বুধবার, ১৬ মার্চ, ২০২২

পূর্ব জন্মের স্মৃতি / নির্মল হালদারের



বৈতালিক
-----------------

পূর্ব গগন মাঝে
মন জাগো মঙ্গলালোকে---------

বৈতালিকে এই গান গাইতে গাইতে ইরা আঙুল ছুঁয়ে ফেলেছিল অবিনের।

ইরা ও অবিন পাশাপাশি হাঁটছিল।

ভোরের অন্ধকার।
পৌষ মাসের অন্ধকার।
শীতের অন্ধকার।

ইরা যে খুব চেনে অবিনকে তা নয়।বৈতালিকেই কয়েকবার দেখেছে।
গানের গলা খুব চমৎকার।

অনেকটা রাস্তা পরিক্রমার পর
ইরার চোখে পড়লো অবিনের গায়ে কোনো শীতবস্ত্র নেই।
সে কিছু না বলে তার গায়ের
কালো চাদরটি অবিনের গায়ে
জড়িয়ে দেয়।
অবিন ইরাকে দেখে শুধু। চুপচাপ থাকে।
অবিন জানে ইরা সঙ্গীত ভবনের ছাত্রী। এটুকুই।
কখনো-সখনো দেখেছে কলেজের অনুষ্ঠানে। তার মনে পড়ছে হল কর্ষণ উৎসবে ইরা
গান গেয়েছিল।

অবিন বাংলা পড়তে এসেও তার
গানের প্রতি আকর্ষণ । তার বেশিরভাগ বন্ধু সঙ্গীত ভবনের। এবং গানের প্রতি টান থেকেই সে
বৈতালিকে নিয়মিত।

গায়ে চাদর এসে গেলেও অবিনের
ঠান্ডা লাগছে বেশ। বরং তার আগে তার শীত তেমন করছিল না। সে ইরার পাশ থেকে এগিয়ে গেছে সামনের দিকে।

আকাশ ফর্সা হয়ে উঠছে-------
বৈতালিকের দল থেকে সুর যেন
উঠছে পুব আকাশের দিকেই।

গানের কোরাসে গলা তুলতে তুলতে ইরা ভাবছে, সে যে
অবিনের গায়ে চাদর জড়িয়ে দিলো, কই ধন্যবাদ তো এলো না।
ছেলেটা কেমন?

ইরার গায়ে কুসুমের পাতা থেকে ঝরে পড়লো দু-এক ফোঁটা শিশির। ছ্যাঁক করে লাগলো তার।

বৈতালিক শেষ হয়ে যাওয়ার পরে
অবিন ভাবছে, ইরাকে চাদরটা ফেরত দেবে। কিন্তু ইরাকে দেখতে পায়না।
সে সমস্যায় পড়লো। সে জানেও না, ইরার হোস্টেল।
সে চাদরটা নিজের গা থেকে খুলে
পাট করে নেয়।

অল্প অল্প রোদ উঠছে।

খসে খসে পড়ছে শীতের পাতারা।

আম গাছে মুকুল এসেছে। দু একটা পাখি কাকে যেন ডাকছে।
অবিন নাম জানেনা ইরার। কাকেই বা ডাকবে?

ইরাও নাম জানেনা অবিনের।

এক সাঁওতাল রমণী কাঁখে ঝুড়ি।
কাজ করতে আসছে।
অবিনের মনে হলো,তাকেই চাদরটি দিয়ে দেবে।

কিন্তু কাজটা কি ভালো হবে?
বৈতালিকে দেখা তো হবেই।
চাদরটা চাইলে?

অবিন যদি তার উষ্ণতা দেয়?

এ কী ভাবছে অবিন?

সে পকেট হাৎড়ে দেখে পয়সা আছে। এক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে। সে কালোর দোকান দিকে
হাঁটতে থাকে।

ইরা দাঁড়িয়ে আছে শুকনো
পলাশ গাছের তলায়। সে দেখতে পায় অবিন হেঁটে যাচ্ছে একা একা। তার কালো চাদরটি অবিনের হাতে।
ইরা নিঃশব্দে তার পাশাপাশি শুরু করে হাঁটতে।
অবিন দেখতে পায়। এবং সঙ্গে সঙ্গে চাদরটি হাতে দিতে গেলে,
ইরা বলে------চাদরটি আপনাকে দিয়েছি।
অবিন বলে, আমিতো পছন্দ করি না কালো রঙ।
ইরা উত্তর করে, আপনার গায়ের রঙতো কালো, নিজেকে কি অপছন্দ করেন?

অবিন হাসে।

হাসির জোর এতটাই যে শান্তিনিকেতনের গাছপালায় দোলা লাগলো।

ইরা থমকে দাঁড়ায়।

অবিন বলে, চলুন ।
কোথায় যাবেন?

ইরা কিছুই না বলে, অবিনের
হাত থেকে চাদরটা নিয়ে পলাশ গাছের ডালে ঝুলিয়ে দেয়।
অবিন জানতে চায়,এর মানে?
মানে হলো, আপনি তো কালো রঙ পছন্দ করেন না। এই গাছে
ঝুলে থাকলে, অন্য কোনো জন
নিয়ে যেতে পারবে।
এই কথা বলে ইরা অবিনকে
চা--দোকানের দিকে নিয়ে যেতে চায়।

অবিন এবার চুপচাপ কালো চাদরটি নিজের গায়ে জড়ায়।


------১০ ফাগুন ১৪২৮
-----২৩----২---২০২২
------নির্মল হালদার




সাংস্কৃতিক জমি তৈরি করার জন্য
অনেক লড়াই করতে হয়। নানা দিক থেকে বাধা আসে, আক্রমণ আসে, অকথা কুকথাও আসে। আক্রান্ত হতে হয়। তারপরও চালিয়ে যেতে হয় লড়াই। কেননা,
সাংস্কৃতিক জমি মানে, সুস্থ এক জায়গা। নিঃশ্বাসের সাবলীলতা।

আমার জীবন দিয়ে দেখেছি, ঘরে এবং বাইরে আক্রমণের মুখে পড়েছি। কিন্তু থেমে থাকিনি। নিজের সঙ্গেও লড়াই করতে করতে কবিতার দিকে এগিয়ে গেছি। কবিতা জীবনের দিকে এগিয়ে গেছি। নান্দনিকতার দিকে এগিয়ে গেছি।

সম্প্রতিকালে গুটকা ও পান মশলা ধামাকার সঙ্গে লড়াই করতে করতে পলাশ পরব।

এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা।

কারণ, যত দিন বাঁচা ততদিন আশা। যতদিন বাঁচা ততদিন
নান্দনিক হাওয়া ছড়াতেই হবে।

বাধা আসবেই।

অতিক্রম করতে হবে।

হতাশাও আসবে। কিন্তু হতাশাকে প্রশ্রয় দিলে চলবে না। নোংরা রাজনীতি আসবে, তাকে দুহাতে ঠেলে এগিয়ে যাওয়া।

কিছুই তো দেবার নেই, কেবল আমাদের কাছে আমাদের কাজ।

কী কাজ?

সাংস্কৃতিক কাজ। যা মন থেকে মাটি উর্বর করে। এবং এজন্য
সাংস্কৃতিক কর্মী হতে হয়। এবং
সৃজনশীল মানুষ ই সাংস্কৃতিক কর্মী হতে পারে, তার সৃষ্টি দিয়ে।
তার আবেগ ও উন্মাদনা দিয়ে।
প্রেম ভালোবাসা দিয়ে।

বাহ্যিক চাহিদা অনেক আছে।
বাইরে থেকে ইশারাও আছে।
নিজেকে গুছিয়ে তুলবার গল্প আছে অনেক।
সেই সমস্ত অগ্রাহ্য করে সংস্কৃতির জয়যাত্রায় বেঁচে থাকার নিশান,
প্রকৃত নিশান ওড়াতে হবে।


-----১০ ফাগুন ১৪২৮
----২৩---২---২০২২
----নির্মল হালদার




পাতাঝরা //

কিরাত এসেছে সেই সকাল বেলা।

স্কুল মাঠের মধ্যে আরেকটা পাকা ঘর তৈরি হচ্ছে। তার কাজে কিরাত এসেছে। রাজমিস্ত্রির সঙ্গে।
দুদিন আগে এই পাকা ঘরের জন্য
একটা জাম গাছ কেটে ফেলা হলো।
কিরাতের কষ্ট হয়েছে খুব।
সে জানে, একটা গাছ অনেক রোদ জলের মধ্যে বড় হয়। অনেক ঝড়-ঝাপটা সইতে সইতে
বড় হয়।
সেই সব গাছ কেটে ফেলা হলে
দুঃখ ছাড়া আর কি হবে।

কিরাত তো বড় হয়েছে সাঁওতাল গ্রামে। এবং তাদের গ্রাম গাছগাছালিতে ভরা। তারা জানে,
গাছের মত স্বজন ক জন আর হয়।

কাজের মাঝখানে একজন মাস্টারমশায়ের মত এসে বলেছিলেন, কাজে ঢিলেমি দিও না বাপু। অনেক ছেলে ভর্তি হচ্ছে।
তাদের থাকার জায়গা করতে হবে তাড়াতাড়ি। তোমরাও হাত চালাও।

কিরাত পড়াশোনা করলোনা।
ঠাকুর বলেছিলেন তার বাবাকে,
ছেলেটাকে আমার স্কুলে ভর্তি করে দাও। কিছুই লাগবে না ওর।
দেখতে দেখতে মানুষ হয়ে যাবে।

কিরাতের মা-বাবা তাকে স্কুলে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তার মন বসলো না। সে জঙ্গল থেকে নদীর ধার পর্যন্ত ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসে। পাখি মারে। সাপ মারে। ইঁদুর মারে। তারপর ঘরে এনে পুড়িয়ে খাওয়া।

কিরাতের খিদে পাচ্ছে।
সে তার থলি থেকে টিফিনের বাটি
বাইরে নিয়ে আসে।

মা আজ তাকে দিয়েছে কুমড়ার তরকারি। ভাত। সঙ্গে একটা কাঁচা লঙ্কা।

রাজমিস্ত্রি তাকে ডেকে একটা আলু সেদ্ধ দেয়।

দুপুরবেলা।

পাতা ঝরে। শীতের পাতা ঝরে।

গেল বছর কিরাত প্রতিদিন দুপুরে এসে শুকনো পাতা জড়ো করে ঘরে নিয়ে গেছে।

একদিন ঠাকুর এসে বললেন, তুই
আমার ঘরের দিকে আসবি। গাদা গাদা ঝরাপাতা আমার ঘরে ও বাইরে। তুই পরিষ্কার করে দিবি।

ঠাকুর বিড়বিড় করে আরো কি যেন বলেছিলেন কিরাতের মনে পড়ছে না। মনে পড়ছে, একদিন একটি মেয়ে তার পাশ দিয়ে যেতে যেতে গাইছিল-------
ঝরা পাতাগো আমি তোমারই দলে-------।

ওই কালো বাড়িটার দিকে গেলেই
সুর শোনা যায়। কালো বাড়িটার কাজ যখন শেষ হয়ে আসছে, কিরাত তার বাবার সঙ্গে এসেছিল।

অনেকে ছিলেন যাদের চিনতো না
কিরাত। সবাই মিলেই দেয়ালে দেয়ালে খোদাই করছিল ছবি।
তার মনে পড়ে পড়ছিল, তাদের
পরবের সময় তার মা ও দিদি
ঘরের দেয়ালে ছবি আঁকে।

সে বড় হয়ে একটা পাখির ছবি এঁকেছিল। তীর ধনুকের ছবি এঁকেছিল।
কিরাততো মাটির পুতুল করতেও পারে। তার বাবা কিরাতের গড়া
পুতুলে রঙ করে পৌষ মেলায় বিক্রি করছিল একবার।

নন্দবাবু সেই পুতুল দেখে কিরাতের বাবাকে বলেছিল, ছেলেটাকে মজুরের কাজ করিয়ে নষ্ট করছো কেন? আমার কাছে দাও। অন্য কাজ শেখাবো।

রাজমিস্ত্রি ডাকে -------কতক্ষণ ধরে খাবি রে, মাস্টারমশাইরা এলে, ধমক খেতে হবে। জলদি উঠে আয়। কাজে হাত লাগা।

পাতা ঝরছে।

পাতাঝরা হাওয়ায় হাওয়ায়
কিরাতের ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে
তাদের গ্রামের দিকে।
তাদের পাঁচটা শুয়োরের বাচ্চা
চরে বেড়ায়। মা নিয়ে আসতে পারবে তো মাঠ থেকে?

কাজ শেষ করে যেতেই হবে। নইলে মজুরি পাবে না।
বাবা একবার বলেছিল, এইসব স্কুল বাড়ির জায়গা একসময় জঙ্গল ছিল। তার দাদুর আমলে।

কারোর কারোর ঘর ছিল।

একটা শুকনো পাতা এসে কিরাতের মাথায়।
সে পাতাটি নিয়ে দেখে শিরা-উপশিরা শুকিয়ে গেছে।

বেলা পড়ে এলো।

স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা
খেলা করতে নেমেছে। তাদের খালি পায়ের দিকে চেয়ে কিরাত
দেখতে পায় , কচি কচি রঙ।

কার বাড়ি কোথায়?

কিরাত জানতে পারবে না।

তাদের ঘরবাড়ি কাছে হলেও অনেক দূর। এখানের এই স্কুলের
ছাত্র-ছাত্রী ও মাস্টার মশাইদের
বাড়ি থেকে অনেক অনেক দূর।

কিরাতের তাই মনে হয়ে থাকে।

কাজ শেষের পর সে একা একা
হাঁটতে থাকে গ্রামের দিকে। দেখতে পায় রাস্তার ধারে একটা লোক খালি গায়ে লোহার ছড় আর বালি পাথর সিমেন্ট নিয়ে কাজ করছে।

কিরাত তার কৌতুহল থেকে লোকটার কাছে গিয়ে জানতে চায়------ইখানে কী কাজ হবে গো বাবু?


----১৪ ফাগুন ১৪২৮
-----২৭----২----২০২২
-----নির্মল হালদার




কোপাই//

ছুটি হয়ে গেছে।

গ্রীষ্মকালে বীরভূমের আকাশ বাতাস ও মাটিতে খরা।

জল নেই।

কার্তিকের ক্লাস নেই আর।
তার বন্ধুরা গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি চলে গেছে। রয়ে গেছে সে।

হোস্টেল তো বন্ধ।

কার্তিক ভুবন ডাঙ্গার একটি ঘর ভাড়া করে আছে। কেননা, তাকে
দুবেলা ছেলে পড়াতে হয়। বাড়ি চলে গেলে বেতন বন্ধ হয়ে যাবে।
আশ্রম খুললেই তো টাকা লাগবে।

হোস্টেল খরচ লাগবেই।

ছেলেরা পড়তে আসার আগেই, কার্তিক ঘুম থেকে উঠে পড়ে।
ভোরে ওঠা তার অভ্যাস।
এক একদিন সে সাঁওতাল গ্রামের দিকে চলে যায়। আজ এসেছে
কোপাইয়ে।

কোপাই ছোট্ট নদী।
তার দু পারে ফসলের জমি।
এখন তো ফাঁকা জমি থেকে
মাটির দীর্ঘশ্বাস উঠছে।

একটু বাদেই রোদের তাপ।
এখন ভোরের স্নিগ্ধতা। একটা বক
উড়ে এসে নদীর পাড়ে বসলো।
একগুচ্ছ শালিক জল ছুঁয়ে উড়ে উড়ে যায়।

একজন মহিলা বাঁ কাঁধে থালা বাসন নিয়ে আসছে। নিশ্চয়ই
নদীর জলে এঁটো বাসন পত্র
ধোওয়া--মাজা করবে। এক চাষী
কাঁধের লাঙ্গল পাড়ে রেখে নদীর জলে মুখ ধুচ্ছে।

কার্তিক নদীর পাড়ে বসে পড়লো।

কাছাকাছি একটা বাঁশ বন।
দেখা যাচ্ছে কয়েকটা মুরগির ছানা খেলা করছে।

এ পারে পোড়া কাঠের স্তুপ।

কোপাইয়ের পাড়ে শ্মশান।

কত মৃতদেহ আসে।

জ্যান্ত মানুষও আসে। নদী পারে
ঘুরে বেড়ায়। জলে ভাসায় বেদনার কথা। রেখে যায় পায়ের ছাপ।

মনের কথাও রেখে যায়। যা
লুকিয়ে পড়ে নদীর বালিতে। শ্যাওলায়। মাটিতে। এবং নদীর পাথরের খাঁজে খাঁজে।

আজ কার্তিকের ইচ্ছে করছে,
নদীতে স্নান করবে। কাল রাতে
ঘুম হয়নি তার।

১লা বৈশাখ ছিল গুরুদেবের জন্মদিন। তিনি না থাকলেও
জন্মদিন পালন করা হয়েছে তাঁর
গানে গানে।

কার্তিক নিজে গান গাইতে পারে না। গলা মেলাতেও পারেনা। তবে সে শান্তিনিকেতনের সমস্ত অনুষ্ঠানেই উপস্থিত থাকে। আশ্রমের গাছপালা নাচ গান
তার আপন জন।

তার বিশেষ বন্ধু বুড়ি তাকে
একটা কথা রোজ বলে-----
গান শিখলি না। নাচ শিখলি না।
শুধু ভালোবাসতে শিখলি।

হ্যাঁ, কার্তিক ভালবাসতে পারে।
সে এই কোপাইকেও ভালোবাসে।

একটা কুকুর এখন মাটি শুঁকতে শুঁকতে তার দিকেই এগিয়ে আসছে।

কী দেবে সে ?
তার পকেটেতো বিস্কুট নেই।
সে মনে মনে স্থির করে, এবার
কোপাইয়ের দিকে এলেই, বিস্কুট নিয়ে আসবে।

কার্তিক একবার কোপাই পার হয়ে আরো একটা গ্রামে চলে গেছলো।
সেবারও ছিল গ্রীষ্মকাল ‌। এক চাষী পরিবার তাকে তরমুজ খাইয়েছিল। ঘরে ফেরার সময়
তার হাতে দিয়েছিল দুটো তরমুজ।

তরমুজের স্বাদ অনন্তকালের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেয়।

এক কিশোরী কি একটা বুনতে বুনতে আসছে। মনে হচ্ছে, কোনো
ঘাস বুনছে।

এক বুড়ি এই ভোরেই নদীতে স্নান করতে নেমেছে। মাছধরা জাল ফেলছে এক জেলে।

কার্তিকের মনে হলো, মাছ উঠলে
যদি কিনে নিয়ে যেতে পারে, দুপুরে হয়ে যাবে তার। সে তো রান্নাবান্না করে খায়।

পকেট হাৎড়ে সে দেখলো, পয়সা আছে।

কার্তিকের মনে কতকিছু আসা-যাওয়া করছে নদীর জলের মতো। তবে নদী উদাসীন। সে উদাসীন হতে পারে না। নির্বিকার হতে পারেনা। তাকে ভবিষ্যৎ চিন্তা করতে হয়। তার মা বাবা তাকে ঘিরে স্বপ্ন দেখেন।

কার্তিককে পেতেই হবে একটা চাকরি। কিন্তু কী চাকরি করবে সে? সে পছন্দ করে মাস্টারি করা। যদি আশ্রমেই একটা কাজ জুটে যায়?

বুড়িকে একবার সে বলেছিল, তার কাছে মালীর কাজও পছন্দের। সে যদি আশ্রমের ফুল গাছ গুলি লালন করতে পারে, খুশি হবে খুব।

ছাতিম ফুলের গন্ধ নিতে কার্তিক
রাত্রিবেলা গাছের নিচে দাঁড়ায়।

এক বাউল এখন পাকুড় গাছের
নিচে দাঁড়িয়ে একতারাতে সুর তুলছে।

সুর বয়ে যায় নদীর স্রোতে।


-----১৮ ফাগুন ১৪২৮
----৩----৩----২০২২
-----নির্মল হালদার




সাঁওতাল ছেলে//

মায়ের সঙ্গে আসে। প্রতিদিন।

আশ্রমে কাজ চলছে।
মাটি খোঁড়াখুঁড়ি। ইঁট নেমেছে। বালি নেমেছে।

শত্রুঘ্নর মা দূরের মাঠে মাটি ফেলে দিয়ে আসে। মাথায় করে ইঁট নিয়ে আসে। সে শুধু ঘুরে বেড়ায়। দেখে
তার মতো ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা গাছ তলায় লেখাপড়া করছে। সে শুধু চেয়ে থাকে মায়ের কাজের দিকে। আর ওই ছাতিমতলার দিকে।

ছাতিমতলায় একটি বেদি আছে।

অন্যান্য গাছের তলায় কোনো বেদি নেই। শত্রুঘ্নর মনে প্রশ্ন আসে, কেন আমতলায় জামতলায় সিমেন্ট বাঁধানো নেই?

সে তাহলে যে কোনো বাঁধানো বেদিতে শুয়ে পড়তে পারতো।
একদিন দুপুরে ছাতিমতলায় সে
শুয়ে পড়েছিল। ঘুমিয়ে গেছলো।
একটা লোক এসে তাকে উঠিয়ে দিয়ে বলেছিল, এটা শোবার জায়গা নয়-------।
সে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে এসেছিল মায়ের কাছে। জল তেষ্টাও পেয়েছিল তার।

মায়ের কাছে জল ছিলনা। মা বলেছিল, যা কাঁদর দিকে -----।

কাঁদরতো দূরে আছে। জল আছে কিনা কে জানে। শত্রুঘ্ন জলের খোঁজ করতে করতে আশ্রমের
রান্নাঘরের কাছে চলে আসে।

একটা লোক খালি গায়ে কার সঙ্গে যেন কথা বলছে। সে কাউকেই চেনেনা। তার বলতে ইচ্ছে করছে, একটু জল দেবে?

বলতে পারলোনা।

সে আবার এখান সেখান করতে করতে একটা বাড়ির সামনে।
উঠোনে পড়ে আছে অনেক মাটি।
একজন লোক শত্রুঘ্নর বাবার মত চেহারা। তার মনে হলো, এই একজনকে জলের কথা বলা যায়।

কাছে এগিয়ে যেতেই লোকটি
তাকে প্রশ্ন করে, কি চায় বাবা?
শত্রুঘ্ন খুব নিচু গলায় বলে , একটু জল দিবে?

লোকটি হাসে আর চিৎকার করে গেয়ে ওঠে-----তৃষ্ণা আমার তৃষ্ণা
ওগো------


------২১ ফাগুন ১৪২৮
------৬----৩----২০২২
------নির্মল হালদার



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ