আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ--৩১
-------------------------------------------------------
তেঁতুল তলে তাস পিটছে একদল যুবক। সঙ্গে গান বাজছে মোবাইল থেকে। গাছের মাথায় উড়ে এসে বসলো একটা বক। এই গাছেই বকের বাসা। তেঁতুল তলে পড়েও থাকে মাছের কঙ্কাল।
ঝিরিঝিরি হাওয়া।
একটা কাক ডাকতে ডাকতে কোথায় যে গেল! তেঁতুল গাছ থেকে ঝরে পড়লো শুকনো পাতা।
ছেলা গুলার কোনো কামকাজ নাই। দিনভর তাস খেলা জুয়া খেলা------এক সাইকেল আরোহী প্রায় বৃদ্ধ, গজর গজর করে চলে গেল। একটা কুকুর এসে তেঁতুল গাছের ছায়াতে। বসে পড়লো জড়োসড়ো হয়ে।
শব্দ তুলে চলে গেল ধান বোঝাই একটা ট্রাক্টর। তার পিছনে পিছনে এক মহিলার মাথায় এক বোঝা ধান।
ঝরেও পড়ছে ধান।
খুঁটে খেতে উড়ে এলোনা একটিও পাখি। শুকনো পাতা এদিক ওদিক উড়ে বেড়ায়। আকাশ ঘোলাটে। রোদের তেজ নেই।
রাস্তার দু দিকটাই ঢালু। বাঁদিকে একটা ডোবা। তার পিছনে ভেড়া আর ছাগল চরে বেড়ায়। বাবলা গাছের নিচে লিকলিকে বাঁশ হাতে এক বুড়ি। ধূসর।
চরাচর জুড়ে ধূসরতা।
দীপক হেঁটে আসছে। গায়ে সস্তার গেঞ্জি। বারমুডা।হাতে পায়ে খড়ি উঠছে। এই অঘ্রাণ শীতেও গায়ে তেল পড়ে না।
দীপক রঙের কাজ থেকে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে লেবারের কাজ । যখন যা পায়। তবে সে রঙের কাজ করতেই পছন্দ করে।
মাধ্যমিক পাশ করে এগারো ক্লাসে ভর্তি হয়েছিল। দুম করে ছেড়ে দিলো ছ সাত মাস বাদে। বন্ধুরা জানতে চাইলে জানায়---- তার বাবা বলেছে, ঢের হয়েছে লেখাপড়া---ইবার কাজে বেরাতে হবে। এক পয়সা না এলে এক ফোঁটা নুনও আসবেক নাই।
মাঈয়ের কথা আর কাকে বলবে? মাঈ শুধু বলবে---শাগ সিজা আর চাল সিজাতেই হামার দিন বিতায় গেল।তরাও চাল সিজা খাঁয়েই জীবন ঘুচাবি?
কথাটা দীপকের মনে আঘাত লেগেছে। সেতো মাঝেমধ্যে মাছ ধরে আনে। শরাবন--ভাদরের জল জমে থাকা ধান ক্ষেত থেকে " ঘুগি " পেতেও মাছ ধরেছে। ঘরে তেল না থাকলে, "মাছ পুড়া"।
সেই মাছের সন্ধানেই ঘর থেকে বাইরে এসেছে দীপক। হাতে বঁড়শি।
গাঁয়ে লোকজন নেই। ধান কাটার কাজে সবাই ব্যস্ত। সেও গেছলো ওই বেলা। তাদের যৎ সামান্য ধান হয়।তিন চার দিন কাটতেই ফুরায়। আজ ছিল শেষ দিন।এক বেলাতেই হয়ে গেছে। দীপক ও তার বউ গেছলো ধান কাটতে।
দু পহরা খেয়ে এই এখন লায়েক বাঁধে বঁড়শি ফেলেছে দীপক।
বাঁধের মাঝে দু তিনটে বাঁশ হেলে দাঁড়িয়ে আছে। বকও দাঁড়িয়ে আছে বাঁশগুলোর মাঝে। জলের দিকে তার সজাগ দৃষ্টি। কখন মাছ উঠবে।
দীপকও চেয়ে আছে জলের দিকে! কখন মাছ উঠবে!শব্দ উঠবে!
প্রাণ উঠবে!
কবিতা।
---১৪ অঘ্রাণ ১৪২৯
----১---১২---২০২২
----নির্মল হালদার
আমার কবিতা: কাঠবিড়ালির লাফ --৩২
-------------------------------------------------------
লম্বা চওড়া মাঠ।
কোথাও ঘাস কোথাও ঘাস নেই।
জলা জমিও আছে। কাছাকাছি ছোট্ট একটি পুকুর। দুপুরের দিকে কোনো বালক এসে ছিপ ফেলে।পুকুরপাড়ে একটা খেজুর গাছ। তার ছায়া জলে কাঁপে।
ধান উঠে যাওয়া জমিতে লাঙল দেয় অনিল মাহাত।সবজির চাষ। পাশের জমিতে ধনে শাক সবুজের ইশারা করে। তার নিচের জমিতে ফুল কপি।বাঁধাকপি। মন জুড়ানো পালং শাক।
চার-পাঁচটা জমির মাঝে একটা কাঁচা কুয়ো। বারো মাস জল থাকে। এই কুয়োর জল জমি থেকে জমি।চাষের কাজে লাগে।
এদিকে আসে না লক্ষণ সিং।
বছরে একবার তিন মাসের জন্য বেলগাড়া। ভেড়া চরাতে বিহারের ছাপরা থেকে দক্ষিণবঙ্গের এই গাঁয়ে।
লক্ষণের মালিক মহাদেব ঠাকুর বেলগাড়াতে এসে তিন মাসের জন্য জমির "ঠিকা" নিয়ে রাখে। জমির মালিক বাবলু মন্ডল লক্ষণকে একটা ছোটখাটো মাটির ঘরও দিয়েছে। লক্ষণ রাতের বেলা রান্না করে খায়। ভাড়া গুনতে হয় না। অফলা জমির জন্য বাবলু মন্ডল যা টাকা পায়, মনে করে অনেক টাকা।
লক্ষণ সিংকে নিয়ে বাবলু মন্ডল মদ খেতেও বসে।লক্ষণ পানভোজন করেনা। তার নেশা বলতে, বাঁ হাতে খৈনি টিপবে।
খৈনি টিপতে টিপতে তার বাঁ হাতের তালুর রঙ পাল্টে গেছে।
বাবলু মন্ডলের অফলা জমিতে ভেড়া গুলি চরতে চরতে অন্য কোথাও চলে যায় না। জমিতে ঘাস।পুকুরে জলও আছে। আর আছে লক্ষণ সিংয়ের হাতে একটা লম্বা বাঁশের লাঠি।
ভেড়ারা ভয় করে লাঠির আঘাত।
লক্ষণের কাছে আমি যাই। আধো আধো বাংলায় সে আমাকে বিহার মুলুকের গল্প শোনায়। তার মুখ চকচক করে। তার একটি ১২-১৩ বছরের ছেলেও আছে। স্কুলে যায়। তার জন্যই লক্ষণের মন খারাপ করে। কখনো কখনো। বেলগাড়ার পরে হয়তোবা যেতে হতে পারে ঝাড়খণ্ডের দিকে। প্রায় সারা বছর ভেড়া নিয়ে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গা।
লক্ষণ চিনে ফেলে নতুন নতুন মাটি। ঘাস পাতা।মানুষজন। লক্ষণ চিনে ফেলে প্রকৃতির আবহাওয়া।
ভেড়াগুলি যেন হারিয়ে না যায় এই কারণে ভেড়ার গায়ে গায়ে লাল রঙের ছাপ নীল রঙের ছাপ।
একটু আগেই লক্ষণ ডেকে উঠলো--- এ মুনিয়া --মুনিয়া ইধার আ---।
একটা ভেড়া প্রায় দৌড়োতে দৌড়োতে লক্ষণের কাছে এসে গা ঘেঁষে দাঁড়ালো।
আমিও জানতে চাইলাম, সমস্ত ভেড়ার নাম আছে নাকি? সে বললো----কসুর তো করি সবারই নাম দেবার। কিন্তু বাবু ভাই, ৫৯ টা ভেড়া আছে, সবার নাম দিতে পারি নাই। এই যে মুনিয়াকে দেখছেন, ইয়ার জনম দেখেছি। আমার কাছেই ই বড় হয়ে উঠলো।আমার কাছে তাই আদর নিতে আসে। এই ভেড়াদেরও কেউ নাই আমি ছাড়া। এক আধবার গায়ে গলায় হাত বুলিয়ে দিলে ওরা আমাকে ছেড়ে যাবে না।একটা ভেড়া দলছুট হয়ে গেলে খুঁজে পাবো না আর। মালিকও আমাকে রাখবে না।
কী খাবো বাবু ভাই?
লক্ষণের মজুরি কত আমার জানা নেই।
লক্ষণের চোখের কোলে ছায়া পড়লো। ওই ছায়া বিষণ্ণ। আমি তাকে অন্য কথার দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি------লক্ষণ, তোমাদের গ্রামে আমি একবার যাবো। আমাকে কী খাওয়াবে? লক্ষন বলে--- আপনারাতো বাবু লোক, গরীব খানা আপনাদের পসন্দ্ হবে না। বুটের ছাতু তো ঘরেই থাকে, যিতনা খুশি খেতে পারেন।
আমি দেখতেও পেলাম, লক্ষণের গ্রামের বাড়ি। মাটির বাড়ি। খোলার চালা। উঠোনে বাঁধা আছে একটি গাই। রোগা পাতলা। একটি পাথরের জাঁতাও আছে। বুট পেশাইয়ের জন্য।
লক্ষণের ছেলে আমাকে দেখেই, নিচু মুখ। কাছে ডাকলেও আসে না। আমি জানতে চাইলাম, ইস্কুল কতদূর?
আমার এটুকুই যাওয়া।
যেতে যেতে চেয়ে দেখবো , কোন্ গাছে কী ফল? যদি আমার কাছে টুপ্ ক'রে পড়ে?
লক্ষণের কাঁধে সব সময় একটা কম্বল। ওই কম্বলেইতো বাঁধা আছে কত রকমের তাপ উত্তাপ। জল হাওয়া। ওই কম্বলেই তো বিহার মুলুকের কবিতা।
-----বেলা ১২--২০
----১৬ অঘ্রাণ ১৪২৯
-----৩---১২---২০২২
----নির্মল হালদার
আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ --৩৩
--------------------------------------------------------
একটি জবা ফুল আমার দিকে চেয়ে আছে। সকাল থেকে চেয়ে আছে। জবা ফুল তার সমস্ত রঙ নিয়েই আমার দিকে চেয়ে আছে। তার ফুটে ওঠা যেন আমার জন্যই।
আমার দিকে চেয়ে থাকবে।
এই চেয়ে থাকা বিমুর্ত?
ফুটে আছে অনেকগুলি গাঁদা ফুল। কেউ কেউ আমার দিকে চেয়ে আছে। বাকিরা ডালের সঙ্গে নুয়ে পড়েছে মাটির দিকে।
যারা চেয়ে আছে আমার দিকে তাদের চেয়ে থাকা বিমুর্ত বলবো?
ফুল চেয়ে আছে আর পাতা?
পাতাও তো চেয়ে আছে কাঁপতে কাঁপতে। এই চেয়ে থাকা বিমুর্ত?
গাছের ডালেরও কাজ থাকে, সেও মাটিতে ঝুঁকে থাকার চেষ্টা করে। শিকড়ের শব্দ শোনার চেষ্টা করে। এই ভূমিকাকে কী বলবো?
বাঁক নিতে নিতে নদীও চেয়ে দেখে নেয়, পারে পারে কতটুকু ফসল রেখে এলো। তার চাওয়া-পাওয়া ও চেয়ে থাকাকে জাদু বাস্তবতা বলবো?
তা বলতেও পারি। না বলতেও পারি। নদী আপন মনে বয়ে যাবে। জবাফুল গাঁদা ফুলের ক্ষেত্রেও একই কথা-----ফুটে ওঠাটাই তাদের কাছে সার্থকতা। পাতা ও ডালের যা কাজ, তারা করবেই।
আমি দর্শক। আমি আমার মত করে দেখে যাব শুধু। আমার দেখাগুলি শিল্পে জায়গা না পেলেও আমি আমার দৃষ্টিকে ধন্যবাদ জানাবো।
আমি দেখতে না পেলেও কত পশুপাখি কীট পতঙ্গ, কত গাছপালা বেড়ে উঠছে। এবং কে যে কার দিকে চেয়ে আছে, আমি জানি না। আমার জানা আছে, আকাশ সবার দিকে চেয়ে থাকে।
বৃষ্টির শব্দ আছে। রোদেরও শব্দ আছে। দুজনের দুটি শব্দ দুরকম। পায়ের শব্দ আছে। হৃদয়ের শব্দ আছে। শব্দ দুটি আলাদাও।
কী করে আলাদা করবো? নাকি শব্দ তার নিজের জায়গায় থাকবে, আমি শুধু শব্দ শুনবো?
শব্দের গায়ে রঙ লাগাবো?
এই প্রাণময় চরাচরে যে যেমনভাবে আছে থাকুক, আমার ভূমিকা দর্শকের।
আমি শ্রোতাও।
ঝড়ের শব্দ শুনতে শুনতে প্রদীপ জ্বালাই।
-----বেলা - ১২--৪৩
-----১৭ অঘ্রাণ ১৪২৯
-----৪---১২---২০২২
-----নির্মল হালদার
আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ--৩৪
--------------------------------------------------------
গোটা চারেক পুকুর আমাকে ছাড়বে না। আমি কাছে না গেলে, তারাই আমার কাছে এসে আমাকে জ্বালাতন করে। পুকুর গুলোর ধারে ধারে যে সমস্ত গাছপালা আছে, তাদের মধ্যে একটা পুকুরের একটা অর্জুন গাছ আমার কাছে আসবেই। আমি সাড়াশব্দ না করলেও অর্জুন গাছের ফল আমার কাছে বেজে বেজে ওঠে। ঝুমঝুমির মত। পুকুরের কাছে আমাকে আসতেই হয়। কুশল জানতেই হয়, কেমন আছো?আজও কি পানায় পানায় ভরে আছে জল? পদ্মফুল কি ফোটে?
সান বাঁধানো ঘাটে কলসি নামানোর একটা দাগ আছে তো?
আরেকটা পুকুর তো আমার কাছে এসে দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে, আমাকে বলবে----ঝাঁপিয়ে পড়্। ঝাঁপিয়ে পড়্।
আমি দুহাত জোড় করে জানাই, আমাকে মার্জনা করো। তোমাতে ডুব দিয়ে আমি পেরে উঠব না।
যতই যা বলি শোনে না।
রাত্রিবেলা আমার পাশে এসেই নিচু স্বরে বলবে, তোকে ঝাঁপ দিতেই হবে।ভালবাসতে হবে আগের মতই।
আমার চাদরটা আমি মাথা অব্দি টেনে নিই। নিলে কি হবে, আরেকটা পুকুর আমাকে ডাকবে, এসো এসো--- আমার কাছে আসতে হলে দিনরাত্রি লাগে না। যে কোনো সময় আমার জল তোমাকে দিতে পারি। তুমি স্নান করলে আমার অবগাহন। তোমাকে জানিয়ে রাখি, আমি এখনো ভেতরে ভেতরে সজীব। দেখছো তো আমার পাড়ের অশ্বত্থ গাছটা, নতুন পাতা এসেছে। পাখিরা আমার কাছে আসে যায়। আসা-যাওয়া করে আলো বাতাস।
তুমি আসবে না?
এ সমস্ত কথা বলে আমাকে নরম করার চেষ্টা করে।আমি চুপচাপ থাকি। ওদের সঙ্গে অনেক আগেই সব কথা ফুরিয়েছে।
নতুন করে কি বলবো আর!
তখনই দেখলাম, আমার কাছে একটা পালক। কোন্ পাখির পালক? জিজ্ঞেস করার আগেই, পুকুর পালিয়েছে।
চারটে পুকুরে হাঁস না নামলেও দুটো পুকুরে হাঁসেরা সাঁতার কাটে। পাখিরা জলে ছোঁ মেরে চলে যায়। পুকুর পাড়ের গাছে নানান পাখি।
একদিন তো গুগলি -শামুক আমার কাছে হাজির।আমাকে বলে, কী গো আমাদের ভুলে গেলে? শ্যাওলা এসেও জড়িয়ে পড়ে আমার গায়ে।
কী করবো এই পুকুরদের নিয়ে? নাছোড়বান্দা। আমি জটিলতায় পড়েছি। হঠাৎ হঠাৎ দিন-দুপুরে রাত দুপুরে আমার কাছে এসে ছোট ছোট ঢেউ তুলবে।
আমি নীরব থাকি। কাগজের নৌকা ভাসে।
দেখতে পাই, ঘরের চৌকাঠ ডিঙিয়ে রুই কাতলা মাগুর ঢুকে পড়ছে আমার ঘরে। তারা একই সঙ্গে রব করে-- ছাড়লে চলবে না। আমাদের সঙ্গে রেখেই হাঁটাচলা করো। ঘাম ঝরালে আমাদের গায়ে ফেলো। গায়ে গা লাগিয়ে ভালো থাকতে হবে।
ভালো থাকা যায় নাকি?
কুলুঙ্গি এসে দাঁড়ায় মাঝেমধ্যে। কুলুঙ্গি এসে দাঁড়ালেই, একটা প্রদীপ জ্বলছে। অথবা লক্ষীর একটা ফটো। কিংবা লক্ষীর ঝাঁপি।
ভুলে যাব বললেও ভুলে থাকা যায় না। মন কেমন করে। আমি ঝাঁপিয়ে পড়ি সমুদ্রে।
কাউকেই তো কিছু দিতে পারিনি, যদি আমার চোখের জল সমুদ্রকে দেওয়া যায়, তবে সমুদ্রে নুন বাড়বে খানিকটা।
সমুদ্র ফিরিয়ে দিলে আলাদা কথা। আপাতত গোটা চার পুকুরকে নিয়ে আমি নাস্তানাবুদ। বিকেল হলেই একটা যৌথস্বর---
বেলা যে পড়ে এলো জলকে চলো গো...
------১৮ অঘ্রাণ ১৪২৯
-----৫--১২---২০২২
-----নির্মল হালদার
আমার কবিতা : কাঠবিড়ালির লাফ ---৩৫
----------------------------------------------------------
ও শক্তি, শক্তি কোথায় গেলি রে?
সূর্যের সাড়াশব্দ পাচ্ছি, তোর সাড়াশব্দ এখনও নেই।
শক্তি ও শক্তি কোথায় গেলিরে?
ও পদ্ম পদ্ম কোথায় গেলিরে?
কাক ডেকে গেছে অনেকক্ষণ।
আমিও ডাকছিরে, পদ্ম পদ্ম -----
রাস্তা ফুঁড়ে উঠে এলো দুজনেই।
পদ্ম আমাকে দেখেই বলে, চল্ চল্-----। ওদের দুহাতে ঝাড়ু আর বেলচা।
পদ্ম আর শক্তি সকাল হলেই, আমাদের মহল্লায়।রাস্তাঘাট সাফসুতরো করে।
দুজনেই অমলিন।
পৌরসভার কাজ বাদেও অনেক বাড়িতেও তারা কাজ করে দেয়।
আমার তো মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করে পদ্ম আর শক্তিকে বলবো----আকাশেও আবর্জনা আছে। বাতাসও দূষিত। পরিষ্কার করে দে।
দুজনেই যুবক। শিরদাঁড়াও কঠিন। আশা করতেই পারি, তারা আগুন জ্বালবেই। সাফ করবেই চারপাশের জঞ্জাল।
আরো মনে হয়, পদ্ম আর শক্তি দুজনেই পুণ্যের কাজ করছে, পারাপারের রাস্তাটা পরিষ্কার করে দিয়ে সহজ করছে।
মেথর নামে তারা পরিচিত। কেউ কখনো ওদের নাম জানতে চায়না। ওরা নোংরা ঘাঁটে। নালা নর্দমা পরিষ্কার করে। ওদের ছোঁয় না কেউ।
ওদের বুকেও আনন্দ বেদনা আছে। স্বপ্ন তো আছেই।আরো আছে ভালোবাসা।
যা প্রকাশিত হয় না।
আমার কেবলই মনে হয়, পদ্ম আর শক্তির রাস্তা পরিষ্কারের পর দেখতে পাবো, রাস্তাতে পড়ে আছে অনেক কবিতা। অনেক কথা ও কাহিনী।
রাস্তাতেই থাকার কথা নিঃশব্দ চরণের কবিতা।
-----১১---৩১
----১৯ অঘ্রাণ ১৪২৯
----৬---১২---২০২২
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন