কবিতা
৯১.
সূর্যের কিরণ ফুল-ফলের কিরণে এসে
আরও রঙিন। আরও প্রেম। আরও তাপ।
উত্তাপ-উত্তেজনায় আমিও আছি।
আমার আত্মায় এসে লাগে সূর্যের সুবাস।
৯২.
যে কোন গাছের নিঃশ্বাস থেকে
আমি রচনা করি আমার নিসর্গ
আমার স্বপ্ন সন্ততি
আমার সংসার
হাঁড়ি নেই হাঁড়ির ভাত আছে। উনুন নেই, উনুনের গল্প আছে। আর আছে ঘাম।
যে কোন গাছের ঘাম মাটিতে পড়লেই,
এক একটি গাছ।
আমার আগামী।
----১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----১---৬---২০২১
৯৩.
শুকনো উনুন
সূর্য এসে সেঁধিয়ে গেলে
আগুন জ্বলবে
রান্না করবে কী?
এসো, হাঁড়ি বসাই
যেখানে যতটুকু দিন রাত্রি আছে
হাঁড়িতে দিই। ফুটতে ফুটতে
তেল- হলুদের আহ্লাদ
সংসারের স্বাদ।
ভাবে--অভাবে আত্মীয়তা।
৯৪.
কাকের ডাক পায়রার ডাক
এক হয়ে একটা পথ। যে পথে
আমার যাওয়া নেই। যে পথে
বিরহ পড়ে থাকে ধূলার মত।
কে বিরহী?
মেঘ এসে দিয়ে গেছে বৃষ্টি
আমাকেই একা। আমি বৃষ্টিকে পড়ছি
গোপন চিঠির মত
অমলিন একা।
-----১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----২---৬----২০২১
৯৫.
ভিখারির কাছ থেকে ভিক্ষা নিয়ে
আমিও ভিখারি। আমি যাই, ভিখারিদের কাছে।
আরও ভিখারিদের কাছে।
আমার ভিক্ষার সৌন্দর্য আমারই রূপ
শেষ নাই।
৯৬.
মন কি সহজ কথা,
মন কি সহজ রূপ,
মৌমাছি এসে খুঁজলেই পেয়ে যাবে?
আমিও পাইনি মৌমাছির খোঁজ
আমার সঙ্গে মধু চোর কথা বললেও,
মনচোরের সঙ্গেও আমার কথা,
আমার নীরবতা
আমি পাইনি পদ্মবনের খোঁজ
মনেও পড়েছে, আমার মনের জীর্ণতা।
-----১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----৩----৬----২০২১
৯৭.
নির্জন আনন্দের মতো নির্জন আমলকি
বনে বনে। একাকী। সকলের সঙ্গে থেকেও
বনে বনে। একাকী। এই একাকীত্ব বুকে রেখে
আমিও বনের একটি পথ
রাখালকে খুঁজছি।
৯৮.
একটি পোকার প্রসব বেদনা এলে,
আরেকটি পোকা শুনতে পায়।
গাছেরা শুনতে পায় গাছের প্রসব বেদনা। আনন্দ-বেদনা এই,
রামধনু উঠলে আমি শব্দ শুনতে পাই।
আমি যাই, রামধনুর দিকে।
সাত রঙের মালা কে গাঁথলো? কে পরবে
সাত রঙের মালা। আমার বুকেতো মালা নেই
শুধু মালার দাগ
আমি লুকাই না।
-----২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----৪----৬---২০২১
৯৯.
একটা গোটা মানুষ গোটা ভাত খায়।
একটা ভাঙ্গা মানুষও গোটা ভাত খায়।
গোটা ভাতের গোটা আলোয়
গোটা মানুষ ভাঙ্গা মানুষ একই রাস্তায়।
ঘরের চালা ভাঙাচোরা হলেও
ঘরের রাস্তা ভাঙাচোরা হলেও
গোটা চালের খোঁজে মানুষ দৌড়োয়।
মানুষ খোঁজে গোটা চালের গৌরব।
মানুষ যে দাঁড়াবে গোটা এক দেশে।
----২১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----৫---৬----২০২১
১০০.
পাকা আমের রঙ গড়িয়ে পড়লে
নিজেকে সুন্দর লাগে। মনে হয়, যে যেখানে আছে সবাই সুন্দর।
সকলের সৌন্দর্য উপভোগ করছে মাটি।
আমাদের ধরিত্রী।
আবহমান মাটির কান্না শুনি বা না শুনি
মাটিতেই ফলেছে আম। আমার চোখের জল শুকিয়ে ওঠার আগে
মাটিতেই ফলেছে আম। আমি চেয়ে থাকি
আমি চেয়ে আছি।
১০১.
পথ হারিয়ে গরুটা চলে গেছে ধানচাটানি।
ধানচাটানি পাহাড়ের ওপারে।
কে ফেরাবে গরুকে? তুইও ফিরে আসিস নি আমার কাছে। তুই যে কোথায় আছিস
বাতাসও বলতে পারেনা।
গরুটা ফিরবে তো? বাছুরটা হামলে উঠছে।
----২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----৭---৬---২০২১
১০২.
কাকের মুখে খবর নেই, তুই কোথায় আছিস
কাককেও বলিহারি, লোকের ঘরের এঁঠো কাঁটা আমার উঠোনে ফেলে যায়। শুধু তোর খবরটাই
ফেলে যায় না।
পাখিও পালক ফেলে যায়, পালকের কোমলতাও ফেলে যায়
শুধু তোর উষ্ণতা ফেলে যায় না।
আমি আমার হাড়ে ফুঁ দিই, বেজে ওঠে না।
১০৩.
কে এসে বলবে,
তোকে দেখা গেছে শালিকের বাসায়?
আমি তবে খড়কুটো মুখে যাবো তোর কাছে।
তোর কাছেই তো আমার ঠাঁই
তোর পায়ের তলার মাটি ছুঁয়ে ছুঁয়ে
তোকে করবো নিরাকার।
------২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----৮---৬---২০২১
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন