সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১

খুশিয়াল / নির্মল হালদার

খুশিয়াল / নির্মল হালদার


অনেকদিন আমার সঙ্গে আছে খুশিয়াল।জল তেষ্টা পেলে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমি বুঝতে পেরে এক বালতি জল তার মুখের সামনে এগিয়ে দিই। রাস্তায় থাকলে
পুকুরের খোঁজ করি।

তাকে রোজ মাঠে ছেড়ে দিয়ে আসি।
সে আপন মনে চরে বেড়ায়। ঘাস খায়। আমি কোনো কোনোদিন মাঠেই বসে থাকি। আর খুশিয়ালকে বলি, আমি না থাকলে তোর মত গাধাকে কে দেখতো রে? যেদিন আমি থাকবো না, কি করবি তুই?

কেন যে তুই আমার কাছে ধরা দিলি?
আমিও তোকে সঙ্গী পেয়ে আগুপিছু
কিছুই ভাবলাম না। তোর ভবিষ্যৎটা
ভাবা উচিত ছিল আমার।


ধোবাদের প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
তাড়িয়ে দিয়েছে তোকে। নাকি আমাকে সঙ্গ দেবার জন্যই আমার কাছে এসেছিস তুই?

আমার সঙ্গে তুই আছিস, তাই
লোকজন আমাকে বলে গাধা।
লোকজনকে আমার প্রশ্ন, মানুষ তো আমাকে সঙ্গ দিলো না সাহচর্য দিলো না, আমি তো গাধার সঙ্গে গাধা হয়েই থাকবো।


খুশিয়াল কি বোঝে কে জানে।
বেশিরভাগ সময় আমার দিকে চেয়ে চেয়ে সূর্যাস্ত দেখে।
সূর্যাস্তের করুণ আভা খুশিয়ালের চোখে পড়লে আমার মন কেমন করে।

সে সারাদিন শান্ত ও চুপচাপ।

আমাকে একটুও জ্বালাতন করে না।
আমি প্রতিদিন সময়ে সময়ে তার কাছে খাবারের জোগান দিয়ে থাকি।
আমার ভাত থেকেও তাকে একমুঠো দিই।তার পেট ভরবে না জেনেও
আমার মনে শান্তি আসে। যে 
তাকে একমুঠো খাওয়াতে
পেরেছি। ভাগ দিতে পেরেছি।

খুশিয়াল কখন যে ঘুমোয় কে জানে।
মাঝরাতে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে, আমি বাইরের উঠোনে এসে দাঁড়াই।
দেখি,সে জেগে আছে।

জেগে জেগে সে কী তারা ভরা আকাশ দেখে? সে কী চাঁদের সঙ্গে কথা বলে?
নাকি সে আমার নিঃসঙ্গতাকে পাহারা দিয়ে থাকে? যেন আমার নিঃসঙ্গতা আমার কাছেই থাকে। কেউ যেন চুরি করে না নিয়ে যায়।

আর আমি?

খুশিয়ালের গায়ে হাত বুলিয়ে বলি,
ঘুমিয়ে পড়্। ঘুমিয়ে পড়্।
ভোরের অনেক দেরি।

আমি অনেকদিন বাঁচবোরে। তুই দুশ্চিন্তা করিস না। আমি এখনো আছি। যতদিন আছি, তোকে দেখবো।


-------৩ কার্তিক ১৪২৮
------২১-----১০-----২০২১



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ