বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

গাছবাড়ি / নির্মল হালদার

গাছবাড়ি


জষ্টি মাসের গরম। খুব বিরক্তিকর। এত জ্বালাতন করে যে ঘুম হয় না একদম।

আজ সকাল থেকেই প্যাচপেচে গরম। ঘাম গড়িয়ে পড়ছে গা থেকে। নিজেকে অস্থির লাগছে।
মন বসছে না কিছুতেই।

ঘরময় দৌড়ে বেড়াচ্ছে ছাতিম।

হঠাৎ আয়নার দিকে চোখ গেল ছাতিমের। সামনে গিয়ে আয়নায় মুখ দেখে বুঝতে পারলো, মুখে
রাগের চিহ্ন।

না,কোনো রাগের চিহ্ন থাকবে না।
রাগ বা ক্রোধ এলেই হিংসা আসে।
হিংসা ক্ষতিকর। সে মনে মনে স্থির করলো, আজ থেকে ঘরে নিয়ে আসবে নানান গাছ। গাছ যদি ঘরে থাকে, কোনো ক্রোধ ঢুকতে পারবে না মনে। গাছের শক্তি আছে, মনকে শান্ত করার মত। গাছের শক্তি আছে, মনকে শীতল করার মত।

ঘরের ভেতরে গাছ। ফুল ফলের গাছ। ঘরের ভেতরেই গাছের সঙ্গে সহবাস।

আজ যখন ছাতিম বাজারে পুঁই শাক কিনছিল,তার মনে হয়েছিল,
শাকসবজির চাষ ঘরে করলে, মন সবুজ হয়ে থাকে। সে টাটকা সবুজ দেখবে বলেই, প্রতিদিন সবজি বাজারে ঘুরে বেড়ায়। প্রতিদিন শাক সবজির সঙ্গে কথা বলে। সবজি বিক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ জমায়। হয়ত বা সে শুশনি শাক কিনবেনা, তবুও
যে শুশনি শাক বিক্রি করছে, তার সঙ্গে আলাপ করে গল্প করে। একটি মাত্র কারণ, সে শুশনি শাক দেখবে।

যেকোনো সবুজ চোখের শুশ্রূষা।

ছাতিম আজ প্রথমেই বটগাছ নিয়ে এলো। তারপর কুসুম। শাল
পিয়াল। কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়াও নিয়ে এলো। আর জায়গা নেই। সে আস্তে আস্তে শান্ত হয়ে চেষ্টা করতে থাকে, চারটে দেয়াল কে
যদি ঠেলতে ঠেলতে একটু সরানো যায়, জায়গা অনেকটা পাওয়া যাবে। গাছের জায়গা হবে অবশ্যই।

ছাতিম বট গাছের তলায় খানিক ছায়া জড়িয়ে শুয়ে পড়লো। সে ধীর স্থির হয়ে ঘর থেকেই এক বন্ধু ভোরাইকে ডাকে।

কোনো ডাক শুনতে পায় না কেউ।
চারদিক তো বন্ধ। ছাতিমের মনের অবস্থা দেখে কৃষ্ণচূড়া বলে, অস্থির হয়োনা। দেখবে, সন্ধ্যে হলেই আসবে তিতলি। সন্ধ্যে হলেই আসবে কোজাগরী। আজ সন্ধ্যে হলেই আসবে জোনাকিরা।

এখন তুমি দরজা খোলো। অন্ধকার হয়ে গেছে। প্রতিদিনের মত নতুন নতুন আলোয় বিকশিত তারা তোমার সঙ্গে কথা বলবে।

ছাতিম প্রশ্ন করে, কি কথা?
কৃষ্ণচূড়া বলে, তা আমি জানবো কি করে! তবে জানি কথা বলবে।

ছাতিম দরজা খুলে দেখে কোজাগরীর হাতে এক গোছা
ধূপ জ্বলছে। ধূপের ধোঁয়া ও গন্ধে
ছাতিম কোজাগরীর কপালে চুম্বন আঁকে। বলে, এই সন্ধ্যায় তোকে আর ধন্যবাদ দিলাম না।
চল্, প্রতিটি গাছের তলায় একটা করে ধূপ গেঁথে দিই।চল্, আমরা আজ সারারাত গাছের সঙ্গে কাটাবো।
এই তুই আমাকে প্রতিদিন একটা করে গাছ উপহার দিস। আমি
গাছের সৌন্দর্য নিয়ে সুস্থ ও সুন্দর থাকবো।

কোজাগরী জানতে চায়, কি কি গাছ তোর পছন্দ আমাকে বল -----আমি নিশ্চয়ই জোগাড় করবো। তার আগে তোকে কথা দিতে হবে তুই আর অযথা ঘুরে বেড়াবি না। তুই দেখিস নি তোর চেহারাটা কত খারাপ হয়ে গেছে।
কোজাগরী আরো বলে, আমাদের সব বাড়ি গাছবাড়ি হয়ে উঠবে। এরকম স্বপ্নের দিকে আমাদের যাওয়া।

আয়------দুজনের দুঃখ-বেদনা গুলি, রাগ অভিমান গুলি গাছের পাতায় মুছে নিই।

আয়------কান পেতে শুনি
শিকড়ের স্বর।

ছাতিম বলে, জঙ্গল তৈরি করতে
আমরা পারলাম না। কিন্তু ঘরে ঘরে, ঘরের ভিতরে বাইরে গাছ রাখতেই পারি।

গাছের কাছ থেকে শিখবো, উদারতা ও ধৈর্য। গাছের কাছ থেকে শিখবো, ক্ষমা।

ছাতিম ও কোজাগরীর সঙ্গে
আজ ছুটে বেড়ায় জোনাকিরা।



----১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----৩---৬---২০২১
----নির্মল হালদার




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ