শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০২৩

আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ





আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ---২১
--------------------------------------------------------

ক্যালেন্ডারের পাতা উড়ছে।

ক্যালেন্ডার আমার দেয়ালের ফাটল আড়াল করলেও আমি ক্যালেন্ডারকে ভয় পাই।

ক্যালেন্ডারের পাতা উড়তে উড়তে আমাকে দেখায় পালা পার্বণের পাশাপাশি একাদশী। পূর্ণিমা।

পুরোহিতন্ত্র থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নানারকম বিধি নিষেধ। তার মধ্যে একাদশী একটি। আমাদের এদেশে এখনো মহিলাদের উপরে অত্যাচারের যন্ত্র। যদিও পুরোহিত তন্ত্রের প্রভাব পড়েনি নিম্নবর্গের উপরে। তারা শুধু নিজেদের বেঁচে থাকা নিয়েই দিন কাটায়। তাদের ঘরে ক্যালেন্ডারের ছবি শোভা পায় না।

পুরোহিত তন্ত্র রাজার নির্দেশিত তন্ত্র। অত্যাচার অনাচারের একটি দিক। যার ফল ভোগ করছে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত সম্প্রদায়। এদেশের বাঙালি মহিলারা।

যখন আত্মীয় কোনো বিধবা মহিলা আমাকে বলে----তোর ঘরে ক্যালেন্ডার আছে? আমি জানতে চাই, কেন? মহিলা তারপর বলে----যদি দেখে দিস একাদশীটা আজ না কাল!

আমার কাছে ভেসে ওঠে অনেক অসহায় মুখ। অল্প বয়সী বিধবার মুখ। তখন মনে হয়, এ সমাজের নানান বিধি নিষেধের মুখে লাথি লাগাই।

ক্যালেন্ডারের পাতা উড়ছে।

ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেছে কে?

-----৩ অঘ্রাণ ১৪২৯
-----২১---১১---২০২২
-----সন্ধে --৫--৪১
----নির্মল হালদার


 



আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ ---২২
---------------------------------------------------------
(আমি বাংলা কবিতার কেউ নই)


 স্কুল পাশ করি নাই।  

ঘুরে বেড়ানোর কাজ, উড়ে বেড়ানোর কাজটাও যে করতে পেরেছি, বলা যাবে না।

প্রেম?
সেও তো করি নাই। ইচ্ছে ছিল। এজন্যে একটি মেয়ের ঘরের রাস্তায় সারাদিনে অনেকবার ঘোরাঘুরি করেছি। যদি দেখতে পাই, এই আশাতে।

ব্যর্থ হয়েছি।

সেই ব্যর্থতা থেকে কবিতা লিখতে এসেছি, একদম না। আমি মনে করি, আমি কবিতার কেউ নই।

আমি বাংলা কবিতার কেউ নই।

আমার প্রসঙ্গে দু-এক কথা লিখতে গিয়ে এক বন্ধু লিখেছিল, গোটা কুড়ি পঁচিশ শব্দ নিয়ে আমি লিখতে এসেছি।

আমি কী করে হতে পারি বাংলা কবিতার একজন?

আমার অগ্রজ  কবিদের কবিতা পাঠ করতে গেলেই দেখি, সমস্ত কবিতাই মনি মুক্তো। আমার বন্ধুদের কবিতা পাঠ করতে গেলেই দেখি, সমস্ত কবিতাই মনি মুক্তো। অনুজ কবিদের কবিতা পাঠ করতে গেলেই দেখি, সমস্ত কবিতাই সোনা।

এই কবিদের সঙ্গে একই পংক্তিতে আমি ভোজন করতে পারি না।

আমি চেয়ে আছি ওই বাগালের দিকে। সাত সকালে যে মাড়ভাত খেয়ে গরু চরাতে এসেছে। আমি তার কাছে দাঁড়াবারও যোগ্যতা রাখি না।

আমি চেয়ে আছি ওই তাল গাছের দিকে। প্রতিটি মুহূর্তে যে আকাশের সঙ্গে মেঘের সঙ্গে কথা বলে।আমি ওই তালগাছের তলায় দাঁড়াবারও যোগ্যতা রাখি না। বাবুই পাখির বাসাকেও রক্ষা করে ওই তালগাছ।

আমি নিজেকেও রক্ষা করতে অক্ষম। আমি স্বপ্ন দেখতেও জানিনা। আমার আকাঙ্ক্ষা নেই। সারাদিন হাত পাততে পাততে হাত  ক্ষয়ে যাচ্ছে। কেননা, ভিক্ষে করার জন্য আমার নেই টিনের তোবড়ানো বাটি।

কখনো কখনো ভুল করে ভালোবেসে ফেলি ঘরের চালায় ফুটে ওঠা কুমড়া ফুলকে। তখন মনে হয়, ফুলটা যদি আমার হাতে এসে পড়ে, আমি ধন্য হয়ে যাব।

আমি ঘরের চালায় উঠে ফুল পাড়তে গেলে, চারদিক থেকে চিৎকার উঠবে: চোর চোর চোর।

কুমড়া ফুলের শোভা নিজের জায়গায় থাকুক। আমি রাস্তায় রাস্তায় , একা একা খুঁজে বেড়াবো একটু ছায়া। 

আমি কী করে হতে পারি বাংলা কবিতার একজন?কবিতা লেখার জন্য সাহস চাই। শিরদাঁড়া চাই।লেখাপড়া চাই।

আমি দেশ-বিদেশের কোনো লেখা পড়ি নাই। আমি লোকসাহিত্য পড়ি নাই। আমি তো মানুষ পড়তেও পারিনা। যে  ধূলা আমার সারা অঙ্গে, সেই ধূলা  সম্পর্কে দুটো কথা বলতেও আমি অপারগ। আমি কী আর বলতে পারি কবিতা বিষয়ে কথা? 

আমি কী করে হতে পারি বাংলা কবিতার একজন?

আমি চেয়ে থাকি হাঁড়ির গায়ে গড়িয়ে পড়া ফ্যানের দিকে।উপচে পড়া আবেগের দিকে।

আমার তো আবেগ নেই।

আবেগ পেতে হলে হৃদয়ের চর্চা চাই। আমিতো হৃদয়ের শব্দ শুনতে পাই না। সকাল থেকে রাত অব্দি আমি জুবুথুবু। জানলা দিয়ে আকাশ ঢুকে পড়লেও আমি তাকে আপ্যায়ন করতে ভুলে যাই।

আমি কী করে কবিতা লিখব?

রাগ সংগীত থেকে  লঘু সংগীত আমি ধরতে পারি না। আমি কী করে ধরবো কবিতার ছন্দ?

আমি চেয়ে থাকি পায়রার পাখার দিকে। যদি উড়তে উড়তে পাখার হাওয়া আমাকে স্পর্শ করে যায়!ইদানিং পায়রাও তো আসছে না। কী যে  রাগ ? কী যে অভিমান ? নাকি আমার ব্যর্থতা? আমি তাদের ভালোবাসতে পারিনি।

ভালো না বাসলে সৃষ্টির দিকে যাওয়া যায় না। বিস্কুট রঙের বিফলতা আমার থাকলেও আমি লিখতে পারি না একটি কবিতাও।

আমি চেয়ে আছি  মধু সিং সর্দারের দিকে। মধুর ফলানো ফসল আমার দিকে চেয়ে থাকে। যেন বা বলতে চায়-----তুই হেরে যাওয়া মানুষ---তুই হেরে যাওয়া মানুষ। এখানে একটাই কথা আমার----- আমার হার নেই জিত নেই। আমি কবিতা লিখতে আগমন করি নাই এই বাংলাদেশে।

ডাবের জল খেয়ে আমি আরাম করতে আসিনি। আমি শুধু চেয়ে থাকি নদীর দিকে। আমি শুধু চেয়ে থাকি নদীর তলার বালি-পাথরের দিকে। মাছের খেলা
দেখার মত ভাগ্য করে আসিনি। নদীর পাড়ে দাঁড়ালেই মাছ চলে যায় জলের গভীরে।

এ এক জীবনে কাকতাড়ুয়ার ছায়ার পাশে দাঁড়াতেও আমি ভয় ভয় করি। আমি কী করে কবিতা লিখব?

আমার সঙ্গ--নিঃসঙ্গতা নেই।

আমি বাংলা কবিতার কেউ নই।

আমি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায় আমার মাকে আমি বলতেই পারি: আমাকে তুই আনলি কেন ফিরিয়ে নে।

-----বেলা--১২--৪১
-----৪ অঘ্রাণ ১৪২৯
----২২--১১---২০২২
----নির্মল হালদার

 




আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ --২৩
--------------------------------------------------------

বিজ্ঞাপন চাহিদা তৈরি করে। 
বিজ্ঞাপন মনোহরণ করে। 
ক্রেতা তৈরি করে। 

বিজ্ঞাপন এক ইশারাও।

বিজ্ঞাপন নগ্নতা প্রকাশও করে।

এই অঘ্রাণ শীতের একটি বিজ্ঞাপন------ তেলের বিজ্ঞাপন------এক যুবতীর নগ্ন পিঠে একটি লেখা------ " শুষ্ক ত্বক আর নয় "।

এ তো এক অশ্লীলতাও। অশ্লীলতা এক প্রাইভেট হাসপাতালের বিজ্ঞাপনে-----এক যুবতীর গলায় ঝুলছে স্টেথো। যেন বা ছেলেরা মেডিকেল পড়ে না। কেবলই মেয়েদের মুখ। মেয়েদের শরীর প্রদর্শন বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে। এখানে নারীকে পণ্য হিসেবে রাখা হচ্ছে। যা নারী জাতির অপমান। যে কোনো সাবানের বিজ্ঞাপনেও নারী আছে। নারী বাদে পুরুষ সমাজ যেন সাবান ব্যবহার করে না। এরকমই একটার পর একটা বিজ্ঞাপন। ক্রেতাকে লোভী করার চেষ্টা। 

বিজ্ঞাপনও পুঁজির প্রকাশ। জানি। জানি, পুঁজির কাজ লোভের দিকে নিয়ে যাওয়া। লোভ লালসা থেকেই ধ্বংস। মনুষ্যত্বের ধ্বংস।মানবতাকে ক্ষয় করতে করতে নিয়ে যাচ্ছে খাদের ধারে।

ভোরের একটি শিশির বিন্দু এক প্রেমিক তার প্রেমিকার নাকে গুঁজে দিচ্ছে। তারপরেই ক্যামেরা চলে আসবে, একটি মেয়ের নাকের কাছে। একটা সোনার নাকছাবি। অথবা মুক্তোর নাকছাবি কিরণ ছড়াচ্ছে। প্রেমিকার নাক থেকে।

বিজ্ঞাপন হবে না?

প্রথমেই একটি পুকুর। মুহূর্তের জন্য। এবার ক্যামেরা দেখাচ্ছে পুকুরের ঘাট। এক খেটে খাওয়া মানুষ মাটি মাখছে। পরমুহূর্তেই একটি সাবান এসে ধরা পড়লো তার হাতে।

বিজ্ঞাপন হবে না?

সমাজ শুধু কি চলবে কেনাবেচার উপরেই? সমাজ কি দেখাবে না, কবিতা নাটক চিত্রকলা সিনেমার কোনো কোনো  দৃশ্য কল্প ? যা আমাদেরই জীবনের অংশ। যা বদলে দিতে পারে মনের দূষিত অন্ধকার।

রাতের অন্ধকার ঘুচে যায় যখন পানকৌড়ি ডুব দেয় জলে। যেন তাদের আহার খুঁজতে খুঁজতে জলের তলা থেকে ঠোঁটে করে নিয়ে আসছে একটা সূর্য।

সোনার লকেট। অথবা  সোনার পদক।    

বিজ্ঞাপন হবে না?

এক কড়াই দুধ ফুটছে। ফুটন্ত দুধ দেখাতে দেখাতে ক্যামেরা চলে এসেছে সুপুরুষ এক যুবকের কাছে।তার হাতের টিউব থেকে প্রকাশিত হচ্ছে, শেভিং ক্রিম। অন্য একটি বিজ্ঞাপনে দেখা যাচ্ছে, একটি মেয়ে দুধের ফেনা মাখতে মাখতে মাখছে ময়েশ্চারজার।

বিজ্ঞাপন হবে না?

এসব বিজ্ঞাপন, অর্থ যাদের হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞাপনের চাকচিক্য গরিবদের প্রভাবিত করে। প্রলোভন দেখায়। গরিবরা কাছে যেতে পারে না। অর্থের অভাবে। কেন না, যত বিজ্ঞাপন তত দাম। সমস্ত দ্রব্যের ক্ষেত্রেই একই কথা।

আমি অন্য একটি ব্যতিক্রমী বিজ্ঞাপনের কথা জানাই, একটি চলন্ত ট্রেনের কামরায় এক মহিলা  আরো এক যাত্রী তরুণ যুবকের ছবি আঁকছেন।  ছবিটি উপহারও দিচ্ছেন যুবকের হাতে। যুবক তো অবাক। তার পরনের জামা রঙিন। তিনি তো পরে আছেন ফ্যাকাসে এক জামা।

বিজ্ঞাপনটির বক্তব্য, জীবনের সব ক্ষণেই রঙিন থাকা যায়।

সত্যি সত্যি তো রঙিন থাকা যায়। 

হৃদয় থেকে হৃদয়ে। হৃদয় যে সৃষ্টি করে রঙ। রঙের বাহার। সরষে ক্ষেতের হলুদে  ডুব দিতেই পারে আমাদের পুত্র কন্যা।

গাঁদা ফুলের লাল হলুদেও স্নান করতে পারে আমাদের পুত্র কন্যা।

হতে পারে রং পেন্সিলের  একটি বিজ্ঞাপন।

আমাদের জীবনের নিসর্গ প্রকৃতির সঙ্গে  প্রকৃত একটি বিজ্ঞাপন।

ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা লাফাচ্ছে।

দুপুর--১--৪৩
৫ অঘ্রাণ ১৪২৯
২৩--১১--২০২২
নির্মল হালদার





আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ --২৪
--------------------------------------------------------

আমাদের ছোট নদী বাংলা কবিতায় একটি চরিত্র।কুমোর পাড়ায় গরুর গাড়ি তো আছেই। তার সঙ্গে আছে বংশী বদন। ভাগ্নে মদন।

এরা সবাই আত্মীয়। আমাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকে।

আজও এক পায়ে দাঁড়িয়ে তাল গাছটিও আছে। কী অসাধারণ চরিত্র তার। এখনো বছরে একবার আমাদের উপহার দিয়ে থাকে পাকা তাল।

তালের ভেতরে থাকে হৃদয়ের মতো তিনটে হৃদয়। কান পাতলেই শোনা যায় তার শব্দ।

হাট থেকেও শুনি কলরব।

বাংলা কবিতার বিশেষ এক চরিত্র " হাট "। সেই হাট ছাড়িয়ে নতুন কোনো হাট চোখে পড়লো না আজও।কাজলা দিদিকেও দেখতে পাই না। পোড়ো মন্দিরখানা ভেঙে পড়লো নাকি? তার ছায়া বাংলা কবিতার গায়ে আজও পড়লো না তো!

মঙ্গলবার আসে । সেই মঙ্গলবার আসে না। যখন আমরা পাড়ার জঙ্গল সাফ করার কথা ভেবেছি।

তিনটে শালিক ঝগড়াও করে না আজকাল। শালিক আমার সেই বন্ধু, নমস্কার করা যায়। জোড়া শালিক দেখলেই, একটা নমস্কার। আমার ছোটবেলায়।

গুনগুনানি নিয়ে মৌমাছিরা নেই। নাচতে নাচতে কোথায় যে চলে গেল! পালকির বেহারা?

ভুলে গেলে তো হবে না ।

নিজের সুখ দুঃখই কি বড় হয়ে উঠবে? ওই যে গাঁ-টি যাচ্ছে দেখা আইরি ক্ষেতের আড়ে। কাকেই বা দেখাবো?

আজও সকালবেলার পাখি একটি চরিত্র । আমাদের ডাকেও। বাংলা কবিতা থেকে ডাকে না, বেদনা এই।

অনুভূতিরা নিজের বৃত্তের বাইরে যাবে না? একই জায়গায় ঘুরপাক খেতে খেতে মানুষ ও প্রকৃতি অপাঙক্তেয় হয়ে গেল আজ। বাঁশ বাগানে চাঁদ উঠলেও আমরা লক্ষ্য করি না।

আজও কত কাছের মানুষ বাবুরাম সাপুড়ে। দামোদর শেঠ তিনিও আছেন। দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে পাড়া
এই চরিত্রটি পেলেও কড়া নাড়ার শব্দ থেমে গেছে।

যমুনার হাত ধরতে গেলেও হাত চাই। হাতটা কই? সেই যে এসেছে নীরা, আর কই? ওই প্রেম বাংলা কবিতার চারদিকে আজও ঘুরে ঘুরে বেড়ায়।

দীর্ঘশ্বাস না ফেলে আশা করতেই পারি, বৃষ্টির দিনে জন্মদিন আসবে। প্রেম ভালোবাসা স্নেহ মায়াও আসবে। মায়ের শৈশব আসবে।

গায়ে রাঙা জামা পরে রবি মামা হামা দিতে দিতে আমার ঘরেও খেলা করবে, খেলা করবে বাংলা কবিতার আঙিনায়।

রবি মামার মত জ্যান্ত চরিত্র কোথাও যে নেই। সুপর্ণার মত একটি মেয়েও নেই, যে বলতে পারে শীতকাল কবে আসবে।

সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি----এও তো সকলের প্রার্থনা। সেই প্রার্থনা বেজে ওঠে না আর
আজকের কবিদের কলমে।

কালি তো আছে কলমে। ফুরিয়ে গেলে ফুল থেকে ফসল থেকে রঙ ভরে ----খুকুমণিকে ওঠাতেই হবে।

ভোর হলো, দোর খোলো।

কে উঠবে? কারা উঠবে? 

আমলকী- বন কাঁপে, যেন তার 
বুক করে দুরু দুরু---

থেকে থেকে শেয়ালের হাঁক।

দাদার হাতে কলম আছে, ছুঁড়ে মারবে?

বাংলা কবিতায় রান্নাঘর এসেছে। এবার পাঁচফোড়ন চাই। তেজপাতার গন্ধটা এলেই তেজপাতা গাছও দেখতে পাবো।

চাল--ডালের জোগাড় করতে হবেই। অন্ন ছাড়া কবিতা বৃথা যাবে। অভাব থেকে ভাবে যাওয়া, আমাদেরই সংস্কৃতি। আমরা শুনবো সাঁওতাল পল্লী থেকে মাদলের শব্দ। মহুলের টুপটাপ।

জাহাজ এসেছে নৌকা এসেছে। মাঝি মাল্লার গান কই? যা হয়েছে আগেই হয়েছে পূর্ববঙ্গের জল হাওয়ায়। এই বঙ্গে নতুন করে পাবো না আর, মনে হয়।
মনে তো হবেই, ঝুমুর টুস ভাদু বাউল ভাওইয়া বাংলা কবিতায় কতটুকু প্রবেশ করেছে?

লুকিয়ে থাকা কান্না, প্রকাশ্য আর্তনাদ বাংলা কবিতা থেকে কতটুকু শুনি?

রবীন্দ্রনাথের নিংড়ানো কান্না গীতবিতানের পাতায় পাতায়। সে কান্না সকলের কান্না হলেও সবার কাছে পৌঁছোতে পারেনি। এ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের দোষ দেখি না, দেখতে পাই এদেশের অশিক্ষা অসচেতনতা।

একটা তর্ক তো আছেই, শিল্প জনসাধারণের কাছে নামবে নাকি শিল্পের কাছে যাবে জনসাধারণ?

তর্ক চলতেই থাকুক।

ধারাপাত আছে?

বর্ণপরিচয়? কিশলয়? সহজ পাঠ অনেক বন্ধুদের কাছে প্রিয় হলেও ভালোবাসা হলেও সহজ পাঠ -এর
মূল্য দিতে পারবে না আজকের সাহিত্য সমাজ।

সাহিত্য সমাজের কর্তা ব্যক্তিরা সভা সমিতিতে। কবিতা কই কবিতা কই?

কলম তো অনেক। কবিতা কই?

----দুপুর ১--৪৫
----৭ অঘ্রাণ ১৪২৯
----২৪---১১---২০২৩
----নির্মল হালদার





আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ---২৫
---------------------------------------------------------

চিরসখা, ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না।
সংসারগহনে নির্ভয় নির্ভর, নির্জনসজনে  সঙ্গে রহো।।
অধনের হও ধন, অনাথের নাথ হও হে, অবলের বল।
জরাভারাতুরে নবীন করো ওহে সুধাসাগর।।

(গীতবিতান--পূজা পর্ব--৪১৩)

রবীন্দ্রনাথের গান বা এই কবিতার প্রথম পঙক্তি আমার কাছে ঘুরঘুর করে। বাকি পংক্তি গুলি বাদ দেবো। যদি বাদ দিয়ে দিই, কবিতার বক্তব্য থেকে সরে যাওয়া হবে?

বাদ দিয়ে দিলে  একটা ফাঁকা জায়গা থেকে যাচ্ছে। পূরণ করার প্রয়োজন আছে? প্রথম পংক্তির পরের দুটি  অংশ বাদ দিলে কবিতাটি সম্পূর্ণতা পাবে?

গানটি যখন শুনি তখনও আমার এই অবস্থা হয়ে থাকে। আমি প্রথম পঙক্তির পরে এগিয়ে গেলেই হতাশ হয়ে যাই। আবার শুনতেও হবে---- জরাভারাতুরে নবীন করো ওহে সুধাসাগর।

চিরসখা নবীন। এবং নবীনের স্পর্শে ও সান্নিধ্যেই সুস্থতা ও সুন্দরতা জরাভারাতুরের।

শেষ পংক্তিটি বলার জন্যই প্রথম পঙক্তির সূচনা?

চিত্রকর কখনো কখনো তার ক্যানভাসের কাছে বিপদে পড়ে যান। কোনো একটি ছবি আঁকার পরে তার মনে হতেই পারে, কোথাও কোথাও ফাঁকা থাকছে। সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে চিত্রকর আরো নতুন কোনো ভাবনা রঙে রসে ভরিয়ে দেবার চেষ্টা করেন। তারপরও দেখা যায় ছবিটি উত্তীর্ণ হলো না।

চিত্রকর এখানে অসহায়।

আর কিছু করার নেই।

রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে এই কবিতার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয়েছিল কিনা জানা যাবে না কখনো। শুধু একটা কথাই বলতে পারি, এই কবিতা বা গানের মাঝের দুটি চরণ আমার কাছে দুর্বল মনে হয়েছে।

শুরুতেই বিরহী বাতাস এসে আমাকে স্তব্ধ করে দেয়। 

চিরসখা, ছেড়ো না মোরে ছেড়ো না।

-----দুপুর ১--৫১
----৮ অঘ্রাণ ১৪২৯
----২৫---১১---২০২২
----নির্মল হালদার




পড়ুন আগের পোস্ট 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ