বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

পায়ের শব্দ / নির্মল হালদার

পায়ের শব্দ

নির্মল হালদার


আজকের দুপুর টা খুব খারাপ কাটছে আমার। একটা কাক এসেছিল। ফিরিয়ে দিয়েছি।
কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না।

একটা পায়রাও এলো।
ফিরিয়ে দিয়েছি। কথা বলতে ইচ্ছে করছিল না।

এই অবধি ডাইরিতে লিখে রঙ্গন
উঠে দাঁড়ায়। জল তেষ্টা পাচ্ছে।
গতকাল সন্ধের মত।

সিঁড়িতে পায়ের শব্দ । আসা যাওয়া করছিল বারবার। অথচ কেউ নেই। কেউ এসে দাঁড়িয়ে একবারও বলছিল না, এইতো এসে গেছি।
সে একবার ঘরের ভিতরে ঢুকে
দরজা বন্ধ করে দিয়েছিল। মনে করছিল, যদি কেউ এসে দরজায় টোকা দেয়? যদি ডাকে?

কিছুই কিছু হচ্ছিল না।

সে রাগে বিরক্তিতে নিজেই সিঁড়িতে ওঠানামা করে। পাশাপাশি আরো একজনের পায়ের শব্দ রঙ্গন শুনতে পেয়ে ভয় পেয়ে যায়।

কার এই পায়ের শব্দ?

পায়ের শব্দ আছে অথচ মানুষটি নেই। কী হচ্ছে?
গতকালের সেই ঘটনা থেকে রঙ্গনের ঘুম হয়নি সারারাত। দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লেও
রঙ্গন শুনতে পায়, কেউ আসছে।

কে আসছে?

করোতোয়া আর আসবে না কোনোদিন।
সম্পর্কটা একেবারেই চুকেবুকে গেছে।সেও তো অনেকদিন হয়ে গেল। রঙ্গন শুনেছিল, করোতোয়া
কারো সঙ্গেই বেশিদিন সম্পর্ক রাখতে পারেনা। তার স্বভাবে আছে, নতুন নতুন বন্ধু পাতানো।
নতুন নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে পথ চলা। রঙ্গনের পক্ষে যা সম্ভব নয়।
সে তার পুরনো সাইকেলটাকে এখনো ত্যাগ করতে পারেনি। লাল গামছাটা ছিঁড়ে গেলেও
যত্ন করে রেখে দিয়েছে। তো এই
রঙ্গনের করোতোয়ার সম্পর্কে
অনুভূতিগুলো থেকে গেছে বলেই,
সে মাঝে মধ্যে বিষণ্ণ হয়ে পড়ে।

তখনই চেষ্টা করে ডাইরি লিখতে।

গতকাল লিখেছিল সকাল দিকে।
যখন মেঘ এসেছিল তার সঙ্গে কথা বলতে। অথচ একটা কথাও বলতে পারেনি।

মেঘ কী বলছিল?
এই একটা বাক্যের পর থেমে গিয়েছিল সে।

কখনো কখনো রঙ্গনের ঘরের চারটে দেয়াল তার সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে প্রকাশ করে। দেয়ালগুলো নড়ে চড়ে ওঠে। রঙ্গন টের পেয়েই, বাইরে চলে যায়। ছাদে পায়চারি করে।

করোতোয়ার সঙ্গে এই ছাদেই পায়চারি করতে করতে গল্প করেছে। দুজনে একই সঙ্গে আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা চেনার চেষ্টা করেছে। অন্ধকারে ছাদে শুয়েও পড়েছে দুজন।

এই মুহূর্তে জোর গলায় রঙ্গন
একটা হাঁক দেয়: করোতোয়া-----
ইমলি--------

রঙ্গন করোতোয়াকে ইমলি নামেই
আদর করতো। আদরের ধরনটা এইরকম, রঙ্গন করোতোয়ার পিঠে চিমটি কাটতো শুধু। আর
করোতোয়া কেবল বলতো, এই ছাড়ো বলছি ছাড়ো--------

ছেড়েতো দিতেই হলো বরাবরের জন্য। এখন আবার সিঁড়ির শব্দটা আসছে। এই ভর দুপুরে।

শব্দটা কি করতে চায়?
কাকে আক্রমণ করতে চায়?
শব্দটা থেকে কোনো প্রেমের অনুভূতি জেগে উঠছে না। শব্দটা থেকে কোনো আলো উঠে আসছে না। তবে কেন তবে কেন এই সিঁড়ির শব্দ?

রঙ্গন ডাইরিতে লিখলো-------
যদি শব্দটাকে উপরের দিকে
পাঠানো যায়। কেমন হবে?
যদি শব্দটাকে উপর থেকে উপরে
পাঠানো যায়। কেমন হবে? হয়তো দেখা যাবে এই সিঁড়িটাই আকাশে ওঠার সিঁড়ি। হয়তো দেখা যাবে, এই সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে
কথা বলা যাচ্ছে সূর্য তারার সঙ্গে।

সেদিন করোতোয়া আসবেই।
একমাত্র তাঁর কাছে। কেননা, রঙ্গনকে সে বলেছিল, একটা সূর্য লকেট কিনে দেবার জন্য। রঙ্গন যদি সত্যি সত্যি একটা সূর্য করোতোয়াকে উপহার দিতে পারে?

রঙ্গন মনে মনে স্থির করে, আজ
সন্ধে বেলা পায়ের শব্দ এলেই, তাকে আকাশের দিকে যেতে অনুরোধ করবে।

আকাশটা তখন আকাশে থাকবে তো?



----১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----২---৬---২০২১
-----নির্মল হালদার




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ