শনিবার, ২৩ জুলাই, ২০২২

নির্মাণ শিল্প



নির্মাণ শিল্প
---------------

ইঁট-বালি-সিমেন্ট। লোহার ছড়।
রাজমিস্ত্রি। দিনমজুর।
সকাল ১১ টা থেকে বিকেল ৫ টা অবধি কর্মব্যস্ততা।
কাজ চলতে চলতেই গুটকা--বিড়ি--খৈনি। রসিকতা।

মহিলা শ্রমিক মাথায় ইঁট চাপিয়ে আসছে। 
দুজন শ্রমিক দুই কাঁধে লোহার ছড় নিয়ে আসছে।

ঝুড়ি ঝাঁটা। বাঁশ। কাঠের বোঝা।
এক জায়গাতে জড়ো হয়ে আছে। গাঁইতি কোদালও আছে।

প্রধান রাজমিস্ত্রি হাঁক দিয়ে উঠলো-----কুথা গেলি রে গদাধর? কাজটা জলদি জলদি না তুললে, খাবি কখন?
তখনই মহিলা শ্রমিকের মাথা থেকে মেঝেতে পড়লো ইঁট।

শব্দ হলো।

লোহার ছড়ে তার বাঁধছে দু'জন। একজন আরেকজনের কাছে চুন চাইছে----- খৈনি টিপবে।

ওই দিকে একজন সিমেন্টের সঙ্গে বালি মিশিয়ে তৈরি করছে মশলা।

বাড়িটা লম্বা চওড়ায় বড় হবে।

শ্রমিকদের ঘাম ঝরবে অনেক।
শুধু কি আর ঘাম? ঘাম রক্ত মিলেমিশে একটা বাড়ি।

নির্মাণ।

এক মহিলা শ্রমিক প্রধান রাজমিস্ত্রির উদ্দেশ্যে বলে------
সূর্যি তো মাথার উপরে। ওহে 
অনিল দাদা ইবার টিফিন বাটি খুলবো?

অনিল দাদা কোনো জবাব না দিয়ে টিউকলে হাত ধুতে গেল। তার মানে, সবাই একসঙ্গে এবার খাওয়া দাওয়া করবে।

যে যার টিফিন বাটি খুলে বসে পড়লো মেঝেতে।

এক মহিলা শ্রমিক এক পুরুষ শ্রমিককে কি একটা তরকারি তুলে দেয় তার বাটিতে। পুরুষ শ্রমিক বলে---টুকু চিকেন নিয়ে আসবি তবে ন-----। ভেন্ডি ভাজা আর ভাত রোজ রোজ কি ভাল্লাগে ?
আরেক পুরুষ শ্রমিক কথার সঙ্গে কথা চাপায়-------হামার ভাতে তো রোজেই আলু চখা। 
তখন আরেক শ্রমিক বলে-----
বউদের দোষ নাই। ভোরে উঠে
কৎনা কাজ করবেক?

খাওয়া-দাওয়ার মাঝে সারা গায়ে সিমেন্ট মাখা এক যুবক এসে জানতে চায়------সিমেন্ট এসেছে কুথায় রাখবেক?

একটা বাড়ি তৈরি করতে করতে 
একটা পরিবার গড়ে ওঠে। কেউ যদি পেঁড়রা থেকে এসে থাকে কাজ করতে, আরেকজন এসেছে চিপিদা থেকে‌। কুশটাঁড় একজন এলে আর একজন এসেছে ডুমুরশোল থেকে।

দশটা গাঁয়ের শ্রমিক কয়েক মাস ধরে একটি পরিবার। সুখ দুঃখের বিনিময়। হাসিঠাট্টা বিনিময়।
কেউ একজন বললো---আজ
ঠিকাদার টাকা দিলে ভাটিতে ঢুকবো ভাই।
তাকে সমর্থন জানিয়ে আরেক জন বললো----হামিও খাবো। বহুৎদিন খাই নাই।

টিফিনের পর দু' একজন গামছা পেতে শুয়ে পড়েছে। কেউ কেউ ইঁটে মাথা রেখে মেঝেতে লম্বালম্বি।

মহিলা শ্রমিকরা গোল হয়ে একদিকে গল্প করছে। চুল আঁচড়ায় একজন। আর একজন
মাথা থেকে উকুন তুলে তুলে মেরে যাচ্ছে নখের ডগায়।

রোদের তেজ নামছে।

কাজও শুরু হয়ে গেল।

রাজমিস্ত্রির হাতে কর্ণিক। 
চারদিকে শব্দ। দু'চারটে কথাবার্তা।

প্রধান রাজমিস্ত্রি বলে ওঠে-----
বালিটা চালতে হবে। আরেকজন শ্রমিক বলে-----সিমেন্ট কম পড়ছে বালিতে। এখনো জানলি নাই কত সিমেন্টে কত বালি লাগে!

তুই নতুনেই রয়ে যাবি নকি?
কাজ না শিখলে খেতে পাবি নাই।

এক শ্রমিক বিড়িতে আগুন দিতে দিতে বলে উঠলো-----আজ গোপালপুরের হাট। সবজি কটা লিতেই হবেক।

কাজ করতে করতেই নিজেদের কথা। নিজেদের সংসারের ছবিও ফুটে ওঠে।
এক মহিলা শ্রমিক বলে----লাতনিটার জন্য চানাচুর লিব। ঠিকাদার পয়সা দিবেক ত
অনিলদা?

একটি কম বয়সি মহিলা শ্রমিকের মন পড়ে আছে তার ছ'মাসের শিশুর জন্য। শাশুড়ির কাছে রেখে এসেছে। শাশুড়ি আবার বুড়ি মানুষ। কি করছে কে জানে! 
তার এক ছোট জা আছে,সে দুধ দিবেক ত?


-------৬ শ্রাবণ ১৪২৯
-------২৩---৭----২০২২
-------নির্মল হালদার


















ছবি : কল্পোত্তম



















কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ