নির্মল হালদার
আমারও একটা নদী ছিল। সুবর্ণরেখা।
আমারও এক প্রেম ছিল
সুবর্ণরেখা।
স্কুল ছুটি থাকলেই বিশেষ করে শীতকালে, গামছায় মুড়ি বেঁধে
নদীতে স্নান করতে যাওয়া।
আমাদের ক্যাপ্টেন ছিল ভৈরব।
ভৈরব দত্ত।
আমার চেয়ে একক্লাশ উঁচুতে পড়তো। আমি তাকে ভৈরব বলে ডেকেছি । সে ছিল বন্ধুর মতোই।
নদীতে স্নান করতে যাওয়া নয়
আসলে, মজা করতে যাওয়া।
আমি জলে ভাসতে ভাসতে
গান করতাম খুব। নেচেও উঠেছি।
কতক্ষণ ধরে যে নদীতে থাকতাম, কোনো হিসেব থাকত না।
দুপুর হয়ে গেছে এমন দিনও গেছে আমাদের।
হ্যাঁ আমার সেই নদী সুবর্ণরেখা।
হ্যাঁ আমার প্রেম।
সুবর্ণরেখার শিয়রে পাহাড়।
পায়ের তলায় পাহাড়।
দূরে দূরে ছোট ছোট জঙ্গল।
রেল ব্রিজ উঠে গেছে দাঁড়িয়ে আছে শুধু পিলার। রেললাইন উঠে গেছে। পড়ে আছে পাথর।
সেই লাইন ধরে ধরে নদীতে যাওয়া।
নদীর কিছুটা আগেই শ্মশান কালী মন্দির। মূর্তি নেই। মূর্তি শুধু কালী পূজার সময়। বাকি সময় মন্দির ফাঁকা।
কখনো কখনো দেখেছি ধূপের পোড়া ছাই। ফুল বেলপাতা।
প্রণাম কি করেছি?
মন্দিরের দেওয়ালে কাঠকয়লায় লেখা হরেক রকমের নাম।সীমার
নামের সঙ্গে কত ছেলের নাম যে যুক্ত হয়েছিল।
সেই অলীক কল্পনা অথবা স্বপ্ন
সুবর্ণরেখার দিকে গেলেই জেগে উঠতো। সুবর্ণরেখার ওপারেই সীমা থাকত রেল কোয়ার্টারে। সেও ছিল আমাদের সহপাঠিনী।
সীমা নিজেও কি সুবর্ণরেখা?
আবেগে আবেগে আমাদের
কেবল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে?
কেঁদ পাকার মত ঠোঁট।
কালো মেঘ এসে বসতে সাহস পেতোনা। সুবর্ণরেখার জল
অবশ্যই সীমার ঠোঁট ভিজিয়েছে।
সীমারা আসতো তখনকার বিহারের মুরী থেকে। আমাদের পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে বাংলা পড়তে আসতো। সেই মুরী বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের মধ্যে।
ভাগাভাগি যতই হোক, সুবর্ণরেখার জল তার গৌরব
আমরাও পেয়েছি। আমরা নদী পারে বনভোজন করেছি।
হুল্লোড় করেছি।
সুবর্ণরেখা আমারও ছিল।
সুবর্ণরেখা আমারও এক প্রেম।
যতই পরি জামা কাপড়
যতই চুলে টেরি কাটি
নদী ছাড়া বেমানান লাগে।
সেই সুবর্ণরেখা আজও আছে।
কিন্তু আমার সুবর্ণরেখা আছে কি? আমার হুল্লোড় আছে কি?
আমার জলকেলি আছে কি?
অপরূপা এক নদী সুবর্ণরেখা।
আমাকে আজও ভাসাতে ভাসাতে
কোথায় যে নিয়ে যায়, আমি দু চোখে আর কিছুই দেখতে পাইনা।
সেই তুলিন আছে।
আমি শুধু নেই আমার তুলিনে।
সুবর্ণরেখা ও তুলিন একইসঙ্গে
ভালোবাসাবাসি করে।
আমাকে অনেক অনেক দূরে রেখে।
-----২৩ বৈশাখ ১৪২৮
-----৭----৫----২০২১
ছবি : দীপাংশু মাহাত

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন