জন্মদিন / নির্মল হালদার
আজ বিহুর জন্মদিন।
নন্দিনী বিহুকে আসতে বলেছিল তাদের বাড়িতে। কিন্তু বিহু আসবে না। বিহু বলে------যা হবে রাস্তায় হবে। রাস্তাই একমাত্র রাস্তা দুহাত খুলে দেয়। টেনে নেয় বুকে।
নন্দিনী আর কি করবে! সে বাড়িতে পায়েস রান্না করে একটা পাত্রে তুলে নিয়ে ছাদে রেখে দেয়। পায়েসের গন্ধ হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে বেড়াবে। সবাই জানুক আজ বিহুর জন্মদিন।
নন্দিনীর সঙ্গে বিহুর আজকাল দেখা সাক্ষাৎ হয় না। দুজনেই চাকরি নিয়ে ব্যস্ত। যেটুকু কথা হয় ফোনে ফোনে। সেও সপ্তাহে এক আধদিন।
কেউ কাউকে বিয়ের প্রস্তাব না দিলেও সম্পর্কটা থেকে গেছে। ধারাবাহিক। সেই কলেজ জীবন থেকে। তো সেই সম্পর্কের এবং ভালোবাসার আজ আরেকটি দিন। বিহুর জন্মদিন।
নন্দিনী পায়েস রান্না করেছে।
সে সকালেই পায়েসের পাত্র ছাদে রেখে এসেছে। এখন প্রায় ১০টা বাজে। নন্দিনী ছাদে এলো। এসেই দেখতে পায়, কয়েকটা পায়রা খুঁটে খায় পায়েস।
নন্দিনী খুব খুশি হয়। তার মনে হয়, এই তো জন্মদিনের মেলা। এই তো আমি বিহুর জন্মদিন উদযাপন করছি। সে মনে মনে বলে ------ বিহু দেখে যা ----- তোর জন্মদিনে কারা এসেছে। সে চার দিকে তাকিয়ে একটা কাক দেখতে পেলো না। তার দেখতে ইচ্ছে করছিল, কাকও খুঁটে খাচ্ছে পায়েস।
বাতাস তো পায়েসের গন্ধ নিয়ে গেছে। কাক এলেও ভালো লাগতো নন্দিনীর। সঙ্গে আরও শালিক--চড়ুই।
জন্মদিন তো সবাই মিলেই উদযাপন করবে। উদ্দীপ্ত হবে। বিহু এলে দেখতে পেতো, তার জন্মদিনের সমারোহ।
নন্দিনী মনে মনে বিহুকে জিজ্ঞেস করে-----পায়েসের গন্ধটা কেমন লাগলো বল? তোর জন্মদিনে আমাকে তো কিছুই দিলি না, আমি অবশ্য মনে মনে তোর কাছ থেকে নিয়েছি হাতের স্পর্শ।
হাতটা তুই বাড়িয়ে না দিলেও তোর হাতের স্পর্শ আমি চিনি। তোকে কি চিনেছি? তুই কাছে থেকেও কাছে নেই। যেমন যে কোন গাছ সামনে থাকলেও চেনা যায় না। গাছ অচেনা থাকে বলেই রহস্যময়
তুইও রহস্যময় ---- বিহু।
যেদিন তোর মাথা আমার বুকে ছিল সেদিন তোকে চেনা যায় নি। আজ চিনতে গেলে কি আর চেনা যাবে?
অনেক দেরি হয়ে গেল বিহু।
পায়েসে কতটা দূধ কতটা চিনি আছে, তুই কি বলতে পারবি? একটা পায়রা এসে বলে দেবে, কিছুই না থাক, আমার সর্বস্ব আছে। আজ বিকেলে একবার দেখা হলে ভালো লাগতো আমার। নন্দিনী জানে, দেখা হবে না। তবু মন মানে না। মনে হয়, দেখা হলে বলবে-----এই চল্ এই বর্ষার দিনে আমরা গাছের চারার সঙ্গে নিজেদের রোপন করি মাটিতে। যদি আরেকটা জন্ম হয়? জন্মের সুবাস ছড়িয়ে পড়বে নতুন করে।
নন্দিনী ছাদের খোলামেলা রোদে দু' হাঁটুর মাঝখানে মুখ রেখে ফুঁপিয়ে ওঠে।
----৩০ আষাঢ় ১৪২৮
----১৫---৭----২০২১
----নির্মল হালদার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন