রঙ তুলি / নির্মল হালদার
সংবেদ ছবি আঁকে। ছিঁড়ে ফেলে।
সংবেদ রঙ তুলি কখন কোথায় যে রাখে নিজেই জানে না। তার মা একবার রান্নাঘর থেকে রঙ তুলি এনে বলেছিলেন: আমি কি রঙ দিয়ে রান্না করব আজ? তোর পাগলামি আর নিতে পারছি না খোকন।
খোকন হাসে শুধু।
সংবেদ অথবা খোকন
রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে আসে গরু।
রাস্তা থেকে ধরে নিয়ে আসে কুকুর। তাদের গায়ে ছবি আঁকবে।
তার মা-বাবা রে রে করে উঠলে
সে জবাব দেয়------তোমরা বুঝবে না এসব। গরু কুকুরের গায়ে ছবি আঁকলে শিল্প হবে চলমান। আমি চলমান শিল্পের পক্ষে।
সংবেদের ইচ্ছে , বাসে ট্রেনে
ছবি আঁকবে। রাস্তায় রাস্তায় ছবি আঁকবে। বাড়ির দেয়ালে দেয়ালে ছবি আঁকবে। কিন্তু টাকা নেই।
রঙের খরচ যে অনেক। বাবার কাছে হাত পাতবে কত আর।
আগে আঁকার টিউশান করতো।
কামাই করার জন্য সেও গেছে। সে রাত তিনটে পর্যন্ত জেগে থাকে। পরের দিন ১১টায় উঠবে।
টিউশনি কি আর থাকে। দুপুরেও ঘুমোবে।
বাড়িতে আত্মীয় স্বজন এলে সংবেদ বলে, তোমাদের জামা কাপড় পেলে ছবি এঁকে দেবো।
আমাকে দেবে?
তার মা রেগেমেগে বলেছিল----
আমাদের ভাতের হাঁড়িতে ছবি আঁক। ডালের কড়াইয়ে ছবি আঁক। আমি বাধা দেবোনা। দোহাই তোকে, আত্মীয়স্বজনকে
ছবি আঁকার কথা বলবি না।
তারা তোকে পাগল বলে। এ আমি
সইতে পারিনা।
ইদানিং সংবেদ সন্ধে হলেই
একটা বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। একটা বিড়ি টানে।
তারপর আবার চলে আসে।
দরজা-জানালায় কোনো মুখ সে দেখতে চায় না। সে শুধু বাড়িটার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে। কিছুক্ষণ দেখবে। আর চলে আসবে। দিনের বেলা বাড়িটার কাছে দাঁড়াবে না।
কেবল সন্ধ্যের সময়।
লোকজন তাকে সন্দেহ করে।
বাড়ির মালিক একদিন ধমক দিয়েছিল। ভেবেছিল কোনো রংবাজ ছেলে।তার মেয়ের জন্য আসছে।
কিন্তু না। এই বাড়ির স্থাপত্যের
মধ্যে এক প্রাচীনতা আছে। যা সংবেদকে আকর্ষণ করে। এই বাড়ির নকশা সে ছবিতে ব্যবহার করতে চায়। ব্যবহার না করলেও
মনে রাখতে চায়।
যা কিছু সুন্দর মনের মধ্যে রেখে দিলেও সুন্দর। এবং মনও সুন্দর হয়ে থাকে।
সংবেদের আশ্চর্য লাগে, এই বাড়ির দরজা জানলা সব সময় বন্ধ থাকে। বিশেষ কাউকে দেখা যায় না। একদিন শুধু বাড়ির মালিক ধমক দিয়েছিল তাকে। তারপর আর নয়।
পাড়ার লোকজন ভাবে, ছেলেটি
এই বাড়ির কোনো মেয়ের জন্য দাঁড়িয়ে আছে।
ভাবাটাই স্বাভাবিক। কেননা
সংবেদ প্রতিদিন সন্ধ্যেবেলা
বাড়িটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকবেই।
সংবেদ একদিন মোড়ের মাথা থেকে দু'হাতে দুকাপ চা নিয়ে বাড়িটার সামনে দাঁড়ায়।
দু'কাপ চা মানে অনেকটা সময়।
অনেকটা সময় সে বাড়িটাকে
দেখার সুযোগ পাবে।
বাড়িটাকে দেখতে দেখতে সে
বাড়িটার প্রেমে পড়ে গেছে। মনে মনে বাড়িটাকে সে সাজাতে থাকে। যেন তার প্রেমিকা। কয়েক হাজার বছর আগে থেকে দাঁড়িয়ে আছে এখানে।
সহসা সংবেদ এক কাপ চা
রাস্তায় ঢেলে দেয়। গড়ানো চায়ের উপরে সে ঢেলে দেয় রঙ।
সংবেদ তুলি চালাতে থাকে।
তখনই সেই বাড়ি থেকে এক তরুণী তার কাছে এসে বলে, তুমি আমাকে ভালোবাসবে?
এই কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে
সংবেদ পাল্টা প্রশ্ন করে তরুণীকে------ভালোবাসবো?
ভালোবাসা কি? আমি তো রঙ
ভালোবাসি। তুমি যদি চাও
তোমার গায়ে ছবি আঁকতে পারি।
এই আমার ভালোবাসা।
তরুণী খিলখিলিয়ে হাসে। আর সংবেদের হাত থেকে রঙ তুলি নিয়ে গায়ে ছিটিয়ে দেয়।
সংবেদ বাড়ির দিকে দৌড়োতে থাকে। তরুণী পাগল পাগল বলে চিৎকার করে।
-----৫ আষাঢ়১৪২৮
-----২০---৬---২০২১
-----নির্মল হালদার
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন