সোমবার, ৩১ মে, ২০২১

কবর বাড়ি// নির্মল হালদার

কবর বাড়ি//
----------------------

এখানে এসে দেখা যে হবেই ভাবতে পারেনি কিরাত। একটা কবরে বসে তার বন্ধু হরি বিড়ি টানছে।

----কিরে তুই এখানে?
----আমিতো এখানে রোজ আসি
----আমিও তো আসি। দেখতে পাই না তো।
---কি করে দেখবি, আমি তো মাঝেমধ্যে কবরের ভিতরে চলে যাই, যে শুয়ে আছে ভিতরে তার সঙ্গে দু-একটা কথা বলে আসি।
বিড়িও দিয়ে আসি।
---কি আবোল তাবোল বকছিস?
-----তোর কাছে আবোল-তাবোল মনে হতে পারে, ইয়ার্কি মনে হতে পারে, আমার কাছে নয়।
যা সত্যি তাই বললাম।
----কবরের ভিতরে যাওয়া যায়?
----যায়রে যায়। যাব বললেই যাওয়া যায়। এজন্যে মায়া টান থাকতে হয়। এজন্যে কবরের
দরজা জানতে হয়।
-----তুই কি দরজা জানিস?
আমাকে দেখাবি?
----না। সবাইকে দেখানো যাবে না।
যার কোন টান ভালোবাসা নেই, সে কি করে যেতে পারে! টান ভালোবাসা থাকলে, দরজা আপনা আপনি খুলে যায়।

কিরাত বিচলিত বোধ করে। সে চিন্তা করে, এ কি সম্ভব নাকি হরি
কল্পনাতে যায় কবরের ভিতরে? সে আর কোনো কথায় বলতে পারেনা। সেও হরির কাছে একটা বিড়ি চেয়ে ধরিয়ে ফেলে। ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে হরির কাছে জানতে চায়-----------হ্যাঁরে
কবরের ভিতরে যে শুয়ে আছে সে তো মৃত ব্যক্তি। তোর সঙ্গে বিড়ি খায়?
-----খায় খায়
বিড়ি দিয়েও আসতে হয়। ভেতরে
তেষ্টা বেশি।
----জল তেষ্টা পায় না ওদের?
হরি বলে তাকে কোনদিনই জলের কথা বলেনি। কোনোদিন খাবার খুঁজলো না তার কাছে। কেবল
চারপাশের খবর শুনতে চায়। নতুন করে ভালোবাসার কথা বলতে চায়। বলে, খুব ভালবাসতে ইচ্ছে করছে রে------না কোনো মেয়েকে নয়, শিশুকে।
হরি নাকি হাসতে হাসতে বলেছিল একদিন, আমি তোমাকে কবরের মাটি থেকে পুতুল বানিয়ে দেবো। তুমি যত পারবে ভালবেসো।

মৃত ব্যক্তি হরির সঙ্গে উপরে উঠে আসতে চায়। দেখতে চায়, চারপাশ কেমন বদলে গেছে। এবং তাদের বাড়িটার কাছে গিয়ে
উঁকি দিয়ে আসবে একবার।
হরি মানা করে।

সন্ধের অন্ধকার পার হয়ে রাত্রির অন্ধকার আসছে। কবর বাড়ির অশথ গাছে ডেকে ওঠে রাতচরা
পাখি। কিরাত আকাশের দিকে মুখ তুলে হরিকে বলে, মেঘ আসছে রে--------।
-----আসুক না কি আর হবে
আমি কবরের ভিতরে চলে যাব।
একটুও ভিজবো না। বৃষ্টিকে থোড়াই কেয়ার করি।
-----তো ভাই কবরের দরজাটা
আমাকে দেখিয়ে দে না! আমি একটু ঘুরে আসবো।
-----না তা আমি পারবো না।
তুই যদি নিজে কোনোদিন দরজা খুঁজে পাস, সেদিন নিজেই যেতে পারবি। একা একাই যেতে পারবি।
আমাকে তো কেউ দরজা দেখিয়ে দেয় নি। আমি তো নিজেই খুঁজে পেয়েছি। তুইও হয়তো পাবি। এজন্যে একটা মন লাগে। সেই মন
এখন তোর নেই।
-----কিন্তু কবে খুঁজে পাবো দরজা?
------তা আমি কি করে বলবো।
------আচ্ছা আচ্ছা--------আচ্ছা
আজ আমার সামনেই কবরের ভিতরে যেতে পারবি? আমার সামনে আবার আসতে পারবি?
-----না আমি কারোর সামনেথেকে যাইনা। সব সময় একা গেছি। একা এসেছি।
এবার সন্দেহ হয় কিরাতের। হরি বোধহয় বানিয়ে বানিয়ে গল্প বলছে। সে বসেছিল কবরের উপরে। উঠে পড়লো। ঘুরে ঘুরে
দেখতে লাগলো, অন্ধকারেই দুচোখ দিয়ে দেখতে লাগলো, যদি
কবরের দরজাটা দেখতে পায়।
যে কবরের উপরে হরি বসে আছে, তার পিছন দিকে একটা গর্ত। কিরাতের মনে হলো, এই বুঝি দরজার মুখ। সে গর্তের মধ্যে
পা ঠুকে ঠুকে হরি কে জিজ্ঞেস করে, হ্যাঁরে এই কি দরজা শুরু?

হরি হেসে ওঠে জোর।

মেঘ ডাকতে শুরু করে। দু-এক ফোঁটা বৃষ্টি। বিদ্যুতের ঝলক। বিদ্যুতের আলোয় দেখা যায়
অশথ তলায় দাঁড়িয়ে আছে
এক যুবক। তার মাথায় ঝাঁকড়া চুল। পরনে জিন্স। খালি গা। সে একা একা হাসছে। নিঃশব্দ।

-----১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----৩০----৫----২০২১
-----নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ