শুক্রবার, ১৬ জুলাই, ২০২১

ঝড় / নির্মল হালদার

ঝড় / নির্মল হালদার



প্রস্তাবনার মন ভালো নেই। সে আমলকি গাছের কাছে যায়। তার ছায়া জড়িয়ে বলে------ আমার অন্তরে ঝড়। থামিয়ে দাও। কিছুই ভালো লাগছে না আমার।
সে গাছের কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে, চলে যায় নদীর কাছে। নদীকেও বলে------আমার অন্তরে ঝড় থামিয়ে দাও। সে নদীর কাছ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে চলে যাচ্ছিলো। তাকে দাঁড়াতে বলে এক যুবক। তার কাঁধে মাছধরা জাল। পরনে বারমুডা। গায়ে গেঞ্জি। যুবক বলে----আমি শুনতে পেয়েছি আপনি কি চাইছেন। শুনুন, ঝড় কেউ থামাবে না। থামাতে হবে আপনাকেই। আপনি স্থির হয়ে দেখুন,
নদীর চলাচল। নদী আপন-মনে চলেছে। নিজের আনন্দে চলেছে। তাকে নির্দেশ দেওয়ার মতো কেউ নেই। আপনিও নিজেই থামাতে পারবেন আপনার অন্তরের ঝড়।

সকালবেলা। আকাশে মেঘ। নদীর ধারে গাই--গরু চরে বেড়ায়। বাগাল ছেলেও গাই গরুর পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ধানক্ষেতে জমে আছে জল। ধান রোয়া শুরু হবে এবার। নদী সংলগ্ন জমিতে ধান রোয়া চলছেও। কাজের লোকজন কাজ করতে করতে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে। এবারের বৃষ্টিতে নাকি শাক সবজি নষ্ট হয়ে গেছে। এই কারণে বাজারে সবজির দাম চড়া।

যুবকের কথা শুনে প্রস্তাবনা নদীর ধারে গিয়ে বসে। সে বুঝতেই পারছে না, কাল রাত থেকে মন কেন উথাল পাথাল করছে। কাল তো দেখা হয়েছিল আজাদের সঙ্গে। হাসি ঠাট্টাও হয়েছিল অনেক।

তবে? প্রস্তাবনার কি হয়েছে? কোন্ অপূর্ণতায় সে অস্থির? তার কেবলই মনে হচ্ছে, যে ঝড় এসেছে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।

যদিও সে দেখছে, নদীর ছোট ছোট ঢেউ। উঁচু-নিচু ঢেউ। নদীর জল পাথরে ধাক্কা খেতে খেতে নিজের গন্তব্যে চলেছে। সে কি নদীর সঙ্গে যাবে?

কোথায় যাবে?

ঘরে তো ফিরতেই হবে। সঙ্গে সঙ্গে তার মনে হলো, কেন ফিরতে হবে? সে যদি নদীর গতির সঙ্গে পা মিলিয়ে হেঁটে যায়?

প্রস্তাবনা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো, যুবকটি জাল ফেলছে নদীতে। জালে উঠে আসবে মাছ। ছোট বড় মাছ। ডাঙায় উঠে স্থির হয়ে যাবে তাদের প্রাণ। এই তো জীবন।

প্রস্তাবনার অন্তরে আরো ঝড় ওঠে। সে দাঁড়িয়ে যায়। যেদিকে ধান রোয়া চলছে, সেদিকে গিয়ে দাঁড়ায়। এক মহিলাকে সে বলে, আমাকে কিছু কাজ দেবে?

প্রস্তাবনা জানে, যারা ধান রুইছে তারা এখুনি হেসে উঠে বলবে----- তুমি নাই পারবে আমাদের মত কাজ করতে। তুমি বরং বসে থাকো। আমাদের কাজ দেখো।

ধান ক্ষেতের আলে শোয়ানো আছে এক শিশু। মা ধান রুইছে। শিশুকে দেখে প্রস্তাবনা বলে----- আমি কি ছোট্ট ছেলেকে নিতে পারি? তার মা বলে---- উ ঘুমাছে।

সে নদীর কাছে আবার এসে দাঁড়ায়। মাছ ধরা যুবক তাকে লক্ষ্য করছে। সেও ভাবছে, মেয়েটি কোত্থেকে এলো? কত দূরে বাড়ি? মেয়েটির মনে কেন ঝড় উঠেছে? মেয়েটি কি কোনো বিষয়ে আঘাত পেয়েছে? যুবক দেখছে, প্রস্তাবনা জলের কাছে নেমেছে। আস্তে আস্তে সে বুক জল অবধি নেমে গেছে।

যুবক চিৎকার করে বলে------ আপনি উঠে পড়ুন উঠে পড়ুন। জল থেকে উঠে পড়ুন। হঠাৎ বান এলে আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রস্তাবনার কানে যায় না কথা। সে একা একা জলের সঙ্গে খেলা করছে। সে ভাবছেও ,এবার নিশ্চয়ই ঝড় থেমে যাবে। কিন্তু না, ঝড় বরং তাকে আরো বেশি অস্থির করে ফেলছে।

না---পাওয়া গুলি কি বড় হয়ে উঠছে বারবার? তার জীবনে? সে নদীর জল থেকে ভেসে যাওয়া শ্যাওলা তুলে মাথায় রাখে। ভেসে যাওয়া গাছের ডাল , পাতাপুতা মাথায় রাখে।

মাছধরা যুবক দেখতে দেখতে ভাবে, মেয়েটি কি পাগল হয়ে গেল?

সকালেই ঘন মেঘ। বৃষ্টি নামবে এখুনি। মেয়েটিকে জল থেকে তুলতেই হবে। নইলে বিপদ। সে জাল তুলে পাড়ে রাখতে যাবে যেই, বড় বড় ফোঁটা পড়তে শুরু করলো। যুবক দৌড়াতে দৌড়াতে এসে প্রস্তাবনাকে ডাকে। আপনি বিপদ করবেন দেখছি-----দেখছেন না বৃষ্টি এলো। নদীর জল আপনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে। আপনি উঠে আসুন।

প্রস্তাবনা শোনে না যুবকের ডাক। আর কোনো উপায় না দেখে, যুবক ঝাঁপিয়ে পড়ে জলে। তখন নদীর জল বৃষ্টির জল প্রস্তাবনাকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। যুবকের ভয় এই বুঝি মেয়েটিকে আর রক্ষা করা যাবে না। সে সাঁতার দিতে দিতে প্রস্তাবনাকে ধরে ফেলে। ধমক দেয়। আপনি তো এখনই মৃত্যুর দিকে চলে যাচ্ছিলেন। কি ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে আনছিলেন নিজেই। যুবক প্রস্তাবনাকে পাঁজাকোলা করে পাড়ে নিয়ে আসে । বলে------আপনি বাড়ি ফিরে যান। না আমি বাড়ি ফিরবো না। আপনি আমার ঝড় থামিয়ে দিয়েছেন। আপনার সঙ্গে আপনাদের বাড়ি যাবো।

-----৩১  আষাঢ়১৪২৮
-----১৬----৭----২০২১
-----নির্মল হালদার









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ