পাশের ঘর//
চা দিয়ে এসেছি কিনা মনে পড়ছে না। জিজ্ঞেস করলেই হবে। এই মুহূর্তে আর যাবো না। আমার ঘরের দিকে এলে, জেনে নিতে পারবো
চা দিয়েছি কিনা।
ওর সঙ্গে একটা কথাও ছিল।
কী কথা? এখন আর মনে পড়ছে না। ও আমার কাছে এলে মনে পড়ে যাবে, কি কথা বলতে চাইছিলাম।
সকাল থেকেই মাথাটা ধরেছে খুব। ওকে কি বলবো, একটা পেইনকিলার এনে দিতে? না না
ওকে অযথা বিরক্ত করে লাভ নেই। বরং দুপুরে খেতে বসে বলা যাবে, আজ রাতের খাবারটা আমরা বাইরে খাবো। ও যদি রাজি হয় বেশ ভালো হবে। কেননা অনেকদিন কোনো রেস্টুরেন্টে খাই নি। আমি অবশ্য
তেল--ঝালে যাবোনা। একটা ধোসা নিলেই হবে। ও যা ইচ্ছে খাবে। ওতো খাওয়া-দাওয়া বিষয়ে রসিক খুব।
একদিন মনে হয় বলছিল, পাকা কলা বেসন দিয়ে ভেজে খাবে। আমারতো শুনেই ভয় করছিল।
একেতো কলা, তারপরে আবার বেসনে ভাজা।
সে যাই হোক, ওর সঙ্গে কিছু কথা আছে। এখুনি বলবো? যদি ওর
লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটে? যদি
বিরক্ত হয়? থাক------দরকার নেই।
সারাদিনই আছে তো। সারাক্ষণ আছে। যখন হোক বললেই হবে।
আপাতত শতভিষার সঙ্গে কথা বলা যাক। সে আবার ব্যস্ত নেইতো?
শতভিষার সঙ্গে কতদিন যে দেখা হয়না। সে স্কুল নিয়ে এত ব্যস্ত থাকে যে, কথা বলার ফুরসত নেই।
আমি তো সবসময়ই কথা বলতে চাই। কিন্তু কি কথা? কার সঙ্গে কথা বলতে চাই?
সবার সঙ্গে কি কথা বলা যায়?
আমার মাথায় গিজগিজ করে কথার পরে কথা।
কাকে কোন্ কথাটা বলবো, স্থির করতে পারিনা।
এই মনে হলো,আয়ানের সঙ্গে কথা বলি। এই মনে হলো, রহমানের সঙ্গে কথা বলি। অথচ
কারোর সঙ্গেই ফোনে কথা হয় না। ওদের আমার সামনে বসিয়ে
একা একা কথা বলি।
এতে মজাও আছে খুব। রসিদ
কিংবা রাণা আমার সঙ্গে একটিও কথা বলে না। আমি একা বকবক
করে যাই।কোনো তর্ক বিতর্ক হয় না। ঝগড়া বিবাদ হয় না। তাই
হয়ত ওকেও কাছে ডেকে কথা বলি না একটাও।
কাছে ডাকার দরকার ই বা কি!
আমার পাশেই তো ঘর, ঢুকলেই হবে। কথা শুরু করলেই হবে।কোনো ভূমিকা না করে, আজ যদি প্রশ্ন করি, তাল গাছ কত
ফুটের হয়?
তারপর এই গাছ সেই গাছ থেকে
অন্যান্য গাছের লম্বা-চওড়া কি হয় না হয়, আলোচনা করা যায়।
ও যদি উৎসাহী না হয়? ও যদি
শাহরুখ খানের কাজ নিয়ে কথা বলতে চায়? আমি কি উৎসাহ দেখাবো?
যদিও আমার শাহরুখ সম্পর্কে
অতিমাত্রায় আবেগ আছে। আমি
যোগ করতেই পারি একটা বিষয় যে শাহরুখ নিয়ে আমি একটা প্রজেক্ট ভেবেছি। তারপর সেই প্রজেক্ট নিয়ে লম্বা লম্বা স্বপ্ন। আর স্বপ্নহীনতা।
এ সময় বাপি এলে জমে যাবে আড্ডা।
আড্ডা কি জমবে? কি জানি।
হয়তো দেখা যাবে, আমার নীরব থাকতে ভালো লাগছে। অথবা ইচ্ছে করছে ঘুমোতে।
ঘুম চাইলেও সব সময় ঘুম আসে না। আর ঘুমের শব্দ পেলে নিজের উপর এত রাগ হয়, যে মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করে।
আচ্ছা, রাগে-দুঃখে আমরা তো
বুকের লোম উপড়ে ফেলি না?
মাথার চুল কি সহজ সস্তা?
আস্কারা নামে এক যুবতীর সঙ্গে একবার আলাপ হয়েছিল। সে বলছিল, তার নাকি সাঁতারের প্রতি প্রেম। আমার সঙ্গে যখন আলাপ হলো, আমাকেও শিখে নিতে হবে সাঁতার।
আমি বললাম, সাঁতার দিতে পারি
তবে জলে নয়। ধুলোবালিতে।
আস্কারা হাসতে হাসতে আমার বুকে থাপ্পড় রেখেছিল। আমি পুলকিত হয়ে তার হাতে চুমু খেয়েছি কয়েকটা।
সে একটুও রাগ করেনি।
আজ যদি পাশের ঘরেই শুই?
ওর সঙ্গে? তাহলে কি কথা হবে?
রাতের কথাই তো সব সময় গভীর হয়। রাতের কথাই তো সব সময়
অর্থপূর্ণ হয়।
কে বলেছে? যত্তসব মনগড়া কথা। যত্তসব-------
হ্যাঁ এটাও ঠিক , রাত্রির কথা
সকালে আর মনে থাকে না।
ওর কি মনে থাকে? জিজ্ঞেস করতে হবে। ওর কি মনে হয়,
মানুষের জীবনে রাত্রি শুধু মোহময়ী?
রাত্রির আগে একটা সন্ধে থাকে।
তার আগে একটা বিকেল থাকে।
সেই সময় থেকেই আমার শুরু হয় কথা বলা। বেশিরভাগ দিন আয়ানের সঙ্গে কথা হয়। সামনে নয়। ফোনে নয়। আমি নিজেই
আয়ান হই।
কে আর আসবে আমার কাছে?
কাজ ছেড়ে?
পাশের ঘরে যে ও আছে, কই
কথা হচ্ছে আমার? পাশের ঘরে যে ও আছে,
কই ওর সঙ্গে সিনেমা যাচ্ছি?
সিনেমা দেখতে গেলে আমি সঙ্গী চাই অবিনকে। প্রেম বিষয়ে দু'চারটে কথা বললে, আমি সঙ্গী চাই জুসমানাকে।
আমার যে নানান ফের।
এইতো আরেকবার চা এলো।ওর
কাপটা আমি নিয়ে যাই তাহলে।
দরজা ঠেলে যেই ঢুকেছি, কেউ নেই। কেউ কোথাও নেই। শুধু
শুকনো এক ঘরের মেঝে। চারটে
শাদা দেওয়াল।
মেঝের এক কোণে ধূপদানি থেকে বেরিয়ে আছে ধূপের কাঠি। নিচে পড়ে আছে ছাই।
-----২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----১২---৬---২০২১
----নির্মল হালদার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন