শনিবার, ২ এপ্রিল, ২০২২

আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া / নির্মল হালদার


বৃষ্টি
------
গরুর গলায় হাত বুলাতে বুলাতে
মেঘের গলাতে হাত বুলাই।
মেঘ আর মেঘের ছানা
আকাশের গা চাটে।

আকাশ হয়ে ওঠে একটা জামবাটি।

পেতলের জামবাটি।

আর সেই জামবাটির গা থেকে ঝরে
ভাতের ফ্যানের মতো বৃষ্টি।



বুকের ভার
----------------
এঁটো থালা-বাসন ধুতে ধুতে
বাঁধের জলে ফেলে গেছে বুকের ভার।

এঁটো ডাল ভাতের সঙ্গে ভেসে ভেসে যায়।


-------৫ চৈত্র ১৪২৮
------২০----৩----২০২২



নুন
-------

হেঁসেল ঘরে ঢুকে পড়লো আরশোলা।
ভয়ে ছ্যা়ং করে উঠলো শুকনো কড়াই।
ছলকে উঠলো নুনের বাটি।
ছড়িয়ে পড়লো নুন ঘরের মেঝেয়।

সেই নুনে মুখ রাখে আরশোলা

শুঁড়ে তুলতেও থাকে নুনের দানা।

গুন গাইবে রাঁধুনির।



পিঁড়ি
----------
ঘরে আছে পিঁড়ি পাতা
বসতেই পারে।

বাইরেও পাতা আছে পাহাড় চূড়া

কুটুম বসতেই পারে।


-----৬ চৈত্র ১৪২৮
-----২১----৩----২০২২


ধুলা মাটি
-----------------

গু কুড়াও আর গোবর কুড়াও
সকালবেলার ঝুড়িতে সোনা কুড়িওনা।
সোনা বড় অহংকারী।

ধুলা কুড়ালে কুড়াতে পারো,
ধুলার সঙ্গে মিলেমিশে আছে,

খালি পায়ের ছাপ।



ছেঁড়া কাঁথা
----------------

সন্ধে হয়ে গেছে
ঘরের চালায় ঝুলছে ছেঁড়া কাঁথা

ঘরের চালায় ঝুলছে আকাশ

অন্ধকার।


------৭ চৈত্র ১৪২৮
-----২২----৩----২০২২



এই চৈত্র বেলায়
----------------------

রোদে রোদে ঝাঁজ

মাঠের এক কোণে গরিব মেয়ের মত
একটি ফুল ফুটিয়েছে
একটি পলাশ গাছ।

একটি পলাশ গাছের এই যৌবনকে
এই চৈত্র বেলা ডেকে উঠলো----

বাসন্তিকা বাসন্তিকা-----



দুর্ভাগা দেশ
-----------------

তেল পড়েনি অনেকদিন
পিঠে পড়ে আছে এক গোছা চুল

মুড়ি ভাজা বাঁশের কুচির মত কালো।


------৮ চৈত্র ১৪২৮
-----২৩----৩----২০২২



অঙ্কুর
---------

কাঁথায় ছুঁচের ফোঁড় তুলতে তুলতে
মাটিতে একটা ফোঁড়

রক্ত ওঠে

কান্না ওঠে

অঙ্কুর ওঠে

সাত পুরুষের মুখ।



অভুক্ত
----------

একটা গাইয়ের থনে চারটে বোঁটা

একটা টানে চাঁদ
একটা টানে সূর্য

একটা টানে বাছুর

আরেকটা টানছি আমি

আমি।

আমার অভুক্ত প্রাণের দিকে
চেয়ে থাকে গাই--গরু।


-----৯ চৈত্র ১৪২৮
----২৪---৩---২০২২



শিল--নোড়া
-----------------

উঠোনে একটা চাটান পাথর।

আরেকটা পাথর নিয়ে, এই পাথরেই
মাহাত বউ মশলা বাটে

হলুদে মশলায় রঙিন হয়ে আছে পাথর

পারিবারিক আরেকজন।



তলে তলে
--------------

হলুদ বাসি হলেও হলুদ

ভাতার বাসি হলেও ভাতার

তলে তলে রঙ

মনে মুখে মাখলেই, ভাতারের ভাতে

গরম গরম ধোঁয়া।


------১০ চৈত্র ১৪২৮
-----২৫----৩----২০২২



জ্বলে ওঠা
--------------

উনুনে জ্বলছে কাঠ

জ্বলন্ত কাঠ থেকে বিড়ি ধরায় মনোহর মুড়া

উল্লাসে জ্বলে ওঠে একটি নিভে যাওয়া তারা।




ঘুনসি
--------
শিশুর কোমরে
ভেলা পরানো লাল ঘুনসি।

শিশুর কোমরে
চাঁদ পরানো লাল ঘুনসি

কোমর থেকে নেমে নেমে যায়।


-----১১ চৈত্র ১৪২৮
----২৬----৩----২০২২



শিশুর বিছানা
-------------------
বট গাছ থেকে ঝুরি দোলে

শিশুর শোবার খাটে দোলে
সরষে বাঁধা পুঁটলি।



মাদুলি
---------
গলার মাদুলি চিবিয়ে চিবিয়ে
ছোট করে ফেলে।

শিশু পরবে গলায় রামধনু।


------১৩ চৈত্র ১৪২৮
-----২৮----৩---২০২২



দাগ
------
ঘরে ঘরে কলসি কলসি জল দিয়ে আসে

জল ঘেঁটে ঘেঁটে হাত -পায়ের আঙুলে হাজা

চেয়ে চেয়ে দেখে প্রতিদিনের দাগ

প্রতিদিনের সুখ-দুঃখ।



মহুল
-------
সারারাত নিঃশ্বাস ঝরেছে

সারা সকাল নিঃশ্বাস কুড়ায় একটি কিশোরী

সারা সকাল মহুল কুড়ায়।


------১৪ চৈত্র ১৪২৮




চৈত্র
------
এত রোদ এত রোদ এই চোতেই
মহুল সিজা সিজে গেল মাটি।
পূর্ব পুরুষের মতো চেয়ে আছে সূর্য
কবে হাল নামাবে উত্তর পুরুষ!



মাতাল
----------
টলোমলো করে চৈত্রের চাঁদ

সারারাত মহুল রসে ভিজেছে

আমাদের চাঁদ।


------১৫ চৈত্র ১৪২৮
-----৩০----৩----২০২২




পিন্ড দান
-------------
বট গাছে বাঁধা একটি হাঁড়ি

মাটির হাঁড়ির তলায় একটি ছিদ্র

ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে

শিকড়ে যায়।

পূর্বপুরুষের মুখেও পড়ে।



কোকিল
-----------
সারাবছর খোঁজখবর নেই
কোথায় থাকে কাকে ডাকে
কোনো খবর থাকে না।

এই একবার এই ফাগুন- চৈত্রেই
একটা ডাক মধুর ডাক
সবার সঙ্গে কুটমালি করতে আসে।


-----১৬ চৈত্র ১৪২৮
-----৩১----৩----২০২২



শিশুর হাতে
---------------
সাইকেলের বাতিল চাকা
শিশুর হাতে ঘুরছে।

গোল একটি পৃথিবীও
শিশুর হাতে ঘুরছে।

কেড়ে নিতে পারবে না কেউ শিশুর হাত থেকে।



সরুবালি
-------------
সরষে তেলে কী ভাজবে আর
সরষে ফুল ফুটে নাই।
কচড়া তেলেও সুয়াদ আছে
পিঠে ভাজে সরুবালি।

সরুবালি এক মেয়ে বটে
ছেঁড়া শাড়ি মাথায় টেনে মরদকে দেখায়।

নিজের মরদ কাজে গেলেও
আরেকটা মরদ মাথার উপরে।


------১৭ চৈত্র ১৪২৮
------১----৪----২০২২
------নির্মল হালদার






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ