শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১

ছাতা / নির্মল হালদার

ছাতা / নির্মল হালদার



কখন যে বৃষ্টি আসবে তার ঠিক ঠিকানা নেই। গত বছর দু-দুটো ছাতা কেনার পর ডুলুঙ হারিয়ে ফেলেছে। এ বছরও ছাতা কেনার প্রয়োজন।

সে দাঁড়িয়ে আছে সাঁওতাল পরিবারের কাছে। মুলানের সঙ্গে দেখা হবে এখানে।
তারপর দুজনে যাবে বোলপুর।

রামকিঙ্করের সাঁওতাল পরিবার
দেখা-সাক্ষাতের একটি ঠিকানা।
ডুলুঙের কাছে এই সাঁওতাল পরিবার, তাদের বাড়ি সীমান্ত পল্লী থেকে বেশি দূরে নয়। মুলান আসবে নন্দ সদন থেকে। সে কলাভবনের ছাত্র।
আর ডুলুঙ সংগীত ভবন।
দুজনের বন্ধুতায় গান ও ছবি।
ছবি ও গান।
ডুলুঙ গান করলে মুলানের রং তুলি গতি পায়। ডুলুঙ গানে স্রোত পেয়ে থাকে।
আজ দুজনেই যাবে ছাতা কিনতে।
ডুলুঙ অপেক্ষা করছে অনেকক্ষণ।
মুলান আসছে না।
দেরি করা তার অভ্যেস।

ছাতাটা আজ কিনতেই হবে।

-----জানি জানি
ছাতাটা আজ কিনতেই হবে-----
মুলান এসে যখন ডুলুঙকে বলে
তখন তার মুখ ভারি।মুলান বলে,রাগ করিসনা।
ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে গেল।
----প্রায় এক ঘন্টা হয়ে গেল আমার-----৯টা বেজে পার হয়ে গেছে। টিফিন করে আসিনি।
খিদেও পাচ্ছে।
----চল্ তাহলে, কলাভবন ক্যান্টিনে যাই।
আমিও তো খাব।
----দরকার নেই।
তাড়াতাড়ি চল। আজ ছাতা একটা কিনতেই হবে।

দুজনেই সাইকেলে উঠে পড়ে।

আষাঢ়ের দিন।রোদ বেশ তেতে আছে। গরম লাগছে খুব। তখনই ডুলুঙ দেখতে পায়
----------ছাতা ভাসছে হাওয়ায় হাওয়ায়।
বড় ছাতা।
ছোট ছাতা।
মেজ ছাতা।
সেজ ছাতা।

রঙিন ছাতা। কালো ছাতা।

হাওয়ায় হাওয়ায় ভাসছে। কে কোথায় যে যাচ্ছে ঠিক ঠিকানা নেই।
ডুলুঙ সাইকেলের হ্যান্ডেল ছেড়ে ছাতা ধরতে যাবে যেই, সাইকেল থেকে পড়ে গেল। মুলান বুঝে উঠতে পারেনা কি হলো।কি করে হলো।
মুলান সাইকেল থেকে নেমে ডুলুঙকে উঠতে সাহায্য করে।
মুলান বলে,এ কিরে শুকনো
রাস্তায় পড়ে গেলি! তখনো ডুলুঙ
দেখছে, ছাতা ভাসছে হাওয়ায়
হাওয়ায়।সে কোনো কথাই বলতে
পাচ্ছেনা।
আগেও এ রকম ঘটনা ঘটেছে ডুলুঙের কাছে অথবা জীবনে।
সে দিনরাত যখন হোক স্বপ্ন দেখে।
একবার সে আম পাড়তে পারেনি বলে, পূর্ব পল্লী থেকে একটা আম গাছ কোলে নিয়ে এসেছিল ঘরে।

সেই গল্প যাদের শোনাতে গেছে,সবাই বলেছে ------পাগলি!
পাগলি কোথাকার।

সারা রাস্তা দুজনের কোনো কথা হলোনা। হঠাৎ ডুলুঙ বলে,ছাতা কিনবো না চল্-------
----কেন?
----কেনর কোনো উত্তর নেই। চল্ বাড়ির দিকে।

মুলান চুপচাপ সাইকেলের গতি পথ পাল্টে নেয়। অথচ দেখে ডুলুঙের সাইকেল ক্যানেল পাড়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মুলান আর অবাক হয়না।সে জানে ডুলুঙ এরকমই। এবার ডুলুঙ বলে,খিদেটা সত্যি সত্যি পেয়েছে রে।চল্------এক প্যাকেট
বিস্কুট নি-------।

ক্যানেল পাড়ের কাছে এসে দুজনে দাঁড়িয়ে পড়ে। এবং
ডুলুঙ চেঁচিয়ে ওঠে: ওইতো ওইতো ছাতা।সব বাড়ি নিয়ে যাবো।
ক্যানেল পাড়ের ধারে ধারে অনেক ব্যাঙের ছাতা ফুটে আছে। মুলান ডুলুঙের এই কান্ড দেখে বলে,
পাগলিটাকে নিয়ে আর পারলামনা।

------২আষাঢ়১৪২৮
------১৭----৬----২০২১
------নির্মল হালদার






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ