বৃহস্পতিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

হরিতকী গর্ভের আলোয়

হরিতকী গর্ভের আলোয়
---------------------------------




গ্রাম
------

যে কোনো  রাস্তাই চলে গেছে 
লুশাবেড়ার দিকে

লুশাবেড়া একটি গ্রাম
এক জনপদ

টমেটোর ত্বকের মত মসৃণ

বেগুন কাঁটা ফুটলেও রক্ত ঝরবে
রক্তের বীজ ছড়িয়ে দিলে,

গ্রামের পর গ্রাম

স্বস্তিতে থাকতে দে, আপন মনে।





জাগরণ
-----------

ঝিঙে লতার আত্মীয়তা যে দেবে দাও
আমি দেবো বকের অপেক্ষা
সেও তো সৌন্দর্য।

পাহাড়ও এক অপেক্ষা, পছন্দ হলে
কাঁধে তুলে নাও
সেও তো সম্পদ আমাদের,

সেওতো জাগরণ।

অভাব অনটনও জেগে আছে
ঘরে বাইরে
দুহাত পেতে চাইলে,

তোমাকে দিতে পারবেনা বগলা সোরেন।


-----২৪ শ্রাবণ ১৪২৯
-----১০---৮---২০২২




দোকানি
------------

১:
কে যে দোকানি কে যে দোকানি নয়
সময় নেই আর চেনাচিনির
ধার বা নগদে নয়, দরদারও করবো না
কাছে দাঁড়াবো

যদি প্রশ্ন করে, কী চাও হে?

গামছা পাতবো

চাল না দিলেও যদি একবিন্দু নুন পাই

বেলা তো হলো, নুন চেটে চেটে খাবো।



২:
কই হে দোকানি কেমন আছো?
বাজারের হালচাল যেমনই হোক
তুমিতো কৃপা দৃষ্টি দেবে?

দোকানদারও কখনো কখনো কৃপানাথ
দু দানা মুসুরি ওজনে বেশি দিয়েও
কথা বলে না।

এই যে না--কথার রূপ ভালবাসতে ইচ্ছে করে।

ভয়ও করে।

-----২৫ শ্রাবণ ১৪২৯
-----১১---৮----২০২২





আলো আঁধার
--------------------

আমাকে জনার সেদ্ধ দিয়ে
অশ্বিনীর মা বললো,খা বাপ খারে
সারাদিন দম থাকবে।

কত আর দম ধরবো মাসি
ধান গাছের মাথায় ঢেউ উঠছে
সেও তো ধরেছি

জনার গাছের মত লম্বা না হলেও
আমিও এক কাঠামো
আমার পুরনো রক্তেও  বইছে,

প্রেমের আলো আঁধার।

-------২৬ শ্রাবণ ১৪২৯
------১২----৮----২০২২





হাহাকার
------------

গ্রাম ছুটে যাচ্ছে শহরের দিকে

দাঁড়িয়ে আছে তালগাছ।

পুকুরে ডুবে গেল শুকনো পাতা

গ্রাম ছুটে যাচ্ছে শহরের দিকে।

দাঁড়িয়ে আছে অমূল্য চরণ

বৃদ্ধ অমূল্যচরণ।






খিদে
---------

যা আছে যেটুকু আছে খুঁড়ে খুঁড়ে খা

লোহা পেলে খা
তামা পেলে খা

ভালোবাসা পেলেও খা।

যা আছে রঙ--বেরঙ খুঁড়ে খুঁড়ে খা

কাছে যেতে পারলে যা
তুই খেতে পারবি সমুদ্র ফেনাও।

------১ লা ভাদ্র ১৪২৯
-----১৮---৮---২০২২




১.
খদ্দের কালো না ফর্সা দেখলে হবে না
সে এক পয়সার সর্ষে চাইলে
তুমি তো আর পোস্ত দিবে না

খদ্দের শুধু খদ্দের।

উপর দিকে না চেয়ে
তোমার দিকে চেয়ে আছে
কখন তুমি দেবে এক সের চাল

ঘরের উনুনে হাঁড়ি।

জলদি দাও হে দোকানি,জল ফুটছে।



২:
কে বলেছে সস্তা করতে
যা দাম তাই দাও।
কালো জিরেরও দরকার পড়ে
আমাকে নিয়ে যেতেই হবে।

ভালোবাসতেই হবে,
কালো জিরের গুণাগুণ।




৩:
কখনো রাস্তায় দেখা হয় না
কেবল দোকানেই দেখা হয়
সারাদিনে দু' একবার

রোদে জলেও দোকানে যাই
খদ্দেরের ভিড় থাকলেও দেখতে পাই,
দোকানির চোখের হাসি

কী যে তার মানে, আমার জানা নেই।

----- ২ রা ভাদ্র ১৪২৯
----১৯----৮----২০২২




বেঁচে থাকা
---------------

মাছি এসে গাঁদাল পাতার গন্ধ টানে

সেও তো চাইছে বাঁচার ধর্মে বাঁচতে

গাঁদাল লতে  জড়িয়ে থাকা আমারও স্বভাব

লবঙ্গ লতিকা নেই

আর কে কে নেই?

লীলাবতীর ছেলেটাও অনেক দূর গেছে।
কাছে নেই নদীও।
মেষ পালকের কাছে যাবো
যদি কোলে তুলতে পারি মেষশাবক।





বীজ
-------

কিছুই চাইছি না

গাঁদাল লতে জড়িয়ে থাকা শিশির
কাছে এলে আসতে পারে।
গাঁদাল পাতাও যদি চলে আসে
যত্ন করে সাজাবো।

একটা গ্রাম তো চেয়েছিলাম
এক অবনী
তুমি তো দিলে না, মন জুড়া----
আমাকে থাকতেও দিলে না,

পেঁপের বীজের সঙ্গে।

ছোট ছোট শাদা শাদা বীজ কী শান্ত কী ধীর।

------৩ ভাদ্র ১৪২৯
-----২০----৮----২০২২





চিঠি
--------

আজও  চিঠি লেখে। অনেকেই লেখে।
অবিরাম।
সবুজ কালিতে লেখে দুঃখ বেদনা
আনন্দ বেদনা।

চিঠি থেকে ঝরনার ধ্বনিও আসে
কখনো কখনো চোখের জলের শব্দ।
চিঠি থেকে মৌমাছিও আসে
কখনো কখনো পাড় ভাঙ্গার শব্দ।

আজও চিঠি লেখে। অনেকেই লেখে।
অবিরাম।
সবুজ কালিতে লেখে আজও লেখে,
ইতি শাল গাছ।

------৪ ভাদ্র ১৪২৯
-----২২---৮---২০২২





ভাদরের ভোর
--------------------

ভাদরের ভোর
তাল পড়ার শব্দ হলো।

ভোরের শুকতারা কি মাটিতে পড়বে?

কত তারা
ভোরের শুকতারা থেকে ধ্রুবতারা
মাটিতে পড়লে ঘ্রাণ চাইবো

তালের গন্ধে ছোটবেলা দৌড়ে আসে

চন্ডী আর অশ্বিনী কাড়াকাড়ি করে
একটি তালের গৌরব।

আমিও গৌরব করি, আমি প্রথম দেখেছি

ভোরের শুকতারা।

----৫ ভাদ্র ১৪২৯
----২২---৮---২০২২



বিরির লত ভুঁইয়ে লুটাতে লুটাতে
কী দেখে আর কী দেখেনা
আমার জানা নেই।

বিরির লত ভুঁইয়ে লুটাতে লুটাতে
কার কাছে যেতে চায় কতদূর যেতে চায়
আমার জানা নেই

বিরির লতে নিজেকে জড়ালে
আমিও কার কাছে যাবো?

-----৫ ভাদ্র ১৪২৯
-----২২---৮----২০৩২





বীজ
--------

কার কাছেই বা কী চাইবো

অবনীর মাকেও বলতে পারিনি,
তোমার একটি সন্তান দাও।
আকাশকেই বা কবে বলেছি,
তোমার একটি সন্তান দাও।

সবাই নিজের নিজের সন্তান সুখে
লালন করে জল ও বাতাস

জোনাক জ্বলা সুখ কবেইবা পেলাম?
কার কাছেই বা চাইবো,

খরগোশের দৌড়ে যাওয়া?

সবাই নিজের নিজের বৃষ্টি নিয়ে
বৃষ্টির বীজ ধরে,

আদর করে।

------৬ ভাদ্র ১৪২৯
-----২৩----৮----২০২২




বিরহ
--------

বাঁশ বন না চিনলে বাঁশি চিনবেনা
বাঁশি না চিনলে বিরহ চিনবে না।

বিরহ বলতে কি জানে শালিক--চড়ুই?

ময়ূরের বর্ষা আছে।

কোকিলের আছে ফাগুন চৈত্র।

ভাদ্র আশ্বিনের মেঘে
অপরাজিতা খুঁজে বেড়ায় নীল রঙ।

------৭ ভাদ্র ১৪২৯
-----২৪---৮---২০২২





 রূপের লাগিয়া
---------------------

বক চেয়ে আছে আকাশের দিকে
যদি মেঘ আসে বৃষ্টি আসে

চারদিকে শুকনো খাল বিল

বৃষ্টি কি আর নামানো যায়?

ভালোবাসা কি আর নামানো যায়?

ঝিঙে ফুল ফুটেছে আপন মনে

ঢেঁড়সের ফুল আপন মনে ফোটে 
শ্রীনিবাসের কাছে

জলেও ফুটবে মাছ যদি বৃষ্টি আসে

বকের কাছেও আসবে মাছের রূপ।

------৭ ভাদ্র ১৪২৯
-----২৪----৮----২০২২





অনির্বাণ এক আলোর কাছে
----------------------------------------

পাখি আমাকে দিয়ে গেল আহার

নুন নেই তেল নেই,
পাখিকে বলতেই, সে আমাকে বললো,
পাখিদের আহারে আলো থাকে---

সেই তো নুন তেল মসলা।

------৮ ভাদ্র ১৪২৯
------২৫----৮----২০২২





রাস্তা
-------

দুটি তারার মাঝখানে যেটুকু ফাঁক
সেই আমার রাস্তা।
তার আগে কেউ তারা দুটি পেড়ে নিলে
আমি খুঁজে পাবো না আমার ঠিকানা।

দুটি পাতার ফাঁকে যে হাওয়া বইছে
আমাকে ছুঁতেই হবে আজ।
আজও ভোরে উঠেছি গাছের নিকটে যাবো
হরিতকি --বহেড়া না হোক, আমার সামনে

পলাশ অনেক।

পলাশ রঙের ভালোবাসায় 
কী যে ভালোবেসেছি তোকে

তুই ভুলে গেলে ভুলে যা।

----১১ ভাদ্র ১৪২৯
----২৮----৮---২০২২




জ্বর
-------

মেঘলা রাত জ্বরের মতো

বৃষ্টি নেই

আকাশে নেই বিদ্যুতের হাসি খেলা

মেঘলা রাত জ্বর বাড়ছে ক্রমশ

জোনাকিরা নেই

কে আছো কোথায়?

ঘুমিয়ে পড়বার আগে আমাকে বলে যাও।






তালা-চাবি
---------------

তালা চাবিতে মরচে পড়লেও
ঘর দুয়ার খুলতে হবে।

মরচে পড়া মন খারাপ হলেও
ধুয়ে ফেলতে হবে,

ভোরের শিশিরে।

------১১  ভাদ্র ১৪২৯
-----২৮---৮----২০২২





প্রতিদিনের আমি
------------------------

সারাদিন কত কাজ

পায়রার কাছে মুঠো মুঠো মুড়ি,
ভোরের ভালোবাসা।
কুকুরের কাছেও যাই,
আমার সঙ্গে থাকে বিস্কুট।
তুলসি গাছের নিকটে একদন্ড,
এক মুঠো জল।

ফুল তুলতে যাই না আর
ফুলের কাছে যাই

সবার রঙে রঙ মেশাই।

সূর্য প্রণাম তো থাকেই

সেও এক বড় কাজ, আমি ভুলে গেলে,
অভিমান ক'রে কালো মুখ

ও মুখ হাসলেই যে আমি নিরাময়।






এক কোণে
----------------

যা পেয়েছি জড়ো করতে সময় লাগবে

যা পাইনি, তুমি দেবে?

রুমালের এক কোণে সেলাই করো আমার নাম

আকাশের এক কোণে ভোরাই।

------১২ ভাদ্র ১৪২৯
------২৯----৮---২০২২



 
ভালোবাসা আছে
-------------------------

হাওয়া আসছে আসতে দাও
মেঘ কেটে যাবে।
লীলা বলছিল আসবে
তাকেও বলো আসতে,

মেঘ কেটে যাবে।

পাখিদের রাস্তা থেকে কেটে যাবে আঁধার

ও বউ ঘোমটা খোলো,
যে কথা বাকি আছে বলে যাও।

সলতে পাকাও।

পিদিমে তেল কম পড়লে,

ভালোবাসা আছে।





বেদনা
---------

ওরা বলাবলি করছিল----
দিনটা ক্রমশ রোগা হয়ে পড়ছে।
আমি ওদের জানাই,
জল জঙ্গলও শীর্ণ হয়ে পড়ছে

উড়ে গেল শালিক--চড়ুই।

------১৫ ভাদ্র ১৪২৯
------১----৯----২০২২





প্রথম সন্তান
-----------------

ওলো ও অবনীর মা
তোর  নাতি হলো পুতি হলো
তোর চাঁদ হলো গগন হলো

গরুর স্তনেও দুধের ভার

ভাবনা কীসের?

ওলো ও অবনীর মা
ভাদরে আদর এলো
বেটার বেটা রাজার বেটা এলো

ধানেও দুধ আসবে

ভাবনা কীসের ?

ওলো ও অবনীর মা
আট কলাইয়ের একটা কলাই গড়িয়ে গেলে
আমি ধরবো আমার স্নেহ

আমার পৃথিবী ।

------১৭ ভাদ্র ১৪২৯
-----৩----৯----২০২২





সম্বল
--------

কাকে ডাকছো বৈরাগী?

কাকও সাড়া দেবে না
বেলা যে অনেক হলো
সবাই গেছে আহার খুঁজতে

কাজের শহরে গেছে
মেয়ে মরদের দল
কাকে আর পাবে

চালাতে আছে লাউ কুমড়া
যদি কিছু বলার থাকে
বলে যাও ওদের

উঠানেও পড়ে আছে পায়ের শব্দ
জড়ো করলে অনেক কথা
শোনার সময় থাকলে শোনো

আজ এটুকুই সম্বল।

-----২২ ভাদ্র ১৪২৯
-----৮---৯---২০২২





বৃষ্টি
------

বৃষ্টির ফোঁটাকে ছুঁতেই হবে মাটি

বৃন্ত থেকে আরেক বৃন্ত

শিকড়ের কাছে।

বৃষ্টির ফোঁটা লটকে আছে ডালে ডালে।






বাজার
-----------

বাজার মানে তো মধুসিং সর্দার।
বাজার মানে তো ভগত মাহাত।
বাজার মানে তো অশ্বিনীর মায়ের মাথায় ঝুড়ি
বাজারে আসছে শাক বিকতে।

শাকের সঙ্গে পোকা থাকলে
তার সঙ্গেও আমার পরিচয়।
শাকের সঙ্গে ঘাস থাকলে আমি পরিচয় করবো
জানতে চাইবো, আমার ঘাস জন্ম কবে!

মধু আজ করলা বিক্রি করলেও
আমি বলবো, সে বিক্রি করছে করলার মধু।
ভগত আজ ছাতু বিক্রি করলেও
আমাকে বিক্রি করবে না কোথাও  
এটুকুই রক্ষে।


-----২৮ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৪--৯---২০২২





সাহস
--------

মাটির তলে তলে
যে কেউ হতে পারে লোহা তামা অভ্র
সোনা রূপাও হতে পারে।
একজন তো নদী হয়েছে
আরেকজন পাথরের নূড়ি।

পাহাড় হতে সময় লাগবে সাহস লাগবে

মাথা উঁচু করতে সবাই তো পারে না।

-----২৯ ভাদ্র ১৪২৯
-----১৫----৯----২০২২
----নির্মল হালদার













কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ