শুক্রবার, ৬ আগস্ট, ২০২১

সারাংশ / নির্মল হালদার

সারাংশ / নির্মল হালদার



আমি আজ সারাংশকে খুঁজছিলাম। আমি আজ সারাদিন সারাংশকে খুঁজছিলাম।সে বলেছিল ------- প্রতিটি ঘর আমার ঘর। যেকোনো ঘরে আমি ঢুকে যেতে পারি।

এই তো একটা ঘর থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ফিরে এলাম। এই তো ওই হলুদ ঘর থেকেও ফিরে এসেছি। ওই শাদা ঘর থেকে ফিরে এসেছি। সমস্ত ঘর আমাকে বলে, আমাকে চেনে না কেউ। সমস্ত ঘর আমাকে বলে, মগের মুলুক পেয়েছেন? ঢুকে পড়লেই হলো? কোথাও কোথাও শুনতে হলো, ঘরে ঢুকলেই গলা ধাক্কা খেতে হবে।

এইরকম একটা ঘরে বলেছিলাম, হ্যাঁ হ্যাঁ চলে যাচ্ছি। তার আগে আমাকে এক গ্লাস জল দিন। না--- জল পাইনি।

আজ সারাদিন সারাংশকে খুঁজছি। সে বলেছিল, গ্রামে শহরে আমার ঘর আছে। যেকোনো ঘর
আমার ঘর।

ঘর?

একটা আশ্রয়। আত্মীয়তার স্বাদ।
যৌথতার আলো অন্ধকার।

না।
কোনো আশ্রয় নেই।
না।
যৌথতা নেই।
না।
আত্মীয়তার আস্বাদ নেই।


সারাংশ কোথায় দেখেছে ঘর? সারাংশ কোথায় দেখেছে আশ্রয়ের আলো ছায়া?

কাল মনে হয়েছিল, ওই যে নীল রঙের বাড়ি। ওই বাড়িতে যাবো। সাধ হয়েছিল, দুটি ডাল ভাত খাবো।
সেই বাড়ির দরজার কাছে গিয়ে দেখলাম, দরজা খুললো। দরজা বন্ধ হয়ে গেল। আমি হতাশ না হয়ে সারাংশর উদ্দেশ্যে একটা হাসি হেসে উঠলাম। এবং এই হাসির পরেও সারাংশকে আমি খুঁজে চলেছি।

সারাংশ কেন বলেছিল, প্রতিটি ঘর আমার ঘর। প্রতিটি মানুষ আমার আত্মীয় বন্ধু?

সেদিন পথচলতি একজনকে বললাম, চলুন চা খাই। তিনি বললেন, অন্য কাজ আছে। আর অচেনা মানুষের সঙ্গে তিনি চা খাবেন কেন? সেদিন চা দোকানের দিকে চেয়ে এক চা পিপাসুকে বললাম, এক কাপ চা খাওয়াবেন? তিনি বললেন, আপনাকে চিনি না জানিনা। চা খেতে খুঁজছেন? আমি হাসতে হাসতে চা দোকান থেকে বাইরে এসে পেয়ারা বিক্রেতাকে বললাম, একটা পেয়ারা দেবে? বিক্রেতা পয়সা চাইলেন।

পয়সা?

পয়সা আমি চিনতে চাই না।
আমার পকেটে পয়সা নেই।
আমি বললাম না সে কথা। আমি চুপচাপ রাস্তায় রাস্তায় বন্ধু খুঁজতে খুঁজতে এলোমেলো হয়ে পড়ছি।
আমার পিপাসা দীর্ঘ হয়ে উঠছে।

মিষ্টির দোকানে গিয়ে জল চাইলাম। এক গ্লাস জলের দাম এক টাকা। আমার পকেটে পয়সা নেই। আমাকে খুঁজতেই হবে সারাংশ কোথায়? আমাকে খুঁজতেই হবে সারাংশ সত্য না মিথ্যে?

সারাংশ তো সত্যই।
হাত পা আছে। চোখ নাক কান আছে। আর একটা মানুষের যা যা থাকা দরকার, সমস্তই আছে।

সারাংশ মানুষ।

এবার বুঝতে হবে, সত্যি মানুষ না মিথ্যে মানুষ?
এবার বুঝতে হবে, সত্য কি? মিথ্যা কি?

আমি বিচলিত হয়ে পড়ছি।
আমি ঘেমে উঠছি। আমার খিদে নেই। শুধু জল তেষ্টা।
সারাংশকে আজ পেতেই হবে।
তার সঙ্গে প্রতিদিন দেখা হয়। আজ কেন হবে না?

ওই ঝুপড়িতে ঢুকে পড়বো।
আমাকে ফেরাবে না নিশ্চয়ই।
আমি একটু জিরোতে চাই।

ঢুকতে যাবো যেই, এক বালক এসে বললো, এখন কেউ নেই। আপনি আসবেন না।

সারাংশ সারাংশ
চিৎকার করতে ইচ্ছে করলো।

আপনারা কেউ সারাংশকে দেখেছেন? ঠোঁটে একটা কাটা দাগ আছে। সব সময় শাদা পাজামা পাঞ্জাবী পরে। হঠাৎ হঠাৎ রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে ওঠে।
আপনারা দেখেছেন তাকে?

কে যেন ডাকছে আমাকে।
চারদিক তাকিয়ে দেখি, কেউ নেই। কেউ নেই। আবার শুনতে পাই, আমাকে কেউ ডাকছে।

রাস্তায় শুধু দাঁড়িয়ে আছে একটা নিম গাছ। 
তবে কী সেই ডাকছে আমাকে?

আমি সাড়া দিলে সারাংশকে খুঁজে পাবো না।

----২০ শ্রাবণ ১৪২৮
----৬---৮---২০২১
-----নির্মল হালদার




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ