বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

ভাষা / নির্মল হালদার

ভাষা

-------------------


----আরে না না কোথাও যাচ্ছি না। গেছলাম ফিরে এসেছি।
----কোথায় গেছলেন? কোথায়?
-----পাহাড়ের সঙ্গে দেখা করতে গেছলাম। অনেকদিন যাওয়া হয়নি। যাব যাব করেও যাওয়া হয়ে উঠছিল না। অবশেষে আজ
দেখা করে এলাম।
----পাহাড় আছে কেমন?
ওর চূড়াটি অক্ষত আছে তো?
----হ্যাঁ।
----শুনেছিলাম একবার নাকি
চূড়াটি হেলে পড়ছিল ঝড়ের তান্ডবে। এক পাখি এসে পাখা দিয়ে আটকে দেয়। চূড়াটি রক্ষা পায়।
-----এই গল্প আমিও শুনেছি।
আপাতত ভালোই তো আছে মনে হলো। যদিও পাহাড়ের গায়ে যে সমস্ত গাছপালা ছিল, এখন অর্ধেক নেই। তাই, একটু ন্যাড়া ন্যাড়া লাগছিল।

দুই বন্ধুর এই গল্পের মাঝে ভাষা এসে দাঁড়ায়। ভাষা বলতে চায়-----পাহাড়িয়া গ্রামে আমাদের সবারই ঘর হলে চমৎকার হয়। অথবা পাহাড় যদি
এসে তাদের সঙ্গে বসবাস করে।

দুই বন্ধু ভাষার কথা শুনে হাসাহাসি করে। তারা বলে, এত প্রেম রাখবি কোথায়? আমাদের সঙ্গেই তোর প্রেম জমে উঠলো না। পাহাড়ের সঙ্গে জমবে?

ভাষা সরে দাঁড়ালো।

সে অন্বয়কে নিয়ে পথ চলতে চেয়েছিল। অন্বয় চলে গেল উত্তরবঙ্গ। চাকরি নিয়ে। তারপর থেকেই ভাষা শুধু মন খারাপ করে। মন খারাপের রঙ কালো না নীল?

ভাষা হাঁটতে থাকে।

দূর থেকে দেখা যায় পাহাড়ের চূড়া। গোধূলির রঙে মোহময় লাগছে। তার মনে হলো, ওই গোধূলির রঙে সে সেজে উঠবে।
মনে হতেই, এই আমলকির মাঠে
আধো আধো আলোয় সে খুলতে লাগলো তার পোশাক। জনশূন্য এই মাঠে কয়েকটি গাছ ছাড়া
তাকে কেউ দেখছে না। সে সম্পূর্ণ খুলে ফেলে হাঁটতে থাকে পাহাড়ের দিকে। যেনবা পাহাড়ের চূড়ায় রাখা আছে গোধূলির যাবতীয় রঙ।

সেই রঙে সেজে উঠবে ভাষা।

ঘরে ফিরছিল গাই গরুর দল। ভাষাকে দেখে তারা থমকে যায়।
তাদের মনে হয়, ভাষা কোনো দেবী।
মানবীর নগ্ন রূপ আগে কখনো দেখেনি তারা। তারা তাদের বিস্ময় ও অনুভূতি থেকে ভাষার প্রতি নত হয়ে ওঠে।
কয়েকটা গাছ ভাষাকে বলে, দ্রুত যাও-------রঙ ফুরিয়ে আসছে।
আজকের মত ফুরিয়ে যাবে।
তুমি চলো। তোমার মত সেজে উঠবে আজ। আমরা আছি তোমার সঙ্গে।

ভাষা দেখতে পেলো, একদল লোক আসছে হইহই করে। সবাই শুনেছে, গ্রামে নাকি অপদেবতার আবির্ভাব হয়েছে। তাই তারা, আগুন জ্বালিয়ে অপদেবতাকে পুড়িয়ে মারবে।

কাছে আসতে না আসতেই, ভিড়ের লোক আর নেই। কোথায় গেল? কি ভয় কার ভয়ে চলে গেল? যদিও ভাষার কোনো ভয়
করছিল না। সে জানে, যে পাহাড়ে যায় গোধূলির কাছে যায়, তার কাছে কোনো লজ্জা মান ভয় থাকতে নেই।

সে প্রথমে পাহাড় তলায় শুরু করল নাচতে। কেননা, তার নগ্ন নৃত্য পাহাড়কে অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করবে।

পাহাড় স্তব্ধ হয়েও আজ আনন্দিত। মনে হচ্ছে, এখনই খুশির বৃষ্টি নামবে।



-----২২ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----৬----৬----২০২১
-----নির্মল হালদার




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ