শুক্রবার, ২৮ মে, ২০২১

টালোবাসা

টালোবাসা// নির্মল হালদার

দর্পণের খুব মন খারাপ।
বৃষ্টি শুরু হলেই তার মন খারাপ তীব্র হয়ে ওঠে। সে মনমরা হয়ে
শুয়ে থাকে কেবল।
একটু আগেই তার মা বিকেলের চা দিতে এসেছিল। ফিরিয়ে দিল সে। দুপুরেও ভাতে হাত দিয়েছিল মাত্র। মা বলছিল, দিপু কি হয়েছে তোর? শরীর খারাপ লাগছে?
সে না না করে। তার মা পাল্টা প্রশ্ন করে, তাহলে খাওয়া-দাওয়া করছিস না কেন? চা--টাও খেলি না যে-----?

দর্পণ কিছু না বলে, একটা খাতা টেনে নেয়। আঁকিবুকি করে। তারপর লিখে ফেলে কয়েকটা নাম-------দীঘি শর্বরী তুতুল
ছো অবিন। নামগুলো কেটেও ফেলে সে।
একটা আকাশ আঁকার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনভাবেই ধরা দিচ্ছে না আকাশ। দর্পণ ঘরের জানলা খুলে আকাশ খোঁজে।

আজ আর কোথায় আকাশ! থৈ থৈ করছে মেঘ। কালো হয়ে আছে মেঘ। বইছে ঝোড়ো হাওয়া। বৃষ্টি চলছে।
দর্পণ জানলা থেকে হাত বাড়িয়ে
বৃষ্টি ধরার চেষ্টা করে। সঙ্গে সঙ্গে
তার আঁজলাতে এসে দাঁড়ায়, অচেনা এক মেয়ে। সে দর্পণের কাছে জানতে চায়, বলো আমাকে কি বলবে?
দর্পণ হতচকিত হয়ে বলে, না না
কিছু বলতে চাই না। কেবল গলা নামিয়ে জানতে চায়, তুমি কে?

মেয়েটি হাসে।

মেয়েটির হাসিতে দর্পণের ডান হাত কাঁপতে থাকে। তার মনে হয় মেয়েটি এবার হাত থেকে পড়ে যাবে। একদম মাটিতে।
তখন?

দর্পণের ভয় করে।

সে বলে, তুমি ঘরের ভেতরে চলে এসো-------। মেয়েটি আবার হেসে ওঠে। এবার দর্পণের বুক কাঁপতে থাকে। বোধহয় মেয়েটি বিপদ একটা করবেই।

তখন?

দর্পণ তার ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে মেয়েটির পা ছোঁয়ার চেষ্টা করে। আঙুল পৌঁছতে পারেনা।
সে বলে, তুমি যদি ঘরে না আসো
পড়ে যাবে। চলে এসো---------
দুজনে বৃষ্টির গল্প করবো। মেয়েটি বলে, বৃষ্টির গল্প নয়------সোঁদা
মাটির গল্প করতে চাই।
তুমি তো দোতলার ঘরে বসে কোনো রূপ রস গন্ধ কিছুই পারছ না------আমি সেই রূপ রস গন্ধ
তোমাকে দিতে চাই।
দর্পণ বলে, তার সঙ্গে আর কিছু?
মেয়েটি বলে, বলো কি চাইছো?

ভালোবাসা-------দর্পণের কাছ থেকে ভালবাসা শব্দটি শুনে মেয়েটি দুহাত বাড়িয়ে তার গলা ধরে। সে শিউরে ওঠে। মেয়েটি বলে, ভালোবাসা তো নেই----
টালোবাসা আছে-------তুমি কি নিতে চাও?

দর্পণ চুপচাপ থাকে।

তার মুখে বৃষ্টির ঝাপটা এসে লাগছে। হাতে জল। আর কিছু নেই। সে সম্বিৎ ফিরে হাতের জল
চোখে নেয়। দেখে, তার দু চোখে জল।
সে নিজের কাছে নিজে লজ্জিত হয়। সে বিড়বিড় করে, আমার চোখে জল কেন? চোখের জল কেন?
দর্পণ আরেকটা জানলা খুলে দেয়। দেখতে পায় বৃষ্টির অন্ধকারে মেয়েটি একা একা
হেঁটে চলেছে।
তার মনে হলো, নিচে গিয়ে মেয়েটিকে ঘরে নিয়ে আসা। কিন্তু তার অস্থির মন সেই কাজ থেকে তাকে বিরত করলো। কারণ,
কাউকে ডেকে এনে কারোর কাছে
আর ভালোবাসার কথা বলবে না।

ভালোবাসা বড় সংক্রামক।

ভালোবাসার বদলে টালোবাসা নিয়েই থাকতে চায় সে।

টালোবাসাই বা কি?

-----নির্মল হালদার
----২৬----৫---২০২১



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ