রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১

কবিতা / নির্মল হালদার

কবিতা / নির্মল হালদার




১৮১.
যা দেখার দেখব এই বেলা
জমি ছোট হয়ে আসছে
লাঙ্গল নেই
ধুলা ওড়ায় ট্রাক্টর
পাখিরা পালায়

যা দেখার দেখব এই বেলা
চাষিরা ধুঁকছে
বীজের অভাব
কুকুরের চিৎকার
মুরগির লাফ

যা দেখার দেখব এই বেলা
ইঁট পাঁজায় আগুন জ্বলছে
মাটি ফুরায়
জল ফুরায়
সাপ আসে একা একা

যা দেখার দেখব এই বেলা
নদীর বালি চুরি হয়ে যায়
গাছ চুরি হয়ে যায়
পুকুর বুজে যাচ্ছে
ব্যাঙ নাই

ঘুমের পরে ঘুম আসছে খুব।



১৮২.
আমি ধুলা লিখি

আমার আখর ধুলায় গড়াগড়ি।
আমি ধুলা লিখি। ধুলায় ধুলায়
আমার আখর। আমার আলো।

আমি আলো লিখি।

লিখন আমার ধুলায় ধুলায় শিশির।
লিখন আমার শিশিরের আগুন।
আমার আগুন আমার আখর।

আমি আগুন লিখি।


----১৭ শ্রাবণ ১৪২৮
----৩----৮---২০২১



১৮৩.
এই টুকুই তো আছে আমার
বটের ছায়া
পাখির ডাক
বাঁশবনের হাওয়া
পুকুরে ডুব

এই টুকুই তো আছে আমার
ধুলা পথে পায়ের শব্দ
শালের পাশে শিমূল
একাকী বক
ঘাসের সবুজ

এইটুকুই তো আছে আমার
মেঘের পরে মেঘ
অশথের শিকড়
কানা ভাঙ্গা থালা
ঘোমটার আড়ালে মুখ

এইটুকুই তো আছে আমার
কাঁদছে শিশু
মায়ের ডাক
তুলসী তলা
শাঁখের আওয়াজ

এই টুকুই তো আছে আমার
পায়রার উঠোন
কাকের ওড়াউড়ি
জাম বাটিতে মাড়
ছড়ানো ভাত

হাওয়াতো আছেই হাওয়ার সঙ্গে।




১৮৪.
ডাকাডাকির এই সকাল বেলা
কার কাছে যে যাই! বৃষ্টির শব্দ
আমারই বন্ধু। মেঘের শব্দ
মিলনের আস্বাদন।

স্বাদে--আস্বাদে মাটির সোঁদা গন্ধ,
আমাকে ডেকেছে শৈশব থেকে।
আমি আজ ফিরে যাই
কাদামাটি খেলায়। যদি একটা
পুতুল গড়তে পারি,

মানুষ গড়তে পারি।


-----১৮ শ্রাবণ ১৪২৮
-----৪----৮---২০২১



১৮৫.
পায়রা এসে ফিরে গেছে
কাক এসেও খবর নিয়ে গেল
উঠোনে রোদ নেমেছে
বেলা হলো

এখনো ঘুমোয় ছেলে

সজনে গাছে শুঁয়োপোকা
ঝরাপাতার আবর্জনা
তুলসী তলে আম পল্লব
সিঁদুরের দাগ

এখনো ঘুমোয় ছেলে

রাস্তা চলে যায় রাস্তার দিকে
একটা ষাঁড় একা
কুকুরটা শুঁকছে ধুলোবালি
নিম গাছ থেকে পড়ছে ফল

এখনো ঘুমোয় ছেলে

বেলা হলো,আসছি বড় বউ।



১৮৬.
চৌকাঠে আলপনা
পড়ে আছে খড়ি গোলা বাটি
ছেলে ডাকছে, মা মা

কাপড় শুকোয়
বড়ি শুকোয়
আকাশ শুকোয় রোদে রোদে

কাল বৃষ্টি হয়েছিল খুব
কাদা জল খুঁটে গেল চড়ুই
সাইকেল এসে দাঁড়ালো

মুড়িওয়ালার ডাক
টগর ফুলের কানাকানি
পোকা উঠছে গাছের ডালে

দেরি হয়ে যায় ঘরে ফিরতে।


-----১৯ শ্রাবণ ১৪২৮
----৫---৮----২০২১



১৮৭.
পুকুরে ঢিল পড়তেই,
সরে গেল জল
পানা ফুলে লাগলো কাঁপন
পানকৌড়ি আমাকে দেখলো

আমি কোথায় যাবো?

পদ্মবনে মৌমাছি
পদ্মপাতা টলমল
সূর্যের সাত রঙ
পাখিদের ওড়াউড়ি

আমি কোথায় যাবো?

কেউ ডাকছে না
রাস্তায় চলাচল
অর্জুন গাছে একটা তক্ষক
শুকনোপাতার ঝর ঝর

আমি কোথায় যাবো?

এইতো আমার চরাচর।



১৮৮.
সজনে শাক আজ একটু ভাজবে
পুঁটি মাছের টক করতেও ভুলবেনা
কে আছো গো শুনছো?

শালপাতা নিয়ে আসব
ধোঁয়া ওঠা ভাতে বিউলির ভাল
ক'টা কাগজি লেবু পেড়ে দিও

আমাকে দেবার পরও যেন কিছু থাকে
হঠাৎ কুটুম এলে বেড়ে দিও ভাত
সংসারের পুণ্যি হবে


মনে রেখো কাক ও কুকুরকেও
গাছতলেও রাখবে এক পাত
পোকামাকড়ের আহার জুটবে

বাতাস আসবে একটু একটু করে।


-----২০ শ্রাবণ ১৪২৮
----৬---৮---২০২১
----নির্মল হালদার





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ