রবিবার, ২৭ জুন, ২০২১

বাগাল / নির্মল হালদার

বাগাল / নির্মল হালদার


গরু ছাগল চরালেও ভেড়াও
সঙ্গে থাকে। গদাই সবাইকে সামলায়।
অনেক সময় ছাগল ও ভেড়ার
ঢুসোঢুসি হলে দু'পক্ষকেই সে
লাঠি দেখায়। কাজ না হলে, দু চার লাঠি পিঠে বসিয়ে শান্ত করে।

এখন মহুল তলায় শুয়ে আছে গদাই। পাশে রাখা আছে লাঠি।
গাই--গরু ছাগল ভেড়া আপন মনে চরে বেড়াচ্ছে।

মাঠে কোথাও ঘাস আছে কোথাও নেই। মাঠ থেকে কাছেই পলাশের জঙ্গল। একটা মোষ একা কি যেন খুঁজছে। তাকে দেখছে একটা শালিক। পলাশের ডালে বসে। সেও একা।

একটা মেষশাবক তার মায়ের পিছনে ছুটছে। মা--ও ছুটছে। একটা বাছুর তার মায়ের কোল
ঘেঁষে শুয়ে আছে।

গদাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। ঘুম ভাঙতেই তার মনে পড়লো,সে
স্বপ্ন দেখছিল একটা। স্বপ্নটা অদ্ভুত--------সে যেন গরু ছাগল ভেড়া নিয়ে আকাশে উঠেছে।
আকাশটাই মাঠ। ঘাসে ঘাসে ভর্তি। পুকুরও আছে। মেঘের পুকুর। টলটল করছে জল।

গদাই নিজে একবার আঁজলায়
জল ধরতে গিয়েছিল। উঠে এসেছিল মেঘ। আর তখনই ঘুম ভেঙে গেলো তার।

সে দেখতে পায়,একটা মোষ
গরুর দলে ঢুকে পড়েছে। একা।
কোত্থেকে এলো? কাদের বাড়ির মোষ?
গদাই কাছে গেলেও চিনতে পারেনা। সে মোষের পিঠে স্নেহের হাত রাখে। মনে মনে বলে, তোর ভয় নেই। 

গদাইয়ের খিদে পেয়েছে।
সূর্য মধ্যগগনে। সে গরু-ছাগল ছেড়ে ঘরের দিকে যেতে পারে না।
একটা গরু বা ছাগল বা ভেড়া কেউ টেনে নিয়ে গেলে কাজ চলে যাবে তার। তখনই তার সামনে এসে দাঁড়ায় এক যুবক। সে বলে,
আমি জানি তোমার খিদে পেয়েছে। এই নাও--------বলে,
সে গামছা থেকে খুলে গদাইকে দেয় দুটো রুটি ও পেঁয়াজ।
গদাই দেখে থ মেরে গেছে। এই যুবককে সে আগে দেখেনি। এই যুবক গ্রামেও থাকেনা। সে প্রশ্ন করে বসলো----তুমি কোথায় থাকো? আগে তো দেখিনি। যুবক বলে, আজই তো এলাম তোমাদের দেশে। তুমি এখন রুটি খাও। আমি চারদিকটা ঘুরে ফিরে দেখি।
গদাইয়ের জানতে ইচ্ছে করছিল, যুবক খাবে কিনা। ততক্ষণে যুবক অনেকটা এগিয়ে গেছে। তার পিছনে পিছনে ভেড়ার দল। গদাই খাবার ছেড়ে দৌড়ে যায়। সে চেষ্টা করে ভেড়াদের গরু-ছাগলের দিকে নিয়ে আসতে। যুবক হাসে।
সে বলে, তোমার ভয় নেই। এরা
আমার সঙ্গে ঘুরতে যাচ্ছে। আবার ফিরে আসবে তোমার কাছে।

গদাইয়ের সন্দেহ হলেও আর কিছু বলতে পারেনা। সে মহুল তলায় এসে রুটি চিবোতে থাকে।

মাঠের দিকে চেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কয়েকদিন আগে বৃষ্টি হয়ে থেকে গেছে। তাই এখন কোথাও কোথাও ঘাস। গরু ছাগলরা মনের সুখে আছে।

বেলা পড়ে আসছে।

এবার গদাইয়ের কাজ, সবাইকে এক জায়গায় জড়ো করা। সবাইকে ঘরে ফেরানো। কিন্তু তার মনে হচ্ছে, একটি ভেড়ার ছানা যেন নেই। তার বুকে কাঁপুনি শুরু হয়।

কোথায় গেল?

কেউ চুপি চুপি চুরি করে নিয়ে পালালো না তো?

গদাই মাঠের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত খুঁজে বেড়ালেও কোথাও নেই ছানাটি। সে ঢুকে গেল পলাশ জঙ্গলে। সেখানেও নেই।

গোধূলির আলো এসে পড়ছে মাঠে। গদাই ভাবছে কি করবে?
তার মুখে বিষাদের ছায়া।

সেই যুবক গদাইয়ের সামনে এসে দাঁড়ায়। যুবকের কোলে ভেড়ার ছানা। বলে,এই নাও তোমার ছানা। বলে, তুমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলে। তুমি জানোনা, ছানাটি আমার সঙ্গে ছিল। ওকে তো আমি অনেক অনেক বছর ধরে চিনি। ছানাটিও আমাকে চেনে। তাই আমাকে ছাড়তে চাইছিল না।
গদাই  এবার না থাকতে পেরে প্রশ্ন করে----তুমি কোথায় থাকো?
কি করো? আগে তো তোমাকে দেখিনি?

দেখেছো।
আমাকে দেখেছো তুমি অনেক অনেক যুগ আগে। তোমার মনে পড়ছে না।
যুবকের কথা গদাইয়ের কাছে হেঁয়ালি মনে হয়। তবু সে বলে, আজ তুমি আমাদের বাড়ি চলো।
আমরা একইসঙ্গে আজ খাওয়া-দাওয়া করবো। চলো----

যুবক বলে, আজ নয় অন্য কোনদিন। হয়তোবা শীতের সময়।
যখন তুমি আর আমি মেষশাবক কোলে নিয়ে ঠান্ডা কাটাবো-------
বলেই যুবক হাসতে থাকে।


----১০আষাঢ়১৪২৮
----২৪---৬---২০২১
----নির্মল হালদার






কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ