সুরের আগুন ------১১ সেপ্টেম্বর ২০২২
-------------------------------
আমি বোধ হয় আত্মজীবনী লিখতেই এসেছি। সেই ৭৮ সালে
কবি মণীন্দ্র গুপ্ত তার পত্রিকা
" পরমা " র জন্য আমাকে লিখতে বলেছিলেন শৈশব স্মৃতি।
তারপরও অনেক ছোট কাগজে
টুকরো টুকরো আত্মকথা লিখেছি।
এই সেদিনও গত শীতে রামানুজ মুখোপাধ্যায়ের কথা মত হোয়াটসঅ্যাপে লিখতে শুরু করি,
আত্মজৈবনিক গদ্য। যা ধারাবাহিকভাবে অনেকদিন চলেছিল। যা বই হয়ে প্রকাশিত হয়ে গেল ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২ রবিবার। শান্তিনিকেতনে।
রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী নীলিমা সেনের বাড়িতে। এক ঘরোয়া সভায়।
বইটি প্রকাশের আগে সোমজিৎ
আমাকে বলেছিল, বইয়ের মলাট
উন্মোচন করবেন এক কবি।
আমি তাকে বারণ করেছিলাম।
আমি চাইনি, কোনো কবি অথবা কোনো বিখ্যাত মানুষ বইটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন,
আমার ইচ্ছে ছিল না।
বইটির বিষয় যেহেতু স্মৃতিকথা
এবং ছোটবেলার কথা, আমি চাইছিলাম একটি বালক বইটি উদ্বোধন করুক।
সোমজিৎ কথা রেখেছে। সে
উদ্বোধন করতে নিয়ে এসেছিল
পাঠভবনের ক্লাস ফাইভের এক ছাত্র আদিতেও ঘোষালকে।
এও আমার পরম প্রাপ্তি।
আদিকে দেখতে দেখতে আমি দেখছিলাম আমার ছোটবেলা।
আমিও পাঠ ভবনের ছাত্র। অনেক কাল আগের ছাত্র। যখন গুরুদেব ছিলেন।
আমিও খড়ের চালা হোস্টেল ঘরে থেকেছি দিনের পর দিন। আমিও
গানের সুরে সুরে কাটিয়েছি আমাদের আশ্রমের দিনগুলি। তখন শান্তিনিকেতনের বাতাসে বাতাসে, জলে স্থলে গুরুদেবের গান। শুনতে শুনতে কত গান যে আমার অন্তরে অন্তরে বাসা বেঁধেছিল, সমস্তই মনে পড়ছে আজ।
একদিন বিকেলের দিকে আমি খেলার মাঠ থেকে বাইরে এলোমেলো ঘুরতে ঘুরতে গুরুদেবের মুখোমুখি। তিনি আমাকে দেখেই জানতে চাইলেন,
এই ছেলে---খেলাধুলা ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?
আমি একটু ভয় পেয়ে জড়তা বোধ করছিলাম। গুরুদেবকে কিছুই বলতে পারিনি। আমাকে
চুপ দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন---তুই আমার গান জানিস?
এবারও আমি চুপচাপ। তিনি তখন আমার মাথার চুল ঘেঁটে
আমাকে বললেন----তোর কথা আমি শুনেছি, আমি জানি তুই যেমন অঙ্ক করতে পারিস, তেমনি
একা একা গান করতে পারিস। এখন তোকে একটা গান শোনাতেই হবে।
আমি তখন আর কোনো কিছু চিন্তা না করে গেয়ে উঠলাম------
তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে মোর প্রাণে---।
-----২৮ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৪----৯---২০২২
------সন্ধ্যে-- ৬/ ৫৩
-----নির্মল হালদার

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন