বুধবার, ২২ জুন, ২০২২

জোনাকিরা জ্বলতে জ্বলতে নিভে যায়



জোনাকিরা জ্বলতে জ্বলতে নিভে যায় 
-----------------------------------------------

পাহাড় থেকে নামছে।

মাথায় কাঠের বোঝা,
পাহাড় থেকে নামছে।

শহরতলীর কোনো হাটে বিক্রি করতে যাচ্ছে কাঠের বোঝা।
তার আগে বনে জঙ্গলে গেছে।
যে সমস্ত গাছের ডাল জীর্ণ হয়ে পড়েছে, সেইসব ডাল গুলি তিন চারদিন ধরে একটু একটু কুড়ুলের
আঘাত। তারপর একদিন, ডালগুলি ঘরে নিয়ে আসে। পাতাপুতা সাফসুতরো করে হাটের দিকে।

এই জীবন ও জীবিকার দিকে
বিশেষ নজর নেই কারোর। মাঝেমধ্যে বা ভোটের মরসুমে
মনে পড়ে । মনে পড়ে, জঙ্গলের দিকে, পাহাড়ে অনেক বসতি আছে। যাদের ভোটাধিকার আছে।

ভোট শেষ হলেই, সেই একই অন্ধকার। কোনো স্পন্দন নেই। শুধু ঝিঁঝিঁ ডাক।

পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে অনেক বসতি। কোথাও মাত্র সাতটা ঘর। কোথাও মাত্র কুড়িটা। আলো নেই। জল নেই।

শুয়োর আছে। মুরগি আছে।
হাঁড়িয়ার হাঁড়ি গড়গড়ায়।
একটা দুটো কুকুর এসে শূঁকে বেড়ায় চারদিক।

বেলা পড়তে পড়তে পাহাড় থেকে নামে অন্ধকার। জীবজন্তুর ভয়। ঘরের প্রধান পুরুষ একবার চেয়ে দেখে নেয়-------টাঙিটা ঠিক জায়গায় আছে তো। তির --ধনুক ঠিক জায়গায় আছে তো।

বন শুয়োর ঘরে হানা দেয়। রাতচরা ডাকে। চাঁদ এসেও উঁকি
দিয়ে যায় ভাঙ্গা কপাটের ফাঁকে। ঘরের চালায়।

সকাল হলেই, কোনো কোনো মহিলা ও পুরুষ কাজ করতে যায় কাছাকাছি শহরে কিংবা গ্রামে।

দারিদ্র্য রেখার নিচে এদের বসবাস। এদের দারিদ্র্য ভাঙিয়েই রাজনীতি হয়। বাণিজ্য হয়। নাটক হয় সিনেমা হয়। শেষ অব্দি এদের জীবন এদেরই থাকে। তবে এদের সঙ্গে থাকে অটুট মনোবল। শারীরিক শক্তি। নির্ভীক
মানসিকতাও থাকে। থাকে সাহসিকতা।

হাজার রকম অভাব-অনটন
থাকার পরেও এরা ভুলে যায় না এদের পরব। একইসঙ্গে মহিলা ও পুরুষ মহুল পান করে। নাচে। গান গায়।

এরা পরিশ্রমীও।

পাহাড় থেকে নামে। মাথায় কাঠের বোঝা। হাঁটতে হাঁটতে কোনো গাছ তলে জিরিয়ে আবার হেঁটে যাওয়া।

এদের দেবতা পাহাড়। এরা মনে করে, পাহাড় বা মারাংবুরু এদের দেখছে। এদের পাহারাতেও আছে বড় পাহাড়।

শাল গাছে ফুল এলে এই মানুষগুলির মন নেচে ওঠে। এরাও প্রকৃতির অঙ্গ। এদের বাদ দিয়ে কোনো জনপদ গড়ে উঠতে পারে না।

এরাই আবার অত্যাচারিত হয় শাসকের হাতে। বিনা অপরাধে জেল যায়। বিচার হয়না। কোথাও এরা কাঠ চোর। কোথাও এরা মাওবাদী।

কোনো প্রমাণ ছাড়াই এরা
অভিযুক্ত হয় নানান কেসে। এদের মুক্তিও হয় না। কারণ, এদের অর্থ নেই উকিল লাগিয়ে লড়াই করার।

এদের দিনরাত্রির জীবনের কাছে
অসহায় পাহাড় নদী বন। অসহায়
বুনো লতাপাতা।

বুনো লতা বা বুনো শিকড়ে বেঁধেছে কাঠের বোঝা। তারপর মাথায় তুলে হাটের দিকে চলেছে।

নুন --তেলের পয়সাটা তো চাই।

কাঁখে এক বছরের শিশু। মাথায় কাঠের বোঝা। পাহাড় থেকে নামছে।

এ বোঝা নামাবে না কেউ। কোলের শিশুকে আদর করবে না কেউ। এরা লড়াই করতে করতে পাহাড়ের এপার ওপার।

এদের দুঃখে জোনাকিরাও আলো জ্বালতে জ্বালতে নিভে যায়। লুকিয়ে পড়ে গাছে গাছে।

-------৭ আষাঢ় ১৪২৯
-------২২----৬----২০২২
--------নির্মল হালদার












ছবি : অভিজিৎ মাজী













কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ