অন্ন বস্ত্র বাসস্থানের অধিকার নাইবা থাকুক। ভোট দেওয়ার অধিকার আমার আছে। আমাকে যেতেই হবে ভোটের লাইনে। আমাকে দিতেই হবে ভোট। ভোট, আমার গণতান্ত্রিক অধিকার।
একটা সময় ছিল যখন কোনো ভোট আমি দিইনি। এই কারণে, আমি চিহ্নিত হয়ে গেছিলাম। এবং ভোটের দিন আমার কাছে সবাই জানতে চাইতো, কৌতূহলের সঙ্গে জানতে চাইতো, আমি ভোট দিয়েছি কিনা। যদি বলতাম দিয়েছি তাহলে, দেখতে চায়তো আমার কলঙ্কিত আঙ্গুল। আমি হেসে উঠলাম।
তখন পছন্দের বাইরে কোনো বোতাম ছিল না। আমি কি করে যাই ভোট দিতে। আমার নৈতিকতার বাইরে কি করে যাই, ভোটের লাইনে!
কেন না, ভোট একটি প্রহসন। ভোট, মানুষকে ঠকানোর এক কৌশল। ভোট, মানুষকে বোকা বানানোর এক ষড়যন্ত্র।
নেতা-মন্ত্রীরা বিভিন্ন মিডিয়াতে প্রচার করে থাকেন, প্রচার করছেন, আপনার ভোটাধিকার প্রয়োগ করুন। জনগণের কাছে আবেদন করছেন, আপনার ভোট আপনার অধিকার।
আমার বেঁচে থাকাও আমার অধিকার। আমার শিক্ষা আমার অধিকার। আমার স্বাস্থ্য আমার অধিকার।আমার অন্নবস্ত্র আমার অধিকার। বাসস্থান আমার অধিকার। কোন্ অধিকার আমি পেয়েছি?
গতকাল বুড়ি সবজিওয়ালির কাছে জানতে চাইছিলাম, মাসি ভোট দিবে তো? মাসি বললো,
আগে পেট। পেট ভরানোর জন্য বাজারে আসবো সবজি বিকতে, তার পরে সময় পেলে, ভোট দিতে যাব। এই বুড়ি সবজিওয়ালির কথা নেতা-মন্ত্রীরা কী শুনতে পান? এক রিকশাওয়ালাকে বলছিলাম, ভোট দিতে যাবে নাকি? সে বললো, যদি রিকশা টেনে চাল নুনের দাম টা বের করতে পারি, তবেই ভোট দিতে যাব-------।
আমার চা ওয়ালা, যার কাছে প্রতিদিন চা খেয়ে থাকি সকালে, সে বললো, বেলা বারোটার পর দোকান বন্ধ করবো, তা বাদে যদি মন করি, ভোট দিতে যাব।
এইসব ছবির দিকে আমাদের নেতা মন্ত্রীরা এবং রাজনৈতিক দলগুলি কী তাকিয়েছে ভুল করে?
আমরা বরং ভুল করে তাকিয়ে দেখতে পাই, চৈত্রের পলাশ। আগুন রাঙা পলাশ। যেনবা প্রতিবাদী কন্ঠস্বর হয়ে বলছে, আর নয় এবার দূর হটো------দূর হটো ------- আমরা ধরে ফেলেছি রাজনৈতিক দলের কারচুপি। আমরা আগে চাই, আমাদের বাঁচার অধিকার।
ফুটপাতে শুয়ে থাকা মা ও শিশুর মুখে যে মাছিরা বসছে, আগে তাড়াতে চাই। তাদের জন্য ব্যবস্থা করতে চাই, যে ব্যবস্থা থেকে তৈরি হবে মাথার আচ্ছাদন। যে ব্যবস্থা থেকে, দু'মুঠো আসবে।
ভোট নয়। জোট নয়। খুনোখুনি নয়। হাসি চাই।মানুষের মুখের হাসিতে এই পৃথিবী খুঁজে পাবে তার সৌন্দর্য।
পৃথিবীর মধ্যে ভারতবর্ষ বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। তার যথাযথ অর্থ করতে হলে, মানুষকে বাঁচার অধিকার কথা বলার অধিকার দিতে হবে।
নির্মল হালদার
২৭/৩/২০২১
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন