শুক্রবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২১

পানকৌড়ির ডুব / নির্মল হালদার

পানকৌড়ির ডুব / নির্মল হালদার




৮৭.
পাতা--পুতা জ্বালিয়ে কচু শাক সেদ্ধ।
আটাও গুলবে বসুমতী। আর ছেলেকে দিয়ে বলবে:
খা বেটা খা-----------পেটটা থিরাবে।


৮৮.
বাবার হাত ধরে ছেলে মেলা দেখতে যায়।

বাঁশ ঝাড় থেকে মুরগি দেখলো,
বাবার হাত ধরে ছেলে মেলা দেখতে যায়।
পুকুর থেকে হাঁস উঠতে উঠতে দেখলো,
বাবার হাত ধরে ছেলে মেলা দেখতে যায়।
ঘরে ফিরতে ফিরতে কাক থমকে দেখলো,
বাবার হাত ধরে ছেলে মেলা দেখতে যায়।

অনেক দূরের মেলা অনেক আলো
হাওয়াই লাড্ডু নাগরদোলা।
অনেক দূরের মেলা অনেক আলো
বেলুন উড়ছে কাঠের পুতুল।
অনেক দূরের মেলা অনেক আলো
কথা বলা পাখি খেলনা গাড়ি।

আকাশ থেকে মুখ নামিয়ে লাউ ফুল দেখলো,
বাবার হাত ধরে ছেলে মেলা দেখতে যায়।
রঙ ছড়াতে ছড়াতে গোধূলি দেখলো,
বাবার হাত ধরে ছেলে মেলা দেখতে যায়।
লাফাতে লাফাতে কাঠবিড়ালি দেখলো,
বাবার হাত ধরে ছেলে মেলা দেখতে যায়।

মেলার ভিড়, ভিড়ের ভয়
বাবা ছেলের হাত ছাড়ছেনা।


------১১ আশ্বিন ১৪২৮
-----২৮-----৯-----২০২১



৮৯.
সারারাত বৃষ্টি।


সকাল থেকেই বৃষ্টি।

ঘরের ছেঁদা চালা থেকে জল পড়ছে।
জাম বাটি পাতোরে
গামলা পাতো,জল ধরো।
মাথা বাঁচাও কাঁথা বাঁচাও।

ছেলেটাও কাঁদছে

চোখের জলও ধরে রাখি
আদরে আদরে।



৯০.
নুন ছাড়া এক দন্ড চলছে না আমার।
নুনের মতো আত্মীয় কে আর আছে!
নুনের সম্পর্ক থেকেই গুণ পেয়েছি,
গাছ থেকে ঘাস ভালোবেসে যাওয়া

শুধু ভালোবেসে যাওয়া

শিশির বিন্দু থেকে বৃষ্টির ফোঁটা
খরগোশের ছুটে যাওয়া থেকে
ঝড়ের ছুটে যাওয়া, সবই তো আমার
সমস্তই দু হাতে

আমার ঘামের নুনে মিলে মিশে আছে।


------১২ আশ্বিন ১৪২৮
----২৯-----৯----২০২১



৯১.
চাল সিজাই জনার সিজাই
কে কী খাবি বলরে নুনুরা?
আমিতো কামে যাবো,
আমার আসতে বেলা ডুবু।

তোরা তো খেলে বেড়াবি।
আমার কথা মনেই পড়বেনা।
আমারই মন পড়ে থাকবে
তোদের দিকে------

তোদের খিদার দিকে।


------১৪ আশ্বিন ১৪২৮
-----১----১০----২০২১



৯২.
কাঁঠাল গাছ
থৈ থৈ করছে রোদ
আশ্বিনের দিন
পদ্ম ফুটছে পুকুরে

শালুকও আছে
পদ্মপাতায় ফড়িঙ
পানকৌড়ি
বক উড়ছে

শাদা মেঘ উড়ছে
আকাশের নীল
অপরাজিতার নীল
আমারই দিকে

আমাকে কে পাঠালো?
আমাকে ভালবাসছে কে?
বেলা যে হলো
আমার যাওয়া কত দূরের?

গাছে গাছে পাতা নড়ে
পথে পথে পথচারী
চোখের আলো
আমার মুখে এসে পড়ে

কোন্ দিকে যাবো, কার কাছে?



৯৩.
সুখ বলো আর দুখ বলো
দুদিন বৈ তো নয়, শুধু
প্রেম পিরিতি থেকে যায় বুকে
লাঙ্গলের দাগের মত।

অনন্তকালের নাঙ্গল
সেই জানে, মাটির গভীরে
শিকড়ের সুর।

অনন্তকালের শিকড়
সেও জানে, পিরিতির সুখ।


------১৮ আশ্বিন ১৪২৮
-----৫-----১০----২০২১



৯৪.
আমাকে ধমক দেবার মত
আর কেউ রইলো না।
এক দাদা ছিল সেও গেল চলে।
আমি ভুল করলে
কে আর শাসন করবে? কে আর
বকুনি দেবে আমি ভুল পথে হাঁটলে?


সব রাস্তা পড়ে রইলো।

আমিও একা একা আর যাব না
পাখি ধরতে। কেননা, আকাশের মত
অভিভাবক আছে এই ভয়ে।



৯৫.
কাশবন
উড়ছে কাশের রেণু
আশ্বিনের ধানক্ষেত
ধান ফুল।

ধান ফুল
আগামীর সম্ভাবনা
আগামীর সম্পদ
মাটির সৌন্দর্য।

রক্ষা করে
আলো করে
গোলা ভরা ভালোবাসা
খড়ের আঁটির বাঁধন ।

বন্ধন, পায়রার পাখায়
মুক্তি, পায়রার পাখায়
পায়রা এসেছে
শালিক এসেছে।


মানুষ এসেছে
একটা মানুষ এক পৃথিবী
আবছায়া অস্পষ্ট
স্পষ্ট হয়েও যায়।

জন্ম আর মৃত্যুতে।


------২০ আশ্বিন ১৪২৮
-----৭----১০-----২০২১


৯৬.
মুখের বিড়িটা ছুঁড়ে দিয়ে
হারু খুড়া বলে, কিসে কি আছে রে
আজ মরলে কাল দুদিন--------
আমি তাই উপর দিকে চেয়ে আছি,
যদি নতুন তারার জন্ম দেখতে পাই।

আলো দেখতে পাই।



৯৭.
আমরা চার ভাই চারটে গাছ
তিনটে গাছ উড়ে গেলে, আমি একটা ভাই
খুদকুঁড়ো খুঁজতে খুঁজতে নিজেকে খুঁটে খাই।

নিজেকে ছিঁড়েখুঁড়েও খুঁজি
যদি দাদাদের দেখতে পাই, যদি হাত পেতে বলতে পারি,
দে আমাকে আদর দে।


------২১ আশ্বিন ১৪২৮
-----৮-----১০----২০২১



৯৮.
ঝুড়ি--ঝাঁটা বিক্রি করে কি দিন চলে?
হাতে--পায়ে খাটতে হয়।
বাজার যাই,কাজ খুঁজি।আর
কাজের পিছনে দৌড়ে দৌড়ে
দেড়শ টাকার মজুরি।

বাঁশের দামও বেড়েছে, কি করে শুনবে আর
বাঁশির মাধুরী।


-----২২ আশ্বিন ১৪২৮
-----৯----১০----২০২১



৯৯.
কার দোকানে যাব? কাদের দোকানে?

সারি সারি মনোহারি গোলদারি
সারি সারি চালেরও দোকান
কোথায় কি দর আমার জানা নেই।
আমি দেখছি খদ্দেরের ভিড়
আমি শুনছি টাকা-পয়সার ঝমঝম।


হাসি মুখ মলিন মুখ।


আমিও যে বুকের ঝাঁপ খুলে অপেক্ষায় আছি,
কখন আসবে বিনে পয়সার খদ্দের।



১০০.
কী চাইতে পারি আর?

বট গাছের ঝুরি ধরে দোল খায় ছোটরা
বটফলও দুলছে
গাছের মাথায় রোদ
বট পাতার চিকন

কী চাইতে পারি আর?

শিকড়ের চেয়ে থাকা
উঁচু-নিচু মাটি
পিঁপড়ের বাসা
পোকাদের ওঠানামা

কী চাইতে পারি আর?

বট গাছের ডালে ডালে কাঠবিড়ালি
বটের ছায়ায় একটা লোক
মলিন ধুলো
রাস্তা চলে যায়

কী চাইতে পারি আর?

বটের পিছনে দীঘি
পাতা ভাসে একটি দুটি
ঢেউ ওঠে ছোট ছোট
জলের ভিতরে জল

আমার মুঠিতে ধরবেনা।


-----২৩ আশ্বিন ১৪২৮
দুর্গা পঞ্চমী।
-----১০----১০----২০২১



১০১.
কৃষ্ণ নামে অভাব ঘুচবে গো
যদি কৃষ্ণের সঙ্গে ভাব করো।
কৃষ্ণ একমাত্র সুখ
কৃষ্ণ একমাত্র সখা
সুর জানে সৌরভ জানে।
ভালোবাসার ভাত জানে
আর জানে
বৃক্ষের শতনাম।

গাছের নামেও অভাব ঘুচবে গো
যদি গাছের সঙ্গে ভাব করো।


১০২.
আগে রসিক হও
তারপর খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধবে।
হাঁড়ি না পেলে
খেজুর গাছে বুক বাঁধবে।

টলমল করবে রসে।

রসে বশেই রসিকা, রাধা নাম খুঁজে পাবে।


------২৪ আশ্বিন ১৪২৮ / দুর্গা ষষ্ঠী
----১১----১০----২০২১
------নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ