পিঁপড়ের লাইন / নির্মল হালদার
পিঁপড়েরা লাইন দিয়ে চলেছে। পিঁপড়েদের পায়ের শব্দের দিকে চেয়ে আছে সূচনা।
কালো পিঁপড়ের দল লাইন দিয়ে চলেছে। একটা পিঁপড়ে দলছুট ছিল। সে দৌড়ে আসছে। ঢুকেও গেল লাইনে। সূচনা কেবল লাইনের বাইরে। একটার পর একটা পরীক্ষা দিয়ে যাচ্ছে। কোথাও কিছু হচ্ছে না। সে তাই, পিঁপড়ের লাইনে যাবে। যদি কিছু পাওয়া যায়।
পিঁপড়ের লাইন থেকে কোনোদিন কোনো ডাক পাবে না জেনেও সূচনা পিঁপড়ের লাইনে যাবে। দেখে আসতে চায়, কোথায় লুকানো আছে খাদ্য ভান্ডার। সে
একা একাই যাবে।
একটা চাকরি হলে সে প্রতিদিন পিঁপড়েদের জন্য চিনির দানা, মুড়ি ঘরের মেঝেতে ছড়িয়ে রাখবে।তাদের এই সঙ্ঘবদ্ধতা দেখার মত। শেখার মত।
মানুষতো সঙ্ঘবদ্ধ হতেই পারেনা। সঙ্ঘবদ্ধতার নামে ক্ষমতার দিকে চলে যায়। আর ক্ষমতা মানুষকে স্বৈরাচারী করে।
প্রেমও কি স্বৈরাচারী হয়? এই যে সূচনার উপরে ক্ষমতা দখল করতে চায় আতুর, সব সময় অধিকার ভোগ করতে চায়, প্রেমকে বলবো না স্বৈরাচারী?
সূচনা জানে, কোথাও কোনো উত্তর পাবে না সে। যে মেয়েরা অত্যাচারিত হয় তারা কখনোই বলবে না, পুরুষের ক্ষমতা দখলের কথা। স্বৈরাচারের কথা।
কি সব ভাবছে সে?
সূচনা তো আজ এই মুহূর্তে পিঁপড়ের লাইনে যাবে। পিঁপড়েদের সঙ্গে থাকা অনেক সুখের। ওইতো মেঘ আসছে। আকাশে আকাশে কাজল কালো মেঘ। বিদ্যুৎ রেখা। মেঘের গুরুগম্ভীর ডাক। এখুনি বৃষ্টি আসবে।
পিঁপড়েরা কোথায় যাবে তখন?
তার ঘরের মেঝে থেকে এখনো পিঁপড়েরা বাইরে যেতে পারেনি। তবে কি ঘরের মধ্যেই আছে, পিঁপড়েদের খাদ্যভান্ডার?
পিঁপড়েদের পায়ের শব্দের দিকে চেয়ে আছে সূচনা।
বৃষ্টি এলো। বৃষ্টির সঙ্গে নূপুরের ধ্বনি। বৃষ্টির সঙ্গে কে আসছে?
আতুরের পছন্দের ঋতু, প্রিয় ঋতু বর্ষা। বৃষ্টি এলেই, সে পাগলের মত নাচে। আজ কোথায় সে? তিন মাস আগে শেষ দেখা, তারপর আর যোগাযোগ নেই। কলেজের পুনর্মিলনীতে সূচনা রণোর সঙ্গে ক্যান্টিনে গিয়েছিল চা খেতে। রাগ হয়েছিল আতুরের। দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। সূচনা বলেছিল, আমি তোর সম্পত্তি নই।
সেই শেষ দেখা।
সূচনা ভেতরে ভেতরে কান্না চেপে রাখে। সে তো ভালবেসেছিল। সে তো সমর্পণ করেছিল। কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্বকে দুহাতে বিলিয়ে দিতে পারেনি।
সে যাকগে এখন-----আপাতত সে পিঁপড়ের লাইনে যাবে। ঘর থেকে কতদূর যাবে তারা, আজ দেখবে সূচনা। কিন্তু এখন তো বৃষ্টি। এই বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবে তারা?
নুপূর বাজছে। সূচনা দেখার চেষ্টা করে, নুপূর পরা পা কোথায় আছে? কোন্ বৃষ্টির মধ্যে লুকিয়ে আছে? নাকি বৃষ্টির বাইরে নুপুর বাজে? নুপূরের ধ্বনি বৃষ্টিতে এসে প্রবেশ করেছে----এও তো হতে পারে।
নুপূরের ধ্বনি কাছে আসে। দূরে চলে যায়। আবার কাছে আসে। দূরে চলে যায়।
সূচনার মনে হলো,তার পায়ে নুপূর বাজছে নাতো? সে নিজের দুটি পা লক্ষ্য করে। তখনই তার মনে পড়লো, সে অলংকার পছন্দ করেনা। তার কানে দুল নেই। হাতে চুড়ি নেই। সে হঠাৎ নুপূর পরবে কেন?
সে ঘরের বাইরে গিয়ে একবার বৃষ্টিতে ভিজলো।তার ভেজা পোশাক থেকে জল ঝরে ঝরে ঘরের মেঝেতে তৈরি করলো এক আলপনা। জলের আলপনা।
সূচনার চোখ পড়লো আবারো পিঁপড়েদের লাইনে। লাইন শেষ হচ্ছে না। কোথায় যে শুরু দেখতে পাচ্ছে না সে। বৃষ্টির মধ্যে কোথায় যাবে তারা?
এক ঝাঁক পিঁপড়ে।
চেয়ে থাকতে থাকতে সূচনার মনে হলো, পিঁপড়েদের পায়ে বাজছে নুপূর। এবং এই নুপূরের ধ্বনি কত যে মধুর, সে বলতে পারবে না কোথাও। সে শুধু কাঁদবে।
-----২১ আষাঢ় ১৪২৮
-----৬---৭---২০২১
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন