কবিতা--কাঠবিড়ালির লাফ----৯৬
--------------------------------------------------
মহাভারতের কথা উঠলে আমাআমারর বড়দি ভীষ্মের কথা বলতো। আমি বলতাম, কর্ণের কথা। কর্ণ আমার প্রিয় চরিত্র। সঙ্গে সঙ্গে নাকচ------দিদি বলতো, কর্ণ তো স্ত্রী-পুত্র নিয়ে সংসার সুখও করেছে। রাজ্য সুখেও ছিল। ভীষ্মের মত ত্যাগ মহাভারতে কারোর নেই।
আমাদের বাংলা কবিতায় ক'জনের ত্যাগ আছে?
মধুসূদনের নাম কি উল্লেখ করতে পারি? বিনয় মজুমদারের নাম?
সব সময় তো দেখি, কবিরা দৌড়াচ্ছে। আমার বন্ধু সুরজিৎ পোদ্দারের ভাষায়----দৌড়লে শরীর ভালো থাকে। কবিরা তাই খ্যাতির পিছনে দৌড়াচ্ছে। সংসার ধর্ম পালন করে, চাকরি করে যে যার মত করে দৌড়াচ্ছে শুধু দৌড়াচ্ছে। কারণ আর কিছুই না, বাংলাবাজারে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার আপ্রাণ এক প্রয়াস। এই সমস্ত কবিরা ত্যাগ ধর্মের কথা শুনেছে কিনা সন্দেহ আছে। চাকরি ছেড়েছে কবিতার জন্যই এরকম দু'চারটে উদাহরণ আছে। কিন্তু সংসার ধর্ম ত্যাগ করতে পারেনি। ত্যাগ যে একটা ব্রত, সেই দিকে না গেলে ত্যাগের মর্ম জানবে না কেউ। অনেক কবি আছে ঘরে ঢুকবে কি, দরজার দিকে গেলোই না। নিজের ঘরের কোণেই তার অবস্থান। তার সারস্বত চর্চা। এ গল্প বা ইতিহাস ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। কিন্তু সব ছেড়েছুঁড়ে একটা জীবন কবিতার জন্য উৎসর্গ, কেইবা করতে পারে এই জটিল কঠিন সময়ে? যখন এক মুঠো ভাতের জন্য নিজের ঘর নিজের গ্রাম ছেড়ে চলে যাচ্ছে মানুষ অন্য কোথাও অন্য কোনোখানে।
বাঁচতে যে হবে।
শুধু কবিতা নিয়ে বাঁচা যে আরো কঠিন। আরো যন্ত্রণার। আরো অবজ্ঞা আরো অবহেলা। অপমান তো থাকেই। আর প্রেম ভালোবাসা?
গাছে না উঠলে তাল পাড়া যাবে না।
-----২ চৈত্র ১৪২৯
----১৭---৩---২০২৩
-----নির্মল হালদার
আমার কবিতা ----কাঠবিড়ালির লাফ---৯৭
-----------------------------------------------------------
রাজমিস্ত্রি না নির্মাণশিল্পী?
যে নামেই ডাকি না কেন, ভালোবেসেই ডাকি। সম্পর্ক যে আছেই। কোনোদিন তো এসেছিল আমাদের কাছেও। একটি সুখী গৃহকোণ গড়ে তুলবার উদ্দেশ্যে। এবং এই গৃহকোণে রাজমিস্ত্রি বা নির্মাণশিল্পীর ঠাঁই নেই। সম্মান জানিয়ে তার জন্য আসন পাতি না। সে দূরে দূরেই থাকে। যেমন দূরে দূরেই থাকে বিশ্বকর্মা।
লোহার বাসর ঘর নির্মাণ করলেও বিশ্বকর্মার আরাধনা উপলক্ষে ঢাকঢোলের আওয়াজ শোনা যায় না। জোর।
কবিতার ক্ষেত্রে বিশ্বকর্মা যারা তাদের আওয়াজ শুনতে পাই। খুব। একদল কবি মনেও করে, কবিতাও নির্মাণ।
কবি আলোক সরকার এ কথা জোর দিয়ে বলতেন। অগ্রজ কবির সঙ্গে আমি তর্ক করিনি। আমার এক তরুণ কবি বন্ধু পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বলে, কবিতা কিছুটা নির্মাণ। কিছুটা সৃষ্টি।
বীতশোক ভট্টাচার্যের কাছে আমি এক সময় তার মেদিনীপুরের বাড়িতে। মাসে একদিন। শুধু আড্ডা দেবার জন্য। কবিতা প্রসঙ্গে নানা কথা বলতে বলতে সে আমাকে বলেছিল, কবিতা শেষ অব্দি বানানো।
যদি বানানো হয়ে থাকে, আমার তবে প্রশ্ন, কবি উপকরণ পেলেন কোত্থেকে? রাজমিস্ত্রির কাছে উপকরণ থাকে ইঁট-বালি--সিমেন্ট-ছড় ইত্যাদি ইত্যাদি। তারপর গড়ে ওঠে একটা বাড়ি। এখানে রাজমিস্ত্রির কোনো আবেগ থাকে না।
সৃষ্টি তো আবেগের জায়গা।
তাজমহল একটা আবেগ। আর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সাম্রাজ্যবাদী শক্তির প্রকাশ। দম্ভের প্রকাশ।
কবিতা শক্তির প্রকাশ দম্ভের প্রকাশ কখনোই নয়। আবেগ থেকে অন্তর থেকে এসে প্রকাশিত হয়ে থাকে। কবিতা।
কবিতার জন্ম হয়।
একটা বাড়ি তৈরি হয়।
সৃষ্টি ও নির্মাণের তফাৎ থাকবেই। তর্ক? চলতে থাকবেই। যারা নির্মাণের পক্ষে তারা হয়তো কোনোদিন ঘোষণা করবে, ফুল একটি নির্মাণ। সৌরভ সেও নির্মাণ।
প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যকে টেনে হাজির করবে উদাহরণ। তত্ত্ব। আমি সেদিকে না গিয়ে চৈত্র মাসের টাঁড় জমির ঘাসের শিকড় থেকে শুনতে চাইবো-----জন্মকথা।
আবেগের সুর।
----৩ চৈত্র ১৪২৯
----১৮---৩---২০২৩
----নির্মল হালদার
আমার কবিতা--কাঠবিড়ালির লাফ--৯৮
--------------------------------------------------------
একটা সময় অভিযোগ ছিল, পুরুলিয়াতে যারা কবিতা চর্চা করে তাদের কবিতায় খুব ভাত ভাত চিৎকার। অভিযোগ ছিল আরো, বড় বেশি মা মা---। কাঁদুনি।
ধারাবাহিক চর্চা করে যাওয়া ছাড়া আমার কোনো উত্তর ছিল না। আজও নেই। শুধু দু-একটা কথা বলতে পারি।
যে কোনো মানুষের যেকোনো অভিজ্ঞতাই তো সম্পদ। সঞ্চয়তো অবশ্যই। যে সঞ্চয়ের এক মুঠো দু মুঠো করে শাদা কাগজে কবি নিয়ে আসে। কবিতার রূপে। পাঠকের সামনে।
কোনো কবিতা থেকে ভাতের গন্ধ উঠতেই পারে। কোনো কবিতা থেকে ছড়াতে পারে ফুলের গন্ধ। কোনো কোনো কবিতা থেকে সূর্যের কণা। চাঁদের কণা। কোনো কবিতা থেকে খুদকুড়ো।
পাঠক গ্রহণ করবে কি? কবি জানে না। জানার দরকারও নেই।
পুরুলিয়া অভাব অনটনের দেশ। একটু ভেতরে গেলেই চোখে পড়বে, হাহাকার। ঘরে বাইরে বিধ্বস্ত মুখ। কাঁচা পয়সা রোজগার করার মত কেউ নেই। একটি মাত্র পুত্র সন্তান রাজ্যের বাইরে গেছে কাজ করতে। বছরে একবার দুবার গ্রামের ঘরে আসে। তখনই মা-বাপের হাতে দু চারশো টাকা দেয়। তা আর কদ্দিন চলবে? বাপের বয়স হয়ে গেছে। শহরে যেতে পারে না কাজ করতে। আর গেলেই যে কাজ পাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তো, ঘরের গাছ থেকে কচি নিমপাতা পেড়ে আঁটি বেঁধে পুরুলিয়ার বাজারে যায় মা। সঙ্গে নিয়ে নিয়েছে ঘরের গাছ থেকে দুটো পেঁপে। যেটুকু পয়সা হয়। নুন তেলের দামটা আসবে।
এই জীবন একজন সংবেদনশীল মানুষকে ধাক্কা দিতেই পারে। তা থেকে একটা লেখা সৃষ্টি হতেই পারে।
দারিদ্র্যের সমাধান করা একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কবির পক্ষেও সম্ভব নয়। কবি শুধু ছবিটা দেখাতে পারে। অসহায়তা দেখাতে পারে। সেই দেখানো কি শিল্পের পক্ষে মঙ্গল নয়?
১৯৪৩ বাংলার মন্বন্তর। জয়নুল আবেদিন চিত্ত প্রসাদ রামকিঙ্কর সোমনাথ হোড় ইত্যাদি অনেক শিল্পী মন্বন্তরের ছবি আঁকলেন।
সেই ছবি দেখলেই, মন্বন্তরের হাহাকার শুনতে পাই। এবং সেই ছবি থেকে এক সময়ের এক ইতিহাস পাই। যা দেখতে পাই তা শিল্পেরই হাত ধরে।
সাম্প্রতিক সময়ের " করোনা " নামে একটি শোষণ বা শাসন অনেক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে। সেইসব ভয়াবহ ঘটনাগুলি গল্পে কবিতায় গদ্যে ছাপ ফেলেছে। ধরে রেখেছে সময়ের স্বাক্ষর।
কেউ মুছে ফেলতে চাইলে, অবজ্ঞা করলে মিথ্যে হয়ে যাবে না "করোনা" র দিনগুলি। যখন দেখেছি গ্রামে ও শহরে চাপা এক আতঙ্ক। বন্দী জীবনের ভয়। শিল্পে তা ধরা পড়লে একদল যদি বলে---গেল গেল সব গেল। শিল্প তো সেই রব অগ্রাহ্য করবেই।
ভাত ভাত করে আর্তনাদ করাও তো সময় ও সমাজের পক্ষে সুখের বিষয়। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদেরই এক কবি অধিকারের এক সোচ্চার বার্তা রেখে গেছেন-----
ভাত দে হারামজাদি।
-----৫ চৈত্র ১৪২৯
-----২০---৩---২০২৩
------নির্মল হালদার
আমার কবিতা---কাঠবিড়ালির লাফ---৯৯
-----------------------------------------------------------
কলেজ কালির কথা আজকের প্রজন্মের কাছে অজানা। সুলেখা কালিও অপরিচিত।
কালির বড়িও গুঁড়ো করে জল দিয়ে শিশিতে ভরেছি। সস্তায় হয়ে গেছে। সেই সব দিনে পয়সা কড়িরও টানাটানি ছিল। কলমে কালি ভরতে ভরতে----হাতে কালি মুখে কালি।
রিফিল এলো। শেষ হয়ে গেল কালির দিন। কালি তো কবিদের রক্ত। রক্ত ফুরিয়ে যায় না। রক্তই তো সাহস। রক্তই তো মেরুদন্ড। রক্ত থেকেই শিকড়ের সুর আসে।
একদিন লিখেছিলাম---
আশ্বিনের ধানে জমে ওঠা দুধ
কলমে এসো
কালি ফুরানোর কথা নেই।
রিফিল তো একটা শিরার মতো। কতটুকু আর রক্ত থাকবে! ইউজ এন্ড থ্র কলম এলেও আসলে কবিরা লেখে রক্ত দিয়ে। কবিদের কাছে মেঘের কালিও রক্ত। গায়ের কালি তো রক্ত বটেই। রক্তে রক্তে কবিদের দিনলিপি রচিত হতে থাকে, রচিত হয় প্রতিদিন প্রতি পাতায়। গাছের পাতা থেকে মাটির পাতায়।
মা আমাকে একবার একটা সবুজ কলম উপহার দিয়েছিল। আগলে রাখতে রাখতেও কখন যে কোথায় হারিয়ে গেল, টের পেলাম না। কলমটার রঙ ছিল সবুজ। গাঢ় সবুজ। সেই সবুজ কি আমার মনে আজও? আজও কি আমিও নবীন পাতা তুমিও নবীন পাতা?
কবিদের রক্ত কবিদের কালি এ কথাটা বলার পরেও সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কখনো কখনো রক্তের অভাব দেখা যায় আমাদের দেশে। কবিদের কলম থেকে প্রকাশিত হয়ে থাকে, শুধু শব্দ শুধু অক্ষর। যাদের ভিতরে ও বাইরে রক্ত মাংস হাড় নেই। নিজেকে প্রকাশ করতে গেলেও রক্তের প্রয়োজন পড়ে। সেই রক্তটুকুও অনেকের কবিতায় দেখতে পাই না।
শুধু খড়ে কি প্রতিমা গড়ে ওঠে?
উপর থেকে কালি পাড়তে পাড়তে নিচের থেকেও কালি তুলতে হয়। কালিতেই তো রক্ত।
চরাচরের রক্ত।
প্রবাহমান জীবনের রক্ত।
প্রকৃত অর্থে আমার সত্য আমার রক্ত থেকে উঠে আসে আমার কলমে। আমার জীবন থেকে উঠে আসে আমার কলমে। তবেই তো আমি বলতে পারবো----
আমার হাতে কালি মুখে কালি
দেখ মা আমি লিখে আলি।।
-----৬ চৈত্র ১৪২৯
----২১---৩---২০২৩
----নির্মল হালদার
আমার কবিতা--কাঠবিড়ালির লাফ---১০০
-----------------------------------------------------------
আশ্রয়ের অর্থ ছাদ নয়। আশ্রয়ের অর্থ ভালবাসাও নয়। মানুষ আশ্রয় খোঁজে মানুষের ভেতরে। ভালোবাসাও খোঁজে মানুষের ভেতরে।
আজকে যদিও সারা পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ শিকড়হীন হয়ে আশ্রয়হারা। রাজনৈতিক কারণেও দেশছাড়া হয়ে পড়ছে অনেক মানুষ। ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে হাজার হাজার মানুষ। এদেশেও এই ঘটনার চিহ্ন হিসাবে-----ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান।
এ যেমন বাইরের ছবি তেমনি ভিতরের ছবি হলো, ভালবাসতে বাসতে মানুষ যখন ছিটকে পড়ে ভালোবাসা থেকে, তখন সেও তো আশ্রয়হীন।
বুক মুচড়ে ওঠে।
যত দিন যায় বিজ্ঞানের নানান কারিগরি মানুষকে গ্রাস করতে করতে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে মানুষ থেকে।
এ ছবি তো প্রতিদিনের ছবি। প্রতিদিনের রক্তক্ষরণ। হিংসা বিদ্বেষ খুনোখুনি ধর্ষণ হত্যা রাজনৈতিক ক্রিয়া-কলাপ বাদ দিয়েও মানুষ আজ বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপ।
এও বেদনার বিষয়।
শুধুমাত্র আশ্রয়ের খোঁজে মানুষ ছুটে বেড়াচ্ছে দেশ থেকে দেশ। মানুষ থেকে মনের মানুষ। যা না পেয়ে বিষাদ অবসাদ। যা না পেয়ে পাগল হয়ে যাওয়া। অনেকেই আত্মহত্যার দিকে।
অনেকে বেঁচে থেকেও নিজেকে একটু একটু করে ধ্বংস করে, যা আত্মহত্যারই মতো।
প্রকৃত কারণ এই, আশ্রয় নেই।
অনেক টাকা অনেক বৈভব, ভেতরে ভেতরে একা, এরকম মানুষও চারদিকে ঘুরে বেড়ায়। তাদের হতাশাগ্রস্ত মুখ লক্ষ্য করে না আমাদের সমাজ।
সমাজ তো শুধু গতানুগতিক ছন্দ চায়। সমাজ তো রাষ্ট্রযন্ত্রেরই আরেক দিক। ছন্দ থেকে এক চুল সরে গেলেই সমাজ বিরোধী হিসেবে চিহ্নিতকরণ।
আমিও নিজেকে সমাজবিরোধী মনে করি। আমার ঘর নেই। দুয়ারও নেই। যেখানেই যখন হাঁটি হোঁচট খাই। কাঁটাতারের বেড়া।
আমি তো আর সৃষ্টি করতে পারি না নিরাভরণ নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
ভালোবাসা কি নিঃস্বার্থ হতে পারে?
কবিতা নিঃস্বার্থ হতে পারে। সৃষ্টি করুক যেই, কবিতা শেষ পর্যন্ত নিঃস্বার্থ। এই কারণেই, এখনো আমার অবলম্বন একমাত্র "কবিতা"।
অবলম্বন মানেই আশ্রয়। আমার আশ্রয়। এই এক জীবনে এই আশ্রয় আমাকে বাঁচিয়ে দিলো।
অনেক সময় কোনো মানুষকে মনে হয়েছে এই তো আমার বাঁচার জায়গা। আমি আঁকড়ে আঁকড়ে থাকবো। আমার শিকড়কে নিয়ে যাবো গভীরে। তারপর দেখি, শিকড় ছিন্ন হয়ে গেছে। আঁকড়ে থাকা মানুষটি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে অনেক দূর।
আমি আশ্রয়হীন। দিনের পর দিন।
আবার সামনে এসেছে কেউ। মনে হয়েছে, আমার রাগ দুঃখ অভিমান রাখার এই তো এক ঠাঁই।
মাটি ধ্বসে পড়েছে।
টলমল করে আশ্রয় চাই আশ্রয় চাই----নীরব আর্তনাদে ছুটে বেড়িয়েছি নদী সমুদ্র পাহাড়ে।
জঙ্গলে জঙ্গলেও আমার আশ্রয় নেই। জঙ্গল তো নিজেই উচ্ছেদ হয়ে যায়। আমিও উচ্ছেদ হতে হতে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছি, কবিতার আশ্রয়ে।
এক শিল্পের একক আলোয়
আমার নিঃশ্বাসের চলাফেরা।
আমার প্রাণের নানা রূপ নানা কবিতায়। আমাকে সঙ্গ দেয়। আমাকে নিঃসঙ্গ করে। আমি হেঁটে যাই আমার নিঃশব্দ ভালবাসার দিকে।
ভালোবাসা তুমি রক্তপাত।
-----৭ চৈত্র ১৪২৯
-----২২--৩--২০২৩
-----নির্মল হালদার
আমার কবিতা---কাঠবিড়ালির লাফ---১০১
-----------------------------------------------------------
ভোর।
আমার প্রিয় সময়। ভোরের বাতাস গায়ে লাগলে মনেও প্রবেশ করে। ফুরফুরে হয়ে উঠি। গতদিনের কালি কাদা মাথা থেকে প্রস্থান করেছে। ভোরে উঠতেই, কোনো কোনোদিন শুকতারা।
আঁখি মেলে চায়।
যেন বা নতুন এক জীবনের ইশারা। জেগে ওঠার জেগে থাকার ইঙ্গিত।
জেগে থাকাই তো কবিতা।
ঘুমিয়ে পড়বার সময় এলেই, প্রতিদিন আমার মনে হয়, এবার ঘুমোতে হবে। নিজেকেই প্রশ্ন করি, ঘুমোবো কেন? যদিও জানি, ঘুমের প্রয়োজন আছে। কিন্তু আমার যে ভয়ও করে। যদি দুঃস্বপ্নেরা এসে আক্রমণ করে আমাকে!
জেগে থাকলে সেই ভয়টা নেই।
আবার এও ঠিক, শরীরের কারণে ঘুমোতে হবেই। ঘুম নিবিড় না হলেও ঘুমোতে হবে। অথচ আমি জেগে থাকতে চাই। তার প্রধান কারণ, যতক্ষণ জেগে থাকবো ততক্ষণ দেখা। চোখ দিয়ে দেখা। মন দিয়ে দেখা। দেখতে দেখতে কবিতার কাছে পৌঁছে যাওয়া।
রাতের শিশির ভুলে যায় না, বাবলা কাঁটা বেগুন কাঁটাকেও। দেখা যায়, কাঁটাতেও লটকে আছে শিশির। পাথরেও শিশির। ধূলায় শিশির।
শিশিরে সিক্ত হয়ে গাছপালা আমাকেও ডাকে।
আমাকে উঠতেই হবে ভোরবেলা।
এক-একদিন মনে হয়, ভোরে উঠতে না পারলে আমি দেখতে পাবো না, জাগরণের মহিমা।
শিশির তো সারারাত জেগেই ভোরের সময়। আমার জন্য। আমার কবিতার জন্য।
আমি মনে মনে, ললাটে ললাটে শিশির পরাই। আমি শিশির টাঙ্গাই আমার প্রতিদিনের জীবনে।
-----৮ চৈত্র ১৪২৯
-----২৩---৩---২০২৩
------নির্মল হালদার







