মঙ্গলবার, ৭ ডিসেম্বর, ২০২১

সান্ধ্য পাঠ / নির্মল হালদার



সান্ধ্য পাঠ / নির্মল হালদার


দুপুর থাকতে থাকতে আমার লম্বা-চওড়া বিছানা হয়ে গেছে। শীত করছে।
মেঘ থাকলে শীত বোধ প্রখর হয়ে থাকে। কাল রাত থেকেই মেঘ করেছে। সকাল থেকে টুপটাপ। তখন থেকেই শীতের ভয়।
যদিও সকাল সাড়ে সাতটার আগেই
আমার স্নান হয়ে গেছে। স্নান করলে
শরীরের জড়তা কেটে যায়।

দুপুরের পর শীতটা আসে।
মনে হয়, লেপ জড়িয়ে শুয়ে পড়ি।
একা একা।
প্রতিদিন একাই শুয়ে পড়ি। যদিও
বিছানার এক প্রান্তে আরেকজন শুয়ে থাকে। বিছানার মাঝের জায়গাটা যেনবা কোনো মাঠ।
যেদিন থাকে না সে, আমি সম্পুর্ন একা একটা মাঠের একদিকে। মনে হয় আমার।

আজও বিছানা করে শুয়ে পড়েছি একদিকে। অন্যদিকে একটা বালিশ আছে শুধুমাত্র।

সে বাড়ি গেছে।

সন্ধ্যে হয়ে গেছে। লেখাপড়া করছি না। মনে মনে মেঘ আকাশে তারা খোঁজার চেষ্টা করছি।

একটা তারা মানে একটা মুখ।

অসংখ্য মুখতো আকাশে জ্বলজ্বল করে। আমাকে শুধু চিনে নিতে হয়
কোন্ মুখটা কার।

একটু আগে চা বিস্কুট।

টিভি খুলেছি। প্রতিদিনের মতো
বস্তা পচা সিরিয়াল ও অশ্লীল খবর।
আমার ভাল্লাগে না।

পড়াশোনাও করি না।

কী করি?

মনে মনে হাৎড়াই মনের কোন্।
যদি খুঁজে পাই, কোনো ধনরত্ন।
দেখি এসে দাঁড়িয়েছে, রঞ্জন।
দেখি এসে দাঁড়িয়েছে, অনিকেত।
দেখি এসে দাঁড়িয়েছে, উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য।
এসে দাঁড়িয়েছে, মিলন। অসিত।
দুলিয়া। এবং আমার বন্ধ দরজা খুলে
উঁকি দিয়ে যায় আমার ব্যর্থতা।

ব্যর্থতা কাকে বলে?

সফলতা কাকে বলে?

আমাকে আমি শুধাই। উত্তর পাই না।

রঞ্জন কম বয়সেই চাকরি পেয়ে গেছে।
আমার চাকরি?

প্রতিদিন একেকটা ঘরে এক একটা চাকরি যদি পাই, কেমন হবে?
ওর ঘরে জুতা পরিষ্কার করে দেবো।
তার ঘরে, জামা কাপড় ইস্ত্রি করে দেবো। আরও একটা ঘরের বাজার করে দেবো। আরও আরও ঘরের
দরজা-জানলা মুছে দেবো।

কারোর ঘর থেকেই কোনো পারিশ্রমিক চাইনা। কেবল কারুর ঘরে
জলখাবার। কারো ঘরে দুপুরের আহার। কারো ঘরে রাত্রের রুটি। কেউ কেউ টাকা দিতে চাইলেও "না"করবো।

টাকা বললেই, ভয় করে আমার।
গুনতে পারিনা।

টাকা উড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে খুব।

এই অবধি তো এলাম, চেয়ে দেখি
বিছানাটা হাঁ করে চেয়ে আছে আমার দিকে।
আমারও ঘুম আসছে।

ঘুমোবো না।

-------৪----১২---২০২১


সান্ধ্য পাঠ-------২

দুপুরের বিরক্তি পার হয়ে টুপটাপ সন্ধ্যায় এসে পৌঁছেছি।
বৃষ্টি।

ওদিকে মাঠে পড়ে আছে কাটা ধান।
চাষীদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।
ক্ষতিপূরণ করার মত কোনো সরকার নেই। চাষীদের গলায় শুধু হাহাকার।

নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।
একটা শাকের আঁটির দাম দশ টাকা।
কোথায় যাবে মানুষ?

আমি তো ঘরে থাকি। আমাকে দিন মজুরির কাজ খুঁজতে হয়না। 
আমি কেবল ঘরে থেকে মনের কাজ খুঁজি। সব সময় পাইনা। কখনো কখনো স্নায়ু বিকল হয়ে থাকে। অথবা
কখনো কখনো স্নায়ু চাপ নিতে পারে না একেবারেই।
মনের দুয়ার বা মনের ঘর বন্ধ হয়ে থাকে। কী লিখবো? কাকেই বা লিখবো আমার কবিতা?

আমি শব্দশ্রমিক।
আমাকে খুঁজতে হয় কবিতা কোথায় আছে। যদি পাই, কাজে যে লাগবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বিফলতা
এসে দাঁড়ায়।
তখন ছটফট করি। অস্থির হই। তখন
এ প্রান্ত ওপ্রান্ত ছুটে বেড়াই। একটিও
ময়ূর কিংবা কাক ধরতে পারিনা।

কাক সব সময় কবিতায় এসেছে।

কাক আমাদের সঙ্গী।

যে মাটিতে দাঁড়িয়ে আছি, সেই মাটির কথা আমি কি বলতে পারি সহজ ভাষায়?

বর্তমানে মাটির দাম সবচেয়ে বেশি।

ফাঁকা জায়গা দেখা যায় না আর।

মন ফাঁকা থাকলেও জায়গা ফাঁকা নেই। জমির দাম হু হু করে বাড়ছে।
আগামী কোনো দিন পাহাড় ভেঙ্গে
মানুষ বসতি করবে।

কার কোলে ছায়া খুঁজবে নোলক ও তার প্রেমিক?


------১৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৫-----১২----২০২১



সান্ধ্য পাঠ--------৩

শীত এলেও আমার জানালাটা খোলা থাকে। যদি কাক এসে বসে? যদি একটা পায়রা এসে বসে?
পায়রার মুখ থেকে একটা চিঠি পড়বে ঘরের ভিতরে।

বহুযুগের ওপারে পায়রাইতো আমাকে চিঠি দিয়ে গেছে প্রতিদিন।

পায়রা, প্রতিদিনের সঙ্গি।
অথচ আমার কবিতায় একটি চরিত্র হয়ে উঠল না পায়রা।

কাক বরং কবিতার চরিত্র।
কাক অনেক ইঙ্গিত বহন করে।

তো পায়রার জন্য আমি অপেক্ষা করি। কখন আসবে সে? যদি আসে
আমাকে চিঠি দিয়ে যাবে নিশ্চয়ই।
সেই চিঠিতে আমার ই অনুভূতি লেখা থাকবে।

অনেকের সঙ্গেই আজ আর কোনো সম্পর্কের অনুভূতি কাজ করে না। কেবল অভ্যাসবশত  কোনো কোনো সম্পর্কের সঙ্গে ভালো--মন্দে থাকি।
এটুকুই।

একদিন যাকে ছাড়া আমার দিন কাটতো না, আজ তাকে দেখেও
আমার অনুভূতিরা স্তব্ধ হয়ে থাকে।

একদিন যাকে ছাড়া এক দন্ড চলতো না, আজ তাকে দেখেও আমার আবেগ কাজ করে না।

যদি দুজনের দুটো হাত কাছাকাছি আসতে চায়, তবে দেখবো কেউ কাউকে ছুঁতেই পারিনা।

স্পর্শ সম্পর্কের আরেকদিক।
অথচ কেউ কাউকে স্পর্শ করছি না আর। এখানেই বলতে হয়, মনের স্পর্শ নেই। আগে তো মন ছোঁবে আর এক মন। তারপর তো হাতের উপরে হাত।
উষ্ণতা।

না, কোনো তাপ উত্তাপ নেই।
শুধু সম্পর্কের সেতুতে আসা যাওয়া।
এই আসা-যাওয়ার মধ্যে দৃষ্টি বিনিময় শুধু ‌। হৃদয়ের বিনিময় নেই ‌।

হৃদয় দিয়েই তো হৃদয় চিনতে চাই।

------২০ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------৭-----১২----২০২১









কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ