বেঁচে থাকার রাস্তা / নির্মল হালদার
খুশিয়ালকে দেখে মনে হলো,
গাছতলা থেকে ওঠার জন্য ছটফট করছে। ওর কি জল তেষ্টা পেয়েছে?
ওর কি খিদে পেয়েছে?
আমি খুশিয়ালের সামনে কিছু পাতপালা এনে দিলাম। সে মুখে নেয় না। বুঝতে পারলাম, তার খিদে পায়নি। তারপর তাকে একটা পুকুরের কাছে নিয়ে গেলাম। সে জলেও মুখ দিলো না। সে চেয়ে রইলো পাহাড়ের দিকে।
পাহাড়ের ওপারেই শহর। বাজার হাট।
হাসপাতাল। গ্রাম থেকে যেতে হলে পাহাড় ডিঙিয়ে যেতে হয়। মানুষকে কষ্ট করতে হয়। মরণাপন্ন রোগীকে নিয়ে যেতে হলে বেশি যন্ত্রণা।
গাঁয়ের এক মুরুব্বি বলছিল, পাহাড় ভেঙ্গে দাও। নইলে, মানুষের যন্ত্রণার শেষ থাকবে না। আমি বলি , পাহাড় ভাঙবো না। একটি পাহাড়ও ভাঙবো না।
খুশিয়ালকে বলেছি, সে যদি এক একটা পাহাড় পিঠে করে নিয়ে যায় আর নামিয়ে রাখে অন্য জায়গায়, তাহলে বেশ হয়।
পাহাড় তো আমাদের সম্পদ।
আমি অন্তত সম্পদের ক্ষতি করতে চাইনা। আমার সঙ্গে নিশ্চয়ই খুশিয়াল একমত হবে।
আজ খুশিয়ালকে নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে
ঘরে ফিরলাম।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে। একটানা ডেকেই চলেছে ঝিঁঝিঁ পোকারা।
দিনের বেলা আলু সেদ্ধ ভাত খেয়েছি।
তারই অবশিষ্ট কিছু আছে। তা দিয়ে দিলাম খুশিয়ালকে। আমি নিজে এক গ্লাস জল খেয়ে শুয়ে পড়লাম।
খুশিয়াল গাধা হলেও সমস্তই বোঝে।
সে বুঝে গেছে ঘুম পেয়েছে আমার।
সেও চোখ মুদলো।
আমারতো ভোরেই ঘুম ভাঙ্গে।
ঘুম ভাঙতেই মনে পড়লো, পাহাড়গুলো অন্যত্র সরাতে হবে।
মানুষের জন্য শহরে যাওয়ার রাস্তা তৈরি করতে হবে।
স্কুল-কলেজও শহরে।
খুশিয়ালকে বললাম, চল্ তবে পাহাড়ের কাছে। আজ সারাদিন তুই আর আমি একটার পর একটা পাহাড় অন্য কোনোখানে বসাবো।
কোনো ক্ষতি না করে পাহাড়কে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সুখ-সুবিধা করতে হবে।
প্রথমেই ছোট ছোট ডুংরি গুলি
খুশিয়ালের পিঠে চাপাই। সে ধীরগতিতে গেলেও আমার সঙ্গে যায় গ্রামের শেষে। মাঠের একপাশে।
ডুংরি গুলি সমস্ত নামিয়ে
বড় পাহাড়ের কাছে যাই। প্রণাম করি।
তারপর পাহাড় ওঠাই। খুশিয়ালের পিঠে রাখি।
তার আগে অবশ্যই খুশিয়ালকে
জল খাইয়েছি। পাতপালা খাইয়েছি।
সে যেন আমার কাছে কোনো অভিযোগ না করে।
পরপর ডুংরি গুলি সাজিয়ে পাহাড়টা সাজিয়ে বেশ লাগছে। ওদিকে শহরে যাওয়ার রাস্তাও তৈরি।
খুশিয়াল যে এত কষ্ট করলো এজন্য
ওকে একটা আম পাতার মুকুট পরাতে হবে।
-------৩ অগ্রহায়ণ ১৪২৮
------২০----১১----২০২১
------নির্মল হালদার







