সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১

আনন্দ / নির্মল হালদার

আনন্দ / নির্মল হালদার


গাধাটা এসে দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে।
জানতে চাইলাম, এতদিন দেখিনি কেন? সে বললো--------কোনো কাজ নেই আজকাল আর। ধোপারাও তাড়িয়ে দিয়েছে। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে
খাবার জোগাড় করতে পারি না। কি করবো?
শেষমেশ তোমার দুয়ারে এসে দাঁড়ালাম। যদি একটু মাড়জল দাও প্রাণে বাঁচি।

আমি বললাম, চলো তোমায় নিয়ে যাচ্ছি গেরস্থের ঘর। আমার ঘরে তো
শুধু জল ছাড়া কিছু নেই।
আমার এক কথায় গাধা রাজি হয়ে গেল । মনে হয়, সে জানে আমার অবস্থা।

গেরস্থের ঘরে যেতেই, আমার সঙ্গে গাধাকে দেখে অবাক।
আসলে, লোক জানে একটা মানুষের সঙ্গে খুব জোর একটা কুকুর থাকতে পারে। গাধা যে থাকতে পারে মানুষের ভাবনার বাইরে। তো, এক মহিলা আমাকে জিজ্ঞেস করে---------গাধাকে নিয়ে এসেছি কেন? গাধাটি কি আমার পোষা ?
আমি বললাম, গাধাটি আমার বন্ধু । আমি শুধু আপনাদের কাছে এসেছি, আপনারা যদি গাধাটাকে
একটু মাড়জল দেন।
মহিলা আমাকে আবার বলেন, আমাদের ঘরেই কেন ? আরো অনেক ঘরতো আছে।

আমি বললাম, তা জানিনা। তবে একটা কথা বলতে পারি, আপনার যদি দয়া হয় দেবেন। নিরীহ প্রাণী।
ভাতের মাড় ফেলে না দিয়ে গাধাটাকেই দিন।

মহিলা বলেন, আমাদের ভাত অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। ফেলে দিয়েছি মাড়।
তুমি ভাই অন্য কোথাও দেখো।

বন্ধুকে নিয়ে আরেক পল্লিতে ঢুকে যাই। একটা ঘর না করলে আরেকটা ঘর। যেভাবেই হোক বন্ধুর মুখে খাবার দিতে হবে।

একসময়ের বোঝা টানা গাধার পিঠে
অনেক দাগ। আমি হাত বুলিয়ে   বলতে চেষ্টা করলাম--------বোঝা আমিও টানি। আমাকেও টানতে হয়।
কেউ দেখতে পায়না। তোকেও বোঝা টানতে হবে আবার। তাহলেই, আহার জুটবে। ধোপারা তোকে তাড়িয়ে দিলেও আমি তোকে তাড়িয়ে দিচ্ছিনা।
তুই আমার সঙ্গেই থাকবি। শুধু আমার সঙ্গে। এটুকুই তোর বোঝা। আমি ঠিক সময়ে তোর মুখের কাছে এনে দেবো তোর খাবার।
এখন চল্ , দেখিগে , কার ঘরে তোর জন্য খাবার পাই।

আরেক গেরস্থের ঘরে কোনো সাড়া শব্দ না করে ঢুকে পড়েছি। ঘরের সবাই আমার সঙ্গে গাধাকে দেখে রে রে করে ওঠে।
 বলে-------------পাগলটা কোত্থেকে এলো রে বাবা!
তারপরেই বলে, যা যা এখান থেকে যা
এখানে কিছু নেই।
আমি বলবার চেষ্টা করি, আমি পাগল নই। আমি শুধু বন্ধুর জন্য মাড়জল খুঁজতে এসেছি।
তারা আমার কথা কান করে না।
কেবলই বলে যায়--------যা যা এখান থেকে যা। না গেলে গরম জল  ছুঁড়বো।

আমি বাইরে চলে আসি।

বন্ধুকে বলি, একদম হতাশ হবি না।
আমি যতক্ষণ আছি, তোর মুখে খাবার দেবো।
সে আমার মুখের দিকে চেয়ে কি বুঝলো কে জানে। হঠাৎ দেখি, পিচ বাঁধানো রাস্তার পাশে গজিয়ে ওঠা
ঘাসে মুখ দিচ্ছে।
আমার মায়া হলো। মনে হলো, এক প্রাণী এসে আমার কাছে খাবার চাইলো আর আমি দিতে পারবো না!
আমি কেমন মানুষ?

আমি বন্ধুকে নিয়ে গেলাম, সবজি বাজারে। এটা সেটা সবজি ভিক্ষা চেয়ে বন্ধুর মুখের কাছে ধরি। সে মনের আনন্দে চিবোতে থাকে।  এবং চিবোতে চিবোতে সে  তার মনের কথা বলে--------সে আমার কাছেই থাকবে। আমি যেন তাকে অন্য কোথাও ছেড়ে না দিয়ে আসি।
আমি বুঝতে পেরে বন্ধুর মাথায় হাত রেখে বলি-------তোর ভয় নেই। তুই আজ থেকে আমারই বন্ধু। তুই আমার আনন্দ।

আনন্দ আমার কাছেই থাকে।

তাকে নিয়ে ঘুরতে যাই। লোকজন আমাদের দেখলেই, আমাদের ক্ষ্যাপায়। ঢিল ছুঁড়তে থাকে। 
আমি আঘাত পেলেও চেষ্টা করি, আনন্দের গায়ে যেন না লাগে।

আনন্দ আমার বন্ধু।

আনন্দের বন্ধু আমি।

দুজন দুজনের মন টেনে নিয়ে চলতে চাই।


-------১ কার্তিক ১৪২৮
------১৯----১০----২০২১
-----নির্মল হালদার



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ