শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

পাতা ও পাখি / নির্মল হালদার

পাতা ও পাখি / নির্মল হালদার




বালক-বালিকার দল খেলা করছে। তাদের মাঝে এসে পড়েছে এক যুবক। রঞ্জন।

খেলার মাঠ যেমন বড় তেমনি মাঠে আছে অসংখ্য ফুল ফলের গাছ। মাঠের ধারে ধারে। মাঠের আকর্ষণ তাই সকলের কাছে। সকাল-বিকেল অনেক মানুষই বেড়াতে আসে এখানে। মনোরম হাওয়া। অনেক পাখ-পাখালি। নানা সুর।

এখানে রঞ্জন পাখিদের সুর তুলতেই আসে। প্রায় দিন। কখনো কখনো তার টিউশনের ছাত্র-ছাত্রীদের মাঠে নিয়ে আসে। পাখিদের সুর শুনিয়ে পাখিদের ডাকে। রঞ্জনকে অনুসরণ করে তার ছাত্র-ছাত্রীরাও। রঞ্জন বলে, পাখিদের সুর গলায় তুলতে পারলে গলা কখনোই খারাপ হবে না। নষ্ট হবে না। যে যতটুকু পারবে পাখিদের সুর তুলে নাও।

বালক-বালিকারা খেলতে এসে খেলা বন্ধ করে দেয়। তারা শোনে রঞ্জন কি চমৎকার পাখির সুরে সুর মেলাচ্ছে।

বালক বালিকাদের মধ্যে একজন রঞ্জনকে বলে, আমাকে শিখিয়ে দেবে। রঞ্জন উত্তর দেয়, হ্যাঁ শিখিয়ে দিতে পারি, যদি একটা গাছের কত পাতা আছে গুনতে পারিস? বালকটি বলে, আমি পারবো আমি পারবো--------।

বালক জাম গাছে উঠে পড়ে। সে জানে এখন গাছে অনেক ফল। ফল খেতে খেতে পাতা গুনে ফেলবে সে।
অসংখ্য জাম খেয়ে ফেলার পরও বালক গাছের পাতা গুনে ফেলতে পারলো না। রঞ্জন ও তার ছাত্র ছাত্রীরা হেসে উঠলো। রঞ্জন জানে, এই কাজটি কারো পক্ষেই সম্ভব নয়। সে বালককে বলে, এখন যা তোকে অন্য দিন পাখির সুর শুনিয়ে দেবো। অথবা পাখিকে ডেকে দেবো তোর কাছে। পাখি শোনাবে তার সুর।

এবার রঞ্জন এক বালিকাকে ডেকে বলে, তুই গাছের পাতা গুনতে পারবি? যদি পারিস তোকে ছবি আঁকার জন্য রংপেন্সিল দেবো। বালিকা রাজি হয়ে শাল গাছে ওঠার চেষ্টা করে। পারে না। আরেক বালক এসে জাম গাছে উঠবো বলে। রঞ্জন "না" করে না। বালক জানে গাছের পাতা গুনতে পারবে না। তবে জাম খেয়ে নেমে আসতে পারবে। বালকের এই চালাকি ধরতে পারেনা রঞ্জন। সে বালকের গাছে ওঠার দিকে চেয়ে থাকে। বালক গাছের মাঝ বরাবর গিয়ে একটা ডালে বসে পড়ে। আর জাম তুলে তুলে ফেলতে থাকে মুখে।
নিচ থেকে রঞ্জন দেখতে পায়। কিন্তু কিছু বলে না। ছোট ছেলে খাচ্ছে খেয়ে যাক। তো সেই ছোট ছেলে রঞ্জন কে উপর থেকে বলে, স্যার স্যার---সাতশো এগারোটা পাতা আছে।

রঞ্জন হেসে ফেলে। কারণ, সে জানে গাছের পাতা গোনা যায়না। বালকের কথা মিথ্যে কথা। রঞ্জন কিছু মনে করে না। সে বালককে নিচে নামতে বলে। আর বলে, তুই বলতেই পারতিস, তোর জাম খাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে। শোন্ একটা কথা, আমিও গাছের পাতা গুনতে পারবোনা। তবে তোদের দিতে পারবো একটা করে চকলেট। এখানে সবাইকে ডাক-----।

বালক-বালিকারা এক জায়গায় জড়ো হলে রঞ্জন তাদের বলে, একটা দিন আমরা গুনবো মাঠে কটা গাছ আছে। কী কী গাছ আছে। আমার মনে হয়, এই কাজটা আমাদের পক্ষে সম্ভব। ঠিক তো?

যেদিন এই কাজটা করবো, সেদিন ডাকবো অনেক পাখিকে। তোদের গলার স্বরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবো পাখিদের।

আজ সন্ধ্যে হয়ে আসছে সবাই বাড়ি যাও।


----৩ ভাদ্র ১৪২৮
----২০---৮---২০২১
----নির্মল হালদার







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ