লকডাউন//
কালী মন্দির থেকে হরিমন্দির
এই পাড়াতে। প্রতিদিন কোনো না কোনো মন্দিরে পূজারীদের ভিড় লেগে থাকে।
পূজার দ্রব্য সামগ্রীর দোকানও আছে দেদার। নিত্য পূজার জন্য
সারি সারি ফুলের পসরা।
বেল পাতা থেকে পদ্ম ফুল দুববো ঘাস
সবই পাওয়া যায়। বিক্রি করে প্রধানত মহিলারা।
এরা আসে লাগদা রামনগর ধবঘাটা থেকে। ভোরবেলা। এই ফুল ওয়ালি মহিলাদের স্বামীরা
আগে বাজনা বাজাতো। এখন কদর নেই। এখন সমস্ত জায়গায় ডিজে।
সম্প্রদায় হিসেবে এরা ডোম। এদের পদবী কালিন্দী। কেউ কেউ বাদ্যকর লেখে। আগে এরা বাঁশের কাজ করতো। ঝুড়ি ঝাঁটা তৈরি করতো। বাঁশের দাম বেড়ে যেতে সেই বৃত্তিও চলে গেছে।
বর্তমানে এই পুরুষরা বা ফুল ওয়ালিদের স্বামীরা এতটাই অলস বা অকর্মণ্য যে দিনরাত বাংলা খেয়ে পড়ে থাকে। তাই , মহিলাদের ঘরের বাইরে আসতে হয়েছে রোজগারের জন্য।
ফুল বিক্রি করতে গেলেও পুঁজি লাগে। এখন আবার গাঁদা ফুলের বারো মাস চাষ। অনেকেই গ্রামের
দিকে ফুলের চাষ করে। শহর বাজারে এসে এই ফুল ওয়ালিদের কাছে বিক্রি।
গাঁদা ফুল ১০০/টাকা কে জি।
দু কে জি ফুল কিনে যে বিক্রি করবে তার উপায় নেই। ফুল ওয়ালাও ধারে বিক্রি করে না।
ফুল কত টাকা আর বিক্রি হয়
কত লাভ হয় যে পুঁজি হবে ফুল ওয়ালিদের।
ভবানী বলছিল, আমরা শাগে--মাড়ে থাকি।ঝুপড়িতে থাকি হামদের কে দিবেক পুঁজি।
লকের বাগান থেকে বাড়ি থেকে
ফুল চুরিও করি। তা বাদে বিক্রি বাটা। সোভ দিন সমান নাই বিকায় ফুল।সোভ দিনত লক্ষ্মী বার লয়।
রবিবার ত মাছি তাড়াই।
ভবানীর গলায় দুঃখ দারিদ্রের সুর। যেন বা ফুলে পাতায় শিশিরের মতো লেগে আছে। যেন বা দিন আনি দিন খাই------
সংসারে নাই----নাই------নাই। নাই।
ফুলের রঙ ফুলের সুষমা
ভবানীদের দারিদ্র ঘুচাতে পারে না।
ভবানীরা কী দরিদ্র নাকি দারিদ্র্য রেখার নিচে এদের বসবাস?
আজ রবিবার ।
বেলা বাড়ছে চিড়বিড়িয়ে।
ফুল কেনার লোক নেই। তারপরে আবার লকডাউন চলছে। বিশেষ লোকজন বাইরে আসছে না।
বেলা১০ টার মধ্যে দোকান বাজার বন্ধ হয়ে যাবে। রেখাকে
ছুটতে হবে চালের দোকানে। কিন্তু
ফুল বিক্রি হয়েছে মাত্র ২০টাকা।
আর ৩০ টাকা পাবে কোথায়?
২কে জি চাল লাগবেই।
২ কেজি মোটা চালের দাম ৫০ টাকা। রেখা কালিন্দী বা ডোম বুড়ি ছোটন হালদারের দোকান দিকে ছুটলো। চাল কিনতেই হবে। মাড়ে--জলে বাঁচাতেই হবে বেটাবিটিদের।
২০টাকা মাত্র আছে শুনে ছোটন বলে,নাই হবেক বুড়ি। নাই দিব চাল। আর আমি ধারে নাই বিকি।
বুড়ি তত অনুনয় বিনয় করে-----
তুই না দিলে আজ উপাস দিয়ে মরবো
শুন বেটা-------তকে রোজ
ফুল এনে দিব।কিনতে নাই হবেক।তাও হামকে চাল দে।
বাঁচারে বাঁচা--------- হামদের
-----১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----১---৬---২০২১
-----নির্মল হালদার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন