রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১

খালি পায়ে / নির্মল হালদার

খালি পায়ে / নির্মল হালদার


বিরসা সবসময় লোকের পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। অভ্যেসটা তার নতুন নয়। অনেকদিন থেকেই স্বভাবে ঢুকে গেছে। কাছ থেকে দূর থেকেও সে লক্ষ্য করে পা। আর পায়ে যদি জুতো দেখতে পায়, তার মন ছটফট করে। মনে করে, পায়ে জুতো থাকলে মানুষ কিভাবে হাঁটে। কি করে চলাফেরা করে!
বিরসার মনে হয়, জুতো পরা লোকটির কাছে গিয়ে বলবে, পায়ের জুতো ফেলে দিন। খালি পায়ে হাঁটুন।

রাস্তায় জুতো পড়ে থাকতে দেখলে বিরসার আনন্দ হয়। সে মনে করে, লোকে জুতো ফেলে গেছে-----এইতো। লোকে বুঝতে পারছে, জুতোর অপকারিতা।

বিরসা তার মা--বাবাকেও অনুপ্রাণিত করার চেষ্টা করে, যেন তারা জুতো না পরে। শুধু সে এলাচিকে বলতে পারেনা। কারণ, এলাচির পায়ে নিত্য নতুন জুতো দেখতে পায়। তাকে বলে লাভ নেই।সে বিরসার কথা একেবারেই শোনে না।

দুজনে একবার কোনো নিমন্ত্রণ বাড়িতে গিয়েছিল।বিরসা খাওয়া-দাওয়ার ফাঁকে এলাচির জুতো দিয়েছিল  লুকিয়ে। এলাচি জানে কার কান্ড। সে বিরসার দিকে বড় বড় চোখ করতেই, বিরসা লুকানো জুতো বের করে দিয়েছিল। 

সে মাঝেমধ্যেই, তার মা --বাবার জুতো লুকিয়ে রাখে। খুঁজে খুঁজে মা--বাবা তখন হাঁক পাড়ে------
বিরসা এমন করেনা বাবা-------
তখন সে বলে, কি জুতো পরে
থাকো! তোমাদের পায়ের কষ্ট হয়
তা বুঝতে পারো! পা বদ্ধ থাকলে পায়ের কষ্ট।

সে নিজেও জুতো না পরার চেষ্টা করে। যেখানে উপায় নেই, পরে যায়। বিশেষ করে এলাচি সঙ্গে থাকলে।

কলেজে যখন পড়তো, বিরসা ক্লাসে জুতো খুলে রাখতো। এবং
পুরো ক্লাস সে খালি পায়ে চলাফেরা। বন্ধুরা হাসতো খুব।
অনেকদিন দেখা গেছে, সে যখন
কলেজ থেকে বাড়ি যাবে, তখন
জুতো আর নেই।
সেও চেঁচিয়ে উঠতো-----কুছ পরোয়া নেহি-----।

জুতো না পরার জন্য বিরসার পায়ে কাঁটা ফুটেছে অনেকবার।
পেরেক ফুটেছে কত।

সে একবার চুড়ান্ত  করেছিল, সন্ধ্যেবেলা সদর রাস্তায়। দুটি ছেলে মেয়ে হাঁটছিল। নিজেদের মধ্যে গল্প করতে করতে। হঠাৎ বিরসা ছেলে মেয়েটির কাছে গিয়ে বলে-------তোমরা জুতো খুলে দাও। খালি পায়ে হেঁটে যাও খালি পায়ের কাছে।
 ছেলে মেয়ে দুটি বিরসা কে পাগল ভেবে চিৎকার করতে থাকে। লোকজন জড়ো হয়। কেউ কেউ তাকে চড় থাপ্পড় দেয়। বিরসা চুপচাপ বাড়ি চলে আসে।

কাউকে কিছু বলে না।

তার মা বুঝতে পারে, ছেলের কিছু হয়েছে। বিরসার কাছে জানতে চায়------কী হয়েছে?
বিরসা সমস্ত বলে। মা শুনে  তার বাবার কাছে বলে, ছেলেকে ডাক্তার দেখানো দরকার। নইলে ভবিষ্যতে দেখা যাবে তাদের ছেলে পাগল হয়ে গেছে। হ্যাঁ  এই ছেলেই তো পুজোর জুতো একদিন না পরেই, রাস্তায় ফেলে এসেছিল।

বিরসার এক দাদা ও বন্ধু বলেছিল------আমরা কোন কিছুই ত্যাগ করতে পারি না। তুই তো তাও নিজের পায়ের জুতো রাস্তায় ফেলে আসিস। তোকে কেউ বুঝবে না। তোর জন্য আমার ভালোবাসা সব সময়।

বিরসা বলে, কত কত মানুষ জুতো পরেনা। কই, তাদের তো কোন ক্ষতিবৃদ্ধি হয়না। বরং তাদের পা বেশ আরামেই আছে।


বিরসার কথা কে শুনবে?  

সে জ্বর নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছলো।খালি পায়ে। বকুনি খেয়ে ছিল দেদার। সে ডাক্তারকে বলেও ছিল একটা কথা-------জুতো পরলে, মাটির তাপ পাওয়া যায় না। আমি মাটির তাপ--উত্তাপে
থাকতে চাই। ঘাসের কোমলতা
জানতে চাই।

আমি জুতো পরবো না।

বিরসার পায়ের দিকে তাকিয়ে আমিও জুতো না পরার চেষ্টা করি। কেন না, আমিও সবসময় মাটি থেকে দূরে থাকি।


-----৭ আষাঢ়১৪২৮
-----২২----৬---২০২১
-----নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ