নিছক একটি গল্প / নির্মল হালদার
গায়ে কি একটা যেন উঠেছে।
শিরশির করছে। অন্ধকারেই
দু হাত দিয়ে খুঁজছি। পাইনা।
আলো জ্বালি। দেখতে পাচ্ছি না কিছুই। গেঞ্জি খুলে দি। আঁতি পাঁতি খুঁজি।
গায়ে কিছু নেই।
আলো নিভিয়ে দি। শুয়ে পড়ি।
আবার পেটের কাছে কি একটা শিরশির করছে। আমার অস্বস্তি
বেড়েই চলেছে।
ঘুমটা গেল। মোবাইল দেখি। ১----২০।
আবারও আলো জ্বালি।গায়ে কিছু নেই। তবে কি গায়ে উঠেই পোকারা চলে যাচ্ছে? আমাকে ভয় দেখিয়ে চলে যাচ্ছে?
গা চুলকাচ্ছে খুব।
ঘর অন্ধকার হলেই জ্বালাতন করছে ।
যদি আলো জ্বেলে ঘুমোই?
কোনো পোকা গায়ে উঠছে নিশ্চয়ই। কোনো পোকা আমাকে খেয়ে ফেলবে নিশ্চয়ই।
আমার ভয় করছে।
রাত যদি এ ভাবে কাটে
কাল শরীরটা ভালো যাবেনা।
কী করবো এখন?
আজ সন্ধের সময় কার অপেক্ষায়
যেন দাঁড়িয়েছিলাম। মনে হলো,
আমার পাশ দিয়ে একটা ছায়া চলে গেল। হঠাৎ।
আমি এদিক ওদিক চেয়ে দেখি, কেউ কোথাও নেই। শুধু সন্ধ্যার অন্ধকার গাঢ় হয়ে উঠছে।
ব্যাংক থেকে ফেরার পর ঘরের তালা খুলেছি যেই, মনে হলো, কেউ একজন বেরিয়ে গেল। কে
বেরিয়ে গেল? কে ছিল ভিতরে?
কেউ যে ছিল না, আমি জানি। তারপরেও মনের এই অবস্থা মনকে স্থির হতে দেয় না। সারাক্ষণ বিচলিত হয়ে থাকি।
মনে হয়, এই বুঝি বিপদ এলো।
এই বুঝি বিপদ এলো।
যেমন আজ মনে হলো,২০০টাকা
পাবো। শর্মা আমাকে দিয়ে যাবে।
আগে থেকে কোনো কথা নেই যে
টাকা দিয়ে যাবেই। তবুও মনে হলো, শর্মা আজ আসবে আমার কাছে। আমাকে দিয়ে যাবে টাকা।
এবং সত্যি সত্যি দিয়ে গেল। ২০০
নয়৩০০টাকা।আজ বিনোদন আসবে রাত্রিবেলা। থাকবে আমার কাছেই। এসেছিল। আড্ডা হয়েছিল খুব।
এরকম ঘটনা ঘটলে সুখের কথা।
কিন্তু যদি মনে হয়, রাস্তায় হোঁচট খাবো। শুরু হয়ে যায় আবোল তাবোল চিন্তা। উদ্বেগ। চোখে মুখে
প্রকাশ পেয়েও থাকে।
আজ ঠিক করলাম, দেয়ালে টাঙানো ছবি সমস্তই ফেলে দেবো। যদি ছবির পেছনে পোকারা আত্মগোপন করছে। এবং রাত্রি হলেই আক্রমণ করতে আসছে আমাকে। যেই ভেবেছি কাজ সঙ্গে সঙ্গে। সব ছবি খূলে ফেললাম।
একটিও পোকা নেই।
আজ দেবায়নের খবর পাবো।
সে আসছে ১০ তারিখ। আজ নিজের কাছে নিজের খুশি। পরে দেখলাম, দেবায়ন আমাকে হোয়াটসঅ্যাপ করলোনা।ফোন করেই জানালো, ১০ তারিখ নয়
------সে গুজরাট থেকে ১২ তারিখ পৌঁছোবে আমার কাছে। তাতানও আসবে কলকাতা থেকে।
এসমস্ত সুসংবাদের কাছে নিদ্রাহীনতা। সঙ্গে পোকার কামড়। অথবা সব সময় সন্দেহ
পোকারা লুকিয়ে আছে বইয়ের পাতায়। ডাইরির পাতায়।
ডাইরিটা আমার কাছেই এসেছে।
আর ছত্রে ছত্রে দেখতে পেলাম
শিমুলের ভয়। যে শিমুল আমার বন্ধু। যে শিমুল
বর্তমানে গ্রামে থাকে। নিজে একটা স্কুল করেছে।
নাম: জোনাকি।
সেও তো বছর পাঁচ হয়ে গেল।
এইটে শিমুলের পুরনো বাড়ি।
আমাকে পাঠিয়েছে গীতবিতান
নিয়ে যাওয়ার জন্য।
স্কুলে একটা অনুষ্ঠান আছে।
সে গাইবে রবীন্দ্রনাথের গান। কোরাসে।
ছেলেদের শেখানো হয়েছে। তালিম দিয়েছে সেই।
আমিও সেই স্কুলে।
আমরা দু'জন কেবল স্থায়ী শিক্ষক। আমরাই ছেলেপুলেদের হোস্টেল সামলাই। রান্নাও করি।
গীতবিতান খুঁজতে এসে শিমুলের এই ডাইরি। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে দেখি এক জায়গায় লিখেছে: নেগেটিভ কিছু ভাবতে নেই। নেগেটিভ কিছু ভাববো না। অথচ সে অনেক জায়গাতেই, নেগেটিভ পজেটিভ দুই।
এক জায়গায় লিখছে--------
প্রজাপতিরাই উড়ে বেড়াবে হাওয়ার সঙ্গে। ফড়িং এসে গল্প করবে। গান করবে পাখিরা।
সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত শিশুদের কলরব সুন্দর করবে চরাচর।
আমিও এই চরাচরের বাসিন্দা।
আমি আত্মহত্যা করবো না কখনো।
আত্মহত্যা?
শিমুল কী তবে কোনোদিন আত্মহত্যার কথা চিন্তা করেছিল?
কেন করেছিল?
ডাইরির আরেক জায়গায় লিখছে সে-------কেন যে দেখা হয়ে গেল বিন্দিয়ার সঙ্গে? কেন যে মুখোমুখি হয়েছিলাম? জীবন একবার যা ছেড়ে দিয়ে আসে, তার দিকে আর এগিয়ে যাওয়া উচিত নয়।
আমাকে পালাতে হবে। শহর ছেড়ে পালাতে হবে। আমাকে লাগাতে হবে অনেক গাছ। আমাকে রোপণ করতে হবে খুশি আর আনন্দ। আনন্দ আর খুশি।
কোনো পোকামাকড় আমাকে আক্রমন করতেই পারবে না। আমি আমার কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়বো। যে কাজের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পাবে, আমার সৃষ্টি।
ঐ তো একটা ব্যাঙ আসছে------কত মেঘ তার পিঠে।
চলো সবাই মেঘ নামিয়ে নেচে ওঠো চলো। চলো------আজ বৃষ্টিতে ভেজার দিন।
------৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
-----১৫----৬----২০২১
-----নির্মল হালদার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন