রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৩

আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ





আমার কবিতা----কাঠবিড়ালির লাফ----৪৬
------------------------------------------------------------

গোলবেড়া কোন্ দিকে?
পুরুলিয়া এক নম্বর ব্লক নাকি দু'নম্বর ব্লক? বাস রাস্তা আছে?

কী আছে না আছে কিছুই জানিনা! জানি শুধু, নিশ্চিতভাবেই জানি, অনেক ঘরেই সজনে গাছ আছে। দেখতেও পাচ্ছি, শীতের হাওয়ায় ঝরে যাচ্ছে সজনে ফুল।

সজনে ফুল কারোর পূজায় লাগে না। এই কারণেই, অভিমান থেকে সজনে ফুল ঝরে ঝরে মাটির কাছে নিবেদিত হয়।

মাটি প্রথম দেবী। মাটি ধরিত্রী।

অনেক অনেক গ্রাম। অনেক অনেক মানুষ। যে যার মত বেঁচে থাকার চেষ্টা। করে। নিজস্ব ঘরানায়।

অনেকের জমিতেই পড়ে আছে কাটা ধান। দেখতে পাই, ধানের নতুন মুখ। খড়ের চিকন রূপ।

পায়রা এসে খুঁটে খুঁটে চলে যাচ্ছে। হাওয়া এসে গন্ধ নিয়ে চলে যাচ্ছে। মাথার উপরে ঘুরছে বক। কোনো বুড়ি যাচ্ছে ঘরের দিকে। মাথায় কাঠ-কুটোর বোঝা।

এই বোঝা আমারও মাথায়।

এখান থেকেই তো কবিতার শুরু।

বুড়ির মাথা থেকে বোঝার ভার আমার মাথায় নিয়ে আমিও তো চলেছি। কোথায় থামবো, আমার জানা নেই। কোথায় তৃষ্ণা মিটবে, আমার জানা নেই।

হেঁটে যেতেই হবে।


কাঠবিড়ালির এক একটি লাফ এক একটি শব্দ।নিঃশব্দ। আমাকে তুলে নিয়ে বসাতে হবে আমার জমিতে।

জমি যদি না থাকে?

বুকের অন্দরে সঞ্চয় করে রেখে যাওয়াই আমার প্রধান কাজ। আমার বুকের অন্দরই প্রকৃতির অন্তর।

আমি নিজেই তো শীত গ্রীষ্ম বসন্ত। বর্ষা হেমন্ত শরৎ আমি নিজেই। রঙে রসে, ফুলেফলে পাতায় পাতায় কাব্যের সুষমা।

এইতো আজকেই দোলবেড়ার মাসির সঙ্গে এক বছর পর দেখা হলো। বাজারে। আমাকে দেখে, মাসির এক মুখ হাসি।

আমি জানতে চাইলাম---কিগো মাসি, এতদিন যে আসো নাই? কী হয়েছিল তোমার? উত্তরে মাসি আমাকে বললো----আমার ঘরে তো সবজি নাই। বেটারা চাষও করে নাই। চাষমোড় থেকে সবজি কিনে বাজারে বিক্রি করি। একথা বলতে বলতেই, মাসি আমার ব্যাগে দু তিন আঁটি সজনে ফুল ঢুকিয়ে দিয়েছে ।

সকালবেলা।

সকাল বেলার শুভ্রতা। উপহার না বলে বলতে চাই, সৌন্দর্য। আরো বলতে পারি, সজনে ফুলের মত শব্দ। নীরবতাও বলতে পারি।

আমার কবিতা হয়ে ওঠে।

গোলবেড়ার মাসির হাত ধরে যে কবিতা এসেছে সকাল বেলা। আমারই কাছে।

সজনে ফুলের মত পবিত্র ও সুন্দর।

-----১৪ পৌষ ১৪২৯
-----৩০---১২---২০২২
-----নির্মল হালদার






আমার কবিতা---কাঠবিড়ালির লাফ---৪৭
---------------------------------------------------------

তুই নেই।
আছে নিত্য দিনের বাজার।
আছে বেচাকেনা। ধুলো ময়লা কালি।
আছে কোলাহল।

তুই নেই।
জবা ফুলের রেণু উড়ছে।

আমারই রক্ত কণা উড়ছে।

তুই নেই।
আকাশ আকাশেই আছে।
মানুষও আছে মানুষের জায়গায়।
সততা অসততা নিয়ে।
প্রেমে ও অপ্রেমে।

নিত্যদিনের বাজারে আমাকে যেতেই হয়, যত না দরকার থাকে, তার চেয়ে বেশি মনের টানে যাই।

নেশার টান।

অনেকের সঙ্গে দেখা হবে।

আজ কি কথা বলছে আলু বেগুন পটল মুলো, কি কথা বলছে উচ্ছে থেকে মটরশুঁটি শোনার আগ্রহ থেকে আমি যাই।

যেমন, রাতের এক একটি নক্ষত্রের সঙ্গে এক একটি কীটপতঙ্গের কথা হয়। সেইসব কীটপতঙ্গ দিনের বেলা অপেক্ষা করে, কখন কোন্ তারা ফুটে উঠবে।

আমার কাছে সেরকমই প্রতিদিনের শাকসবজি।ফুলকপির সঙ্গে এক রকম কথা বললে, বাঁধাকপির সঙ্গে আরেকরকম কথা। ধনে শাকের সঙ্গেও আমি কথা বলি, সবুজ স্বরে। কচি গলায়।

ওই মাহাত বুড়ির সঙ্গে কথা হয় না আমার। তাকে দেখি না যে এমনটা নয়। কিন্তু কথা হয়না। মুদি বুড়ির সঙ্গে দু একটা কথা বলি। তার কাছে টমেটো বা পালং শাক না কিনলেও দু একটা কথা বলে, আনন্দ পাই।

শুধু মাহাত বুড়ির সঙ্গেই কথা হয়না। তো এই মাহাত বুড়ি আজ হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে বললো---- আমার কাছ থেকে কিছু না কিনো বাবু, মু-য়ে যে রা কাড়ো নাই-----।

সঙ্গে সঙ্গে আমি থমকে গেছি। সঙ্গে সঙ্গে সমস্ত কোলাহল স্তব্ধ হয়ে গেছে। যেন বা একইসঙ্গে আকাশ ও মাটি আমাকে বলছে--মু--য়ে যে রা কাড়ো নাই।

আমার মনে হলো, এ অভিমান যেন চরাচরের। মনে হলো, এ অভিমান যেন একটি কবিতা।

দিক থেকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে এই অভিমান---- মু-য়ে যে রা কাড়ো নাই----।

এ অভিমান আমি রাখবো কোথায়?

-----১৬ পৌষ ১৪২৯
----২--১--২০২৩
-----নির্মল হালদার






আমার কবিতা----কাঠবিড়ালির লাফ---৪৮
-----------------------------------------------------------

৮৪--তে মাধ্যমিক পাশ করেই এক ঝাঁক তরুণ আমার কাছে। নাকি তাদের কাছে আমি?

আমার তখন ডামাডোল অবস্থা। একদম একা হয়ে গেছি। সৈকত চলে গেছে পুরুলিয়া ছেড়ে কলকাতা। হতাশা থেকে হতাশায় আমি। অবসাদেও ভুগছি। তখনই উজ্জ্বল রায়। পুরুলিয়া জিলা স্কুল। মাধ্যমিক পাশ করে গেছে। সন্দেশে গলি দিয়ে স্কুলে তার যাওয়া আসা। ক্লাস ইলেভেন। সায়েন্স। আমি তখন দুপুরের পর পরেশের সবজি দোকানে সময় কাটাই। উজ্জ্বলকে দেখতাম। একদিন তার রাস্তা আটকে আলাপ। সেই আলাপ থেকে আলাপ তার আরো অন্যান্য সহপাঠীদের সঙ্গে। প্রথমেই আলাপ হয়েছিল রামাশিসের সঙ্গে। অমিতাভের দিওয়ার দেখতে গিয়ে। আমার সঙ্গে আলাপ হতেই রামাশিস উজ্জ্বলকে বলেছিল----এই লোকটার সঙ্গে তোর আলাপ হলো কি করে? লোকটা তো ফুটবল মাঠে মারপিট করে।

মারপিট এখনো করি। হাতে নয়। মুখে। কবিতার মাধ্যমেও আক্রমণ করে থাকি কুৎসিত ব্যবস্থাকে। কদর্য প্রশাসনকে। বন্ধুদেরও গালাগাল করে থাকি। গালাগাল না করলে আমার রক্ত শান্ত হয়ে ওঠে না।কেন না, আমি একই সঙ্গে সাপের মুখে চুমু ব্যাঙের মুখে চুমু খেতে পারি না। তার ফলে, অনেকের কাছেই আমি শত্রু হয়ে গেছি। উজ্জ্বল রামাশিস ও ময়ূখের কাছে আমি অবশ্যই বন্ধু। আজও আমি বন্ধু। আরো বন্ধু হয়ে গেলাম সাধন সন্দীপ স্বরূপের কাছে। ওরাও তখন মাধ্যমিক পাশ করে ক্লাস ইলেভেন। আর্টস। ভিক্টোরিয়া স্কুল।

একসঙ্গে এক ঝাঁক তরুন।

বিকেল হলেই বটতলা। এবং বটতলা হয়ে গেল ছাতিমতলা।

আমার তখন ঘর নেই। শুধু বাহির। বাহির আর বাহির।সকাল দিকেও কারো কারো সঙ্গে ছাতিম তলায়।

আমাদের সঙ্গে একই সারিতে মুটে মজুর। তারা এখান থেকে নানা জায়গায় কাজে চলে যেতো। একইসঙ্গে চা বিড়ি। রামাশিস অবশ্যই চারমিনার। আর চায়ের পর চা। বাবলুর চা। ছাতিমতলা সংলগ্ন তার চায়ের গুমটি।

রঙ্গ রসিকতা। কথার পরে কথা। কবিতা। গান। কুইজ। প্রায় সবারই কোনো না কোনো দিন জন্মদিন উদযাপন। ছাতিমতলাতেই।

সেই ছাতিমতলার ছেলেরা কে কোথায় আছে আমার সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই । শুধু উজ্জ্বল। রামাশিসের সঙ্গে কখনো সখনো দেখা হয়। চা হয়। সে এখনো প্রাণবন্ত। দুবাইয়ে থাকে ময়ূখ। চাকরির সুবাদে এ দেশ ও দেশ ঘুরে বেড়ায়। তার সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে কথা হয়। সে ছোট ছোট গল্প ও গদ্য পাঠিয়ে থাকে আমাকে।

সাধন কোথায় থাকে?

সাধন সন্দীপের পরে আলাপ হয়েছিল মিন্টু ও রূপকুমারের সঙ্গে। মিন্টুর মতো স্মার্ট ছেলে আমি কম দেখেছি। কথাবার্তায় আচরণে সে ছিল সব সময় এগিয়ে। রূপকুমার আবার শান্ত স্বভাবের। মৃদু ভাষী।

আমি আবার খুব কথা বলি। কম কথাও বলি। এখানে বলতে চাই অন্য এক কথা---------রবীন্দ্রনাথের গান শুনতে ভালবাসি। কিন্তু শুনবো কোথায় কার কাছে?

ময়ুখের বাড়িতে দেখেছি, সে অঙ্ক করতে করতে টেপ রেকর্ডার থেকে গান শোনে। তাকে কোনোদিন আমার জড়তা থেকে বলতে পারিনি গান শোনাও। শুনেছিলাম, সাধনদের বাড়িতে টেপ রেকর্ডার আছে।একদিন তাকেই বললাম, তোমাদের বাড়ি যাবো। গান শোনাতে হবে। তারপর প্রায় দিন বিকেলে সাধন আমাকে তাদের বাড়ি নিয়ে যেত। তারপর যন্ত্রে বেজে চলতো গান। আমার পছন্দের রবীন্দ্র সংগীত।

আজও বেজে চলেছে ------
আজি বিজন ঘরে নিশীথ রাতে
আসবে যদি শূন্য হাতে-----

------১৮ পৌষ ১৪২৯
-----৩--১--২০২৩
----নির্মল হালদার





আমার কবিতা----কাঠবিড়ালির লাফ---৪৯
-----------------------------------------------------------
( উৎসর্গ : দুর্গা দত্ত ও রামানুজ মুখোপাধ্যায় )

নানা রূপে ঔদ্ধত্যের প্রকাশ।

কথাবার্তা থেকে আরম্ভ করে আচরণেও ঔদ্ধত্য। ঔদ্ধত্যকে অশ্লীলতাও বলতে পারি। সামাজিক ঔদ্ধত্য ব্যক্তি মানুষের ঔদ্ধত্য কখনো কখনো মৌলবাদের দিকে চলে যায়। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে। সন্ত্রাস ছড়ায়।

আমাদের দেশে ব্রাহ্মণ্য বাদও ধারাবাহিক সন্ত্রাস। কত রকম নিয়ম-কানুন। বিধি নিষেধ। নিয়মের আবার ছাড়ও আছে, মূল্য ধরে দিতে হয়। আসলে, শোষণ। সন্ত্রাস এবং শোষণ। যা সমগ্র ভারতবাসীকে ধ্বংস করার পক্ষে যথেষ্ট।

এখনো দেখা যায়, কারোর বাড়িতে কোনো ফলন হলে প্রথম ফলনটি মন্দিরে দিয়ে আসতে হয়। অথবা ব্রাহ্মণের ঘরে। বিশেষ করে গ্ৰামাঞ্চলে।

বাড়িতে কুল গুরু এলে তাকে পা ধোওয়াতে হবে। নিয়ম হয়ে আসছে যুগের পর যুগ। সেই পা ধোওয়া জল মুখে নিতেও হবে।

সভ্যতা কি এই?

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি আজ কোন্ দিকে চলেছে?

প্রণাম করার রীতিও ব্রাহ্মণ্যবাদের আরেকটি রূপ। পায়ের তলায় থাকতে হবে। বরাবর। রাজাও প্রনাম করবে ব্রাহ্মণকে।

মানুষটির প্রতি আমার ভক্তি নেই শ্রদ্ধা নেই, আমি চিনিনা জানিনা, প্রণাম করতে হবে। এই অলিখিত নিয়ম যুগের পর যুগ মানুষকে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। অন্য কোনো দেশে প্রণাম করার রীতি নেই। সম্ভাষণ আছে নমস্কারে। করমর্দনে। আলিঙ্গনেও। কপালে চুম্বন এঁকেও স্বাগতম জানানো হয়। ভালোবাসা জানানো হয়।

প্রকৃতি থেকে বিযুক্ত ক'রে মানুষকে শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করার একটা প্রয়াস, ব্রাহ্মণ্য বাদ।

উপবীত একটি চাবুক। ভয় দেখানোর চাবুক। অদৃশ্য উপবীত ভয়ঙ্কর চাবুক। একথা তো কোনো না ভাবে রবীন্দ্রনাথও বলে গেছেন।

-----১৯ পৌষ ১৪২৯
-----৪---১---২০২৩
------নির্মল হালদার





আমার কবিতা--কাঠবিড়ালির লাফ--৫০
--------------------------------------------------------

কাকা কাকা
কাকা কাকা
কাকা কাকা

সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে একটা ডাক---- কাকা কাকা-----

সেই ২০০৯ --এ শুরু হয়েছে, আজও সেই ডাক---- কাকা কাকা----

আলো নেই অন্ধকার নেই শুধু একটা ডাক। একটানা।

সাড়া দিতেও পারি না। কে যেন আমার গলা টিপে ধরেছে। আমি গোঙাচ্ছি। আমি ছটফট করতে করতে ঘেমে উঠছি খুব।

সাড়া দিতে পাচ্ছিনা।

সময় নেই অসময় নেই শুধু একটা ডাক সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছে----- কাকা কাকা----

সিঁড়ির কি শেষ নেই? কোত্থেকে শুরু হয়েছে সিঁড়ি?ডাকটা ঘরের কাছে এসে দরজার কাছে এসে একবারও দাঁড়ায় না। কেবল সিঁড়ি দিয়ে উঠছে ডাক--- কাকা কাকা---

আমি পৌষের সিম ফুলের রঙে বসতে পাচ্ছিনা। পেঁয়াজের জমি কাছে এসেও সরে সরে যায়।

গাঁদা ফুলের গাছগুলি অন্ধকার লাগছে কেন? নদী পাড়ে বালি না মরীচিকা? ঝর ঝর করে ঝরে পড়ছে নিম ফল। অথচ এই শীতে একটিও নিম ফল নেই।আমলকির ডালে ডালে হাওয়া নেই। আছে শুধু একটা ডাক---- কাকা কাকা...

কেন এই ডাক? আমার কাছে কি কোনো প্রাপ্তি আছে? দেবার মত আমার কাছে কিইবা আছে আর?

ডাকটা যে যৌবনের কণ্ঠস্বর থেকে আসছে, আমি স্পষ্ট এ বিষয়ে। কাকেই বা প্রশ্ন করবো, এই ডাক কি আমার সন্তানের?

আমি জানি, আমার কোনো সন্তান-সন্ততি নেই। আমি জানি, আমার কোনো উত্তরাধিকার নেই।

তারপরও একটা ডাক---কাকা কাকা-----। অন্ধকার সিঁড়ি ভেঙ্গে, একটানা।

আমি সাড়া দিতে না পেরে গোঙাচ্ছি , দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার। হঠাৎ মনে হলো, একটা টেবিলের ওপারে আমার চেনা একজন। আমার আত্মীয় একজন। তার মুখ স্পষ্ট নয় একেবারেই। আমাকে বলছেও না কিছু। আমি তাকে ছুঁতেও পাচ্ছিনা। মনে হলো, অন্ধকার আমাকে গ্রাস করছে। আবার সেই ডাক-----কাকা কাকা----

এইখানে আমার কবিতা শুরু।

সমাপ্তি নেই।

-----২০ পৌষ ১৪২৯
----৫--১---২০২৩
----নির্মল হালদার







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ