বৃহস্পতিবার, ৪ আগস্ট, ২০২২

কটা লাইক পড়লো?



কটা লাইক পড়লো?
----------------------------

ফেসবুকে নানা ছবি। নানা রঙ। নানা মুখের নানান আঁকিবুকি।
নিত্যনতুন নিজের মুখের প্রচার।

নিত্য নতুন বিজ্ঞাপন।

নিজের বিজ্ঞাপন।

ঘরে আমি মাছ কুটছি ------
এই বিজ্ঞাপন যেমন নিজের ফেসবুকে পোস্ট করছি তেমনি
আমি রেস্তোরায় বিরিয়ানির সামনে, সেই বিজ্ঞাপনও
নিজের ফেসবুকে।

শাড়ি জামা কাপড় ফেসবুকে।

ঘুম থেকে উঠেই সকালবেলা ফেসবুক খুলে দেখতেই হবে,
কাল রাত্রে দেওয়া আমার ফেসবুক পোস্টে ক ' টা লাইক পড়লো। 

লাইক যদি কম পড়ে সকালের আলোতেই অন্ধকার হয়ে আসে মুখ। দাঁত মাজতেও মন লাগেনা।

সকালের চা বিস্বাদ লাগে।

বেলা বাড়লেও কাজে মন নেই। অস্থির অস্থির লাগে। ফেসবুক কর্তা কাজের ফাঁকে চেষ্টা করে নতুন কোনো খবর দেবার জন্য। 
নতুন কোনো ছবি দেবার জন্য।
যদি লাইক পড়ে! যদি কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়।

ঝগড়া ঝাটিও চলে। তর্ক বিতর্ক চলে।

আমাদের ফেসবুক। আমাদের সোশ্যাল মিডিয়া। 

এই সামাজিক মাধ্যম থেকে হারিয়ে যাওয়া বন্ধুকে খুঁজে পায় যেমন, 
তেমনি কোনো সামাজিক সংস্কারের কাজে জনসাধারণের সামনে ভিডিওর মাধ্যমে সামনে আসা যায়। বক্তব্য রাখা যায়।

যদি এই মাধ্যমে প্রতিদিন একটি করে গাছের ছবি এবং তার পরিচয়, উপকারিতার কথা লেখা যায়?
আমার মনে হয়, মানুষের কাজে লাগবে।

শুধু তাই নয়, এখন বাংলা কোন্
মাস চলছে, কি তিথি চলছে ফেসবুকে পোস্ট করলে অনেকে জানতে পারবে। কারণ, বাংলা মাস ও বছরের অধিকাংশ মানুষ খবর রাখে না।

কিন্তু ফেসবুক তো অন্য কথা বলে। কেউ কেউ আছেন, কোনো একটি বিষয়ে বিতর্ক তুলে দেয়।

তাহলে, সেই বিতর্কে অনেকে যোগ দেবে।আর যোগ দিলেই, উল্লাস।


দুই বন্ধু পাশাপাশি। কথা বলছে না। দুজনেই ঘাঁটাঘাঁটি করছে মোবাইল। 
একজন হাসছে একা একা। আরেকজন চুপচাপ।

শুধু তো ফেসবুক নয়। হোয়াটসঅ্যাপ আছে। টুইটার আছে। ইনস্টাগ্রাম।
কার কত ফলোয়ার বাড়ছে কমছে দেখা যাবে। সাধারণ মানুষ যদিও টুইটার ইনস্টাগ্রামে নেই।
তাদের শুধু ফেসবুক।

বাইক কিনেছে। ফেসবুকে ছবি দাও। নতুন মডেলের সাইকেল কিনেছে। ছবি দাও।

কখনো কখনো বাড়িতে ফুটে উঠা
কোনো ফুলের ছবি। শিশুর হাসির ছবি।
ভুলেও কেউ দেবেনা , বৃষ্টিহীন শ্রাবণের ফুটি ফাটা মাঠ। 

খরার অজানা আতঙ্কের কথা বলবে না কেউ।
সবাই তো নিজের নিজের বিজ্ঞাপন করতে সদা ব্যস্ত।

অনাহারের ছবি দিয়ে কেউ কেউ গৌরব বোধ করে। মনে করে, একদম নতুন একটা ছবি দিলাম। বা নতুন সংবাদ।

একদম ছক্কা।

অথচ এই মাধ্যমটিকে সঠিক ব্যবহার করতে পারলে, যে যার 
সুখ-দুঃখের অভিজ্ঞতা আরো অনেকের কাছে ভাগ করতে পারবে।
যে অভিজ্ঞতা গুলি অন্যের কাজে লাগবে।

কেন্দ্র ও রাজ্যের দুর্নীতির কথাও তো বলা যায়। চোখ খুলে দেওয়া যায় আম জনতার। অথচ একজন যুবক ডিজের তালে তালে নাচানাচি করছে, তার ভিডিও ফেসবুক। হোয়াটসঅ্যাপে।

ইট ভাটায় সন্তানকে মাটিতে শুইয়ে মা মাথায় নিয়ে আসছে ইট। তার যে করুণ অবস্থা, তা নিয়ে দু কথা লিখলো না কেউ।

বৃষ্টির অভাবে ধানের চারা মরে গেল। তার জন্য উদ্বেগ অথবা বিচলনের ভাষা দেখতে পেলাম না।

অজস্র শিক্ষিত ছেলেরা বেকার হয়ে সরকারের দুয়ারে অনশন করেও সমস্যার সমাধান করতে পারে না, তার যে সংকট
ক' জনের  সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখতে পাই?

দেখতে পাই, শুনতে পাই-------
আজ আমি এই এতগুলো লাইক পেলাম।
আবার এও হয়ে থাকে, অন্য কারোর একটি পোস্ট না বুঝে না পড়ে একটা লাইক। অর্থাৎ একটি চিহ্ন।

সব সময় প্রচারে থাকা।

সব সময় নিজের অস্তিত্বের প্রচার। অথবা বিজ্ঞাপন। যেন বা নিজেই সে একটি বিপনী।

আমি আছি আমি আছি ------
এই ঢাক বাজাতে বাজাতে বাজারে থাকা।

বাজারে যে শিশু চায়ের গ্লাস ধুতে ধুতে ঘুমিয়ে পড়ছে, মোবাইল থেকে মুখ তুলে কবে দেখবো?

নিজের জন্মদিনের প্রচার করার পর আমার ভাবনা, মৃত্যুর আগে
সমাজ মাধ্যমে লিখে যেতে পারবো তো, ভাই আমার বিদায় দ্বার খুলে গেছে। 



------১৮ শ্রাবণ ১৪২৯
------৪----৮----২০২২
------নির্মল হালদার


























কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কবি নির্মল হালদারের বিভিন্ন সময়ের ছবি

পড়ুন "ঘর গেরস্থের শিল্প"

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ