বুধবার, ৯ জুন, ২০২১

যাপনের একদিক / নির্মল হালদার

যাপনের একদিক
-----------------------


কে ঠেলছে আমাকে?
আমিতো হুমড়ি খেয়ে পড়বো।
হঠাৎ কে ঠেলছে আমাকে?

ছো পিছনে ফিরে দেখে কেউ কোথাও নেই। রাস্তাও জনশূন্য।
তাহলে কে ঠেলে দিয়ে পালিয়ে গেল?
চারদিকটা ঘুরেফিরে দেখতে থাকে ছো।
কেউ তো নেই। সন্ধের অন্ধকার
রাস্তার আলো ছাড়া কিছু নেই।
কোথাও নেই।

সেদিনও মনে হয়েছিল এইরকম,
ছো বাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো তার, পিঠে কেউ চিমটি কেটে চলে গেল।
সে বাইক দাঁড় করিয়ে একটা পান দোকানের সামনে দাঁড়ায়। সামনে-পিছনে দেখে। ডাইনে-বাঁয়ে দেখে------দেখে
কেউ নেই।
চিমটিটা এত জোর ছিল যে
বাইক দাঁড় করাতে বাধ্য করলো।

তার পিছনে কি কোনো বাইক ছিল?

আরেকদিন হাঁটতে হাঁটতে সে
যাচ্ছিলো মেডিকেল দোকানে।
প্রেসক্রিপশন পড়তে পড়তে।
তার ঠাকুমা খুব অসুস্থ।
ছোয়ের মন ভালো নেই।


রাস্তায় লোকজন বিস্তর। যানবাহনের চলাচল।
ছো মেডিক্যাল দোকানে গিয়ে দেখে হাতে প্রেসক্রিপশন নেই।
সে ঘাবড়ে যায়।

হাওয়া এসে তো উড়িয়ে নিয়ে যায়নি? কোথায় গেল প্রেসক্রিপশন? তার মাথা ঘুরতে থাকে।
ওষুধগুলো না নিয়ে গেলে
ঠাকুমার চিকিৎসা শুরু হবে না।
সে পাগলের মত রাস্তায় এসে খুঁজতে থাকে। দেখতে পায়,কলার খোসার সঙ্গে লটকে আছে।

ছো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

বেশ কিছুদিন ধরেই, এই সমস্ত ঘটনা তার জীবনে ঘটছে। এবং সে কেঁপে উঠছে ভেতরে ভেতরে।

ছো হোঁচট খেলেও মনে করছে,
তাকে কেউ পিছন থেকে ঠেলে দিয়েছে। তাকে কেউ বিপদে ফেলতে চায়।

সে কে?

নানা ঘটনার কারণেই ইদানিং
ছো অন্যমনস্ক থাকে। মন মরা হয়ে থাকে। কাকেই বা বলবে,
ঘটনার কথা?

চড়ুইকে বলতে গিয়েছিল।
কিন্তু চড়ুই সমস্ত না শুনেই বলেছিল, তুই ডাক্তার দেখাবি যা।

ডাক্তার?
ছো আৎকে উঠেছিল।

ডাক্তারের কাছে যাওয়া মানে তো
নানা প্রশ্ন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এবং একগাদা গম্ভীর ট্যাবলেট।

ছো ভয় পায়।

চড়ুই হাসতে হাসতে বলেছিল,
এবার তুই গান শুনলে মনে করবি
অন্য কেউ গান করছে।
যা যা গল্প-উপন্যাস পড়বি। যা আরো কবিতা পড়বি। এবার নিত্য নতুন ভাবে উড়তে উড়তে চলে যা কোথাও। সুস্থ হয়ে যাবি।

ছো বলতে চায়,তার কোনো অসুখ নেই। অথচ কালকেই তার মনে হয়েছে, সে ভেতরে ভেতরে রেগে উঠছে। কিন্তু রাগের কোনো কারণ সে দেখতে পাচ্ছে না। তবে কি, তার জীবনের ঘটনা বা দুর্ঘটনা থেকে তার রাগ আসছে?
কার ওপরে রাগ?

বাদামের ঠোঙা ছোয়ের হাত থেকে কেউ তুলে নিয়ে গেলে,ছো কি করবে?
এই যে এখন সে মাঠে একা একা বাদামের ঠোঙা নিয়ে সময় কাটাতে এসেছে। যদি ছোঁ মেরে ঠোঙাটা
কেউ নিয়ে যায়?

মাথাটা ঝনঝন করে তার। উড়ে আসে শুকনো পাতা। ছেঁড়া কাগজ। সে ভয় পেয়ে উঠে পড়ে
ছুটতে থাকে বাড়ির দিকে।

বাড়ি?

ছো দাঁড়িয়ে যায় পথে।

বাড়িটা কোন্ দিকে?

সে রাস্তার মধ্যে বসে পড়ে।
পথ চলতি লোক তাকিয়ে ভাবছে,
ছেলেটির কী হলো?

চড়ুই ফিরছিল কলেজে থেকে।
সাইকেলে। রাস্তার মধ্যে ছোকে
বসে থাকতে দেখে দাঁড়িয়ে যায়।
সে বুঝতে পারে, ছোয়ের কিছু একটা হয়েছে। যাইহোক,চড়ুই
এখন ছোকে উঠিয়ে সাইকেলের পিছনে বসায়। সোজা চলে যায় কুঞ্জ বনে।

দুজনে বসে পড়ে মহুল গাছের নিচে। চড়ুই ছোয়ের কাছে জানতে চায় তার কি হয়েছে? মুখ থমথম করছে কেন?

ছো কিছুই বলতে না পেরে, চড়ুইয়ের বুকে মুখ রেখে কাঁদতে থাকে।

আকাশে উড়ছে বক।



----২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪২৮
----৮---৬---২০২১
------নির্মল হালদার



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ