মিছে কলরব / নির্মল হালদার
গান শুনছি।
আবেগী হয়ে উঠলাম।
গানে গানে মনে হলো, একটা প্রেম করা দরকার। ছল ছল করে উঠলো বুক। সামনে এসে দাঁড়ালো অজস্র মুখ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মিলিয়ে গেল সবাই। আমার আবেগ উধাও।
একটা বই পড়ছিলাম। কোনো প্রেমের গল্প নয় উপন্যাস নয়। সাধারণ লেখা।
পড়তে পড়তে ভেসে উঠলো একটা মুখ। মনে হলো, নিকটে যাওয়ার প্রয়োজন খুব। চিক চিক করে উঠলো
চোখের কোনা।
মুহুর্তের মধ্যে এসে পড়লাম আবার
বইয়ের ভেতরে।
আজ সকালবেলা সবজি বাজারে
টাটকা পালংশাক দেখে দাড়িয়ে পড়লাম। মনে হলো, কোথাও যাওয়ার কথা ছিল আমার। কিন্তু কোথায়?
খুঁজে পাচ্ছিনা সেই ঠিকানা।
মন খারাপ হয়ে গেল।
এখানে একটা কথা বলতে চাই,
পালং শাকের টাটকা রঙ কি আমাকে আবেগী করে তুলেছিল?
বাবার হাত ধরে ছেলেটি কোথাও যাচ্ছে। আমি এই ছেলেটির মুখের দিকে চেয়ে রইলাম। মনে হলো,ওর
বয়সটা আমি আর পাবো না।
চিনচিন করে উঠলো বুক।
হেমন্তেই আবছা শীত পড়তে শুরু করে। এবছর ও তাই। মহারাজকে মনে পড়লো। সে হেমন্ত থেকেই
স্নান করা বন্ধ করতো। সে একেবারেই
ঠান্ডা সহ্য করতে পারতো না।
সেই তো আমাকে বলেছিল, একলা থাকার অভ্যেস করুন। সে যে আমাকে ছেড়ে চলে যাবে আমি কখনও কল্পনাও করিনি।
কল্পনা আর বাস্তবে অনেক ফারাক।
মহারাজ চলে গেল একদিন অন্য রাজ্যে কাজের জন্য। আমি একা হয়ে গেলাম।তার কথামতো একলা থাকার অভ্যেস করতে পারিনি।
প্রেম করতেও পারিনি।
প্রেম করতে করতে যদি একলা হয়ে যেতাম? তাহলে বুঝতাম, প্রেমের একাকীত্ব। প্রেমের যন্ত্রণা।
প্রেম কই?
শুধু চেয়ে থাকা। কেবলই স্মৃতির কাছে যাওয়া। শুধু বুক চাপা কান্না।
একটা প্রেম করলেই নিজের ছেঁড়া জায়গাগুলো সেলাই করতে পারতাম।
একটা প্রেম করলেই নিজের ফুটোফাটা জায়গাগুলো রিফু করতে পারতাম।
অথচ প্রেম নেই।
পাখিদের সঙ্গে প্রেম করতে পারলাম কই? সকালবেলা পায়রাকে মুড়ি দিয়েই আমার প্রেম শেষ। সকালবেলা
কুকুরকে বিস্কুট দিয়েই আমার প্রেম শেষ।
নৈকট্য চাই। অথবা বলতে পারি, ঘনত্ব চাই। কার সঙ্গে?
সেতো আর আসেনা। সেই যে সেই আর আসে না।
নতুন করে প্রেমের অনুভবে প্রতিদিন নাস্তানাবুদ হই। বিধ্বস্ত হই।
বুক ঠেলে গলা খেলে কান্নাটাও মে আমার সামনে আসে না। কেবলই
গাইছে গান একলা ছেলে
গাইছে ঘর দুয়ার ফেলে।
------৮ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
-----২৫----১১---২০২১
------নির্মল হালদার
ছবি : সন্দীপ কুমার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন