রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১

পালকের গল্প / নির্মল হালদার

পালকের গল্প / নির্মল হালদার


পালক এসে আবদার করে, আমাকে ফড়িং এনে দাও।
দিলাম।
ফড়িঙের সঙ্গে ওড়াউড়ি করতে করতে আরো আব্দার করে,
আমাকে প্রজাপতি এনে দাও।
দিলাম।

ফড়িং ও প্রজাপতির সঙ্গে ওড়াউড়ি করতে করতে সে
আরো আব্দার করে,
একটা পাখি এনে দাও।
দিলাম।

পাখি প্রজাপতি ও ফড়িঙের সঙ্গে
ওড়াউড়ি করতে করতে আরো আব্দার করে সে, আমি ছবি আঁকবো

সে এবার কি আঁকবে আমাকে বলে দিতে হবে। আমি বললাম,
তুমি একটা নদী আঁকো।
সে জানতে চাইলো, নদী কি? নদী কেমন?
আমি তাকে নদীর রূপ বোঝাতে পারিনা। সত্যিই তো, সেই বা কেমন করে বুঝবে নদীর চেহারা।
সে তো নদী দেখেনি।

আমার মনে হলো হঠাৎ, ঘরের মেঝেয় এক মগ জল ঢেলে যদি
বোঝানো যায়। কিন্তু বোঝাতে গেলাম না। বরং বললাম তাকে,
তুমি একটা ফুল আঁকো। সে জিজ্ঞেস করলো, কি রঙের ফুল?
আমি বললাম, লাল রঙের ফুল।
পালক এবার লাল রঙের পেন্সিল খোঁজে। অথচ আমার কাছে কোনো রঙের পেন্সিল নেই। তাকে বললাম, কালকে তোমায় পেন্সিল
এনে দেবো।এখন যা আঁকবে
কলমে আঁকো। সে নাছোড়বান্দা।
পেন্সিল চাই। পেন্সিল বক্স চাই।

দোকান বন্ধ হয়ে গেছে।
সে শোনে না। সে বোঝে না। তার
পেন্সিল বক্স লাগবেই।
আমি তখন তাকে জানাই, কাল তোমাকে একটা ঘোড়া এনে দেবো। তুমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে
ঘুরে বেড়াবে।

পালক ঘোড়ার কথা শুনে শান্ত হয়।


কথা রাখতেই হবে।

চার বছরের শিশুকে কথা দিয়েছি
কথা রাখতেই হবে।
আমি আমার জঙ্গলে গেলাম। একটা ঘোড়া ধরে নিয়েও এসেছি।

একদম শাদা ঘোড়া।

পালক দেখে খুব খুশি। তারপরই সে বলে, ঘোড়ার পাখা কই? এই ঘোড়া তার পছন্দের নয়। সে ঘোড়ায় উঠে উড়ে বেড়াবে।
পাখা কই?

আমি খুব মুশকিলে পড়লাম।
তাকে বলি, পাখাওলা ঘোড়া কাল এনে দেবো। সে শোনে না। সে 
কাঁদতে কাঁদতে এবার বলে, আমাকে একটা হাতি এনে দাও।
আচ্ছা দেবো----দেবো-----তুমি অপেক্ষা করো।

আমার জঙ্গলে একটাও হাতি নেই। সব হাতি অযোধ্যা পাহাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।


আমাকে যেতেই হলো অযোধ্যা। 
হাতিরা যেখানে থাকে সেই জায়গায় গেলাম। তাদের  বড় কর্তাকে বললাম, আমাকে একটা হাতি দাও-----। অন্তত একটা হস্তিশাবক। পালক খেলা করবে তার সঙ্গে।
কর্তা বলে, হাতি ছানা যাবেনা একা। সঙ্গে মাকে নিয়ে যেতে হবে।

আমি মনে মনে ভাবছি, সে না হয়
মা ও ছেলেকে একসঙ্গে নিয়ে গেলাম। থাকতে দেবো কোথায়?
আমাদের তো মাত্র দুটো ঘর।
আমার জঙ্গলে থাকবে কি হাতি ও
হাতির ছানা?
ঘোড়ারা থাকতে দেবে কি? 

কি করবো কি করবোনা ভাবতে ভাবতে আমি নিজেই মাটির একটা হাতি বানাই। পুরোপুরি তৈরি হতেই দেখা গেল, মস্ত একটা হাতি হয়ে গেছে। একেবারে জলজ্যান্ত।

আমি খুব খুশি।

গাছের ডালপালা খাওয়াতে খাওয়াতে হাতিকে ঘরে এনে পালককে দিই।
সে সঙ্গে সঙ্গে হাতির পিঠে উঠে
হাতিকে উড়তে বলে।

হাতিও ওড়ে।


----৬ আষাঢ় ১৪২৮
----২১---৬---২০২১



পালকের গল্প (দুই)


আমি নাকি জিরাফ চিনি না। আমি নাকি জেব্রা চিনি না।
পালক তাই আমার মোবাইল থেকে আমাকে জিরাফ চেনাবে।
জেব্রা চেনাবে।

তো, পালককে বললাম আমি উট
চিনি না। আমাকে চিনিয়ে দেবে?
পালক হাসতে হাসতে বলে------
দাঁড়াও দাঁড়াও উট বের করছি।
এবং সত্যি সত্যি উট মোবাইলের বাইরে এসে আমার কাছে দাঁড়ায়।
আমি উট দেখে আত্মহারা হয়ে
উটের পিঠে চড়ে বসি।

আমি মরুভূমি দেখতে পাই।

আমার তৃষ্ণা আসে।

আমি পালককে বলি, তুমি জল
দেখাতে পারবে?সে আমার দিকে চেয়ে থাকে।আর আমি এক গেলাস জল তার সামনে রেখে বলি------এইতো জল।
সে হেসে ওঠে। 

জিরাফের কাছে চাই,একটা ফল।
উঁচু ডালের কাছে আমার হাত 
পৌছোবে না।তখন পালক বলে,তার জন্যেও লাগবে একটা ফল।পাকা।

জিরাফ বলে,পাকা ফল একটাও নেই।শুধু কাঁচা।উট বলে,এসো
আমার পিঠে উঠে যাও------
পাতার আড়ালে আছে পাকা পাকা ফল। তোমরা পেড়ে নিতে
পারবে।

পালক উঠে গেল উটের পিঠে।

আমি জেব্রার কাছে দাঁড়াই। সে আমাকে জঙ্গলে নিয়ে যাবে। 
আমাকে ফল খাওয়াবে নানা রকমের।

আমি পালককে ছেড়ে কী করে যাই!আমি বললাম------সবাই চলো আমাদের বাড়ি। একসঙ্গে
সবাই আম খাবো। আমাদের একটা গাছ আছে। আম ফলেছে খুব।

সবাই একসঙ্গে বললো,না না আম খাবো না।ডাল ভাত খাওয়ালে যেতে পারি।

পালক হাততালি দিয়ে উঠলো।
খুব মজা হবে।খুব।মা আমাদের
আলু পোস্ত খাওয়াবে।

তোমরা পোস্ত খাও তো?

জিরাফ জেব্রা ও উট একই সুরে বললো-----খাই খাই।সব খাই।
আমরা খুশিও খাই।

চলো চলো-------


------৮আষাঢ়১৪২৮
-----২৩----৩----২০২১
-----নির্মল হালদার







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ