হরিতকি গর্ভের আলোয়
---------------------------------
ধূলি ধূসর
--------------
ওগো ও অবনীর মা
অনেক রাস্তা ঘুরে ঘুরেও
আমাকে দেখলে না।
কত গাছপালা দেখলে
আগাছাও দেখলে।
কথাও তো দেখলে
শালিকের সঙ্গে শালিকের।
তুমি চেয়ে দেখছিলে কাজল লতা পাখি
তোমার প্রিয় পাখি।
থেৎলে যাওয়া পায়ের ছাপ দেখতে দেখতেও
তুমি হেঁটে যাও,
তুমি শুনতে পাও না
তোমার পায়ের তলা থেকে ধূলি ধূসর স্বরে
তোমাকে ডাকছি, ডেকেই চলেছি,
অনন্তকাল।
----৩০ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৬---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার
স্বর
-----
গাছ মানেই তো সবুজ কণ্ঠস্বর
নদী মানেই তো বহমান, সুরেলা সুর।
আমি কাকে ধারণ করবো
তুমিও কার গলায় কথা বলবে
স্থির করে নাও।
আমি একবার শঙ্খ হয়েছিলাম
তুমি ফুঁ দাওনি।
তুমি নাড়াচাড়া করবে এই আশায়
তোমার নখে নখে মেঘ হয়েছি কতবার
তুমি নজর করোনি মেঘের ভাষা বৃষ্টির ভাষা।
সাপের কাছে আমি যাই না
আমি যাচ্ছি পাহাড়ের কাছে, যদি পাই
নীরবতার পাঠ।
-----৩১ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৭---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার
অবিরাম
-------------
যে কোনো রাস্তার সঙ্গে কথা বলবো
যে কোনো রাস্তাই ঘরে ফেরার রাস্তা
পশু পাখি কীট পতঙ্গেরও ঘর আছে
যে কোনো হৃদয় বাতাসের বাসা
যে কোনো হৃদয়ের সামনে দাঁড়াবো
কথা বলবো অবিরাম
ভালোবাসাবাসির বিরাম তো নেই।
-----২ আশ্বিন ১৪২৯
-----১৯---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার
কথা
-------
আগে কথা বলবে আকাশ
তারপর কথা বলবে পাখি
তারপর গাছপালা
তারপর অবনীর মা
তারপর সকাল শুরু করে কথা বলতে
আমার কথা তার কথা
গরুর শিঙে লেগে থাকা মাটির কথা
মাটিরও জন্ম হয়েছিল
দশ মাস দশ দিন কার গর্ভে ছিল?
-----৩ আশ্বিন ১৪২৯
-----২০---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার
চিহ্ন
-------
আকাশে রাত জাগা তারার দাগ
দেখতে দেখতে দেখি, অবনীর মায়ের শাড়িতে
হলুদের দাগ। মেঝেতে পায়ের দাগ
শুধু বাতাসে নেই পাখির পায়ের চিহ্ন।
---৪ আশ্বিন ১৪২৯
---২১---৯--২০২২
----নির্মল হালদার
১:
ফুলের কাছে ফলের কাছে
আলোর কাছে অন্ধকারের কাছে
আমার কাছেও
হাওয়া স্পর্শ রেখে যায়।
২:
ফুলে হাত দেবার আগে
একবার দেখে নাও, ফুলে ফুলে
কার স্পর্শ জেগে আছে।
৩:
এই ভোরে
কী কী ফুল চয়ন করবে
আমাকে না বললেও
আমাকে যে বলতে হবে,
জবা ফুল তুলতে যেও না।
জবা ফুলের ভিতরেই ফুটে উঠছে সূর্য।
----৭ আশ্বিন ১৪২৯
----২৪---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার
তুলসি
---------
যে গাছই লাগাই তুলসি গাছ হয়ে ওঠে
ছোট ছোট হাওয়া ছোট ছোট খুশি
আমাকে ছুঁয়ে চলে যায় বাতাসে
বাতাস, সে তো অনেক উঁচু
পাখিরা নাগাল পায়, আমাকেও পেড়ে দেয়
বাতাসের রেণু।
লালন
---------
সকালের চা আমাকে দিতে দেরি করলেও
তুলসি গাছে জল দিতে দেরি করে না
অবনীর মা
তুলসী গাছের ছোট ছায়া
লালন করতে করতে
আমাকেও লালন করে অবনীর মা।
----- ৮ আশ্বিন ১৪২৯
মহালয়া
২৫---৯---২০২২
রবিবার
নির্মল হালদার
চোখ
--------
ডাক্তার বললেন,
আপনার চোখ শুকিয়ে যাচ্ছে।
শুকিয়ে যাচ্ছে!
ভয় আমাকে আঁকড়ে ধরলো।
আমার চোখের জল শুকিয়ে গেলে,
কাকেই বা কী দেবো?
চোখের জল ছাড়া আমার যে কিছুই নেই।
ফল ওয়ালা
------------------
আমার শাহরুখ
আপেল আঙুর লেবু কলা বিক্রি করে।
আমার শাহরুখ আমাকে জানায়,
ফলের বাগান আছে কোথাও
আমি যেতে পারবো না কখনো।
২:
ঘরে একটা গামছা নতুন গামছা
কাকে দেবো?
শাহরুখকে দিলে পছন্দ করবে?
রামানুজের ঠাকুমা বলে গেছে,
কাউকে গামছা দিলে তার পরমায়ু বাড়ে।
-----১০ আশ্বিন ১৪২৯
-----২৭---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার
রাস্তা
-------
একটা রাস্তা থেকেই বাথান ডাকে বাপি ডাকে
আমি কার কাছে যাবো?
বাথান একটি গ্রাম বাপি আমার বন্ধু
যেদিকেই যাবো একটাই রাস্তা
চাষাড়ে পায়ের কথা বলে ফাটা পায়ের কথা বলে।
পদবি
---------
যে কোনো একটি গ্রাম আমার পদবী
একটি গ্রাম নিয়েই আমার হেঁটে যাওয়া
গ্রাম থেকেই আমার তাপ-উত্তাপ
আমার নিঃশ্বাস
আমার নিঃসর্গ।
আমি নির্মল পিঁড়রা হলে
তুমি বাদশা চাকিরবন
আমার রাস্তার সঙ্গে তোমার রাস্তা,
একইসঙ্গে ধুলামাটি
আমাদের রচনা করে।
----১১ আশ্বিন ১৪২৯
----২৮--৯---২০২২
-----নির্মল হালদার
দুঃখ বেদনা
-----------------
এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে বক
অপেক্ষা করছে বক
ওই অপেক্ষা ছুঁতে না-পারার দুঃখ
জলে ভাসাই।
বকও দু ঠোঁটে তুলে উড়তে উড়তে
অনেক দূর।
-----১২ আশ্বিন ১৪২৯
-----২৯---৯---২০২২
-----নির্মল হালদার
নিবেদন
------------
নয়নে লুকানো আছে
যেন নজর না-পড়ে।যেন
বাতাসে ছড়িয়ে না পড়ে।
আমার গোপন সুগন্ধ আমারই
যেন আমার চোখের জলে
না-পড়ে। যেন
পড়ে না যায়।
----১৩ আশ্বিন ১৪২৯
----৩০---৯---২০২২
----দেবী পক্ষের পঞ্চমী তিথি
-----নির্মল হালদার
মায়া
-------
কান্নাও এক ভোর
অনেক কান্নার পরে একটি ভোর
এই ভোরের কাছে যে আসবে ফুল কুড়াতে
সেই পাবে চোখের জলে ভেজা মাটি
যে মাটি থেকে গড়ে ওঠে মায়া
মায়া এক প্রতিমা।
----১৪ আশ্বিন ১৪২৯
দুর্গা ষষ্ঠী
-----১---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার
নিসর্গ প্রকৃতি
-------------------
ফুল তুলতে তুলতে বেলা হয়ে গেল
কার ফুল তুলতে তুলতে বেলা হয়ে গেল?
কে আছে কোথায়?
আমার অন্তর তো আমি গোপন করি, শুধু
আলো আঁধারে নিসর্গ প্রকৃতি
চন্দ্র সূর্যের আরতি।
কাজ
--------
আমার যে অনেক কাজ
ডালে ডালে লটকে আছে শিশির
আমার আঁজলায় আমি ধরবো।
ফুলের মুখে পোকার চলাফেরা
আমাকে যে বলতে হবে, তোমার জায়গায় তুমি
যাও যাও
আমার যে অনেক কাজ।
আমার কাঁধেই যে সূর্য
আমাকে যেতে হবে অনেক দূর
নতুন করে জ্বর এলে,
দেখাশোনা করবে কে?
----১৮ আশ্বিন ১৪২৯
বিজয়া দশমী
-----৫--১০--২০২২
-----নির্মল হালদার
বাসা
-------
পাখির চোখের কোণে যে আলো বাসা বাঁধে
সেইতো ভোর
সেই তো আমাকে ডাকে
আমি যাই
পাখির সঙ্গে আম বন জাম বন
বট ফলের লাল রঙ সূর্যের কিরণে মেশাই
আমিও পাখির সঙ্গে কাঠ কুটো জড়ো করি
বাসা বাঁধি দিন ও রাত্রির।
শালুক
----------
এক গলা জলে দাঁড়িয়ে থাকা শালুকের পাশে
আমিও দাঁড়িয়ে আছি, আমাদের দিকে চেয়ে
ভোরের আলো ফুটবো ফুটবো করে
আমরাই তো প্রেম
আমাদের জলেই স্নান করবে সূর্য
তোরা কে আসবি আয়
জলকেলি করবি সূর্যের সঙ্গে
চুপি চুপি শালুক পাতায় রেখে যাবি
আলো আঁধারের বিরহ।
-----১৯ আশ্বিন ১৪২৯
একাদশী
-----৬---১০---২০২২
----নির্মল হালদার
বাকল
----------
কে কে নতুন জামা কাপড় পরলো
উৎসব শেষেও আমার কাছে খবর নেই।
আমি তো চেয়েছিলাম, খড়ের সঙ্গে খড়ের বুনন,
ঘাসের সঙ্গে ঘাসের বুনন,
আমার পরিধান।
আর অবনীর মা?
আজও গাছের বাকল পরে দাঁড়িয়ে আছে
গাছের চারার সঙ্গে।
-----২০ আশ্বিন ১৪২৯
----৭---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার
এক
------
এক ফোঁটা শিশিরে আমার স্নান
এক ফোঁটা আলো আমার আহার
এসো মৌমাছিরা, ধূলা আর ধূলিতে ভেজাও
পাখার হাওয়া
এসো প্রজাপতি, আমার গায়ে ছেটাও
রঙের খুশি
এসো গো লব কুশের মা, আমার কপালে দাও
একবিন্দু মাটি।
----২৩ আশ্বিন ১৪২৯
----১০---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার
সকালের পায়রা
-------------------------
ঘুম থেকে উঠেই পায়রাদের মুড়ি দিয়ে থাকি
এই গল্প পুরোনো হলেও এই গল্প নতুন
ঘুম থেকে উঠেই পায়রাদের মুড়ি দিয়ে থাকি
প্রতিদিন।
প্রতিদিন পায়রাদের পাখার হাওয়া নতুন
নিত্য নতুন খিদে।
আমিও মুড়ির সঙ্গে মেশাই কখনো ভোর
কখনো সকাল কখনো রোদ
কখনো আমার অভিমান
আমাকে কবে দেবে আকাশের কণা।
----২৪ আশ্বিন ১৪২৯
-----১১---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার
ইশারা
----------
কার ইশারায় সকাল এসেছে?
প্রথমেই আকাশ
তারপর পাখি
তারপর গাছপালা
তারপরেই,
মাটি থেকে ফসলের রব
তারপর
কণ্ঠস্বর থেকে কণ্ঠস্বর
আমাদের বেঁচে থাকা,
আমাদের ইশারা করে।
নুন
-----
আকাশও একটা জিভ
পৃথিবী মেলে দিয়েছে।
নুন কম পড়লে,
সেই জিভ থেকে নুন পাড়ে
আমাদের সংসার
আমাদের নেই নেই সংসারে
ভালোবাসা কম পড়লে
জিভ থেকে ঝরে পড়ে
নুনের জল।
-----২৫ আশ্বিন ১৪২৯
-----১২---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার
মর্ম বেদনা
---------------
ভোরের শিশির চেয়ে আছে শুকতারার দিকে
ও শিশির শোনো,
আশ্বিনের আকাশেও মেঘ আসে মেঘ যায়
শুকতারার মুখেও পড়ে মেঘের ছায়া
ও শিশির শোনো, শুকতারার মর্ম বেদনা।
কুশল
---------
নদীতে বান এলে পাড় ভেঙ্গে যায়
সেতুও ভেঙ্গে যায়
সম্পর্ক থাকে সম্পর্কের ঠিকানায়
শুকতারা ওঠে।
আমার সঙ্গে কথা বলতেই,
শুকতারা ওঠে।
আমিও জানাই আমার কুশল,
সারাদিন পায়রাদের পাখার ঝাপটানি।
----২৬ আশ্বিন ১৪২৯
----১৩---১০--২০২২
-----নির্মল হালদার
ওম
------
সেলাই করতে করতে সন্ধে
ফুটে উঠবে তারা ফুল
আমার কাঁথা
গায়ে জড়ালেই আমার শীত গ্রীষ্ম কেটে যাবে।
২:
ছেঁড়া শাড়ির পাড় থেকে সুতো টেনে টেনে
কত আর সেলাই করবে?
তারা ফুলতো আছেই
প্রেমের মতো স্নেহের মতো,
গভীর উষ্ণতায়।
কত আর ফোটাবে ফুল?
ছোটবেলা থেকে বড় বেলা একটাই কাঁথা,
একটা আকাশ।
-----২৭ আশ্বিন ১৪২৯
----১৪---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার
সলতে
----------
পিলসুজে ঠাঁই পেলে
একটা প্রদীপ প্রদীপ হয়ে ওঠে।
কে পিলসুজ কে প্রদীপ?
খোঁজ করতে করতে এই ভোর, ভোরের বৃষ্টি
আবছা অন্ধকার
একটা প্রদীপ জ্বালাবো
লম্বা লম্বা বৃষ্টির ফোঁটা প্রদীপের সলতে
আমার মাথায়
আমি জ্বালাবো।
ঠাঁই
------
একটা গাছের ডালে এক ফোঁটা বৃষ্টি তুমি
আমাকে দিলে না ঠাঁই।
আমি শুকনো হাওয়া,
চেয়ে থাকি তোমার দিকে।
-----২৮ আশ্বিন ১৪২৯
----১৫---১০---২০২২
-----নির্মল হালদার









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন