একটি তারার দিকে চেয়ে / নির্মল হালদার
ঘুম আসছেনা।
কেবল এপাশ-ওপাশ।
মোবাইল দেখলো এখন----রাত ---১---১০-----।
বিছানা থেকে উঠে পড়লো জন।
একটা বই টেনে পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে দেখতে পায় একটা ছবি।
মনীষার ছবি।
ছবিটা দেখতে দেখতে মনে পড়ে গেল জনের সেদিন মনীষার জন্মদিন ছিল। সেদিন জন ও মনীষা কলেজে ঢুকেই বেরিয়ে গেছিল জন্মদিন উদযাপন করবে।
নদীর দিকে।
সেদিনই ছবিটা দিয়েছিল ।
বই থেকে গোলাপ ফুল টা কবে ঝরে গেছে মনে পড়ে না জনের।
সরু ডালটা নিয়ে জন তার দু গালে স্পর্শ নিতে থাকে। যেনবা
মনীষার আঙুল।
মনীষা মনীষা------একটা অস্ফুট ডাক জানলা থেকে বাইরে যায়। আর সেই ডাক তারায় তারায় লাগে। একটি তারা এসে জনের
জানলাতে দাঁড়ায়।জন হাতে নিয়ে
বিছানাতে।
জন বলে, তুমি মনীষা নও। আমি জানি। তুমি কে? তোমার নামটা বলো।
তারা বলে, স্বাতী।
জন বলে, তুমি স্রোতস্বিনী।
তারার উজ্জ্বল হাসিতে জনের ঘর
আরো আলোকিত হয়ে ওঠে। তারা হাসতে হাসতে জানতে চায়, বলো কি কথা বলতে চাও।
জন জিজ্ঞেস করে, আকাশে তোমরা অনেকে অনেকে থাকো, তুমি না হয় আমার কাছে থাকবে।
আমার তো কথা বলার কেউ নেই।
তোমার সঙ্গে কথা বললে, আমি সঙ্গ পাবো। তুমি থাকবে তো?
হ্যাঁ থাকবো। প্রতিদিন রাত্রি বেলা।
তারার এই কথায় জন লাফিয়ে ওঠে বিছানাতে।
তারা তখন বলে, তোমার ঘুম নষ্ট হবে কিন্তু। পারবে তো রাত জাগতে?
জন বলে, অবশ্যই পারবো। চেষ্টা করতে হবে দিনের বেলা ঘুম।
তারা বলে, অফিস করবে না?
তা করতে হবে। তা করলেও
রাত জাগতে আমার কোন সমস্যা নেই। আমি রাত করে ঘুমোই।
তারা আবার হাসে। বলে, আমি তো ভোরের আগে অবধি থাকবো। কী করবে তুমি?
তোমার সঙ্গে ভোর অবধি
কাটিয়ে দেবো। কথা বলতে
আমার খুব ভালো লাগে।
তারা জানতে চায়------কি কথা?
জন বলে, এলোমেলো কথা। হয়তোবা হাতি ঘোড়া থেকে আমার মন। হয়তোবা আমার খিদে থেকে আমার আকাশ।
তারা হাসে। হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করে, আমার কথা তোমার জানতে ইচ্ছে করবে না?
ইচ্ছে তো করবে, কিন্তু কি কথা তোমার কাছে জানতে চাইবো? তুমি না হয় তোমার গল্প বলবে
আমি শুনবো। এই কথার পর
হঠাৎ জন তারার কাছে জানতে চায়-----তোমার কি জল তেষ্টা পাচ্ছে?
তারা বলে, আমাদের জলতেষ্টা নেই। তোমার যদি ইচ্ছে করছে তুমি খাও।
না খাবোনা।
তুমি যে বললে জলের কথা।
আমার তেষ্টা ফুরিয়ে গেছে।
কেন?
এইযে তুমি কাছে আছো-----তাই।
অন্ধকার ফুরিয়ে আসছে দেখে
জন বলে,এই তোমাকে কিন্তু রোজ আসতে হবে। রোজ । আমি অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।
তারা বলে, যদি না আসি?
এমন কথা বোলোনা। আমার তো বন্ধু নেই।আজ যখন তুমি এলে
আমার বন্ধু হয়ে যাও। প্রতিদিনের।
আমি অপেক্ষা করবো।
তারা বলে, মেঘে ঢাকা পড়লে
আমি আসতে পারবো না।
ও তুমি জানো না , আমি দুই হাত দিয়ে মেঘ সরাতে পারি। মেঘ ছেঁড়া আলো কতবার যে নিয়ে এসেছি আমি।
আচ্ছা আচ্ছা আমি তো ভুলে গেছিলাম, তুমি আছো কত আলো আমার ঘরে। ইলেকট্রিক
সব নিভিয়ে দিই------বলো!
জন ঘরের আলো সব নিভিয়ে দেয়।
জানলা দিয়ে হাওয়া আসে। চারটে জানলা থেকে হাওয়া আসে।ফুরফুরে হাওয়ায় প্রবেশ করে তারা চলে যায় নিজের জায়গায়।
জন দেখে আধো আধো আলোয়
দেখে তারা নেই। সে জানলার দিকে এসে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে শুকতারা হাসছে।
তার স্রোতস্বিনী কোথায় গেল?
সে ছাদে এসে আকাশে তন্ন তন্ন করে খোঁজে।কোথাও নেই। ঊষার আলো ক্রমশ এসে পড়ছে তার কপালে।
-----৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----১৪---৬---২০২১
-----নির্মল হালদার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন