সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১

কবিতা / নির্মল হালদার







কবিতা / নির্মল হালদার


১৩০.
আকাশের আর্তি : আকাশটা নেই আর।
মাটিরও আর্তি: মাটি নেই আর।
আর তুই, তুই আছিস তো? তোর বুকে
হাওয়া থাকলে, আমাকে দে।

ফুল-ফলের গর্ভে প্রবেশ চেয়েছি
যদি বাতাস থাকে। ফুল ফল তো নেই,
নেই আমার সরল শিরদাঁড়া।
কিভাবে হাঁটবো আর রাস্তা থেকে রাস্তা উধাও

আর তুই, তুই আছিস তো? 
আমার বুকে আঁচড় দে।



১৩১.
কাঁঠালের বোঁটা ছিঁড়ে গেলে
আমিও বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই আমার বৃন্ত থেকে।
আমার বৃন্ত আমার প্রকৃতি। জলহাওয়ার খেলায় আমাকে খেলতে বলে। এই আষাঢ়ে
আম-কাঁঠালের সঙ্গে আমার খেলা।

রঙের খেলা। গন্ধের খেলা

ভালবাসাবাসির নিঃশ্বাসে নিজেরা হয়ে উঠছি
নিসর্গ- নির্মল।

----১৩আষাঢ়১৪২৮
-----২৮---৬----২০২১



১৩২.
নক্ষত্রের তাপ থেকে তোর উত্তাপ
আমারই নিকট আত্মীয়।
আমিও সঙ্গ নিঃসঙ্গতায় একাকী সুন্দর

আমার সৌন্দর্য রেখে যাই পথে পথে
যদি ছায়া ফেলে, পথিকের জন্য দু'দণ্ড
পথিকার জন্যেও এক আশ্রয়

আশ্রয় কি পেয়েছে মানুষ?

মানুষ তো প্রতিদিন বাস্তুচ্যুত।



১৩৩.
মানুষ অর্ধেক হয়ে আছে।

মানুষকে সম্পুর্ণ করতে পাহাড় নদী জঙ্গল চাই।

কোথায় নদী? তুমি এসো
কোথায় পাহাড়? তুমি এসো
কোথায় জঙ্গল? তুমি এসো


মানুষের খিদে-তেষ্টা সম্পূর্ণ করো

মানুষকে দাও মানুষের স্রোত
মানুষ যে অর্ধেক হয়ে আছে

মানুষের অর্ধেক কান্নায় ঢেউ ওঠে না


-----১৪আষাঢ়১৪২৮
----২৯---৬----২০২১



১৩৪.
আমার অনেক কিছুই আছে, আছে
শাল গাছের ঋজুতা
টিয়া পাখির ঠোঁটের রঙ
কাঠবিড়ালির লাফ
হাঁসের কোলাহল

আমার অনেক কিছুই আছে, আছে
তাল--খেজুরের রস
পদ্ম বনের মধু
নিমগাছের হাওয়া
পায়রার বকম বকম

আমার অনেক কিছুই নেই, নেই
পাখির পায়ের শব্দের মত
নিশ্চুপ প্রেম।



১৩৫.
যেখানে দাঁড়াবো
সেটাই যদি দেশ না হয়
আমার কোনটাই বা দেশ?
আমার কোনটাই বা মুখ?

যে কথাটা বলবো
সেটাই যদি স্বর না হয়
আমার কোনটাই বা নিজস্বতা?
আমার কোনটাই বা কথা?

যেদিকে বাড়াবো হাত
সেটাই যদি আলো না হয়
আমি কোন্ অন্ধকারে বাঁচবো?
আমি কোন্ অন্ধকারে বেঁচে আছি?


----১৫আষাঢ়১৪২৮
-----৩০---৬----২০২১


১৩৬.
পচা গলা বলে মাটিকে ছুঁড়তে পারো না।
দাঁড়িয়ে আছো মাটির উপরেই। বরং
মাটি দ্যাখে, তুমি কতটা হাঁটতে পারো
মাটির উপরে

কতটা দাঁড়াতে পারো গাছের পাশে

কবেই বা দাঁড়াবে মানুষের পাশে, এই প্রশ্নে
মাটি অস্থির। মাটি আর্তনাদও করে------
ফেটে যাওয়া মাটির ভিতরে বীজ নেই,
বিষ ঢুকছে আজ।



১৩৭.
প্রথম নিঃশ্বাস ফেলে ছিল মাটিতে?
মায়ের কোলে?
প্রথম নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পেয়েই
আমি কাছে চলে গেছি আমার প্রথম আলোর কাছে।

জন্মের কাছে।

জন্মের পর জন্ম আসে আমার জন্ম আসে
আমারই মুখের দিকে চেয়ে চন্দ্র সূর্যের কথা
রোদ-বৃষ্টির কথা

ধূলিকণায়  লেগে আছে জন্মের ঋণ


----১৬ আষাঢ়১৪২৮
-----১---৭---২০২১


১৩৮.
রাখালের মত নির্জনতা যদি চাও 
গোচারণে চলো। গাই--গরুদের ছায়ায় ছায়ায়
ঘাসও নীরব হয়ে থাকে।

নীরবতার কাছে চলো, একটি পাতা উড়ছে।
ফড়িং উড়ছে। বাতাস থেকে খুঁজছে সবাই
বাতাসের মধু

আর আমি ফড়িংয়ের পাখার তলায় খুঁজছি
আরেকটি ফড়িং। ফড়িংয়ের হাওয়া।


----১৭আষাঢ়১৪২৮
----২---৭---২০২১


১৩৯.
মাছের লাফ ছুঁতে গেছি।
পাখির ডাক ছুঁতে গেছি।
মানুষের হাসিকেও ছুঁতে গেছি বারবার
শেষে , নিজেকে ছুঁয়ে দিন রাত্রি জাগরণ

তুই আসবি।

ডুমুর পড়তে পড়তে ফেটে যায়
ছড়িয়ে পড়ে বীজ। একটি  পুরনো ডালে 
নতুন অঙ্কুর। পাতা আসবে স্পর্শ করতে।
সবুজও আসবে।

তুই--ও আসবি

আমি ছুঁতে চাইবো পায়ের শব্দ।



১৪০.
বাবলা গাছের ছায়া
শালিকের ওড়াউড়ি
মেঘের চলাচল
নদীর কাছে এসেছো যখন
যা খুশি নাও

বকের দাঁড়িয়ে থাকা
ঘাসের স্পর্শ
ভুট্টা ক্ষেতের ডাক
নদীর কাছে এসেছো যখন
যা খুশি নাও।

শুধু মুঠোভর্তি বালি নিও না
আঙুলের ফাঁকে ঝরে যাবে।
শুধু মুঠোভর্তি জল নিও না
আঙুলের ফাঁকে ঝরে যাবে।


-----১৯আষাঢ়১৪২৮
-----৪---৭---২০২১


১৪১.
আমি যে শব্দ করি
চোখের পাতা ফেলার মত
তুমি কি শুনতে পাও?

তুমি কান পেতে ছিলে
আমার কথার দিকেই
কথারা বড় কোলাহল করে

কথারা বড় কথার পিঠে জড়ায়

আমি যে শব্দ করি
আমার দৃষ্টির মতই
তুমি শুনতে পেলে না আজও

আমি আজও আমার কান্নার মতোই

নিস্তব্ধ।



১৪২.
হাত না ধরলে কি করে বুঝবো
আরেকটা হাত আছে। হাতে হাত ধরেই তো
আমাদের স্পর্শ-বিনিময়। হাত না ধরলে
কি করে বুঝবো হাতের জাদু।

হাতে হাত ধরেই তো আমাদের দৃষ্টি-বিনিময়।

হাতে হাত ধরেই তো আমাদের বেড়।

আমাদের বন্ধন।

আমাদের বন্ধন আমাদের আয়ু।


----২০ আষাঢ় ১৪২৮
----৫---৭---২০২১
----নির্মল হালদার




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ