কবিতা / নির্মল হালদার
৭১.
হঠাৎ একটা গিরগিটি কী করতে এখানে?
বৈশাখের কচি পাতায় কাঁপন লাগে
মানুষ ও কাঁপছে
ঘরে ফেরার রাস্তা আছে
অথচ ঘরে ফিরতে পারে না।
আমিই বা কার কাছে ফিরবো?
আন্তরিকতার কাছে ফিরতে ফিরতে
অন্তর যদি শুকিয়ে ওঠে?
উই ঢিবি কী আমাকে দেবে ঠাঁই?
৭২.
ইঁট পুড়ছে
ইঁটের পর ইঁট পুড়ছে
আমার পেটের আগুন নিয়ে জ্বলছে ইঁট ভাটা
আর কোথাও আগুন নেই
আমার পেটেই শুধু আগুন
আমার পেটের আগুন নিয়ে জ্বলছে ইঁট ভাটা
ইঁটের পর ইঁট সাজিয়ে একতল বহুতল
আমার শুধু ভাত নেই ছাত নেই।
----১লা জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----১৬----৫----২০২১
৭৩.
পাতার শিরা উপশিরা থেকে হাওয়া এসে
আমার শিরা উপশিরায়। আমি হাওয়ার ভিতরে
নৌকা বাইছি। আমি মাঝি না হয়েও
মাঝির ভূমিকায়--------
পান্তা ফুরাবার আগে
নুন সংগ্রহ করছি।
নুনের মতো অমূল্য আর তো কিছু নাই।
৭৪.
আড়ালে চলে গেছে ঢেঁকি।
ধান কুটতে চাল করতে ঢেঁকিতে আর পা পড়ে না।
সেই কঠিন ও কোমল পায়ের অপেক্ষা করছি।
যদি পা গুলি দেখতে পাই, যদি
পায়ে লেগে থাকে মাটি-------
আমি প্রণতি করবো।
আদ্যিকালের পায়ে ধরা আছে
রাস্তার পর রাস্তা
আমার ঘরে ফেরার রাস্তা।
-----২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----১৭----৫----২০২১
৭৫.
প্রকৃতি থেকে ছিটকে এসে
এইতো পাঁকে পড়েছি।
কি পাঁক কি পাঁক,পা ঢুকে পড়েছে
অন্ধকারে।
এই অন্ধকার আমারই, আমারই নির্মাণ
আমারই প্রয়াসে রচিত
আমার ধ্বংস
আমি যে কোথায় নিয়ে যাবো
কতদূর?
----৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----১৮---৫---২০২১
৭৬.
তৃষ্ণা কি তৃষ্ণা কোথায় থাকে
তরমুজের কাছে দাঁড়ালেই, তরমুজের কালো বীজ
আমাকে বলবে।
জমিতে গড়াগড়ি যায় অসংখ্য তরমুজ
চলো যাই-------
অনেকতো বেড়ানো হলো জনারণ্যে, নির্জনতায়
এবার না হয় তরমুজের কাছে
তরমুজের জলে।
----৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----১৮---৫----২০২১
৭৭.
মাটির কি দোষ
মাটির গভীরে গেল না? দাঁড়িয়ে আছে ধূলায়
ছোট্ট একটি বীজ
আমি কী বীজের ভিতরে যাবো?
আমি তো জলের ভিতরে গেছি মূল খুঁজতে
আমি তো খুঁজে পেয়েছি জলের মুখশ্রী।
-----৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----১৯---৫---২০২১
৭৮.
নদীর মূল কেটে দিয়ে আমাকে বলছো,
জল খাও।
গাছের মূল কেটে দিয়ে আমাকে বলছো,
ফল খাও।
আমার খিদে তেষ্টা তুমি চিনলে না।
তুমি চিনলে না আমাকেও
আমি হাততালি দিতে দিতে হাতের ঘর্ষনে
আগুন জ্বালতে জানি
তোমাকে পোড়াবো।
-----৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----২১----৫----২০২১
৭৯.
পানকৌড়ি ডুবছে উঠছে
ছায়া ফেলছে পানা ফুলের সবুজ
হাওয়া এলে দুলে উঠছে জল
এপার ওপার মেঘ ভাসে।
লাশ ভাসছে নদীতে।
কার নদী? কার লাশ?
মৃতদেহ একবারও বলছে না একটি ও ঠিকানা
বেহুলা নেই
লজ্জাতে মুখ লুকায় আমার আকাশ।
----৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----২২----৫----২০২১
৮০.
হাওয়া, আমাকে জাগাও
যেভাবে জেগে আছে রাস্তা
যেভাবে জেগে আছে বৃক্ষ লতাপাতা
যেভাবে জেগে আছে পথিকের দিন ও রাত্রি
আমাকে জাগাও।
আমারই দোষে আমি সঞ্চয় করি ধন সম্পদ।
ভুলে যাই, আমের বোঁটায় থিকথিক করছে জীবন
মৌমাছির মন।
-----৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----২৩---৫----২০২১
৮১.
থরে থরে মেঘ
আকাশের মত থালায়
আমি বজ্র--বিদ্যুৎ মাখামাখি করে দু'মুঠো সাজাই
ধুলোমাটি সাজিয়েছি।
ডাল-ভাত সাজিয়েছি। পংক্তি ভোজনে
এসেছে সবাই। সবারই এক রা:
খাই খাই
খাই খাই
আমি খিদের নিশান ওড়াই।
----১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----২৫----৫---২০২১
৮২.
থরে থরে মেঘ
আকাশের মত থালায়
আমি বজ্র--বিদ্যুৎ মাখামাখি করে দু'মুঠো সাজাই
ধুলোমাটি সাজিয়েছি।
ডাল-ভাত সাজিয়েছি। পংক্তি ভোজনে
এসেছে সবাই। সবারই এক রা:
খাই খাই
খাই খাই
আমি খিদের নিশান ওড়াই।
----১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----২৫----৫---২০২১
৮৩.
হালের গরু নেই
ট্রাক্টর ভাড়া ঘন্টায় ন'শ টাকা
অফলা জমিতে কে নামবে?
সূর্য তো নেমেই আছে, মাটিও ফাটছে খুব
মেঘ আসছে
বলরামের লাঙ্গল কোথায়?
-----১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----২৬---৫---২০২১
৮৪.
পাখি এসে দাঁড়াতেই মাটির তাপ কোমল হয়ে ওঠে।
পাখির ডানার ছোঁয়াতে আকাশও কোমল
আমিও আকাশবিহারী
মেঘের কোমলতায় বৃষ্টির উষ্ণতা পেয়েছি
বৃষ্টি আর কিছুই না মাটির জাতক।
----১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----২৬----৫----২০২১
৮৫.
নদী দেখলে হবে না
মাথায় বেঁধে আগলাতে হবে।
পাহাড় দেখলে হবে না
হাতের তালুতে আগলাতে হবে।
যেভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে নদী
শুধু পড়ে থাকবে হাড়ের গুঁড়ো।
যেভাবে চুরি হয়ে যাচ্ছে পাহাড়
শুধু পড়ে থাকবে ধুলো।
নদী আমার শিরা উপশিরা।
পাহাড় তো পাহারাদার
মনুষ্যত্বের।
-----১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----২৭----৫----২০২১
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন