আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ ---৪১
---------------------------------------------------------
হাত পাততেই ছোলা সেদ্ধ।
কোনো ভূমিকা করিনা। সোজাসুজি হাত পেতে দিই। তৎক্ষণাৎ বালতি থেকে এক মুঠো ছোলা আমার হাতে এসে যায়।
রোজ রোজ নয়। যেদিন দেখতে পাই বাজারে। সে অবশ্য বাজারে আসে প্রতিদিনই। তার থলিতে থাকে মুড়ি। বালতিতে থাকে ছোলা সেদ্ধ। ছোট্ট এক ঠোঙায় ছোলা সেদ্ধ আর মুড়ি মাত্র পাঁচ টাকা।
সবজি বিক্রি করতে আসা মহিলা পুরুষ প্রায় সবাই নিয়ে থাকে।
সে আমাকে অনেকবারই বলেছে তার নাম তার গ্রাম।আমি ভুলে যাই। আজ স্বপন চক্রবর্তীর সঙ্গে মোবাইলে কথা বলতে বলতে দেখলাম, সে আসছে। আমি কথা বলতে বলতেই, হাত পেতেছি। এবং আমার হাত পাতা নিয়ে স্বপনকে বললামও। তখনই মনে হলো, নামটাও জানিয়ে দেওয়া দরকার। আমি জিজ্ঞেস করতেই, তার মুখে এক চিলতে হাসি। সে জানালো, তার নাম, মানিক কুমার। বাড়ি----সটরা --মিশিরডি।
পুরুলিয়া শহর থেকে দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। মানিক ভোরের আঁধারে ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধুয়ে বাসে উঠে পড়ে। শহরেই তার খদ্দের। যেটুকু রোজগার হয় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।
আমাকে সে চেনে না। কোথায় থাকি কি করি কিছুই জানে না। জানে শুধু, আমি হাত পাতি।
শুধু কি মানিকের কাছে হাত পাতি? যে পেয়ারা বিক্রি করছে তার কাছে গিয়েও হাত পাতি। নিজের জন্য নয়, একটা পেয়ারা পালককে দিলে দেখতে পাবো খুশি।
এখুনি অনেকেই প্রশ্ন করবেন, নির্লজ্জের মত বেহায়ার মত আমি হাত পাতি কেন? আমি কোনো উত্তরই দিতে পারবো না। কেউ কেউ আমার আচরণে ক্ষুন্ন হয়ে আমাকে নিষেধ করবেন, হাত পাততে। আমি কিন্তু নিষেধ না শুনে, সিঁয়াকুল চাইবো আরেকজনের কাছে। হাত পাততে পাততেই ধুলোবালি পাবো। মাটি পাবো।
ভালোবাসা কি পাবো না?
যদি হাত পাতলে মুখ ঝামটা আসে? আসতেই পারে। আসেও। আমার হাত পাতাই থাকে।
আমার হাতে বৃষ্টিও পড়ে। শুধু কি আর বৃষ্টি, মেঘ বৃষ্টি একই সঙ্গে আমার হাতে পড়ে।
আকাশটা পড়লে আমার হাতে ধরতে পারবো বৈকি। যদি গাছপালার ছায়া পড়ে, মানুষের ছায়া পড়ে, নিজের মতো করে ধরবো। পুঁটলিতে বাঁধবো না।
বাঁধাবাঁধির স্বভাব করলে আরেক বিপদ। মানিক আমাকে যেটুকু ছোলা সেদ্ধ হাতে দেয় আমি সঙ্গে সঙ্গে মুখে নিয়ে থাকি। একেও যদি কেউ বাঁধাবাঁধি বলে বলতেই পারে। তবে মানিক কি বলবে আমি জানিনা। জানতেও চাই না, আমার হাত পাতা নিয়ে তার ভাবনা। আমি বরং বলতে চাই, একদিন তার বাড়ি যাবো। সবার সঙ্গে কথা বলতে বলতে দেখতে পাবো নিশ্চয়ই, মানিকদের ঘরে ও বাইরে ছোলা থেকে অঙ্কুর প্রকাশিত হয়ে আকাশের দিকে।
অঙ্কুর যেন বলছে-----এই নাও এই নাও আমার সম্পর্ক।
আমারও আকাঙ্ক্ষা।
----২৮ অঘ্রাণ ১৪২৯
----১৫---১২---২০২২
-----নির্মল হালদার
আমার কবিতা: কাঠবিড়ালির লাফ --৪২
-------------------------------------------------------
অভাব তো থাকেই।
কারো কারো সঙ্গে অভাব থাকে।
সকলের সঙ্গে থাকে না।
পুরুলিয়ার সবার সঙ্গেই জলের অভাব। বারো মাস।
মাঘের শেষ থেকে ফাগুনের আরম্ভেই জলের অভাব শুরু হয়ে যায়। শুকিয়ে ওঠে বাঁধ-কুয়া। একটাই তো নদী কাঁসাই, আশ্বিন কার্তিক থেকেই , জল নেই।
জল নেই।
কাঁসাইয়ের কাছাকাছি গ্রামে যাদের বসবাস, তারা চুঁয়া খুঁড়ে জল নিয়ে আসে। গ্রামে গ্রামে টিউকল থাকলেও সব জল পান করার পক্ষে উপযুক্ত নয়।হয়তো বা কোনো স্কুলের টিউকলের জল পানযোগ্য। হয়তো বা পাশের গ্রামের টিউকলের জলে ভাত সেদ্ধ হয় ডাল সেদ্ধ হয়, সেই জল মাথায় করে মেয়েরা নিয়ে আসে।
আসা-যাওয়ার পথ অনেকটাই।
রোদে পুড়ে ঘেমে নেয়ে জল নিয়ে আসে মেয়েরা।
কোথাও কোথাও অকেজো টিউকল। মেরামত করলেও জল ওঠে না।
জল তো চাই।
মানুষের প্রথম চাহিদা জল। সেই জল কোথায় কিভাবে পাবে, সরকারি তরফে তার কোনো চেষ্টা দেখতে পাই না।
স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরেও পুরুলিয়া জেলাতে জলের অভাব লেগেই আছে। সমাধান করতে দল নির্দল কেউ নেই।
একদিন সারা বিশ্বেই জলের সংকট দেখা যাবে। ধনী দেশগুলি সমুদ্রের জল শোধন করে পানযোগ্য করে তুলবে। তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি জলের অভাবে ধুঁকবে শুধু।
নানা জায়গায় নদীকেও বেঁধে ফেলা হচ্ছে। চাষবাসের কারণ দেখিয়ে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। ফলে,উচ্ছেদ হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। তার সঙ্গে ক্ষতি হচ্ছে নদীর বহমানতা।
অভাব তো দেখা দেবেই।
গ্রীষ্মকাল এলেই জলের সংকট। পুরুলিয়ার মানুষ চেঁচামেচি করে। কিন্তু সংকট যে গভীরে, খোঁজ করে না। কোনো শাসক দল চায়না অভাব মিটে যাক। অভাব থাকলেই অভাবের কথা ব'লে, অভাব থেকে মুক্তি দেবে ব'লে, ভোট আদায় করে শাসক ও বিরোধীদল।
তাই, পুরুলিয়া যেখানে ছিল সেখানেই থাকবে। এক কলসি জল নিয়ে ছেঁড়া -কামড়াও থাকবে এই জেলাতে।
সেদিন দেখছিলাম এই শীতেও এক মহিলা রাস্তার কলের কাছে করুণ মুখে দাঁড়িয়ে আছে। কখন এক কলসি এক বালতি জল পাবে তার অপেক্ষায়।
অসহায় লাগছিল নিজেকেই।
এই আমার কবিতা।
আজকের বাংলা কবিতা আঙ্গিক ও ছন্দের চর্চা করে। বিষয় নিয়ে চর্চা করে না। কোনো আলোচনাও নেই।
ব্যক্তিগত জীবন বাদ দিয়েও বিষয় তো সময় ও সমাজ এবং মানুষ যেদিকে আজকের কবিদের চোখ পড়ে না।
কবিদের অজস্র চোখ, অসহায়তা দেখার আরেকটা চোখ নেই শুধু।
------২৯ অঘ্রাণ ১৪২৯
-----১৬---১২---২০২২
------নির্মল হালদার
আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ --৪৩
---------------------------------------------------------
----এই নাকা --- নাকা, কিরে শুনতে পাচ্ছিস না? কাল কোথায় গেছলি?
------ঘরে কাজ ছিল। বউ গেছলো লক্ষীর ভান্ডারের টাকা তুলতে। ব্যাংকে গেছলো। আমাকে থাকতে হয়েছিল ঘরে।
----ভালোই লক্ষ্মীর ভান্ডার পেয়েছিস তোরা। আমরা কার ভাণ্ডারে যাব রে? আমাদের দিদিও নেই দাদাও নেই। অবশ্যই তুই আছিস। জুতাটা পালিশ করে দে ভাই।
-----জুতাটা তো ছিঁড়ে গেছে, ফেলে দাও।
-
---নারে ভাই না, ফেলা যাবে না। নতুন কেনার টাকা জোগাড় হলে, এই জুতোটা ফেলবো। এখন দে তো ভাই, একটুকু সাফ করে।
----১০ টাকা দিবে।
-----দিব রে দিব, বিনা পয়সায় করাবো না ভাই কোনো কাজ।
আমাদের সবজি বাজারের একদিকে নাকার জুতো সেলাই, পালিশ। পাড়ার সবাই তাকে পছন্দ করে। সবাইকে চেনে। সকলের ঘরও চেনে। কেউ তাকে গাদা জুতো দিয়ে গেলে, সে যা করার করে, ঘরে পৌঁছে দেয়। আমি অনেক সময় তাকে পয়সা দিতে না পারলেও পরে দিয়ে দি। নাকা বেপাড়ার বাসিন্দা হলেও আমাদের পাড়ার একজন সদস্য।
কখনো কোনোদিন নাকা আবদার করে চা খেতে চাইলে, আমি দোকানে গিয়ে চায়ের দাম মিটিয়ে দিই।
সম্পর্কের দাম তো মেটানো যায় না। যাবেও না। তার সঙ্গে সবারই সুসম্পর্ক। যা সম্ভব হয়েছে তারই জন্য। সে সবার সঙ্গেই হাসিমুখে কথা বলে।
আমি তো অনেক সময় পাড়ার কোনো বিষয় তার কাছেই জানতে পারি। আমি জানি, আমি না জানলেও নাকা জানবেই।
তার সঙ্গে আমার কোনো কথা হয় না, তার কাছে দাঁড়াইও না প্রয়োজন বাদে। তবে সামান্য বেলার দিকে ঘরের বাইরে গেলেই, ওর বসার জায়গার দিকে একবার লক্ষ্য করি।
একটা সময় দেখেছি, নাকা লটারির টিকিট বিক্রি করছে ঘুরে ঘুরে। আমি কোনোদিনই ভাগ্য ফেরাতে তার কাছ থেকে টিকিট নিইনি। তার জায়গাতে পড়ে থাকতো তার জুতো সেলাই ও পালিশের সরঞ্জাম।
কোনো না কোনোভাবে নাকার সঙ্গে পাড়ার সবারই সম্পর্কের বুনন হয়েছে। বুননের কারিগর আমার মনে হয়, প্রকৃতি দেবী।
অদৃশ্য।
আমার কাজকর্ম করে এসে দেখি, আমার জুতো পড়ে আছে। সে জুতো সেলাই করতে করতে আমার দিকে চেয়ে বলে----আরেকবার ঘুরে এসো। তারিনীদা অফিস যাবে, তাই তাড়াতাড়ি করছি।
আমি কিঞ্চিৎ বিরক্তির সঙ্গে তাকে বললাম, কি যে করিস তুই। আমার বেলাতেই দেরি!
জুতো মেরামত করতে দিয়ে গেলে, পালিশ করতে দিয়ে গেলে, অন্য এক জুতো জোড়া পরে যাও তুমি।
জুতো জোড়া নাকার কাছেই থাকে।
নাকাকে একবার বলছিলাম, আমাকে জুতা মেরামতির কাজ শিখিয়ে দিস ভাই। আমারও দু পয়সা হবে। নাকা হাসতে হাসতে বলেছিল, ধুর্ ই সব কাজ তুমি পারবে নাই। তুমি যে কাজটা করো সেটা কি আমি পারি?
মনে মনে বললাম, আমার আবার কি কাজ! সারাদিন তো চেয়ে থাকা। আকাশের দিকে চেয়ে দেখতে পাই, রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও লাগছে ছেঁড়া ছেঁড়া।
রাস্তার দিকে চেয়ে দেখতে পাই, খাল ডোব। উঁচু-নিচু ।
নাকা ও নাকা ---------তুই ভাই যে সমস্ত জায়গা ছিঁড়ে গেছে, রঙ চটে গেছে, সেলাই করে দে। পালিশ করে দে।
আমার মনে হয়, তুই একমাত্র পারবি অবশ্যই পারবি, রাস্তার খালডোব মেরামত করতে।
অব্যক্ত থেকে যায় আমার বেদনা।
ছেঁড়া জুতোতে পেরেক ঠুকছে নাকা। মেরামতির কাজে সে হাত লাগাবে না? নাকা ও নাকা-----নিজের সঙ্গেই বকবক করছি খুব, আমার মাথায় তুই আবার পেরেক ঠুকে দিস না।
-----১ পৌষ ১৪২৯
----১৭---১২---২০২২
----নির্মল হালদার
আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ ---৪৪
---------------------------------------------------------
ডুমুরশোলের পাশেই সুঁদরাডি। ওই যে কাঁসাইয়ে নতুন ব্রিজ হয়েছে, সবাই চেনে কিনা কে জানে। ওই ব্রিজ পার হলেই ডুমুরশোল। গায়ে গা লাগিয়ে আছে সুঁদরাডি। এই গাঁয়েই বসবাস শক্তিপদর।
তার জমিতে এখন ফুলকপি বাঁধাকপি। লঙ্কা। বিলাতি। শীতের এই সবজি নিয়ে শক্তি বাজারে আসে। আলুও লাগিয়েছে। তবে বিক্রি করবে না। ঘরের জন্যই থাকবে।
কার্তিক মাসের লাগানো ফসল এই পৌষ মাসে বড় হয়েছে। খদ্দেরের সামনে দাঁড়াবার মত চেহারা হয়েছে।
ফসলের চেহারা তৈরি করতে অনেক সার লাগে। আজকাল যা সারের দাম, চাষবাসে পয়সা নাই। ফসলের দাম বাজারে মেলে না। নিজের মজুরিটা যদি ছেড়েও দিই, তবুও বলবো, লাভ নাই লাভ নাই। শক্তি যখন এ সমস্ত কথা আমাকে বলছিল, দেখছিলাম এক একটা বাক্য শেষ হলেই, দীর্ঘশ্বাস পড়ছে।
দীর্ঘশ্বাসের বাতাস আমাকে ধাক্কা মারলেও আমার কবিতা নিয়ে আমি একই জায়গায় থেকে যাব।
আমারও মজুরি নেই।
ফসল কি ফলাই? কবিতা যদি ফসল হয়ে থাকে কার উপকারে লাগে?
আমিও কি কারোর উপকারে লাগি?
শক্তিকেই কি মনে রাখি সারা বছর? এই যে এখন দেখা হচ্ছে ব'লে, কাছে দাঁড়াই। দুটো কথা বলতে। শক্তির নিঃশ্বাস শুনি। মনে হয়, তার ফলানো ফুলকপি বাঁধাকপি থেকে নিঃশ্বাস উঠছে। কাঁচা লঙ্কার গন্ধও আমাকে করে তুলছে আপন।
আমি শক্তিকে আপন করতে পারি বা না পারি, শক্তির ফসল আমাকে আপন ক'রে আত্মীয়তার কথা বলে।
আমার সঙ্গে আত্মীয়তার যোগ হলেও আমি কোনো লাভ দিতে পারি না শক্তিকে। সে ফসলের পিছনে যা খরচ করে, সবটুকু ওঠেনা। ফাগুনের প্রথমদিকেই শেষ হয়ে যাবে ফসল। তখন শক্তিকে কাঠের কাজ করতে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে হবে।
জমির মাঝখানে একটা ডোবা। ৫/৬ টি ঘর ডোবার জল থেকেই চাষ বাস করে। ডোবা ও শুকিয়ে যাবে ফাগুনের শুরুতেই ।
মুখ শুকিয়ে যায় শক্তির । শক্তির মতো অসংখ্য ছোট ছোট চাষি প্রায় সারা বছর দিনমজুরের কাজ ক'রে পেট চালায়।
পেট যে বড় শত্রু।
শক্তির একটি ছেলে একটি মেয়ে। ছেলে ক্লাস সেভেনে পড়ে। ছেলে টিউশনির কথা বললেই, শক্তি ভয় পায়।
শীতের সময়টা প্রাইভেট শিক্ষককে বেতন দিতে পারলেও বাকি সময়ে কে দেবে? সঙ্গে আছে আরো চিন্তা, কপিতে পোকা লাগলে সব গেল। সব গেল।
পোকা তো আর পরিশ্রম বোঝেনা। সে তো আসবেই আহার খুঁজতে। এবং আহার করবেও। সে তো দারিদ্র বোঝে না।
কবিও কি বোঝে?
কবিরা তো মধ্যবিত্ত। নিম্নবিত্ত। চাষিরা তো সমস্ত শ্রেণীর ঊর্ধ্বে। এ কারণেই, এদেশে চাষিরাও আত্মহত্যা করে।
আজ শক্তির বিক্রি করতে নিয়ে আসা লঙ্কা থেকে একটি লাল লঙ্কা হাতে তুলে মনে মনে করছিলাম, এই লাল লঙ্কা দেশলাই কাঠির আগুন হলে, শক্তিকে বলতাম-----
সদর দুয়ারে আগুন লাগাও।
সমস্ত দলিল দস্তাবেজ, হিসেব-নিকেশ, আমাদের কবিতা পুড়ে যাক। পুড়তে পুড়তে পুড়িয়ে ফেলুক রাজা ও রাজ্যপাট।
শক্তিদের বুক থেকে তারার আলো ফুটতে ফুটতে শালুক ফোটাবে।
------৩ পৌষ ১৪২৯
-----১৯---১২---২০২২
-----নির্মল হালদার
আমার কবিতা---কাঠবিড়ালির লাফ---৪৫
----------------------------------------------------------
( উৎসর্গ : স্বপন চক্রবর্তী )
আলু ক্ষেত। সরষে ক্ষেত। পাশাপাশি মুলো। ফুলকপি বাঁধাকপি।
কাঁসাইয়ের পাড়।
থেকে থেকে পৌষ মাসের মৃদু হাওয়া। শীতের শিরশিরানি। মধ্য গগনে সূর্যদেব। তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চরাচরে।
কাঁসাইয়ের জলে কুচো কুচো মাছের খেলা। জলে জলে মাছের নিঃশ্বাস বয়ে যাচ্ছে। বয়ে যাচ্ছে সাবানের ফেনা। গা ধোওয়া জল। এবং গায়ের তাপ।
শীতের জড়তাও চলে যাচ্ছে। স্নান করছে নারী পুরুষ।শিশুরাও।
নদীর ওপারে ঝরে ঝরে যায় শীতের পাতা। পলাশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে চেয়ে আছে। কিছুদিন পরেই তাদের বসন্ত দিন।
কাকতাড়ুয়া একদম একা। তার কাছে যেতেও পারলাম না। কথা বললে, সে নিশ্চয়ই কথার উত্তাপ থেকে একাকীত্ব কাটিয়ে উঠতো।
আমি তো গেলাম না।
সারি সারি ফসলের ক্ষেত। সারি সারি কল্যাণ। এই কল্যাণ তো ছড়িয়ে পড়ছে গ্রাম থেকে শহর।
জনপদ থেকে জনপদ।
অশ্বত্থ গাছের নিচে ছেঁড়া ছেঁড়া ছায়া। আমি অবিন ও বাপি রোদ ও ছায়া গায়ে জড়িয়ে কখনো জলের দিকে, কখনো রাস্তার দিকে চেয়ে চেয়ে দু একটা কথার দিকে চলে যাচ্ছি।
কোথায় বা যাব?
আজ অযোধ্যা ফেরত অপূর্ব সাহা তার বন্ধুদের নিয়ে আমার কাছে এসেছিল। তার সঙ্গে অনেক অনেক দিন পরে দেখা। আবেগী হয়ে উঠেছিলাম। চোখ ভিজে গেছলো। আমার কাব্য জীবনে তার ভূমিকাও তো কম নয়। আমার বন্ধুরাই আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছে।
এই শীতে শ্যাম ভাইয়ার কাছ থেকে উপহার পেলাম একটা লেপ। সারা বছরই তার কাছ থেকে সহযোগিতা পেয়ে থাকি।
সহযোগিতা ও সাহচর্য থেকেই আমার চলাচলের রাস্তা। হেঁটে যাই। হেঁটে যেতে হবে।
ওই তো একটা পাখি , কাবাডি কাবাডি কাবাডি করে ডাকছে। কোথায় খেলবো কাবাডি? আকাশে?মাটিতে?
এই দুপুরে খেলা যায়?
কাবাডি কাবাডি কাবাডি শুনতে পাই উপর থেকে।চেয়ে দেখি, কেউ কোথাও নেই। শুধু কাবাডি কাবাডি কাবাডি-------
আমার চেতনায় স্পন্দন জাগিয়ে যায়।
------১৩ পৌষ ১৪২৯
-----২৯---১২---২০২২
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন