সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

কবি নির্মল হালদারের দুটো অনবদ্য লেখা




ছাতিম পাতা
----------------------

উৎসর্গ: আমার সকল বন্ধুদের জন্য।

একটাও পলাশ ফোটেনি।

এখনো শীত আছে।

পলাশ গাছের সব পাতা ঝরে যাওয়ার পর ডালে ডালে পলাশ ফুটবে।

চারদিক চেয়ে রঞ্জন খুঁজে পায়না
অন্য কোনো ফুল।

আজ ক্লাস নেই।
সে সঙ্গীত ভবনের আশেপাশে ঘুরতে ঘুরতে শুধু পাখি দেখতে পায়।
ভোর হয়েছে অনেক আগেই। তবুও কাউকেই দেখা যাচ্ছে না।
সে আশা করেছিল, গাছ জুড়ে
ফাগুন বউ । তার হলুদ শাড়ি থেকে রঙের কিরণ ঝরাবে।

সেও তো নেই।

কাঞ্চন ফুল কই?

ফাগুন তো শুরু হয়েছে। শুধু
আম মুকুলের গন্ধ।
রঞ্জনের মন গুন গুন করে উঠলো----

ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে
ডালে ডালে ফুলে ফলে--পাতায় পাতায়

পাতায় পাতায় এসে রঞ্জনের সুর থেমে যায়।
কোথাওতো ফাল্গুন নেই। যদিও
বাতাসে বিষণ্ণতা।

সে রামকিঙ্করের সুজাতার কাছে
এসে দাঁড়ায়। দেখে সুজাতার পায়েসের বাটিতে ধুলো-ময়লা।
শুকনো পাতা।
রঞ্জনের মনে পড়ে গেল-------
বসন্ত কি শুধু ফোটা ফুলের মেলা রে।
দেখিস নে কি শুকনো পাতা ঝরাফুলের খেলা রে।।

তার ইচ্ছে করলো, হোস্টেলের কোনো ঘরে শব্দ করে ঢুকবে।

এক কাপ চায়ের জন্য সে তৃষ্ণার্ত হয়ে উঠেছে।

একটা শাদা শাড়ি এগিয়ে আসছে। মনে হচ্ছে, কলাভবনের কোন ছাত্রী। তার হাতে এক তাল মাটি।

রঞ্জন মেয়েটিকে আগে দেখেনি।

আলাপ করবে?

না, প্রয়োজন নেই।
সে একটা আম গাছের তলায়
ছায়া দেখতে লাগলো। কুড়িয়ে নেয় আম মুকুল। যেনবা আজকের এই উপহার তাকে কেউ পাঠিয়েছে।

আজকের ঘন্টাও স্তব্ধ হয়ে আছে।

কেউ কি জেগে উঠবে না?

ঘন্টা ঘরের তলায় একটা কাক।
কাকে যেন খুঁজছে।
হঠাৎ তার পাশ দিয়ে চলে গেল একটা সাইকেল। পিছনে বসে আছে একটি মেয়ে।
তার শাড়ির আঁচল উড়ছে বাতাসে।

সকালের রোদে স্নিগ্ধতা থাকলেও
রঞ্জনের হাঁটতে ইচ্ছে করছে না।
তার মনে জেগে উঠছে------

ওগো দখিন হাওয়া,ও পথিক হাওয়া---

গানটা সম্পূর্ণ করার আগেই একটা ডাক ভেসে উঠছে-------
পার্থ---পার্থ------

কে ডাকছে?

আমার একটা ডাক----
শেরনা----শেরনা--------

কে শেরনা?
কে পার্থ?

একটা ছোট পলাশ গাছের পাতা
কেঁপে কেঁপে উঠলো। তার শুকনো ডালে মনে হচ্ছে, কেউ যেন নোখ
দিয়ে লিখে গেছে-------দেখা হবে।

রঞ্জন বিড়বিড় করে------দেখা তো হয়না। কারো সঙ্গেই দেখা হয়না। কেবল বাতাস বয়ে যাচ্ছে।

বাচ্চু দির বাড়ির দিকে গেলে হয়।
সকালটা যদি গানে গানে পাওয়া যায়?
বাচ্চুদির গান মানেই, বুক ভরা বাতাস। রঞ্জনের কান্নাও আসে।
যে কান্নাকে দু হাতে আগলে রাখা যায়। ভালোবাসা যায়।

সে দেখতে পায় কালো বাড়ির কাছে কারা যেন এসে বসলো।
তার ঘরে তার বন্ধুতো ঘুমোচ্ছে।
সে রাতভর কী যে পড়ে কে জানে। গান শুনতেও পছন্দ করেনা।

একটা গানের সুর ঘুরে বেড়াচ্ছে
চারদিক। কে গাইছে কোথায়?

আমি তোমায় ডাক দিয়েছি ওগো উদাসী-----

সে চেয়ে চেয়ে খুঁজছে, গানের মুখ। খুঁজে পায়না। সে মাটি থেকে তুলে নেয় শিশির ভেজা ধুলো।

বুদ্ধদেবের মূর্তির কাছে এসে দাঁড়ায় রঞ্জন। তার খালি পায়ে লেগেছে শিশির। ঘাস ফুলের রেণু। সে উপর দিকে তাকিয়ে দেখে সূর্য অনেকটাই উঠে এসেছে ওপরে।
হোস্টেলের দিকে যাবে নাকি?
রঞ্জন স্থির করতে পারে না। তার মনের মাঝে গান থেমেছে, সুর আর লাগেনা।

নন্দিনীর সঙ্গে দেখা হয়না আজকাল। শুনেছে, নন্দিনী নাকি
সাঁওতাল গ্রামের দিকে মাঝে মাঝে যায় বাচ্চাদের পড়াতে।

তাদের হোস্টেল ঘরের দিকেও
রঞ্জন ঘুরঘুর করেও নন্দিনীকে দেখতে পায় না ইদানিং। তার মনে হলো আজ, নন্দিনীর সঙ্গে দেখা করবেই।

রঞ্জন কি পারবে নন্দিনীর হাতে
ছাতিম পাতা তুলে দিতে?


------১লা ফাগুন১৪২৮
-----১৪-----২----২০২২
-----নির্মল হালদার



২.

ঘন্টাতলা
--------------

পাঠভবন থেকে শুরু হয়েছিল।

আজ স্নাতকোত্তর। বিষয় বাংলা।

অনিকেতের আজ মনে হয়, সেই পাঠভবনের বয়সটা কি চমৎকার ছিল। তাদের এক মাস্টারমশাই ছিলেন যিনি ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৃতিপাঠ দিতেন। কিভাবে শুয়োপোকা থেকে প্রজাপতি, সেই মাস্টার মশাই দেখিয়েছিলেন।
দেখিয়েছিলেন, কল্কে ফুলের হলুদ আর ফাগুন বউয়ের হলুদ রঙ এক নয়।
তিনি এও দেখিয়েছিলেন, কাঠবিড়ালির চলাফেরা। এবং কাঠবিড়ালি ফল ছাড়াও আর কি কি খায়।

একদিন দুপুরবেলা খাবার খেতে গিয়ে অনিকেতের এক বন্ধু ইঁদুর দেখে মারতে গিয়েছিল। সেই মাস্টার মশাই অম্বুজ বাবু ছেলেটির হাত ধরে বলেছিলেন,
কোনো প্রাণীকে মারতে নেই। বরং দেখতে হয়, তাদের জীবন আচরণ।
কত সুখের ছিল পাঠভবনের দিনগুলি। অনিকেত তো নাচের দলেও ছিল। বসন্ত উৎসবে
খোল দ্বার খোল------গানের সঙ্গে
নাচতে নাচতে পরিক্রমা করেছে
মাঠ।

অনিকেতের অভ্যেস তার নিজের হোস্টেল থেকে এসে প্রতিদিন একবার পাঠভবনের দিকে যাবে।
একবার ঘন্টা তলায় দাঁড়াবে।
প্রতিদিন।
এখনো সে ঘন্টা শুনলেই দেখতে পায়, পাঠভবনের দিকে ছুটে যাচ্ছে অনেক শাদা পায়জামা।
হলুদ পাঞ্জাবি।
যেনবা ছুটে যাচ্ছে সমস্ত গাছপালা। এতোটাই সজীব। সুন্দর।

ঘন্টা শুনলেই মনে হয়, মা-বাবা বোধহয় এবার আসবে দেখা করতে।

অনিকেতের বাড়ি রাজনগর অনেক দূর।

পাঠভবনে ভর্তির পর অনিকেতের মন ছটফট করতো। তার মন বসতো না হোস্টেল ঘরে। ক্লাসে যাওয়ার জন্য ভোরে উঠতে পারতো না সে। তার এক বন্ধু ছিল
অনন্ত। সেই অনিকেতকে ঠেলে ঠেলে ঘুম থেকে তুলতো।
তারপর তো গাছ তলায় ক্লাস।

পাঠভবনে আসবার আগে স্কুল বিষয়ে মনে মনে তার একটা ছবি ছিল। এখানে এসে পাল্টে গেল সব।

একদিন দেখে একটা লোক
পাথর কুঁদে কুঁদে কি একটা বানাচ্ছে। সামনে যেতেই লোকটা
অনিকেতের মাথার চুল নেড়ে দিয়ে জানতে চায়, কি নাম গো তোমার?
অনিকেত চুপচাপ থাকে। লোকটাও আর কিছু বলে না।
জোর গলায় গাইতে শুরু করে,
আকাশ আমায় ভরলো আলোয়---+

অনিকেতের খিদে পেয়েছিল। কিন্তু গানের টানে দাঁড়িয়ে গেল সে অনেকক্ষণ।

পাঠভবন থেকে পাশ করে
যখন আস্তে আস্তে বড় হয়ে উঠছে
অনিকেত, তখন জেনেছিল
ছোটবেলার সেই বুড়ো লোকটি
শিল্পী রামকিঙ্কর।

এক পূর্ণিমার রাত্রে পলাশ গাছের নিচে রামকিঙ্করের কাছ থেকে
অনিকেত শুনেছিল আরো রবীন্দ্রনাথের গান।

বিশু পাগলের অভিনয়ে রামকিঙ্কর একবার অনিকেতকে মুগ্ধ করেছিল।

সেদিন সঙ্গে মৃত্তিকাও ছিল।

মৃত্তিকা শান্তিনিকেতন ছেড়ে
বর্তমানে দিল্লি নিবাসী। চাকরি করে।
এই মৃত্তিকাই বলেছিল একবার,
অনিকেত , তুই আর আমি
কোপাইয়ের কাছাকাছি একটা মাটির ঘর করে থাকবো।

অনিকেত উত্তরে বলেছিল, হ্যাঁরে
শান্তিনিকেতনের জলবাতাস আর
লালমাটি আমাদের জড়িয়ে ধরেছে।

তবে এটাও ঠিক রাত হলেই
গুরুদেবের দীর্ঘশ্বাস শুনতে পাই।

মৃত্তিকা কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকার পর বলে, মাঝে মাঝে মন খারাপ করে আমারও। ফাগুন দিনের পাতাঝরা বিষণ্ণতা আমাকে পেয়ে বসে। তারপরও এই মাটি ছেড়ে
অন্য কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারিনা।
অনিকেতের উত্তর ছিল , ছাতিম গাছগুলো আমাদেরই আত্মীয়-স্বজন। আমাদের বন্ধু।
সবাইকে ছেড়ে কী করে চলে যাবো, জানিনা ।
গাছ তো অনেক আছে , বিশেষ করে ছাতিম গাছকে খুব কাছের মনে হয়।

অনিকেতের আজ মনে হয়, তার
অন্তরের আবেগ, উন্মাদনা শুকিয়ে উঠছে।
সে বিস্মিত হয়ে ওঠে,এত তাড়াতাড়ি শুকিয়ে ওঠার কথা তো নয়।

তবে কী শান্তিনিকেতনের আকাশ ও মাটি শুকিয়ে উঠছে?
কিন্তু আজকেই দেখেছে সে, পলাশের ডালে ডালে কুঁড়ি আসছে।

আবছা শীতের হাওয়া ক্রমশ
বিদায়ের দিকে।

ঘন্টা বেজে উঠলো।

সন্ধের অন্ধকার।

অনিকেত কী বৈতালিকে যাবে আজ?


-----৬ ফাগুন ১৪২৮
----১৯----২----২০২২
------নির্মল হালদার





ছবি : দীপাংশু মাহাত

আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া





আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া
----------------------------------

ভাত
-------

উনুনে আবার পা লাগবে কী?
উনুন এক খিদে,
সারাদিন।

খিদের গায়ে পা লাগলে,
খিদের অপমান।
ভাতের গায়ে পা লাগলে,

অন্নের অপমান।




রুটি
--------

রাত তো এই,
আগুনে ফুলে যাওয়া রুটি
একটার পর একটা রুটি

মায়ের স্নেহের মত উষ্ণতা।

চাঁদ এসে খোঁজে, একা একা।

আদুরে ছেলের মতো।


-----২৩ মাঘ১৪২৮
-----৬----২-----২০২২



আহার
-------------
দুপুর বেলার সূর্যের আলো
হাঁড়ি থেকে ফ্যান গড়ানো আলো।
যে যে টুকু পারে ধরে রাখে।
যে যেটুকু পারে আহার করে।

দিন কাটে।

নুনের মতো গলতে গলতে।



ঘাম
--------

যেটুকু মাটি আছে বিলাতি বেগুনের চাষ।

ঘরে রান্না হয়, বাজারেও বিক্রি হয়।

গতরের ঘাম ছেটাতে পারলেই,

ভালোবাসবে ভুঁই।

------২৪ মাঘ ১৪২৮
------৭-----২-----২০২২




ঝাঁটা
---------

ঝাঁটার কাঠি ক্ষয়ে গেলেও
ঝাঁটা পড়ে আছে আকাশের এককোণে

ধুলো জমে ছিল তারায় তারায়।




ঘটি
--------

একবার যখন এসেছে, আপন করতে হবে।

একটা ঘটি হলেও ঘরে থাকবে।

এক ঘটি জলেইতো সন্তুষ্ট একটা তুলসি গাছ।


কুটুমকেও দেখাতে হয় এক ঘটি জল।

মাঝলা বউ শুনে যা, ঘটিটাকেও মাজতে হবে,

মাটির আদর মাখাতে হবে।




লঙ্কা ফুল
----------------

লঙ্কা ঝাল হোক আর লাল হোক
লঙ্কা ফুলেও মধু আছে।
লঙ্কা ফুল এসেও পড়েছে, আইবুড়ো মেয়ের
নাকের ছেঁদায়।


-----২৫ মাঘ ১৪২৮
-----৮----২----২০২২




নাকছাবি
----------------
মুসুরির ডালের মতো নাকছাবি
সাধের ননদ লোভ করে, হাত বাড়ায়
হলুদ দিতে হবে না।




ঘাস
---------
কোন্ চাষী লাগিয়েছে ঘাস?

মাঠে মাঠে ঘাস

ফাগুনে --শ্রাবণে ঘাস

ঘাসে ঘাসে পা ফেলতেই, বেজে উঠছে
নূপুর।




খুঁটি
---------
ঘরের চালা ধরে রাখা নিম গাছের খুঁটি
বিক্রি করবে না, বাঁধাও দিবেনা
খুঁটিটাইতো বংশের শিরদাঁড়া

আকাশকেও ধরে রেখেছে।


-----২৬ মাঘ১৪২৮
-----৯----২-----২০২২



জাঁতি
------------

একটা জাঁতি এসে কাকে যে কাটে!

সুপারিতো নেই।


পান দোক্তাও নেই।

শুধু পান পাতার মতো মুখ চেয়ে থাকে

অন্ধকার থেকে।




কাজললতা
------------------

কাজললতা নেই

ঘরে এসেছে কাজললতা পাখি

শিশুকে পরাবে কাজল।




বাজার
-------------

কে জানে কে চেয়ে আছে
কপালের ঘামের দিকে।
কেঁপে কেঁপে ওঠে পায়ের তলা।
বিক্রি হয়ে যাবে,
গরুর শিঙে লেগে থাকা মাটিও।


-------২৭ মাঘ ১৪২৮
------১০----২----২০২২



ভার
--------
ঘরের চারটে খুঁটি চার ভাই

চারজনের কাঁধেই, ঝড় জল রোদের ভার।




থালা
-------
বাঁধের জলে পড়ে আছে থালা

কার ঘরের থালারে ভাই
কে মাজতে এসে ফেলে গেল?

থালা থেকে
আশীর্বাদ ও স্নেহের গন্ধ আসছে

যেনবা অন্নপ্রাশনের থালা।




সোনার দুল
-----------------
বালতিতে উঠে আসছে বালি কাদা

বালতিতে উঠে আসছে জল

বালতিতে উঠে এলো কানের দুল

কার কানের দুল কবে পড়ে গেছলো?

ও ছোট বউ শুনলো,তোর কানটা আছে ফাঁকা।


------২৮ মাঘ ১৪২৮
------১১----২----২০২২




জিইয়ে থাকা
-----------------

আর কতদিন?

আর কতদিন
আধপেটা হয়ে থাকবে নুনা নুনিরা?
এ যে এক হাঁড়ি জলে
মাগুর মাছকে জিইয়ে রাখার মত

জলে হাত নেড়ে নেড়ে দেখতে হয়
মাছটা খেলছে তো?




বিছে
-----------
যে যার আব্রু নিয়ে থাকে।

যেমন রূপার বিছা
কোমরেই থাকে

কেউ দেখতে পায়না।


-------২৯ মাঘ১৪২৮
-------১২-----২----২০২২



 যে জীবন জটিলতার দিকে
-----------------------------------
১:

হাঁড়ি থাপড়ালে ফাঁকা আওয়াজ ওঠে

মাটি থাপড়ালে ধুলো ওড়ে

কপাল থাপড়ালে ঠক্ ঠক্

আকাশ থাপড়াবে কী, নাগাল পায় না।


২:

জল হাৎড়ালে শুধু জল
তৃষ্ণা মিটে যায়।
মাটি হাৎড়ালে শুধু মাটি
পেট ভরে না।

দিনশেষে
মাঠে মাঠে ইঁদুরের গর্ত হাৎড়ানো
যদি ধান-চাল মেলে।


-----৩০ মাঘ১৪২৮
-----১৩----২----২০২২
-----নির্মল হালদার




শিখা
--------

সারাদিনের কাজ শেষে
হ্যারিকেনের কাঁচ মুছতে হবে।

হ্যারিকেনের শিখাইতো সংসারের আয়ু।


২:

হ্যারিকেনের কাঁচ মুছলেও
আকাশকে মুছতে হবে না, শুধু
হ্যারিকেনের শিখা উসকে দিলেই
চাঁদ--তারা জ্বলবে।



চোরকাঁটা
----------------

ব্লাউজটা ছিঁড়ে গেছে
আঁচলে ঢেকেছে গা।
কাঁখের ঝুড়িতে তুলছে গোবর।

শাড়িতে লাগছে চোরকাঁটা
শাশুড়ির গঞ্জনার মত।


-----১ ফাগুন ১৪২৮
-----১৪ ----২---২০২২



সম্পর্ক
---------
একটাই শাড়ি শুকাতে হয় পরতে হয়

যেমন
একটাই মরদ
শুকাতে হয় পরতে হয়

নইলে
সম্পর্ক যে থাকে না মান থাকেনা

যেমন
পান থেকে চুন খসলে সম্পর্ক কি থাকে?




বাঁশি
----------

বাঁশি আর কী শুনবে !

কাঠের চুলহা নিভে গেলে
বাঁশিতে ফুঁ দিয়েই আগুন জ্বালানো

বাঁশিটাই যে ফুকলন।


------২ ফাগুন ১৪২৮
-----১৫----২----২০২২



উকুন
----------

মাথায় মাথায় তারা ওঠে তারা কামড়ায়

উকুনও কামড়ায়

তারা থেকে উকুন বেছে
দু আঙুলের নখে টিপে মারে
আদ্যিকালের বুড়ি।




জল
--------

একলা রাস্তায় হেঁটে যায় যুবতী

ভেজা শাড়ি

পিঠে ছড়ানো চুল থেকে জল ঝরে
দু এক বিন্দু জল রোদে শুকায়

কুঁদরি লতে শিশির শুকায়।


------৩ রা ফাগুন ১৪২৮
-----১৬----২----২০২২



মাড়
--------
বাসি মাড়ে কি আর সুয়াদ আছে!

মাড়ের মতই শাদা শাদা মেঘ
সব সময় টাটকা,

চুমুক দিতেই পারো।




মশলা
----------

ভুঁইয়ে কী আর মশলা বাটাবাটি?

শিল--নোড়াতে পস্তু বাটলে
শাঁখা--চুড়ি ধোওয়া জল

জননী ও জায়ার শাঁখা-- চুড়ি ধোওয়া জল।


-----৪ ফাগুন ১৪২৮
----১৭---২---২০২২




চিকন
----------

বাঁধের ঘাটে
গায়ে সাবান ঘষে মেয়েরা
চেকনাই হবে গা।

মাথায় মাটি মাখছে মাহাত বুড়ি

চেকনাই করবে মন।




স্বাদ--আস্বাদ
---------------------
চাল--গম এক হয়ে গেলে
চন্দ্র-সূর্য এক হয়ে যাবে।
দাদারে, চাল থেকে গম
আলাদা করতেই হবে।

চাল আমাদের মা হলে
গম যে আমাদের মাসি।




বসন্ত
-----------
টেঁস ফুল ফুটে নাই।

আজও
গা ঘেঁষে দাঁড়ালেই ঘামের গন্ধ

চিরকালের মধুর গন্ধ


প্রতিদিনের বসন্ত।



------৫ ফাগুন ১৪২৮
----১৮-----২----২০২২




বড়ি
--------

জ্যোৎস্নার আলোয় বড়ি শুকায়

এতো এতো বড়ি
বিউলি ডালের বড়ি
কে দিয়েছে?

একা একা হেঁটে যায়
শাদা থান পরা বটুর মা।




নিসর্গ
-----------
কোথায় যাওয়া?

কদ্দুর যাওয়া?

আকাশের এক কোণে পস্তু বাটার মত
ঝকঝক করছে চাঁদ

শুধু চেয়ে চেয়ে থাকা

রাঁধুনির নাকফুলও জ্বলে জ্বলে উঠছে।


------৬ ফাগুন ১৪২৮
-----১৯----২----২০২২
-----নির্মল হালদার






সুন্দর বনের ছবি : সৌজন্যে-দীপংকর রায়

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি









































শনিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২২

শিল্পের অন্তরালে





শিল্পের অন্তরালে
-----------------------------

এক ঝুড়ি শাক ।

মাথায় করে নিয়ে এসেছে বুড়ি।
বাজারে। শহর বাজারে।

এক আঁটি শাকের দাম ৫ টাকা।

একটা ছেঁড়া গামছা বুড়ির মাথায়।
রোদ আড়াল করবে।

খালি পা।

বুড়ির মাথার চুল শনের মত।
তেল নেই। পরনে আধা ময়লা ধুতি।
ব্লাউজের হাতা ছেঁড়া।

বুড়ির গ্রামের নাম পিঁড়রা----চাকিরবন। শহর থেকে
প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা।
সেই গ্রাম থেকে খালি পায়ে হেঁটে এসেছে।

বুড়ির কাছে কে কে থাকে?

তার স্বামী যে নেই, তাকে দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়। আমি শুধু ধারণা করতে পারি বুড়ির উঠোনে একটি তুলসী গাছ আছে। থাকতেও পারে
একটি সজনে গাছ।

যেহেতু সজনে শাক বারো মাস পাওয়া যায় এবং খাওয়া যায়। ঘরে কাঁচা সবজি না থাকলে কিংবা নিজেরা
শাকসবজির চাষ না করলে, ভাতের সঙ্গে শুধু সজনে শাক সেদ্ধ অথবা
ভাজা খাওয়া যেতে পারে।

বুড়ির ঘরে ধান যদি হয়ে থাকে, তবে তা  ছ মাসের। হয়তোবা। যদি ছেলেপিলে থাকে, তাহলে তারা হয়তো
শহরে কাজ করে। দিনমজুরের কাজ।

এখন বুড়ির ভাবনা------শাক গিলান
না বিকালে তেল--নুন কীসে হবেক?

রোদ বাড়ছে চড়চড় করে।
মাথায় তাত লাগছে।

একজন খদ্দের এসে দর দার করে
বললো,৩ আঁটি শাক ১০ টাকায় দিলে
নিতে পারে।

বুড়ি দিয়েও দিলো।

শাক তো আর ঘরে নিয়ে যাওয়া যাবে না। যদি না বিকায় দিয়ে যেতে হবে বাজারের গরুকে।তার চেয়ে ভালো কাজ, যা বিক্রি হয়-----যেটুকু পয়সা পাওয়া যায়।

বুড়ি আরো ভাবলো তাকে তো
ছেলা ভুলাও নিয়ে যেতে হবে।

হয়তোবা বুড়ির নাতি-নাতনি আছে।
ছোট। তারা  তার ঠাকুমার কাছে
আবদার করে। তাদের জন্য কিছু না কিছু নিয়ে যেতেই হয়।

জল তেষ্টা পেয়েছে।

বুড়ি টিউ কলের কাছে গিয়ে
পাম্প করে আঁজলাতে নেয় জল।
প্রথমে মুখ চোখ ধুয়ে দু তিন আঁজলা
জল খায়।

মিটে যায় তৃষ্ণা।

তারপরেও বুড়ির চোখে মুখে লেগে থাকে জীবনের তৃষ্ণা।

যা শিল্পে প্রকাশ করা যাবে না।

------১৯ মাঘ১৪২৮
-----২---২---২০২২
-----নির্মল হালদার





আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া





আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া
----------------------------------

স্নেহ ভালোবাসা
------------------------

চেটেপুটে খেলেও
কানা উঁচু থালাতে লটকে থাকে
ভাতের একটি দানা যেনবা বলতে চায় :
পেট ভরেছে তো?



পিপাসা
------------

কত কুয়ো খোঁড়াখুঁড়ি?
কত পুকুর খোঁড়াখুঁড়ি?

নদীতো আর খোঁড়া যাবেনা

সমস্তই,

তোর কানের লতিতে লেগে থাকা
এক ফোঁটা জল।



আলো
----------

হাওয়া আসছে
কেঁপে কেঁপে ওঠে লম্ফর আলো।
কাঁচের আড়ালে থাকে
হ্যারিকেনের সলতে,

জ্বালাও জ্বালাও।

যেমন চশমার আড়ালে চোখ,

জ্বলছেই।


-----১৪ মাঘ১৪২৮
----২৮----১----২০২২


মান
---------------

যতই গর্ত করুক
কপাল তো আর খুঁড়বেনা ইঁদুর।
যতই ধান নিয়ে যাক,
মানতো আর নিয়ে যাবেনা।



বংশধারা
---------------

কীসের ডর?

ঝড় এসে ফিরে গেছে।
ঝড়-বাদলও ফিরে গেছে।
রোদের ঝাঁঝতো আছেই।

ঘরেও আছে একটা টাঙ্গি একটা সাহস

বংশের পর বংশ।


-----১৫ মাঘ ১৪২৮
-----২৯----১----২০২২



হাল
--------

সম্বল বলতে একটা হাল
মাটি থেকে মেঘের চাষ করে।
মন খুলে দিলে, মনেরও চাষ।

বারো মাস।



বড়ি
-----------

রোদে বড়ি শুকোয়

দুঃখেরা শুকোয়

বটুর মায়ের হাতের বড়ি
বিক্রি হবে বাজারে।


------১৬ মাঘ১৪২৮
-----৩০-----১----২০২২


পান থেকে চুন খসলে
পানের আর কি থাকে?
চুনকে থাকতেই হবে লেপ্টে
সঙ্গে একটু খয়ের।

সম্পর্ক থাকবেই,
পানের রসের মতো লাল,

প্রতিদিন।

৩০----১----২০২২



চাষ
-------

চাষের যা হাল খরচ ও দেদার

বরং ছাগল চাষ করলে লাভ আছে

একটা ছাগল ধেনালেই দু তিনটে ছানা
যত বড় করবে করো, আছেই তো
তাততলের হাট

দে বিকে

হাতে আসবে নগদ টাকা।



শিশুর কান্না
------------------

কাঁদে ক্যানে?

অন্নপ্রাশনের থালায় তো আছে,
দুধে ভাতে থাকো।


২২.
থালাতো একটাই
চাঁদের মতো থালা
একবার কামড়ালেই, দুধ।

ছোটটার কান্না থেমে যাবে।

------১৭ মাঘ১৪২৮
-----৩১----১----২০২২


কপাল
-------------

উঠানে গোবর দিতে দিতে
আকাশেও গোবরের টিকা।

আকাশ তো ছেলেরই কপাল।

পুণ্যি হবে।



সাত সকাল
-------------------

পায়রা এসে বকম বকম

সকালবেলা।

সরলার পায়ে পায়ে রোদ নাচে

সকালবেলা।

আজ গাছে গাছে আম মুকুলের মতো সুখ

বুকে ভরে উঠছে দুধ।



কামিন
-------------

কুলির সাথে কামিনের কাজ
হাড়ভাঙ্গা খাটুনি।
ঘরে এসেও চুলা জ্বালানো।
জিরাবার মত ফুরসৎ কই?

শিল - নোড়ারও বিশ্রাম নাই।


------১৮ মাঘ ১৪২৮
-----১---২----২০২২



মাটি
---------

মাটির হাঁড়ি ছেঁদা হয়ে গেছে।

চোখের জলে ছেঁদা হয়ে গেছে মাটিও।

কেউ শোনে না।



সঙ্কট
--------

কয়লাকে কয়লা বললে, শুনছে না কেউ।

দুধকে দুধ বললে, শুনছে না কেউ।

কাজ চাইলেও দোষ।

কী কপাল করেছিরে!

ভাজা মাছ ছলকে যায় জলে।


-----১৯ মাঘ১৪২৮
-----২----২--২০২২



খুঁট
-------

মেঘের খুঁট খুললেই জল।

আমি কোল পুছা
প্রাচীন মায়ের শাড়ির খুঁটে বাঁধা আছি,

আজও।



ঝুল
--------

রাঁধনা শালে ঝুল জমেছে।

ইঁদুর লাফায়।

তেলের ভাঁড় উল্টে গেছে
হলুদ উল্টে গেছে নুনে।

ইঁদুর লাফায়।

রাঁধুনির মুখে ঝুল জমছে।



চাকা
-------

মাটিতে গেঁথে গেছে গরুর গাড়ির চাকা

গাড়োয়ান নেই।
কোথাও গাড়োয়ান নেই, শুধু

গরুর পায়ের তলায় তাপ।

-----২০ মাঘ ১৪২৮
-----৩----২---২০২২



ছেঁড়া কাঁথা
-------------------

যতই বৃষ্টি পড়ুক
যতই বীজ মরে যাক
মাঘ মাসের ঠান্ডায় যতই শীত করুক
ছেঁড়া কাঁথার মত মেঘ
ঘুরে বেড়াবে।



ভাব অভাব
-------------------

থালা-বাটি যেমন আছে
ঘরে একটা জামবাটিও আছে
তার পেট ভরাতে দুধ মুড়ি না হোক
মাড়ভাত চাই।


ঘরে একটা বালতিও আছে
গরুর দুধে না ভরুক
আকাশ থেকে দুইতে হয়
মেঘ-বৃষ্টি রোদ।

ঘরে একটা কুড়ুলও আছে

গাছের রক্ত লাগাই না।

------২১ মাঘ১৪২৮
-----৪----২----২০২২


শ্রম
---------

সারি সারি পিঁপড়ে
টেনে নিয়ে যাচ্ছে মুড়ি।
সারি সারি পিঁপড়ে
টেনে নিয়ে যাচ্ছে আলো।



বঁটি
-------

আঁশ বঁটির কাছে রোদ এসে
স্থির হয়ে আছে।
মাছ এসেও স্থির, নিষ্পলক।


২.
মাছি ওড়ে

মন দেবার মত আহার নেই।

ঘরে নেই বাইরে নেই, শুধু

বঁটিতে লেগে আছে মাছের রক্ত।


-----২২ মাঘ১৪২৮
-----৫-----২----২০২২
----নির্মল হালদার

আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া




আঁকাবাঁকা শিকড়ের ছায়া
-------------------------------------

প্রার্থনা
------------

সকাল তো এই, নিম দাঁতন আর শাল দাঁতন।
আর সূর্যের কাছে প্রার্থনা: হে ঠাকুর
কপি চারায় রোদ দিও-----

মেঘে মেঘেই কাটলো সারা বছর।


সজনে গাছ
------------------

একটাই সজনে গাছ,
শুয়োপোকা বাসা বাঁধছে বাঁধুক,
প্রজাপতি উড়বে।

সজনে ফুলটাও হোক বাতাসে উড়বে।


অভাবে
-------------

অভাবে অভাবে বন্ধক দিয়েছে থালা বাসন।
আজ চাঁদকে পেট কোলে লুকিয়ে
বন্ধক দিতে গেল মহাজনের কাছে।


------২রা মাঘ১৪২৮
-----১৬----১----২০২২


বর্ষায়
-----------

দেয়াল ফাটছে

আকাশ ফাটছে, সারাক্ষণ বিজলায়

কোথায় দাঁড়াবে আজ?

কপাল ফাটছে জামবাটির মত

মাড় নেই এক ফোঁটা।


পরব
---------

গরব করবে কীসে?

পরব দিনে নতুন শাড়ি নাই

ডিংলা ফুলটাও ফুটলো নাই।


-----৩ মাঘ১৪২৮
-----১৭----১----২০২২


ঘাতক
------------

জল জঙ্গল জমি খেয়েও পেট ভরলো না তোর

আমার বাপ ঠাকুরদাকেও খেয়েছিস তুই

এইবার তুলসী গাছের দিকে চোখ

আমি শুয়ে পড়েছি তুলসী থানে।



সংসার
-------------

সাবধানে ধরো বউ মাটির হাঁড়ি
যেভাবে ধরে আছো সংসারের মাটি।



শাদা শাদা মেঘ
------------------------

হাওয়া এসে ওড়ায় গাছের পাতা
রোদে মেলা শাড়ি।
ফুলে ফুলে ওঠে সায়া,
ব্লাউজের রঙ।

হাওয়া এসে ওড়ায় মেঘ

শাদা--শাদা মেঘ

আমার বাবার ধুতির মতই।


----৪ মাঘ১৪২৮
-----১৮----১----২০২২


 দুঃখ
----------

ছেঁড়া কাপড়ের দুঃখকে আড়াল করতে
প্রিয়জনের মতো ছুঁচ--সুতো আছে, শুধু


দেখতে পাই না।



আঁশ বঁটি
----------------

আঁশ বঁটির ধার কমে গেছে
বেলা পিসির যৌবনের মত

সারাক্ষণ মুখ গোমড়া

কিছুদিন বাদেই জং ধরবে,
ছাদের ঘরে পড়ে থাকবে একা।


-----৫ মাঘ১৪২৮
-----১৯----১---২০২২


জট
----------

রান্নাঘরের কথা কী বলবো আর
নুন আছে তো তেল নেই
লঙ্কা আছে তো হলুদ নেই
শুধু ঝুলকালি,

ছোট বউয়ের চুলের জট।



পিপাসা
-------------

এই গ্রাম সেই গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে
পিপাসা এলো।

নদীর কাছে গেলাম

জল চাইবো কি?

নদীও অনাথ রমনী।


-----৬ মাঘ১৪২৮
-----২০----১---২০২২



বাসা
--------

ঘরের ভিতরেও আরেকটা ঘর আছে

চড়ুই বাসা বেঁধেছে কুলুঙ্গিতে

হঠাৎ হাওয়া এসে ওড়ায় বাসার খড়কুটো।


২.
আঁধার আঁধার লাগলেও
কুলুঙ্গিতে চড়ুই ডিম পেড়েছে, আলোর মতোই।


------৬ মাঘ ১৪২৮
------২০----১----২০২২


দরজা
----------

দরজা খোলাই থাকে

শুধু খুঁজতে হবে,
দরজাটা বাঁ দিকে না ডান দিকে।

শুধু খুঁজতে হবে,
হৃদয়ের অবস্থান কোথায়।


২.
দুহাতে দরজা খুললে
দুহাতে হৃদয়ও খুলতে হবে, তবেই তো
প্রবেশ করবে আকাশ

পথ শিশুদের সঙ্গে।


জানলা
------------
জানলা একটাই

মেঘ-বৃষ্টি রোদ উঁকি দিয়ে দেখতে পায়
খোলা আছে শুকনো খাতা

শীর্ণ হৃদয়ের মতো।


২.
জানলাটা খোলাই থাকে

গাছের ডাল থেকে কাক দেখতে পায়
ঘরের কোণে একটা চাপ চাপ কান্না।


-----৭ মাঘ ১৪২৮
----২১-----১----২০২২


 গাঁইতি--কোদাল
---------------------------

কাজ থেকে ঘরে ফিরছে গাঁইতি-কোদাল

আমার বাপ কাকা।

কাল ফের জ্বলে উঠবে
সূর্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে।


২.
গতরের ঘাম শুকিয়ে গেলে
মাটির ঘাম শুকিয়ে ওঠে।

বাপ চোদ্দপুরুষের গাঁইতি-কোদাল
পড়ে থাকে অবহেলায়।


একাকী
--------------

বাঁশপাতাটি পড়ে আছে

কে আসবে এই পথে? কার পায়ে জড়াবে?

কানাই গেছে কাজের শহরে

বাঁশ পাতাটি পড়ে আছে বিরহের মত

একা।


-----৮ মাঘ১৪২৮
-----২১----১----২০২২


 গোধূলি
-------------

পাখিরা ঘরে ফিরছে।
গাছে গাছে গোধূলির আভা।
মাহাত বউ  সিঁথি রাঙায়
পশ্চিম আকাশের সিঁদুরে।

----৭ মাঘ১৪২৮
-----২১----১----২০২২


ভয়
--------

অকাল বাদলে ভিজে যায় খামারের খড়
পচে গেলে? ঘরের চালা ছাইবো কীসে?

আমার হাড়ও ক্ষয়ে  গেছে।



 চড়ুই
----------

চৌকাঠ ডিঙিয়ে একটা চড়ুই

মেঝেতে পড়ে নেই একটিও চালের দানা

পালক ফেলে উড়ে গেল চড়ুই।



হলুদ
---------

নতুন ধান নতুন চাল
ঘরে ঘরে পিঠে সেদ্ধ পিঠে ভাজা।
গরু--কাড়ার মুখেও নতুন খড়।

শাকসবজিতে মাঘ-শীতের  হিম।

মাঠে মাঠে সরষে ফুলের ঝাঁক।

ও লো ও ঠাকুরঝি,
সরষে ফুলের হলুদে কার গায়ে হলুদ?


------৯ মাঘ১৪২৮
-----২৩----১----২০২২


সকালবেলা
-------------------

পেয়ারা গাছে শিশিরের ফোঁটা

কাঠবিড়ালি লাফিয়ে গেল

সকালবেলা

প্রজাপতির রঙিন হাওয়া

হেসে উঠলো আইবুড়ো মেয়ে।



১০ মাঘ ১৪২৮
----------------------

আম মুকুলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়তে পড়তে
কাকে জড়ালো?
আজ কার বিয়া?

পঞ্চাননের ঘরে ঢাক--ঢোল বাজে

মুরগি লাফায়

আকাশের মত কপালে কে পরালো
চন্দ্র সূর্যের ফোঁটা?

চন্দনের গন্ধ ছড়ায়।


----১০ মাঘ ১৪২৮
----২৪----১----২০২২


মেঘের জাল
-------------------

টং থেকে নামছে না পায়রা

সকাল কি এসেছে?

চারদিকটাই বাসি রুটি মুসুরির ডাল

কাক ছাড়া খুঁটবেনা

কাক নেই একটাও।



সংসার
------------

অভিমানকে খড়ের গাদায় রেখে
সংসারে থাকা।
রাগ রস হলুদের সঙ্গে বাটতে বাটতে
সংসারে থাকা।

স্বামীর সংসারেও সাবধানে থাকতে হয়

ফুটন্ত হাঁড়ির কানা ধরে নামাতে হয়।



খিদে
--------

ডালের কড়াইয়ে ফোড়ন দিতেই
আকাশও চনমন করে ওঠে

রোদ ওঠে।

আমাদের খিদে ওঠে।


-----১১মাঘ১৪২৮
-----২৫----১---২০২২


নাপিত বউ
------------------

নাপিত বউ এসেছে।
বড় বউয়ের পায়ের গোড়ালি
ঝামা ইঁটে ঘষবে।

ফেটে গেছে পায়ের গোড়ালি।

আলতাও পরাবে নাপিত বউ
সুখ দুঃখের গল্প করতে করতে
নখ কাটবে বউ--বিটিদের।

চেয়ে আছে ধারালো নরুণ।



দু আঙুলে
----------------

হাঁড়ি থেকে একটা ভাত নিয়ে
দু আঙুলে টিপে দেখে নিতে হয়,
সেদ্ধ হয়েছে কিনা।

আকাশ থেকে একটা তারা নিয়ে
দু আঙুলে টিপে দেখে নিতে হয়,
আলো হয়েছে কিনা।

শুধু গাছতলার বুড়ি
দু আঙুলে টিপে মেরে ফেলছে
মাথার উকুন।


-----১২ মাঘ১৪২৮
-----২৬----১---২০২২



শোভা
-----------

ঘরে চুনকাম হলো

গাঁদা ফুলও হয়েছে।
এবছর ধানও হয়েছে।
শুধু ঘরের মাচাতে নেই ঘরের শোভা,
ডিংলা ফুল।



মেঘের চুল
---------------

রোদ উঠলেও
মেঘও আছে ছিটেফোঁটা

চিরুনিতে আটকে থাকা চুল।


২.
চিরুনির দাঁড়ের ফাঁকে ময়লাও জমেছে,
এই শীতে মেঘের মতো।
চুড়ি থেকে সেফটিপিন খুলে
ময়লা পরিষ্কার করছে মেয়ে

মুখ না হয় না দেখবে ফাটা আয়নায়।


------১৩ মাঘ১৪২৮
------২৭----১----২০২২
-----নির্মল হালদার







কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ