সোমবার, ৩১ মে, ২০২১

মাঠ// নির্মল হালদার

মাঠ//


১.
বাবার হাত ধরে ছেলে শহরের গলি থেকে গলি হাঁক দিয়ে চলেছে: একটা মাঠ দেবে গো মাঠ
একটা মাঠ দেবে গো মাঠ--------

একবার বাবা হাঁক দিলে একবার
ছেলে হাঁক দিতে থাকে: একটা মাঠ দেবে গো মাঠ------
একটা মাঠ দেবে গো মাঠ------?

হাটবাজারের মানুষ, পথ চলতি মানুষ, উঁকিঝুঁকি মারা মানুষ
কৌতুহলের সঙ্গে শুনতে থাকে,
বাবা ও ছেলের হাঁক।

সবারই প্রশ্ন: মাঠ আবার কী?
মাঠের জন্য ফেরিওয়ালার মত
হাঁক দিলেই কি মাঠ পাওয়া যাবে?
এরা কি পাগল?

বাবা ও ছেলে একসঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
বসে যায় সবজি বাজারে। যেখানে
নিত্য কোলাহল। বেচাকেনা। কেনাবেচা।

বাবা ও ছেলে হাঁক দিতে থাকে :
একটা মাঠ দেবে গো মাঠ?
বাজারিরা ঘুরেফিরে বাবা ও ছেলেকে দেখে। নিজেদের মধ্যে কানাকানি করে: একইসঙ্গে বাপ বেটা পাগল হয়ে গেছে। কেউ কেউ পাগল মনে করে, পয়সা ছুঁড়ে দিয়ে যায়। অনেকেই হাসাহাসি করে। খুব কৌতুহলী যারা কাছে এসে জানতে চায়, তোমরা কি বলতে চাও, সঠিক আমাদের বলবে? তোমরা কোথা থেকে এসেছো? কত দূরে বাড়ি?

কেউ কেউ বলে ভিক্ষার এই নতুন ধরণ দেখে অবাক লাগছে ভাই।

বাবা ও ছেলে চুপ থাকে।

ছেলেটির নাম বাগান। ফুলের মতোই সে সুন্দর। বাঁ চোখের নিচে
কাটা দাগ। তাকে আরো সুন্দর করেছে।
সে প্রতিদিন ব্যাংকের মাঠে খেলা করে আরো বন্ধুদের সঙ্গে। কখনো ক্রিকেট। কখনো ফুটবল। কখনো শুধুই দৌড়ঝাঁপ। এই মাঠেই কিছুটা হাওয়া বয়। চার পাশেই তো ঘর বাড়ি। বাজার হাট। দোকানপাট। সব সময় থিকথিক করছে ভিড়।
দম বন্ধ হয়ে আসে। এখন আবার
স্কুল বন্ধ। রায় দেড় বছর হয়ে গেল স্কুল বন্ধ হয়ে আছে। চলছে
লকডাউন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই বাজার হাট ছেড়ে আর কোন্ মাঠে যাবে খেলাধুলো করতে? এই একটাই তো মাঠ। ছোট্ট মাঠ। ছেলেরা
দুহাত খুলে দিয়ে দৌড়োয়। নিজেদের মধ্যে মারপিট করে।

সে এক অনাবিল আনন্দ।


হঠাৎ করে কোনো কোনোদিন
প্রজাপতি এসে ফড়িং এসে ছেলেদের সঙ্গে খেলা করে। রঙ ছড়ায়।

সেই উদার মাঠ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেল। কোনো প্রোমোটার সমস্তটাই কিনে নিয়েছে। শপিং মল হবে।
তার আগে কাজ শুরুর আগে, মাঠের চারদিক বন্ধ করে দেওয়া হলো। কেউ যেন ঢুকতে না পারে।

ছেলেরা চাওয়া চায়ি করে।
কোথায় যাবে তারা? আর তো কোনো মাঠ নেই।

মাঠ নেই।

বাগানের মত অনেকেই দুঃখ কষ্ট চেপে বাড়িতে বন্দি হতে থাকে।

বাগান একদিন তাদের গলিতে
ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল। কলোনির লোকজনের বাধা পেয়ে
সে আশাও ছাড়তে হয়েছে তাকে।

বাগানের বাবা ছেলের যন্ত্রণা অনুভব করে এই রকম একটি প্রতিবাদে শহরের অলিতে গলিত
রাস্তায় রাস্তায় হাঁক দিয়ে যায়: একটা মাঠ দেবে গো মাঠ-------?

সেই ব্যাংকের মাঠে ছেলেরা নেই বলে হাওয়া স্তব্ধ হয়ে গেছে। সেই ব্যাংকের মাঠে প্রজাপতি আর আসে না। ফড়িং আর আসে না।

কেবল ট্রাক ট্রাক ইঁট-বালি--সিমেন্ট। ছড়।পাথর।


বাগান একা একা দূর থেকে দেখে। আর বুঝতে পারে, তার চোখের কোনে কি একটা চিকচিক করছে।



-----১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----৩১----৫----২০২১
-----নির্মল হালদার



২.
বাবার হাত ধরে ছেলে শহরের গলি থেকে গলি হাঁক দিয়ে চলেছে: একটা মাঠ দেবে গো মাঠ
একটা মাঠ দেবে গো মাঠ--------

একবার বাবা হাঁক দিলে একবার
ছেলে হাঁক দিতে থাকে: একটা মাঠ দেবে গো মাঠ------
একটা মাঠ দেবে গো মাঠ------?

হাটবাজারের মানুষ, পথ চলতি মানুষ, উঁকিঝুঁকি মারা মানুষ
কৌতুহলের সঙ্গে শুনতে থাকে,
বাবা ও ছেলের হাঁক।

সবারই প্রশ্ন: মাঠ আবার কী?
মাঠের জন্য ফেরিওয়ালার মত
হাঁক দিলেই কি মাঠ পাওয়া যাবে?
এরা কি পাগল?

বাবা ও ছেলে একসঙ্গে ঘুরতে ঘুরতে একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
বসে যায় সবজি বাজারে। যেখানে
নিত্য কোলাহল। বেচাকেনা। কেনাবেচা।

বাবা ও ছেলে হাঁক দিতে থাকে :
একটা মাঠ দেবে গো মাঠ?
বাজারিরা ঘুরেফিরে বাবা ও ছেলেকে দেখে। নিজেদের মধ্যে কানাকানি করে: একইসঙ্গে বাপ বেটা পাগল হয়ে গেছে। কেউ কেউ পাগল মনে করে, পয়সা ছুঁড়ে দিয়ে যায়। অনেকেই হাসাহাসি করে। খুব কৌতুহলী যারা কাছে এসে জানতে চায়, তোমরা কি বলতে চাও, সঠিক আমাদের বলবে? তোমরা কোথা থেকে এসেছো? কত দূরে বাড়ি?

কেউ কেউ বলে ভিক্ষার এই নতুন ধরণ দেখে অবাক লাগছে ভাই।

বাবা ও ছেলে চুপ থাকে।

ছেলেটির নাম বাগান। ফুলের মতোই সে সুন্দর। বাঁ চোখের নিচে
কাটা দাগ। তাকে আরো সুন্দর করেছে।
সে প্রতিদিন ব্যাংকের মাঠে খেলা করে আরো বন্ধুদের সঙ্গে। কখনো ক্রিকেট। কখনো ফুটবল। কখনো শুধুই দৌড়ঝাঁপ। এই মাঠেই কিছুটা হাওয়া বয়। চার পাশেই তো ঘর বাড়ি। বাজার হাট। দোকানপাট। সব সময় থিকথিক করছে ভিড়।
দম বন্ধ হয়ে আসে। এখন আবার
স্কুল বন্ধ। প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল স্কুল বন্ধ হয়ে আছে। চলছে
লকডাউন। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই বাজার হাট ছেড়ে আর কোন্ মাঠে যাবে খেলাধুলো করতে? এই একটাই তো মাঠ। ছোট্ট মাঠ। ছেলেরা
দুহাত খুলে দিয়ে দৌড়োয়। নিজেদের মধ্যে মারপিট করে।

সে এক অনাবিল আনন্দ।


হঠাৎ করে কোনো কোনোদিন
প্রজাপতি এসে ফড়িং এসে ছেলেদের সঙ্গে খেলা করে। রঙ ছড়ায়।

সেই উদার মাঠ হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল। ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেল। কোনো প্রোমোটার সমস্তটাই কিনে নিয়েছে। শপিং মল হবে।
তার আগে কাজ শুরুর আগে, মাঠের চারদিক বন্ধ করে দেওয়া হলো। কেউ যেন ঢুকতে না পারে।

ছেলেরা চাওয়া চায়ি করে।
কোথায় যাবে তারা? আর তো কোনো মাঠ নেই।

মাঠ নেই।

বাগানের মত অনেকেই দুঃখ কষ্ট চেপে বাড়িতে বন্দি হতে থাকে।

বাগান একদিন তাদের গলিতে
ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিল। কলোনির লোকজনের বাধা পেয়ে
সে আশাও ছাড়তে হয়েছে তাকে।

বাগানের বাবা ছেলের যন্ত্রণা অনুভব করে এই রকম একটি প্রতিবাদে শহরের অলিতে গলিত
রাস্তায় রাস্তায় হাঁক দিয়ে যায়: একটা মাঠ দেবে গো মাঠ-------?

সেই ব্যাংকের মাঠে ছেলেরা নেই বলে হাওয়া স্তব্ধ হয়ে গেছে। সেই ব্যাংকের মাঠে প্রজাপতি আর আসে না। ফড়িং আর আসে না।

কেবল ট্রাক ট্রাক ইঁট-বালি--সিমেন্ট। ছড়।পাথর।


বাগান একা একা দূর থেকে দেখে। আর বুঝতে পারে, তার চোখের কোনে কি একটা চিকচিক করছে।



-----১৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----৩১----৫----২০২১
-----নির্মল হালদার







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ