বট গাছ//
গাছটা যে কত পুরনো, কেউ বলতে পারে না। মাটি অব্দি ঝুরি
নামিয়ে দিনরাত দাঁড়িয়ে আছে।
কত পাখি এলো গেলো। কত বাসা বাঁধা হয়েছে। অনেক বাসা উড়ে গেছে ঝড়ে। তারপরও বটগাছটা দাঁড়িয়ে আছে, নিজের গৌরবে।
আশ্রমের ছেলেমেয়েরা বটের ছায়ায় খেলাধুলা করে। দু একজন আছে গাছে উঠতে চায়।
কেউ কেউ ঝুরি ধরে দুলতে থাকে।
ছোট ছোট ছেলেদের খুশির মতো
বটগাছে হাওয়া দোলে।
একদিন এক দাড়িওয়ালা মানুষ
বট তলায় এসে ছেলেদের ডেকে বলছিলেন------তোরা একটা
ঠাকুরের গান গা তো।
ঠাকুরের গান জানিস?
ছেলেরা চুপচাপ থাকে।
তাদের চুপচাপ দেখে দাড়িওয়ালা মানুষটি বলেন------দাঁড়া দিনু কে এবার তোদের কাছে পাঠাবো। তোরা গান গাইতে পারলে, সবাইকে দেবো কাঠি লজেন্স।
গরু আসে বটতলায়।
পড়ে থাকা পাতা চিবিয়ে, না চিবিয়ে কোনো কোনো গরু
শুয়ে পড়ে ছায়ায়।
গরুর পেটে কাক এসে বসে।
শুকনোপাতাও পড়ে গরুর উপর।
বটগাছটি নির্জন হয়েও একা নয়।
তার কাছে এসে বইয়ের পাতা উল্টে উল্টে দেখে একটি মেয়ে ।
গুনগুন করে।
এক যুবক রং তুলি কাগজ এনে
ছবি আঁকে। সেই ছবি বট গাছের।
এবং গাছের মাথায় একটি বক।
বকটি যেন কাউকে খুঁজে খুঁজে না- পেয়ে গাছের মাথায় এসে দাঁড়িয়ে আছে।
বট গাছের পাশ দিয়ে চলে গেছে একটি রাস্তা। লালমাটির কাঁকুরে রাস্তা। আশ্রমের ভেতর দিকে
এঁকেবেঁকে চলে যায়।
খড়ের ছাউনি টিনের ছাউনি ঘরে ঘরে ঢুকেও পড়ে। শান্ত হয়ে। নীরব হয়ে।
ভোরবেলা এই রাস্তা দিয়েই ছেলেমেয়েরা গান গাইতে গাইতে যায়। আকাশে ফুটে ওঠে আলো।
জেগে ওঠে গাছের কুঁড়ি। পাখির কাকলি।
এই বটের ছায়ায় ভর দুপুরে ঝুলি কাঁধে বসে থাকে বাউল।
একদিন দাড়িওয়ালা মানুষটি
এক বাউলের পাশে বসে গান শুনতে চাইলেন। শুনতে শুনতে
বাউলের খালি পায়ের দিকে চেয়ে
মনে মনে রচনা করেন, গান।
মনে পড়ে পুরনো একটি গান-----
ওগো পথিক হাওয়া-------।
পথিক হাওয়া গাছের পাতায় পাতায় এসে জড়ো হয়। গুঞ্জন করে। ঝরে পড়ে বটফল।
কোনো কোনো পাকা বট ফল
ছাগলে খেয়ে যায়। অনেক বট ফল থেৎলে যায় পায়ে পায়ে।
গাছটি স্থির থাকে। নীরব থাকে।
কোনো কোনো গ্রীষ্ম দুপুরে কুকুর হাঁপাতে হাঁপাতে এসে এই বটের ছায়ায় জিরোয়।
এই বটগাছটি পিতামহের মত।
একইসঙ্গে পিতামাতার মত।
অনেক বসন্ত বর্ষা পার হয়ে, অনেক শীত গ্রীষ্ম পার হয়ে,
আজও অক্ষয় হয়ে আছে।
আশ্রমের ঘন্টা বাজলে সে শোনে
পায়ের শব্দ। তার শিকড়ে শিকড়ে,
আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে-------।
-----২২ ফাগুন ১৪২৮
-----৭----৩----২০২২
খোয়াই//
মৃগাঙ্ক এদিকে প্রায় আসে।
চারদিকে গাছপালা।
রাঙামাটির রাস্তা। উঁচু নিচু রাস্তা।
খাঁ খাঁ করে চারদিক এই গ্রীষ্ম দিনে। খালে জল নেই।
বর্ষার দিনে বৃষ্টির জলে মাটি ক্ষয়ে
ক্ষয়ে একটা খাল তৈরি হয়েছে।
জল বয়ে যায়।
লালমাটির জলে গাছের পাতা পড়ে। সূর্যের আলো পড়ে।
চাঁদ তারার আলো পড়ে।
মানুষের ছায়া পড়ে।
কখনো কখনো দূর থেকে বাঁশির
সুর এসে জলে কাঁপন জাগায়।
মৃগাঙ্ক দূর গ্রামের ছেলে। এই খাল থেকে সে মাছ ধরে। বঁড়শি ফেলে।
ছিপ ফেলে।
ছোট ছোট মেয়েরা মাছ ধরে গামছায়।
মৃগাঙ্ক মাছ ধরলে তার মা বলে,
তেল পাবো কুথায় রে। মাছ ভাজতে তেল লাগে ঢের।
তার বাবা বলে, যা দিকি মাছ গুলা বাজারে বিকে দিয়ে আয়।
ক টা পয়সা পেলে নুন--মশলা হবে।
মৃগাঙ্ক মুখ ব্যাজার করে বলে,
আর কুনু দিন মাছ ধরতে যাবো নাই------।
সে খালে যখন মাছ ধরছিল, তখন খালের ওপারে বসেছিল একটা বক।
গাছের ডাল থেকে জলে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কাটে অনেক ছেলে।
গাছ থেকে উড়ে পালায় পাখিরা ।
এই গ্রীষ্মে খালে জল না থাকলেও দু চারজন মানুষ বসে আছে। গান করছে একজন ।
সেই গান শুনছে খোলা আকাশ।
মৃগাঙ্কর মনে হলো, কাছে যাই।
তারপর ভাবলো সে,কী বলবে
তারতো কোনো কথা নেই। শুধু জিজ্ঞেস করতে পারে, তাদের বাড়ি কোথায়?
একজন বুড়ি এদিকে হেঁটে আসছে। এবং মৃগাঙ্কর কাছে এসে
বলে, আমাকে দুটা শুকনা ডাল
পেড়ে দিবি বাপ ?
মৃগাঙ্ক বুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর সে বলে, আমি গাছে উঠতে পারি না। ডাল
ভাঙবো কী করে?
বুড়ি গড়গড় করে এবার বলে,
ঘরে কাঠ নাই-----রান্না তো করতেই হবে, আমার নাতি টা
কাজ করে ফিরবে রাতের বেলা।
মৃগাঙ্ক চারদিক চেয়ে দেখে, কোথাও পড়ে নেই একটিও শুকনো ভাঙ্গা ডাল।
শুকনো পাতা জড়ো করে দিলেও
কীসে নিয়ে যাবে?
মৃগাঙ্ক এদিক ওদিক খুঁজে খুঁজেও
একটা ছেঁড়া বস্তা বা কাপড় পেলো না। কাপড়েও বেঁধে নিয়ে
যাওয়া যায় শুকনো পাতা।
সে বুড়ির দিকে চেয়ে থাকে।
ম্লান মুখের দিকে চেয়ে থাকে।
বুড়ি নিঃশব্দে হাঁটতে থাকে
ঘরের রাস্তায়।
সেওতো যাবে ঘরের দিকে।
গাছে গাছে নতুন পাতা এলেও
সমস্ত গাছ নীরব। দু একটা গরু
চরে বেড়ায় খালের ধারে। চুপচাপ।
ঝুড়ি মাথায় একটি মেয়ে।
এইদিকে।
-------২৪ ফাগুন ১৪২৮
------৯----৩-----২০২২
আম্র কুঞ্জ//
গাছে যখন মুকুল এসেছে তখন থেকেই অমল চেয়ে আছে আম গাছের দিকে।
সে অপেক্ষা করছে কবে আসবে আম।
আশ্রম বিদ্যালয় ছুটি হতে হতে
বেলা হয়ে যায়। তবু সে ছুটির পরে আম গাছের নিকটে এসে দাঁড়ায়। চেয়ে চেয়ে দেখে, কোন্
গাছের মুকুল আম হয়ে উঠছে।
তার বিদ্যালয়ের এক মাস্টারমশাই তুষার দা তাকে
দুপুরের রোদে দাঁড়িয়ে থাকতে
দেখেছিলেন। জানতে চেয়ে ছিলেন, অমল ছুটির পরেও
হোস্টেলে যায়নি কেন? কেনইবা
আম গাছের তলায়?
সে কোনো জবাব দিতে পারেনি।
তুষার দা চলে যাওয়ার পর
অমল একটা গাছে উঠে চেয়ে চেয়ে দেখছিল, আম মুকুলেও
মৌমাছি এসেছে।
ফাগুন শেষ হয়ে এসেছে।
আশ্রমে কেউ কোথাও নেই। শুধু
রোদে রোদে দাঁড়িয়ে আছে গাছগুলি।
অমলের বাবা রাজনগর থেকে এসেছিলেন যেদিন, সেদিন
আম গাছের তলাতেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।
ছুটতে ছুটতে অমল এসে জড়িয়ে ধরেছিল বাবাকে। বাবা তাকে কত খাবার দিয়েছিলেন। দিয়েছিলেন,
নতুন একটা গামছা।
অমল চিঠি লিখতে পারে।
সে বাবাকে লিখেছিল, তার গামছা ছিঁড়ে গেছে।
আসলে ছিঁড়ে যায়নি। সে একদিন
আশ্রমের সহপাঠীদের সঙ্গে কোপাই গেছলো। দেখেছিল, তারচেয়েও একটি ছোট ছেলে, স্নান করে দাঁড়িয়ে আছে পাড়ে।
সে তখন ছোট ছেলেটির গা মুছিয়ে দিয়ে গামছাটা পরিয়ে দিয়েছিল।
কেননা, ছেলেটি ছিল ন্যাংটো।
ছেলেটির মা স্নান করছিল কোপাইয়ে।
অমল সহপাঠীদের গামছায়
গা মুছে ছিল। স্নানের পর।
কোপাই দিকেও অনেক আম গাছ। সে তাকিয়ে থাকে। মনে মনে
আমের পাতায় লেখে------ কোনো
কোনো গানের কলি।
তাদেরও শেখানো হয় ঠাকুরের গান।
যখন সে প্রথম আশ্রমে এসেছিল,
তখন মনে প্রশ্ন জেগেছিল তার,
কে ঠাকুর? সে কি ভগবান?
গানের মাস্টার মশাইয়ের কাছে
জানার ইচ্ছে থাকলেও অমলের
জড়তা অমলকে রেখেছিল নীরব।
তার বিশেষ বন্ধু বান্ধব নেই।
সহপাঠীদের সঙ্গে খেলাধুলা করতে গিয়ে সে আম গাছের তলায় বসে পড়ে।
আশ্রমের এক দিদি ক্লাসে তাকে আনমনা দেখে জানতে চেয়ে ছিলেন, বেশিরভাগ সময় সে কেন
চুপচাপ থাকে। লেখাপড়াতেও
মন নেই কেন? জিজ্ঞাসার সামনে
এলেই, সে থতমত খেয়ে যায়।
তখন তার মনে হয়, ক্লাস ছেড়ে
আম গাছে উঠে বসবে।
আজকের ক্লাস তো আমতলাতেই।
অলোকা দি অঙ্ক করাচ্ছেন।
যা অমলের পছন্দ নয়। সে
উপর দিকে চেয়ে দেখতে পায়,
মৌমাছিরা আসা-যাওয়া করছে।
গান শোনাচ্ছে তারা।
মৌমাছিদের গানে গানে কেঁপে কেঁপে উঠছে আমের মুকুল। আম পল্লব। হঠাৎ তার কোলে ঝরে পড়লো আম মুকুলের লিকলিকে
এক ডাল।
অমল হাতে নিয়ে অলোকাদির
কাছে গিয়ে বলে------দেখুন দেখুন
কি সুন্দর গন্ধ-------!
-----২৫ ফাগুন ১৪২৮
-----১০----৩----২০২২
হলকর্ষণ//
শ্রাবণ দিন।
রাত থেকে অঝোরে বৃষ্টি।
ঘুম থেকে উঠেই সবিতার মন মুষড়ে গেল। অমিতাভর সঙ্গে
তার যাওয়ার কথা হয়েছিল হলকর্ষণ এ।
বৃষ্টি ধরার কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। আকাশে থমথম করছে মেঘ। এই সকালেও ডেকে উঠছেনা একটিও পাখি।
গাছের পাতা থেকে ঝরে যায়
বৃষ্টির বিন্দু।
মেয়েদের নতুন এই হোস্টেলে
কড়াকড়ি খুব। হলকর্ষণে যাওয়ার জন্য সবাই অনুমতি পায়নি।
ছবিদিকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে সবিতা
রাজি করিয়েছিল।
সে নতুন এসেছে। আগে কখনো
হলকর্ষণ উৎসব দেখেনি ।
অমিতাভ এক বছর আগের ছাত্র।
সে দেখলেও সবিতার জন্য যাবে।
সবিতা শান্তিনিকেতনের আশ্রম নিয়ে লেখাপড়া নিয়ে অনেক কথা শুনেছে। তার এক তুতো দাদা শান্তিনিকেতন থেকেই পড়াশোনা করেছে।
সবিতা এসেছে বর্ধমানের এক গ্রাম থেকে। সে যখন প্রথম শোনে
হলকর্ষণ উৎসবের কথা, তখন
অবাক হয়ে গেছলো। কারণ,
তাদেরও চাষবাস আছে। কিন্তু
চাষবাস নিয়ে একটা যে উৎসব হতে পারে, তার কল্পনায় ছিল না।
লাঙ্গলকে ঘিরে এক আধটু
পুজো হয়ে থাকে শুধু। এখানে কি হয় না হয়, দেখার ইচ্ছে সবিতার।
তার ঘরে আরেকজন থাকে।
ইন্দ্রানী। শান্তিনিকেতনের কোনো
উৎসব সম্পর্কেই তার কোনো কৌতুহল নেই।
সে এখন ঘুমোচ্ছে।
অমিতাভ কি এই বৃষ্টিতে আসতে পারবে? চারদিক দেখে মনে হচ্ছে,
ছাতা আটকাতে পারবেনা বৃষ্টিকে।
কাল রাতেই সে শুনছিল,
"বহু যুগের ওপার হতে"।
কে গাইছিল গানটা?
পুরুষ কন্ঠেই গানটা ছিল।
সে একদিন সঙ্গীত ভবনের বারান্দায় শান্তিদেব ঘোষের গান শুনে মুগ্ধ হয়ে গেছে।
সবিতার ইচ্ছে হয়েছিল, পা
ছুঁয়ে প্রণাম করবে । আলাপ করবে। তার যে গান শেখার সাধ আছে। সে কথা হোস্টেলে
ছবিদিকে একবার বলেছিল।
ছবিদিও বলেছিলেন, ব্যবস্থা করে দেবেন। তারপর তো এই শ্রাবণ দিন। বৃষ্টির পর বৃষ্টি। এবং বৃষ্টিতে বৃষ্টিতে সেজে উঠেছে শান্তিনিকেতন।
চারদিকেই বর্ষার গান।
সবিতার মন কেমন করে। শুধু মনে হয়, গান শিখতে তার দেরি হয়ে যাচ্ছে শুধু।
পাশের ঘরেই সুলেখা দি কি চমৎকার গান করেন। তিনি
তার ঘুম থেকে ওঠার আগেই
হলকর্ষণ এ চলে গেছেন।
সবিতার মনে হয়, সুলেখা দিকে
বলে রাখলে ভালো হতো। তাহলে সে তার সঙ্গে যেতে পারতো সহজেই।
সে বারান্দায় এসে দাঁড়ায়।
অমিতাভ যদি আসছে?
অমিতাভ তার চেয়ে বয়সে বড় হলেও, তার এক ক্লাস উঁচুতে পড়লেও বন্ধুত্ব হতে দেরি হয়নি।
আশ্রমের একটা গানের অনুষ্ঠানে আলাপ।
ছাত্র-ছাত্রীরাই গান করছিল সেদিন।
পূর্ণিমা ছিল। খোলা মাঠ ছিল।
গাছগাছালির ফাঁক দিয়ে চাঁদের আলো এসে পড়ছিল সকলের মুখে। তখন কে যেন গাইছিল----
"চোখের জলে লাগলো জোয়ার"।
আলোয় আলোয় জোয়ার লেগেছিল। সবিতার মনে পড়ছিল, ছোট ভাইটার কথা।
অনেকদিন বাড়ি যায়নি সে।
আজ কি যেতে পারবে না হলকর্ষণ এ?
-----২৭ ফাগুন ১৪২৮
-----১২----৩----২০২২
কালো বাড়ি//
খাওয়া-দাওয়া করে সজল এসে বসলো কালো বাড়ির ছায়ায়।
ফাগুনের হাওয়া বইছে।
বাতাস এখনো উত্তপ্ত নয়। আবছা এক শীতলতা। বাতাসে বাতাসে।
রোদ্দুর ক্রমশ তেজি হয়ে উঠছে।
গাছে গাছে পলাশ। ফাগুন বউ
হলুদে হলুদ হয়ে সবাইকে যেন ডাকছে।
সজলের মন উদাস হয়ে যায়।
সে কালো বাড়ির দিকে চেয়ে চেয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে,
দেয়ালের শিল্প--সৌন্দর্য।
সজলের কলাভবনে ভর্তির আগেই কালো বাড়ি সাজিয়ে তুলেছিলেন নন্দদা ও তাঁর ছাত্র ছাত্রীরা।
সে শুনেছে, নন্দলাল বসু ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বীরভূমের
গ্রাম ঘুরে ঘুরে নানা মন্দির দেখেছেন। কারণ, প্রাচীন মন্দির গুলির দেয়ালে দেয়ালে বিচিত্র সব শিল্প কাজ আছে।
বোলপুরের কাছে অযোধ্যা গ্রামে
গিয়ে সেখানের পেতলের রথের
গা থেকে মোটিফ কপি করেছেন।
যা কালো বাড়ির দেয়ালে ব্যবহার হয়েছে।
সজল সাঁওতাল গ্রামে স্টাডি করতে গেলেই তার মনে হয়,
সাঁওতালদের ঘরের দেয়ালে দেয়ালে যে সমস্ত ছবি আঁকা হয়,
তা যদি আশ্রমের ঘর বাড়ির দেওয়ালে ব্যবহার করা যায়?
সে মনে মনে স্থির করে, নন্দদার
কাছে অনুমতি চাইতে হবে।
কিঙ্করদা সব সময় বলেন, সাঁওতাল ছেলে মেয়েদের ছবি আঁকলে ওদের মতো কব্জির জোর বাড়বে।
সাঁওতালদের একটা ন্যাংটো ছেলেও কি সুন্দর! তাদের ঘরে ঘরে কুসুম গাছ মহুল গাছ অপরূপ সৌন্দর্যের এক একজন
সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
ঐ সমস্ত গাছ আঁকতে গেলেই
রঙ ছলকে যায়। কেঁপে ওঠে তুলি। কলম।
সাঁওতাল গ্রামে আসা যাওয়া করে
সজল প্রেমে পড়ে গেছে গ্রামগুলির। তার মনে হয়, তাদের আশ্রমের ঘরগুলি সমস্তই মাটির হলে অনেক বেশি শান্তি বিরাজ করতো।
সে একটি সাঁওতাল মেয়ের প্রতি
আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। তার অজস্র ছবিও এঁকেছে । মনে মনে রচনা করেছে তার একটি নাম-----হৈমন্তিকা।
সজল মনে করে ধান কেটে নেবার পর জমিতে যে ধূসরতা থাকে তারও এক সৌন্দর্য আছে। সেই সৌন্দর্য সাঁওতাল মেয়েটির। যাকে সে দিনরাত ভাঙ্গে। গড়ে।
তাকে আশ্রমের একটি দেয়াল
পেতেই হবে। সেই দেয়ালেই সজল
মেয়েটির রূপ খোদাই করবে।
নন্দদা তাকে নিশ্চয়ই সহযোগিতা করবেন। আর কিঙ্করদাতো পাশেই থাকবেন বলে সজল আশা করে।
কালো বাড়ির দেয়ালে ছায়া পড়ছে। এবং সেই ছায়া সাঁওতাল মেয়েটির মত। খুব কালো হলেও
তার হাসির শুভ্রতায় এই দুপুর বেলায় কে যেন গেয়ে উঠছে------
এই মৌমাছিদের ঘরছাড়া কে করেছে রে-----
------২৯ ফাগুন ১৪২৮
------১৪-----৩-----২০২২
------নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন