবে যাচ্ছে।

স্বাগত আরও বললো------সে নাকি
কথা বলতে চাইছিল। মৎস্যকন্যা
কোনো কথা বলেনি। একবার ছিপের কাছে এসেও চলে গেছে। 

আমি স্বাগতর কাছে জানতে চাইলাম----মৎস্য কন্যার নামটাও জানতে পারলে না? সে বললো,
মৎস্যকন্যাদের কোনো নাম হয় না।
তারা শুধু মৎস্যকন্যা।
অপূর্ব সুন্দরী।

মৎস্যকন্যা একবার পদ্মপাতায় এসে শুয়ে ছিল। স্বাগত তখন ছিপ ফেলে চেষ্টা করেছিল কাছে যাওয়ার।

জলে শ্যাওলা খুব। যেতে পারেনি।

গল্পের খোঁজে এসে এই গল্প খুবই রহস্যময়। আমি ভাবছিলাম, মৎস্যকন্যা আছে যখন, তখন জলকন্যাও থাকবে নিশ্চয়ই।

আমি পুকুর ঘাটে বসে পড়লাম।
যদি একবার উঠে আসে জলকন্যা।
যদি একবার উঠে এসে আমার কাঁধে হাত রেখে বলে------চলো নৌকাবিহার করি।

জলদেবতা উঠে এসে আমাকে নিশ্চয়ই ধমক দেবেন । জলদেবতারা পছন্দ করেন না, মানুষ প্রজাতির সঙ্গে জলকন্যারা মেলামেশা করুক। কেননা, মানুষ প্রজাতি খুবই স্বার্থপর হয়।
এই স্বার্থপরতা মানুষকে অনেক নিচে নিয়ে গেছে। তাই, পুকুরের জল পুকুরে থাকেনা। নদীর জল নদীতে থাকেনা।

মানুষ জলের অপচয় করে।

আমি শেষমেষ উঠে পড়লাম। স্বাগতকে বললাম, যদি মৎস্য কন্যার সঙ্গে কথা বলতে পারো, তবে আমাকে জানিও। এবং কি কি কথা হলো, তাও জানাবে। আমি একটা গল্প লিখব।

এই গল্পের নায়ক হবে স্বাগত।

এখানেও জলদেবতারা যদি আপত্তি করেন, গল্পের নায়ক মানুষ হবে না। তাহলে, আমার গল্পটাও হবে না।

কারণ, মৎস্যকন্যা নায়িকা হলে
স্বাগত নায়ক হলে, স্বাগতর গা থেকে
আঁশটে গন্ধ ছড়াবে।

আমার প্রয়োজন আঁশটে গন্ধ।

যা পাঠক কে আকর্ষণ করবে খুব বেশি। পাঠক তো মূলত বাঙালি। যারা
মাছ ভালোবাসে।

মাছের সঙ্গে বাঙালির আজন্ম ভালোবাসা। সেই ভালোবাসা থেকে
মাছের দাম দিন দিন বেড়েই চলেছে।

মৎস্যকন্যা বাঙালির পাতে পাতে না এলেও বাঙালির মনে আসবে, তৃপ্তি দিতে আসবে, এই ইচ্ছে থেকেই আমার অনুরাগ-------মৎস্য কন্যার সঙ্গে স্বাগতর প্রেম।

পুকুর পাড়ে ঘুরতে ঘুরতে আরেক মাছ শিকারীর সঙ্গে দেখা হলো। কাছে যেতেই দেখতে পেলাম, শিকারি হচ্ছে আমাদের অতনু।
সে প্রতিদিন পুকুর থেকে মাছ ধরে।
মাছের সঙ্গে গল্প করে। আর মাছ ছেড়ে দেয় জলে আবার।
সে নিজে বলে--------সে শিকারি নয়।
সে প্রেমিক।

প্রেমিকার সঙ্গে কি কথা হয় কত দূরের কথা হয়, আমার কৌতুহল হলো। আমি জানতে চাইলাম। কিন্তু
অতনু বলে না। সে চুপচাপ থেকে
কেবল হেসে যায়। 

তার হাসি ধরে ধরে আমি তার পাশে গিয়ে বসলাম। দেখলাম, তার মাছ ধরা ছিপ বাঁশের নয়। শুধু রূপো।
এই কারণেই রূপো যে  রূপোর ঝলকে
মাছ উঠে আসে।

অতনু বলছিল, পৃথিবীতে সমস্ত স্ত্রীলিঙ্গ সোনারূপো পছন্দ করে। হয়তোবা সেও কোনোদিন তার ছিপে
সোনা লাগাবে।

আমাকে উঠে আসতেই হলো।

আমি তো সোনা--রূপোর গন্ধ চিনিনা।
শুধু মাটির গন্ধ চিনি। আমি গল্পের খোঁজে এসেও গল্প পেলাম না।

কোথাও যে মাটি নেই।

-------৩ আশ্বিন ১৪২৮
------২০----৯-----২০২১



ছবি : রেখা সহিস


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ