মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১

ঘুম অথবা ঘুম তাড়ানো / নির্মল হালদার




ঘুম অথবা ঘুম তাড়ানো / নির্মল হালদার


ঘুম আসছে। ঘুমোবো না।

ঘুম তো আর গরু ছাগল নয় তাড়িয়ে দিলেই চলে যাবে।

ঘুম আসবেই।

ঘুম তাড়ানোর জন্য একটার পর একটা বিড়ি ধরাই।

কি আশ্চর্য, ঘুম আসছেই।

চারদিক থেকে ঘুম আমাকে ঘিরে ধরছে। মুদে আসছে চোখের পাতা।
আমি চেষ্টা করছি, দূরে থাকা স্মৃতিকে জড়ো করা। যদি রোমন্থন করতে করতে ঘুম কেটে যায়!

প্রথমে আমার স্মৃতি আমার বন্ধুরা।
যারা দূরে চলে গেছে। কেউ কেউ অকালপ্রয়াত। অকালপ্রয়াতদের মধ্যে
লালটু একজন। যে গতকাল এসেছিল আমার কাছে রাত্রিবেলায়।
আমি তাকে আজ প্রথমেই বললাম,
তোর সঙ্গে কথা বলবো না। সে হাসলো। যে হাসি তার জীবিত অবস্থায় দেখিনি। আমার ভয় হলো।
এই হাসি যদি আমাকে জড়িয়ে ধরে?
ঘুম হয় তো কেটে যাবে, তারপর?
হাসি যদি আমাকে না ছাড়ে?

আমি মাকে কাছে ডেকে বসাই।
আক্ষেপের সুরে বললাম, এত তাড়াতাড়ি তুই না গেলেই পারতিস।
কার কাছে রেখে গেলি আমাকে?
মা বললো, মায়েরা কি চিরকাল থাকে? এইতো বেশ আছিস তুই।
আমি রেগে গেলাম।

দেখি সাড়ে তিনটে বেজে গেছে।
চলে গেছে ঘুমের অনেকটা সময়।
আরও এক ঘন্টা লাগবে। ঝিলমকে
ডাকি। সে হাসি হাসি মুখ করে আমার সামনে দাঁড়ায়। বলে--------এইতো একা থাকতে পারছো তুমি। কোনো কষ্ট নেই আর। 

কষ্ট নেই?

ঝিলম আমার কষ্টের তুই কিছু বুঝবিনা। তুই তো চলে গেছিস আমাকে ছেড়ে। একবারও ভাবলিনা,
কাকা কার কাছে থাকবে কার সঙ্গে থাকবে? কাকা খাবে কোথায়? কে দেখবে কাকাকে?
একবারও ভাবলি না তুই। তুই থাকলে
আমার এতটা কষ্ট ভোগ করতে হতো না। সেই ভোর থেকে রাত অব্দি আমি একা। ভাত খেয়ে থালা-বাটি ধুতেও আমার শাস্তি মনে হয়। জল শেষ হলে
আবার জল আনতে পরিশ্রম হয়।
সেইসঙ্গে দিন রাত আমি একা।
তুইতো একবারও চিন্তা করিস নি, কী ভাবে কাকার দিন কাটবে!

ঝিলম হাসে। সে বলে, আরতো ফেরার উপায় নেই।
আমি এবার দুরছাই বলে, উঠে দাঁড়াই। গাছে গাছে জল দিতে হবে।

তাতেও কেটে যাবে অনেকটা সময়।
ঘুম ও চলে যাবে।
যাবে কী?

দিদিদের সঙ্গে কথা বললে হয়।

আজকাল মেজদি জিজ্ঞেস করেনা,
কী দিয়ে ভাত খেলাম। আজকাল জিজ্ঞেস করেনা, ভাই গেঞ্জি আছে তো? যদি ছিঁড়ে গেছে আমি শৈলেনের হাতে পাঠিয়ে দেবো।
সেজদিও তুলিন যেতে বলছে না।
ছোড়দি যেতে বলছে না ধানবাদ।
আর বড়দি?
আমার কাছে দিনের পর দিন থেকেও
সেই যে চলে গেল আর আসে না।
ডাকলেও আসেনা।
ঘুম তাড়ানোর জন্য বড়দির সঙ্গে কথা বলতে চাইছিলাম। সাড়া পাইনা।
কেমন আছে কে জানে!

আমার চার দিদির ছায়া কোন্ ঈশ্বর
নির্মূল করে দিয়েছেন জানি না।
আমি যে আশ্রয় চাইছি।

নিভৃত নির্জন ছায়ার মতো আশ্রয়।

ফোন করে সময় কাটানো যায় না।
কেননা, ফোন করার কেউ নেই আমার।
দু'একজন থাকলেও ব্যস্ত খুব। সংসারী খুব। মনে মনে তাই, তালগাছকে ডাকি। তালগাছের মাথার দিকে চেয়ে থাকলে সময় কাটে।

আমি তো লেখাপড়া করি না।

লেখাপড়া করলে সময় কাটানোটা
কোনো ব্যাপার ছিল না। আর সত্যি কথা বলতে কি, দুপাতা পড়তে পড়তে
আমার ঘুম এসে যায়।

আমি শরীর ও মনে দুর্বল। আমার দ্বারা কোনো কাজ হলো না কোনো দিন।আমি নখ কাটতেও ভয় করি।

নানা রকম দ্বিধা ও সংশয়ে আমার দিন কাটে।

যখন কথা আসে আমার ভেতর থেকে
তখন সামনে কাউকে পাইনা। যদি বা পাই, কথা বলা যায়না।

কল্পনারও একটা সীমা আছে।
কত আর স্বপ্নে ও কল্পনায় দিন কাটাবো!

সারাক্ষণ মনে হয়, আকাশ আমার লেখার জায়গা। আমি লিখবো আমার ইচ্ছে মত--------হিজবিজবিজ।


------১০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----২৭-----১১----২০২১
-----নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ